ফজরের পর ঘুমালে যে ক্ষতি হতে পারে
হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী: ঘুম আল্লাহর একটি মহান নেয়ামত। মানুষের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য ঘুম অত্যন্ত জরুরি। জীবনে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য নির্দিষ্ট সময় ঘুমানো প্রয়োজন। ইসলাম ও আধুনিক বিজ্ঞান উভয়ই ঘুমের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন ৬-৭ ঘণ্টা ঘুম অপরিহার্য। ইসলাম মানুষের জীবনকে সুশৃঙ্খল রাখতে কাজ, ইবাদত ও বিশ্রামের মধ্যে সমন্বয়ের কথাই বলে।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের ঘুমকে করেছি বিশ্রাম এবং রাতকে করেছি আবরণ।’ (সুরা নাবা ৯-১০)
এই আয়াত মানুষের দৈনন্দিন জীবনে সঠিক ঘুমের গুরুত্বের কথা তুলে ধরে। তবে সকালে, বিশেষ করে ফজরের নামাজের পর ঘুমানোতে ইসলাম বিরোধিতা করেছে। কারণ এ সময়টিকে কাজ এবং বরকতের সময় হিসেবে গণ্য করা হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ! আমার উম্মতের জন্য সকালে বরকত দান করুন।’ (তিরমিজি ১২১২) এই হাদিসের মাধ্যমে বোঝা যায়, ফজরের নামাজের পর কাজ বা ইবাদতের দিকে মনোযোগী হলে জীবনে বরকতের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
অপরদিকে, অতিরিক্ত ঘুম বা অলসতা বরকতের সুযোগ নষ্ট করে। বর্তমান জীবনে অনেকেই রাত জেগে বিনোদন বা অপ্রয়োজনীয় কাজে সময় কাটায়, যা ফজরের নামাজ পালনকে বাধাগ্রস্ত করে এবং এতে বরকত হ্রাস পায়।
রাতে ঘুমানোর বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রাতের প্রথম ভাগে ঘুমাও এবং শেষ ভাগে ইবাদতের জন্য জেগে ওঠো। কারণ রাতের শেষভাগের ইবাদত বেশি ফজিলতপূর্ণ।’ (সহিহ বুখারি ১১২০) অতএব, রাতের প্রথম ভাগে ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। পৃথিবীর ইতিহাস সাক্ষী, সফল ব্যক্তিরা রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে ভোরবেলা উঠে নতুন উদ্যমে কাজ করেন। এ সম্পর্কে আবু উমামা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি ঘুমানোর উদ্দেশ্যে পবিত্র অবস্থায় বিছানায় যায় এবং ঘুম না আসা পর্যন্ত আল্লাহর জিকির করে, সে যখন পার্শ্ব পরিবর্তন করবে, তার জন্য আল্লাহ দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ প্রার্থনা করার সুযোগ দান করবেন।’ (তিরমিজি ৩৫২৬) ফজরের নামাজের পর রাসুলুল্লাহ (সা.) বিশেষ কিছু আমলের তাগিদ করেছেন। ওই সময় দোয়া-দরুদ, তসবিহ, তাহলিল, জিকির ও আল্লাহর স্মরণে কাটানোর জন্য উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করে, সূর্যোদয় পর্যন্ত নামাজের স্থানে বসে আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকে, এরপর দুই রাকাত (ইশরাক) নামাজ আদায় করে, তার জন্য রয়েছে একটি হজ ও ওমরাহর পূর্ণ সওয়াব।’ (তিরমিজি ৫৮৬)
রাতে ঘুমানোর আগে আল্লাহর নাম স্মরণ করা এবং ইসতেগফার করা সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রাতে আল্লাহর নাম স্মরণ না করে ঘুমায় এবং ফজরের সময় না জাগে, তার কানে শয়তান গিঁট বেঁধে দেয়।’ (সহিহ বুখারি ১১৪২) অতিরিক্ত ঘুম ও অলসতা উদ্বেগ, হতাশা এবং মানসিক চাপ বৃদ্ধি করে। তাই ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী সময়ের সঠিক ব্যবহার ও বরকত লাভের জন্য ফজরের পর ঘুমানো নয়, বরং কাজে মনোযোগী হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
লেখক : বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও কলামিস্ট। সাবেক ইমাম ও খতীব কদমতলী মাজার জামে মসজিদ, সিলেট।
Related News
জমাদিউস সানি মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত
Manual5 Ad Code হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী: আরবি বর্ষপঞ্জির হিজরি সনের ষষ্ঠ মাস হলো জমাদিউসRead More
ফজরের পর ঘুমালে যে ক্ষতি হতে পারে
Manual2 Ad Code হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী: ঘুম আল্লাহর একটি মহান নেয়ামত। মানুষের শারীরিক ওRead More



Comments are Closed