ছাতকে স্বামীর পরকীয়ায় অসহায় পারভীন বেগম

ছাতক প্রতিনিধি: সমাজে পরকীয়া ভয়াবহ রূপ ধারন করেছে। সর্বনাশা পরকীয়া প্রেমের বলি হয়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে সোনার সংসার। খান খান করে ভেঙ্গে যাচ্ছে রঙিন স্বপ্ন। দিন দিন পরকীয়া নামক ভাইরাসের আক্রমন বেড়েই চলছে। অনেকেই স্কুল-কলেজে পড়ুয়া সন্তান রেখেও পরকীয়া প্রেমীক-প্রেমীকার হাত ধরে সাজানো সংসার মুহুর্তেই ভেঙ্গে দিচ্ছেন। মাত্র চার অক্ষরের একটি শব্দ পরকীয়া হলেও এর ঝাঁঝ মারাত্মক। এর ছোবলে একটি সংসার যেমন তছনছ হয়ে যায়, তেমনই ব্যাক্তি জীবন হয়ে উঠে দুর্বিসহ। এর বেশীরভাগই শিকার হচ্ছেন এই সমাজের বিবাহিত অবিবাহিত যুবক-যুবতীরা। এই পরকীয়ার কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ভবিষ্যৎ কোমলমতি শিশুরা। পরকীয়ার কারণে তৈরী হচ্ছে নানান সামাজিক অপরাধ। এর পরিণতিতে খুন-খারাবির মত ঘটনাও ঘটছে। স্বামী-স্ত্রীর পাল্টা-পাল্টি মামলা ও খরচ জোগান দিতে অনেকেই শেষ সম্বল ভিটা-জমিও বিক্রি করে অসহায় হয়ে পড়ছেন। স্বামীর পরকীয়ায় সংসার ভাঙ্গায় অনেক নারী আবার সন্তানদের নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
সুনামগঞ্জের ছাতকে পরকীয়ায় আসক্ত প্রবাসী যৌতুক লোভী স্বামী কর্তৃক ৩ সন্তানের জননী তালাক প্রাপ্ত স্ত্রীর উপর হামলা ও মামলার পর মামলা দিয়ে হয়রানীর ঘটনায় জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দায়ের করার পর আবারো তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় উপজেলার ছৈলা-আফজালাবাদ ইউনিয়নের শিবনগর গ্রামের মৃত. আব্দুল আজিজের মেয়ে পারভীন বেগম গত সোমবার (২৮ অক্টোবর) ছাতক থানায় জিডি করেছেন। জিডি নং ১৩২৭।
জিডিতে একই উপজেলার পিরপুর গ্রামের মৃত. তছবির আলীর ছেলে আক্তার হোসেনকে প্রধান আসামীসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
জিডি সুত্রে জানা যায়, গত ২৫/১০/২০১৯ ইং তারিখে বিকাল ৪টার পর আক্তার হোসেন বাহরাইন থেকে পারভীন বেগমের মোঠো ফোনে কল দিয়ে হুমকি প্রদান করে বলেন, মামলা প্রত্যাহার না করলে তার লোকজন দিয়ে পারভীন বেগমকে মারপিট করে খুন জখম করবে। এর আগে ওই নারী গত ১৭/১০/২০১৯ ইং তারিখে আক্তার হোসেনকে প্রধানসহ ১০ জনকে আসামী করে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, পারভীন বেগম গত ০৯/১২/২০০৬ ইং তারিখে দুই লক্ষ টাকা দেনমোহর ধার্য্য করে ইসলামী শরীহা বিধান মোতাবেক রেজিষ্টারী কাবিন নামা মুলে প্রবাসী আক্তার হোসেনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের ১২ বছরের দাম্পত্য জীবনে, স্মৃতি (১২), মুন্না (১০), মাহফুজ হোসেন মুহিত (৬) নামের তিনটি সন্তানও রয়েছে। তার (সাবেক) স্বামী আক্তার হোসেন প্রবাসে থাকা অবস্থায় ইউরোপের দেশে যাবেন মর্মে তার কাছে ৩ লক্ষ টাকা চেয়েছিলেন। টাকা না দিলে তাকে তালাক দিবেন বলে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। তার তিন সন্তানের দিকে তাকিয়ে গ্রামীন ব্যাংক থেকে প্রথমে ১ লক্ষ টাকা, পরে ৮০ হাজার টাকা, ৩০ হাজার টাকা, ৪০ হাজার টাকাসহ মোট দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা তুলে দেন পারভীন। কিন্ত ব্যাংকের কিস্তিগুলো এখনো তিনি পরিশোধ করতে পারেননি।
অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, প্রায় দুই বছর আগে পারভীন জানতে পারেন জগন্নাতপুর উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের ঘি-পুরা গ্রামের আরজ আলীর মেয়ে শিমলা বেগমের সাথে তার (সাবেক) স্বামী প্রবাসী আক্তার হোসেন পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। তিনি এতে বাধা দিলে শিমলা বেগমকে বিয়ে করবেন এবং তাকে তালাক দিবেন বলে হুমকি দেন আক্তার হোসেন। এর পর থেকে স্ত্রী সন্তানদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন আক্তার হোসেন। শেষে তিনি নিরুপায় হয়ে গত ০৩/১০/২০১৮ ইং তারিখে সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালত ছাতক, সুনামগঞ্জ মোকদ্দমা নম্বর (৩৮/২০১৮) দায়ের করেন। এর পর আক্তার হোসেন দেশে ফিরে তার কাছে ৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন এবং মামলা তুলে নেয়ার হুমকি দেন। যৌতুকের টাকা না দিলে আক্তার হোসেন পালভীন বেগমকে সংসারে ফিরিয়ে নিবেননা ও ২য় বিয়ে করবেন বলে হুমকি প্রদান করেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। বিশাল অংকের টাকা দেয়ার কোন সামর্থ পারভীনের না থাকায় অসহায় হয়ে আবারো ০২/০১/২০১৯ ইং তারিখে আমল গ্রহনকারী জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, ছাতক, সুনামগঞ্জ মোকদ্দমা নং (১/২০১৯) দায়ের করেন। কিন্ত মামলা দায়ের করার পর আক্তার হোসেন আবারো প্রবাসে ফিরে যান। এর কিছুদিন পর বিভিন্ন মাধ্যমে পারভীন জানতে পারেন গত ১৭/১২/২০১৮ ইং তারিখে সুনামগঞ্জ নোটারি পাবলিকে তার অজান্তে তালাক সংক্রান্ত হলফনামা সম্পাদন করে একই তারিখে সুনামগঞ্জ নোটারি পাবলিকে শিমলা বেগমের সাথে বিবাহের হলফ নামা সম্পাদন করেন আক্তার হোসেন। হলফনামা সংক্রান্ত কাগজ পত্র সংগ্রহ করে তার শশুড় বাড়ীর লোকজনকে দেখাতে গিয়ে তিনি প্রশ্ন করেন, আপনারা বললেন কোন বিয়ে সাদি করেনি বা আমাকে তালাক দেননি। তাহলে এই কাগজপত্রগুলো কি? এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শিমলা বেগম, মাালেছা বিবি, নূর হোসেন গং তাকে মারপিট করে এবং মামলা তুলে নেযার হুমকি দিয়ে বাড়ী থেকে বের করে দেয়। এ ঘটনায়ও তিনি গত ২৯/০৭/২০১৯ ইং তারিখে ছাতক থানায় নন জি আই আর প্রসিকিউশন মামলা নং ২০৭/১৯ দায়ের করেন। গত ১৩/১০/২০১৯ ইং তারিখে মাালেছা বিবি (শাশুড়ী) কর্তৃক তার বিরুদ্ধে দায়েরী মামলায় সুনামগঞ্জ কোর্টে হাজিরা দিতে গেলে শিমলা বেগম গং অতর্কিত ভাবে তার উপর হামলা ও বেধড়ক মারপিট করে এবং মামলা তুলে নেয়ার হুমকি দেয় তারা। মামলা প্রত্যাহার না করলে তাকে সুনামগঞ্জ থেকে ফিরতে দেবেনা বলে হুমকি দেয়া হয়।
এ অবস্থায় মামলা পরিচালনা, ব্যাংক লোনের কিস্তি পরিশোধ ও তিন সন্তানের লেখা পড়াসহ বরণপোষন নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন পারভিন বেগম।
অপরদিকে বিবাদীগণের অব্যাহত হুমকিতে তিনি ও তার সন্তানদের জীবন প্রায় বিপন্ন হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে এডভোকেট হানিফ সোলেমান বলেন, আক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে পারভীন বেগমের দায়েরী মোকদ্দমা নং সি আর ১/২০১৯ যৌতুক মামলায় ওয়ারেন্ট হয়েছে। তার পর মাল ক্রোকের আদেশ হওয়ার পর পত্রিকা বিজ্ঞপ্তির জন্য কোর্টের নির্দেশ আছে। পারভীন বেগম সরকারী খরচে পত্রিকা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য আবেদন করেছেন।
ছাতক থানার এস আই আতিকুল ইসলাম বলেন, আক্তার হোসেনের নামে মাল ক্রোকের আদেশ পাওয়ার পর থানা থেকে আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি দেশে নাই এবং তার নামে স্থাবর-অস্থাবর কোন সম্পদ নাই। এ বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।
ছাতক থানার ওসি মোস্তফা কামাল জিডি এন্ট্রির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, অভিযোগ ফ্রন্ট টেবিলে রিসিভ করা হয়। সিরিয়ালমত আমার হাতে আসে। না দেখে কিছু বলা যাবেনা।
Related News

বছরের প্রথম দিনে বাংলাদেশে ৯২৩৬ শিশুর জন্ম
বৈশাখী নিউজ ডেস্ক: ২০২১ সালের প্রথম দিনে বাংলােদেশে ৯,২৩৬ শিশু জন্মগ্রহণ করেছে। এছাড়া, দিনটিতে বিশ্বজুড়েRead More

নভেম্বর মাসে দেশে নির্যাতনের শিকার ৩৫৩ নারী-শিশু
বৈশাখী নিউজ ডেস্ক: দেশে নভেম্বর মাসে মোট ৩৫৩ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে।Read More
Comments are Closed