Main Menu

‘বৃষ্টি আইলে ঘরে থাকতাম পারিনা, বালতি দিয়া পানি সেচন লাগে’

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: আল্লাহ! কই আইলাম বৃষ্টি আইলে রাইত ঘরে থাকতাম পারিনা, জানালা লাগাইছে উল্টা, ল্যাট্রিনের চাক ভাঙতাছে, ঘরের ফালা তাইক্যা আস্থর খইস্যা পড়াতাছে, কাঠ নরম, লিন্টার ছাড়াই আজব ঘর বানাইছে।

আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে ভুমিহীন ও গৃহহীন হিসাবে সম্প্রতি নতুন ঘর পাওয়া উপকারভোগী পরিবারের সদস্যরা এভাবেই কথা গুলো বলছিলেন শুক্রবার পরিদর্শনে আসা সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্টেটের সামনে।

আশ্রয়ণ প্রকল্পে নতুন ঘর প্রাপ্তির পর সারা দেশে এসব প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতি অনিয়ম লুটপাটের অভিযোগ উঠায় সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট তাহিরপুরে বড়দল উত্তর ইউনিয়নের মাণিগাঁও এলাকায় আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প পরিদর্শনে আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া উপকারভোগী পরিবারের সদস্যরা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি ও তাদের মনোনিত লোকজন কর্তৃক নিন্মমাণের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে ঘর নির্মাণে শুরু হতে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাটের বিষয়ে শুক্রবার প্রকাশ্যে মুখ খুলেন।

পরিদর্শনকালে সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মো. আল ইমরান রুহুল ইসলাম, তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও নবাগত) মো. রায়হান কবির, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব, সদস্য সদস্যরা সহ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের উপ সহকারি প্রকৌশলী সুব্রত দাস, ঘর নির্মাণ কাজে ও নির্মাণ সামগ্রী ক্রয়কাজে সুবিধাভোগী উপজেলার বড়দল উত্তর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন, এলাকার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকজন ও উপকারভোগী পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সরেজমিনে গিয়ে প্রকল্প সুত্রে জানা যায়, তাহিরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদ্মাসন সিংহ দায়িত্বে থাকা অবস্থায় প্রকল্প কমিটির সভাপতি হিসাবে আশ্রয়ণ প্রকল্প- ২ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে ভুমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যায় সাপেক্ষে উপজেলার বড়দল উওর ইউনিয়নের মাণিগাঁও মাহারাম নদীর অতি নিকট বালু চরের উপর মুজিব বর্ষকে সামনে রেখে ৭০টি নতুন ঘর নির্মাণ করা হয়।

পরবর্তীতে উপকারভোগীদের এসব ঘর বুঝিয়ে দেবার কয়েক সপ্তাহ পর খোদ উপকারভোগীরাই অভিযোগ তুলেন ঘরের জানালা উল্টো লাগানোর ফলে বৃষ্টির পানি ঘরে ডুকে। দিনেই হোক আর রাতই হোক বৃষ্টি আসলে স্ত্রী সন্তান নিয়ে ঘরে থাকা যায়না।
অধিকাংশ ঘরের পিলারের সিমেন্টের হালকা প্রলেপযুক্ত আস্থর খসে পড়ছে, ঘরে দেয়া রঙ বৃষ্টির পানিতে বিলিন হয়ে ধীরে ধীরে প্রতিটি ঘরের আস্থরে ফাটল দেখা দিয়েছে। বেশ কয়েকটি ঘরের ইটের গাথুনিতে দেখা দিয়েছে ফাটল, ঘরে দেয়া কাঠের চটি, বর্গা ভিজে শুকিয়ে নরবরে হয়ে গেছে, বৃষ্টির পানিতে কয়েকটি ঘরের পাশের বালু সরে গিয়ে ঝুঁকিতে ফেলেছে পুরো নতুন ঘর।

শুক্রবার একাধিক উপকারভোগী জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট প্রকল্প পরিদর্শকালে ঘর নির্মাণে ত্রুুটি, অনিয়ম, দুর্নীতি, নিন্মমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে ঘর তৈরী ও লুটপাটের নানা তথ্য প্রকাশ্যে তুলে ধরেন।

