মসজিদ মুসলমান সমাজের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ

শাহ মনসুর আলী নোমান: সুলতানিয়া জামেয়া মসজিদ ব্রায়ারফিল্ড, ল্যাঙ্কাশায়ার, ইংল্যান্ডের একটি সুপরিচিত ইসলামিক উপাসনালয়। এই মসজিদটি স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত,পাহাড়, জলাশয়, খাল বেষ্টিত ছোট একটি ঐতিহাসিক এলাকা ইংল্যান্ডের ল্যাঙ্কাশায়ার কাউন্টির ব্রায়ারফিল্ড শহর। বার্নলি এবং নেলসন শহরের মধ্যখানে অবস্থিত ব্রায়ারফিল্ড শহরটিতে অধিক সংখ্যক গির্জা ও উপাসনালয় ছিল বলে ইহা ‘পবিত্র শহর’ হিসেবে তখনকার মানুষের কাছে পরিচিতি ছিল। ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দের দিকে ব্রায়ারফিল্ডকে ‘দ্য হোলি সিটি’ বা পবিত্র শহর নামে অভিহিত করা হয়। এক কালে কটন মিল এবং বিভিন্ন ধরনের শিল্প কারখানার জন্য ব্রায়ারফিল্ড অধিকভাবে পরিচিতি ছিল। আজও শহরটি সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক বৈচিত্র ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য একটি আদর্শ স্থান।
বর্তমানে ব্রায়ারফিল্ডে বসবাসরত এক বিরাট জনগোষ্ঠী পাকিস্তানি এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। তাদের মধ্যে ইসলামী সংস্কৃতি, ভাবধারা, রীতিনীতি এবং ঐতিহ্য গভীরভাবে লক্ষণীয়। শহরের পরিবেশ খুবই শান্তিপূর্ণ, কোলাহলমুক্ত এবং বন্ধুত্বপূর্ণ।
বর্তমানে ব্রায়ারফিল্ড এলাকার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হলো আধুনিক স্থাপত্যমন্ডিত, মনোরম নির্মাণশৈলী সংবলিত ‘জামেয়া সুলতানিয়া মসজিদ’।স্থানীয় মুসলমান সম্প্রদায় কর্তৃক ১৯৭২ সালে ব্রিজ স্ট্রিটের একটি ভবন ক্রয় করে সেটিকে মসজিদে রূপান্তরিত করা হয়। সময়ের ক্রমবর্ধমান চাহিদার সাথে সাথে প্রায় আট বছরের পরিকল্পনা, তহবিল সংগ্রহ এবং এক ঝাঁক মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রচেষ্টার ফলে নতুন ভাবে মসজিদটি ২০১৩ সালে উদ্বোধন করা হয়। মসজিদটি নির্মাণে প্রায় চার মিলিয়ন পাউন্ড খরচ হয়। এই জামেয়া সুলতানিয়া মসজিদটির সবুজ গম্বুজটি মদিনার মসজিদের গম্বুজের আদলে তৈরি। দেয়ালগুলো মার্বেল দিয়ে আবৃত এবং প্রধান নামাজের এলাকায় একটি বড় আকর্ষণীয় ঝাড়বাতি রয়েছে।
মসজিদটি বর্তমানে গ্রেটার ম্যানচেস্টার এলাকার অন্যতম বৃহৎ মসজিদ এবং এতে ২০০০ জন এর অধিক মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদটি স্থাপত্যশৈলীতে চমৎকার। এটি মুসলমানদের বিরল আত্মত্যাগ ও দৃষ্টিভঙ্গির একটি সাক্ষ্য; যারা সীমিত সম্পদ নিয়ে নতুন মসজিদ নির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং তা বাস্তবায়িত করেছেন। মসজিদটি মুসলমান সম্প্রদায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মিলন কেন্দ্র। এটি শুধু নামাজ আদায়ের স্থান নয়, বরং একটি ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রস্থল। শিশু-কিশোরদের জন্য পবিত্র কোরআন শিক্ষা, আরবি ভাষা শেখানো, মানবিক – নৈতিক মূল্যবোধ শিক্ষা দান এবং ধর্মীয় দীক্ষা দেওয়া হয় এখানে।
প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজে এখানে অনেক মুসল্লি সমবেত হন। পবিত্র রমজান মাসে তারাবি নামাজ এবং ইফতার আয়োজনের মাধ্যমে এটি আরও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। জামেয়া সুলতানিয়া মসজিদ মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখতে ভূমিকা পালন করে। এই মসজিদে প্রার্থনা ও ধর্মীয় কাজের পাশাপাশি সামাজিক সম্প্রীতি বৃদ্ধির একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
মসজিদটিতে নামাজ আদায় করা এবং একনজর দেখার জন্য যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক মুসল্লি’র আগমন ঘটে। ব্রায়ারফিল্ডের এই জামেয়া সুলতানিয়া মসজিদ শুধুমাত্র স্থানীয় জনগণের জন্য একটি নিরাপদ এবং সমৃদ্ধিশালী পরিবেশ প্রদান করে না, বরং আন্তর্জাতিকভাবেও এটি ধর্মীয়, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক জীবনের মেলবন্ধনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ব্রায়ারফিল্ড ও এর পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন শহরে বসবাসরত লোকজন কে অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার চোখে দেখে। জামেয়া সুলতানিয়া মসজিদটি শুধু একটি ইবাদতের স্থান নয়, বরং এটি মুসলমান সমাজের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
লেখক : কলামিস্ট, গবেষক ও শিক্ষা প্রশাসক; সাবেক সহকারী রেজিস্ট্রার, নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ।
Related News

ইসলামের আলোকে ‘আখলাকে হাসানা’
আতিকুর রহমান নগরী: ইসলাম সর্বকালের মানবকুলের জন্য একটি সামগ্রিক জীবন বিধান। আখলাকে হাসানা বা সচ্চরিত্রRead More

মুক্তির রজনী পবিত্র লাইলাতুল বরাত
হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী: সমস্ত প্রশংসা সেই মহান প্রতিপালকের যিনি মানুষকে গোনাহ থেকে মুক্তি লাভেরRead More
Comments are Closed