Main Menu

সৎ ব্যবসা উত্তম ইবাদত

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান : ইসলাম আল্লাহর মনোনীত একমাত্র পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হিসাবে জীবনের সব ক্ষেত্রের মতো ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও কল্যাণও অকল্যাণের বিষয়গুলো স্পষ্ট করে বর্ণনা করেছে।ব্যবসা সম্পর্কে আল কুরআনের মৌলিক কথা হলো: ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরস্পরের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। তবে ব্যবসা করবে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে এবং কখনো (স্বার্থের কারণে) একে অপরকে হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি অত্যন্ত মেহেরবান।’ “আল-কুরআন, সূরা আন্ নিসা, আয়াত ২৯।” ‘আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম।’ “আল কুরআন, সূরা বাকারা, আয়াত ২৭৫।”

আদর্শ ইসলামী শাসনের যুগে ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আল্লাহর দেয়া বিধি-বিধান পুরোপুরি মেনে চলা হতো। ফলে সেখানে বর্তমান যুগের ন্যায় বৈজ্ঞানিক উৎকর্ষতার উন্মেষ না ঘটলেও সমাজের সর্বস্তরে কল্যাণের বারিধারা প্রবাহিত ছিল। বর্তমান বিজ্ঞান ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সমাজ-সভ্যতার সকল ক্ষেত্রকে দশ কদম এগিয়ে দিলেও, অনৈতিক কর্মকান্ড আমাদেরকে আজো পিছনের মজবুত খুঁটিতে বেঁধে রেখেছে। দুর্নীতি ও দুরাচার আমাদের পিছু ছাড়ছে না। বিশেষত বাংলাদেশে এ সংকট আরো প্রকট। নৈতিকতার মত মৌল উপাদানকে বিজ্ঞানের সাথে যুক্ত করার সুপারিশ করা যেতে পারে। কারণ নৈতিকতাহীন বিজ্ঞান পৃথিবীকে নৈরাজ্যের দিকেই ঠেলে দিয়েছে।

এখানে ক্রয়-বিক্রয় বা ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত বিধি-বিধান বর্ণনা করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। কারণ আলহামদুলিল্লাহ ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত অনেক বই-পুস্তক বাজারে এসেছে। আমাদের দৈনন্দিন ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কিছু নৈতিক বিষয় তুলে ধরাই মূল লক্ষ, যেগুলোকে আমাদের ব্যবসায়ীরা কোন ক্ষেত্রে কম গুরুত্ব দেন আবার কোনো ক্ষেত্রে আদৌ গুরুত্ব দেন না। বাংলাদেশ সহ সারাবিশ্বে ইসলামী ব্যাংকিং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে ব্যাপক পরিবর্তনের সূচনা করেছে তার প্রেক্ষিতে ইসলামী অর্থনীতি সম্পর্কে আরো বেশি করে জানার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে। আলহামদুলিল্লাহ ইসলামী অর্থনীতিবিদগণ বসে নেই, চাহিদার পাশাপাশি ইসলামী শরীয়ার আলোকে তাঁরা তথ্যের যোগান দিয়ে যাচ্ছেন। অর্থনীতি আগাগোড়া একটি ব্যবহারিক বিষয়। সাধারণ অর্থনীতির বিষয়াবলীকে ইসলামের আলোকে ঢেলে সাজানো, আধুনিক সমস্যার সমাধান বা পর্যালাচনা করতে গিয়ে সিলামী অর্থনীতিও সাধারণের জন্য কিছুটা জটিল রূপ ধারণ করেছে। ফলে সে সমস্ত জটিল বিষয়ের আলোকে যুগ যুগ ধরে চলে আসা ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নৈতিক কর্মকান্ডগুলো ইসলামের আলোকে চিহ্নিত করাও কষ্ট সাধ্য ব্যাপার।

