Main Menu

সিলেটে ‘ভুল চিকিৎসায়’ সাংবাদিক পুত্রের মৃত্যু

বিশ্বনাথ প্রতিনিধি : সিলেট নগরের সোবহানীঘাট এলাকার মা ও শিশু হাসপাতালে ‘ভুল চিকিৎসায়’ মারা গেছে একজন সাংবাদিকের ৩ মাস বয়েসি শিশুপুত্র। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে মা-বাবা এখন দিশেহারা- শোকে পাথর।

সোমবার সকালে শিশুটির মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন বিশ্বনাথের সাংবাদিক এমদাদুর রহমান মিলাদ। তিনি জানান, রবিবার রাত ১০টায় সিলেট নগরীর মা ও শিশু হাসপাতালে রিফাতের পায়ুপথে অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে রাত ১টায় তাকে লাইফ সাপোর্টে (আইসিইউ) নেয়া হয়। সোমবার সকালে মৃত্যু হয় শিশুটির।

জানা গেছে, সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চি ইউনিয়নের তেলিকোনা গ্রামের বাসিন্দা ও বিশ্বনাথ প্রেসক্লাবের সদস্য নূর উদ্দিনের ৩ মাস বয়েসি ছেলে রিফাতের জন্মের পর পায়খানার রাস্তায় সমস্যা দেখা দেয়। এমতাবস্থায় কিছুদিন আগে নূর উদ্দিন তার ছেলেকে সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক শিশুসার্জন ডা. শামসুর রহমান ময়নার শরণাপন্ন হন। ডা. শামসুর রহমান রিফাতের অপারেশন প্রয়োজন জানিয়ে সিলেট নগরের সোবহানীঘাটস্থ মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি হতে পরামর্শ দেন। তাঁর পরামর্শমতেই গতকাল রোববার বেলা আড়াইটার দিকে নূর উদ্দিন ছেলে রিফাতকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করান।

রাত ৯টার দিকে রিফাতের অপারেশন করবেন বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ডা. শামসুদ্দিন ফোনে জানান এবং সবকিছু প্রস্তুত করতে বলেন। রাত ৯টার সময় অপারেশন করার কথা থাকলেও তিনি আসেন রাত সাড়ে ১০টার দিকে। দেড় ঘণ্টাব্যাপী অপারেশন শেষে হসপিটালের আয়ার মাধ্যমে নূর উদ্দিনকে লম্বা রগের মতো একটি বস্তু দেখানো হয় এবং তাকে জানানো হয়- রিফাতের পেট থেকে ওই জিনিসটি বের করা হয়েছে।

তখন নূর উদ্দিনের মনে সন্দেহের উদ্রেগ হয়। কারণ- তার এক মেয়েরও ওই সমস্যা ছিলো এবং তারও অপারেশন প্রয়োজন হয়। কিন্তু মেয়ের অপারেশনের সময় এমন কিছু ঘটেনি।

পরবর্তীতে রিফাতকে পোস্ট অপারেটিভ রুমে রাখা হয় এবং রাত দেড়টার দিকে নূর উদ্দিনকে না জানিয়ে শিশুকে আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) নিয়ে যাওয়া হয়। বিষয়টি জানতে পেরে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যান নূর উদ্দিন। ওই সময় কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে বলেন, আপনার ছেলের অবস্থা খারাপ হওয়ায় আমরা আপনাকে না জানিয়েই আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

এসময় ডা. শামসুদ্দিনকে কল করার কথা বললে নূর উদ্দিনকে তারা জানান, তিনি আসতে পারবেন না। তবে তাঁর পরামর্শমতেই সব করা হয়েছে। পরে রিফাতের অবস্থা আরো খারাপ হয় এবং আজ (সোমবার) সকালে তাকে মৃত ঘোষণা করেন হাসপাতালের ডাক্তাররা।
রিফাতের পিতা নূর উদ্দিন কেঁদে কেঁদে এ প্রতিবেদককে বলেন, আমি নিশ্চিত- আমার একমাত্র ছেলেটা ভুল চিকিৎসায় মারা গেছে। আমি বার বার ডা. শামসুদ্দিনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি, কিন্তু তিনি আমার সঙ্গে কথা বলেননি। এই হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে আমার ছেলেকে নিয়ে গিয়ে কী করা হয়েছে আমি জানি না। তবে রাতে আমার ছেলেকে যখন আইসিইউ-তে দেখি- তখনই আমার ছেলেকে কেমন যেন দেখা যাচ্ছিলো। আমার মনে হয়- তখনই রিফাত আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।

নূর উদ্দিন আরও বলেন, ডা. শামসুদ্দিনের কথাতেই আমরা মা ও শিশু হাসাপাতালে রিফাতকে নিয়ে এসেছিলাম। তা না হলে আমরা তাকে অন্যত্র ভর্তি করাতাম। এখানে ডাক্তার-নার্স এমনকি মাসির সঙ্গেও ঠিকমতো কথা বলা যায় না। রোগীর স্বজনদের সঙ্গে খুব বাজে আচরণ করেন তারা।

এ বিষয়ে মা ও শিশু হাসাপাতালের অ্যাডমিন ম্যানেজার মুরশেদুর রহমান বলেন, ওই শিশুর অপারেশন আমাদের ওখানে হয়েছে এবং শিশুটি মারা গেছে ঠিকই। তবে শিশুর পিতা আবেগাপ্লুত হয়ে আমাদের প্রতি ভুল চিকিৎসার অভিযোগ এনেছেন। তার ছেলের খাদ্যনালী ও পায়খানার রাস্তায় সমস্যা ছিলো। অপারেশন শেষে শিশুর নিউমোনিয়া বেড়ে যায়, যে সমস্যা ওই শিশুর আগে থেকেই ছিলো। এমতাবস্থায় আমরা শিশুকে আইসিইউতে নেই এবং তার চাচার সঙ্গে কথা বলেই নিয়েছি। ওই সময় শিশুর পিতা ওখানে উপস্থিত ছিলেন না তাই তাকে জানানো যায়নি। কিন্তু শিশুর অবস্থার উন্নতি হয়নি তাই সে মারা যায়।

মুরশেদুর রহমান বলেন, প্রয়োজনে যে কোনো মেডিকেল বোর্ড বসিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখা যেতে পারে। তবে আমাদের চিকিৎসায় কোনো ভুল নেই।

তিনি আরও বলেন, আমরা কিন্তু আজ বিলের টাকা নেইনি। বলেছি- আপনাদের শিশুর দাফন-কাফন শেষে আপনাদের সুবিধামতো সময়ে এসে বিলের টাকা দেবেন। এই ‘মানবতাটুকু’ আমারা তাদের দিয়েছি।

এ বিষয়ে জানতে ডা. শামসুর রহমান ময়নার মোবাইল ফোন নাম্বারে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।

Share





Related News

Comments are Closed