উপকারভোগী ৬৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ তার ঘরের পেছনে ফাটল দেখাতে গেলে উল্টো প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের উপ সহকারি প্রকৌশলী সুব্রত দাস অভিযোগকারি ওই বৃদ্ধের বিরুদ্ধে তদন্ত করার হুমকি দেন।

আরো এক উপকারভোগী তিন স্লাবের টয়লেটের স্লাব ভেঙ্গে পড়ার অভিযোগ করলে পরিদর্শন কাজ ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে ওই উপ সহকারি প্রকৌশলী গরু (গবাধি পশু) টয়লেটের স্লাব ভেঙ্গে ফেলেছে বলে খোড়া অজুহাত তৈরী করেন।

উপকারভোগী রবীন্দ্র রায় (৬৫) বলেন, আমাকে দেয়া ঘরের পেছনে ফাটল দেখা দিয়েছে, দরজা জানালা ঠিকমত লাগানো যায়না, বৃষ্টি পড়ে রাতে ঘরে ঘুমাতে পারিনা। তিনি আরো বলেন, অভিযোগ কেউ শুনতেই নারাজ, উল্টা ভয় দেখায়।

উপকারভোগী মনিরুজ্জামান বলেন, আল্লাহ! কই আইলাম বৃষ্টি আইলে রাইত ঘরে থাকতাম পারিনা, ঘরের জানালা লাগাইছে উল্টা, টিনের লাগানো চটি, বর্গায় লোহা দিছে কম, কদম গাছের চটি, বর্গা ভিজে রোদে শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, ঘরে পরিমাণ মত ইট সিমেন্ট লাগায়নি, ১৬ কড়াই বালুর সাথে ১ কড়াই সিমেন্ট দিছে ঘর ঠিকব কেমনে খালী কোন রকম ঘর দিছে, কেউ কোন অভিযাগ শুনে না, খালী মুখ বন্ধ রাখতে কয়। এ উপকারভোগী আরো বলেন, বৃষ্টি আইলে দিনে বা রাতে ছেলে মেয়ে স্ত্রী নিয়া ঘরে থাকতাম পারিনা, বালতি দিয়া পানি সেচন লাগে।

অভিযোগ ও ঘর নির্মাণ কাজের প্রসঙ্গে উপজেলার বড়দল উত্তর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন বলেন, সারা দিন সবার ঘরে তালা লাগানো থাকে ঘর ঠিক করতাম কিভাবে।

প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজের সাথে জামাল উদ্দিন ও হাজি মোশারফের সম্পৃক্ততার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তাহিরপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ত কর্মকর্তা (পিআইও) প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, বদলীকৃত ইউএনও তৎকালীন প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি পদ্মাসন সিংহ ঘরের নির্মাণ সামগ্রী কেনাকাটা ও ঘর তৈরীর কাজে তাদেরকে সম্পৃক্ত করেছেন মূলত তারা আমাদের সহযোহিতা করেছেন, তারা ঘরের নির্মাণ কাজ সুপারভাইজ করেছেন। তিনি আরো বলেন, কোন উপকারভোগী তো অভিযোগ করেনি শুধু সাংবাদিকরা অভিযোগ করছেন, লেখালেখি হচ্ছে।

প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির অপর সদস্য তাহিরপুর উপজেলা (এলজিইডি) প্রকৌশলী মো. ইকবাল কবির শুরুতে সাংবাদিকদের ভিডিও চিত্র ধারণ কাজে বাধা প্রদান করেন, এমনকি উপকারভোগী অভিযাগকারিদের নানাভাবে মুখ না খুলতে পুরো পরিদর্শন কাজে বিভিন্ন অপকৌশল অবলম্বন করেন।

তাহিরপুরে তৎকালীন সময়ে দায়িত্বে থাকা বর্তমানে জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও পদ্মাসন সিংহর সাথে মুঠোফোনে অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ না করায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সুনামগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মো. আল ইমরান রুহুল ইসলাম বলেন, উপকারভোগীদের কিছু কিছু অভিযোগ রয়েছে, পরিদর্শনে কোন অনিয়ম পাইনি, ডিজাইন অনুযায়ী ঘর তৈরী করা হয়েছে।

 

Share





Related News

Comments are Closed