ইসলামী অর্থনীতির এক বিরাট অধ্যায় হলো ক্রয়-বিক্রয় (ইুঁরহম ্ ঝবষষরহম)। একে ইসলামী অর্থনীতির ভিত্তিই বলা চলে। কারণ ট্রেডিশনাল অর্থনীতির ভিত্তি যদি সুদ হয় এবং একে ঘিরেই তা আবর্তিত হয়, তবে ইসলামী অর্থনীতির ভিত্তি ক্রয়-বিক্রয় (ইুঁরহম ্ ঝবষষরহম)-কে ঘিরে আবর্তিত হওয়াই স্বাভাবিক।

ক্রয় বিক্রয়ের সংজ্ঞা ও পরিচিতি : ‘ব্যয়’ শব্দটি দুই বিপরীত অর্থবোধক তথা ক্রয়-বিক্রয় উভয় অর্থেই ব্যবহৃত হয়। যেমন ইবনে উমর রা. নবী স. থেকে বর্ণনা করেন; ‘তোমাদের কেউ যেন অন্য কারো ক্রয়ের উপর ক্রয় না করে।’ “জামে তিরমিযী ও হাকিম।” তবে ‘ব্যয়’ এর প্রকৃত অর্থ বিক্রয়। কারণ ক্রয়ের জন্য ‘শিরা’ শব্দ ব্যবহৃত হয়। “আল মাওদুআতুল ফিকহিয়্যা, ১ম খন্ড ১ম সং, কুয়েত ১৪০৭ হি।”

প্রকৃতপক্ষে যেখানে ক্রয় সেখানেই বিক্রয়, আর যেখানে বিক্রয় সেখানে ক্রয়। কারণ যে ক্রয় করেছে তার নিকট আর একজন বিক্রয় করেছে এবং যে বিক্রয় করেছে তার কাছ থেকে আর একজন ক্রয় করেছে। সুতরাং ‘ব্যয়’ উভয় অর্থই বোঝাবে। ব্যয় ও শিরা এর শাব্দিক অর্থ হলো: একটি জিনিসকে অন্য জিনিসের সাথে বিনিময় করা। হানাফী মাযহাব মতে এর পারিভাষিক অর্থ হলো ‘কাউকে একটি মালের বিনিময়ে অন্য মালের মালিক বানিয়ে দেয়া।’ অন্য মতে ‘পারস্পরিক সম্মতিক্রমে একটি মালকে অন্য মালের সাথে বিনিময় করা। “হিদায়া, বুযু পর্ব, বুরহানুদ্দীন মারগীনানী (রঃ)।” অন্য মতে ‘একজনের মাল অপরজনের মালের সাথে পারস্পরিক স্বেচ্ছা সম্মতির ভিত্তিতে বিনিময় করাকে ক্রয়-বিক্রয় বলে।’ “আলমগীরী ৩য় খন্ড।” ফিকহের গ্রন্থাবলীতে ‘কিতাবুল বুয়ূ’ বলতে পণ্যের ক্রয়-বিক্রয়, শিল্প-উৎপাদন ও বাণিজ্যিক লেনদেন সবকিছুকেই বুঝায়। “ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত মাস্লা-মাসায়েল, সম্পাদনা পরিষদ, ইফারা প্রকাশন, মে-২০০৫।”

ব্যবসা-বাণিজ্য : আরবী তিজারাত পরিভাষাটি বহুল প্রচলিত একটি শব্দ, যার অর্থ ব্যবসা-বাণিজ্য। আল কুরআনের আট-নয়টি আয়াতে শব্দটির উল্লেখ আছে। ইমাম রাগিবের ব্যাখ্যায় শব্দটির অর্থ করা হয়েছে ‘মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে মূলধন বিনিয়োগ ও ব্যবহার করা। “মুফরাদাত, ইমামরাগিব ইস্পাহনী।” ক্রয়-বিক্রয়ের প্রক্রিয়াকে মূলত তিজারাত বলা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা হিদায়াতের বিনিময়ে ভ্রষ্টতা ক্রয় করেছে। ফলে তাদের ব্যবসা মোটেই লাভজনক হয়নি। এরা সুপথপ্রাপ্ত নয়।’ “আল কুরআন, সূরা বাকারা, আয়াত-১৬।”

উল্লেখিত আয়াতে হিদায়াত ও ভ্রষ্টতাকে পণ্য ও মূল্য বলা হয়েছে এবং এ কর্মটিকে তিজারাত বলা হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যকে আল্লাহ তাআলা হালাল করেছেন এবং এটিকে আয়-উপার্জনের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা পরস্পরের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। তবে পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য অনুমোদিত এবং কখনো একে অপরকে হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি অত্যন্ত মেহেরবান।’ “আল-কুরআন, সূরা আন্ নিসা, আয়াত ২৯।” ‘আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম।’ “আল কুরআন, সূরা বাকারা, আয়াত ২৭৫।”

ব্যবসা-বাণিজ্যে হালাল-হারাম : পূর্বেই বলা হয়েছে যে, মানুষের জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হলো ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবসা-বাণিজ্য। এ কারণে পবিত্র কুরআন ও হাদীসে এর উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু আজ মানুষ বিশেষত মুসলমানরা এ হালাল ব্যবসার সাথে বিভিন্নভাবে হারামের মিশ্রণ ঘটিয়েছে। খাদ্যদ্রব্যসহ অন্যান্য জিনিসে ভেজাল মেশানো, মজুদদারীর মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ফায়েদা লুটা, প্রতারণাপূর্ণ দালালীর মাধ্যমে উচ্চ দাম হাঁকা, মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের নিমিত্ত লোভনীয় বিজ্ঞাপন ও কৃত্রিম উপায় অবলম্বন করা, মিথ্যা শপথ করা, বিক্রিত মালের দোষ ত্রুটি গোপন করা, ঙাবৎ ও ঁহফবৎ রহাড়রপরহম এর মাধ্যমে ফায়েদা হাসিল করা, বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে উঁঃু, ঠধঃ না দেয়া, চোরাই কারবার করা, সরকারের প্রাপ্য কর ফাঁকি দেয়া, মাপে বা ওজনে কারচুপি করা ইত্যাদি সকল প্রকার অপকৌশল আল কুরআন ও হাদীসের আলোকে অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ এর অন্তর্ভুক্ত। মাপে কারচুপির ব্যাপারে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, ‘ধ্বংস তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয়। তাদের অবস্থা এই যে, লোকদের থেকে নেবার সময় পুরো মাত্রায় নেয় এবং তাদেরকে ওজন করে বা মেপে দেবার সময় কম দেয়। এরা কি চিন্তা করে না, একটি মহাদিবসে এদেরকে উঠানো হবে?’ “আল কুরআন, সূরা আর মুতাফফিফীন, আয়াত ১-৬।”

এছাড়া কুরআন মজীদের বিভিন্ন স্থানে ওজনে ও মাপে কারচুপি করার কঠোর নিন্দা করা হয়েছে এবং সঠিকভাবে ওজন ও পরিমাপ করার জন্য কড়া তাগিদ দেয়া হয়েছে। সুরা আনআম এ বলা হয়েছে, ‘ইনসাফ সহকারে পুরো মাত্রায় ওজনও পরিমাপ করো। আমি কাউকে তার সামর্থের চাইতে বেশির জন্য দায়িত্বশীল করি না।’ আয়াত ১৫২। সূরা বণী ইসরাঈলে বলা হয়েছে, ‘মাপার সময়পুরো মাপবে এবং সঠিক পাল্লা দিয়ে ওজন করবে।’ আয়াত ৩৫। সূরা আর রহমানে তাকীদ করা হয়েছে: ওজনে কারচুপি করো না, ঠিক ঠিকভাবে ইনসফের সাথে ওজন করো এবং পাল্লায় কম করে দিয়ো না।’ আয়াত ৮-৯। মাপে কম-বেশী করার জন্য হযরত শো’আইব আ. এর স¤প্রদায় আল্লাহর গযবে নিপতিত হয়।

প্রতারণাপূর্ণ বিভিন্ন ব্যবসা সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল স. এর বাণী নিম্নরূপ :

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি নবী স. এর নিকট বললো যে, ক্রয় বিক্রয়ে সে প্রতারিত হয়। তিনি বললেন, যখন তুমি খরিদ করবে তখন বলবে, যেন ধোঁকা না দেয়া হয়।’ “সহীহ্ বুখারী।” আবু হুরায়রা রা. বলেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ স.-কে বলতে শুনেছি: ‘মিথ্যা শপথের দ্বারা পণ্য সামগ্রী বিক্রি হয়ে যায় বটে কিন্তু এতে বরকত বা কল্যাণ লুপ্ত হয়ে যায়।’ “সহীহ্ বুখারী।”

আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফা রা. হতে বর্ণিত। ‘এক ব্যক্তি তার পণ্যদ্রব্য বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে মুসলমানদের ফাঁকি দেয়ার জন্য আল্লাহর নামে শপথ করে এবং বলে ঐ মাল সে যত দামে কিনেছে তা এখনও কেউ বলেনি। তখন এ আয়াত নাযিল হয় : ‘যারা আল্লাহর সাথে কৃত চুক্তি ও নিজেদের শপথ তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে।’ “সহীহ্ বুখারী।” হযরত উমর রা. বলেছেন, ‘নবী স. প্রতারণাপূর্ণ দালালী করতে নিষেধ করেছেন। “সহীহ্ বুখারী।” হাকীম ইবনে হিযাম রা. থেকে বর্ণিত। নবী স. বলেছেন, ‘ক্রেতা ও বিক্রেতা ক্রয়-বিক্রয় শেষে পরস্পর বিচ্ছিন্ন না হওয়া পর্যন্ত ক্রয়-বিক্রয় বাতিল করার এখতিয়ার থাকে। যদি তারা উভয়ে সত্য কথা বলে এবং দোষ বর্ণনা করে, তাহলে এ ক্রয়-বিক্রয়ে উভয়কেই বরকত দান করা হয়। কিন্তু যদি মিথ্যা কতা বলে ও দোষ গোপন করে, তাহলে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’ “সহীহ্ বুখারী।” আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। নবী স. বলেছেন, ‘তোমরা (বিক্রয়ের পূর্বে) উষ্ট্রীও বকরীর বাঁটে দুধ জমিয়ে রেখো না।’ “সহীহ্ বুখারী” হারাম দ্রব্য যা মানুষের সার্বিক ক্ষতি সাধন করে সেগুলোর ব্যবসা করা এ অন্যায়ের অন্তর্ভুক্ত। যেখানে অপর ব্যক্তি, পক্ষ, গোষ্ঠী, সমাজ ও দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা অবশ্যই কুরআন-হাদীসের আলোকে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার অন্তর্ভুক্ত হবে।

ব্যবসার গুরুত্ব : ক্রয়-বিক্রয়, ব্যবসা-বাণিজ্য, উৎপাদন ওবণ্টন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মানুষের গোটা জীবনের এক বিশাল অংশ দখল করে আছে এবং তা মানুষের জীবনকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে থাকে। তাই ইসলামী অর্থনীতিতে ব্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ বাঁচার জন্য মানুষের রিযিকের প্রয়োজন। এ রিযিক পৃথিবীতে সংগ্রাম করে আহরণ করতে হবে। রিযিক আহরণের জন্য মানুষকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিভিন্ন পেশা গ্রহণ করতে হয়। তাছাড়া পণ্য দ্রব্যাদির আদান-প্রদান এমন একটি প্রয়োজন, যা না হলে মানব জীবন অচল হয়ে পড়ে। কারণ আমার নিকট যা আছে অন্যের নিকট তা নাই, আবার আমার যা নাই তা অন্যের নিকট আছে। তাই পারস্পরিক বিনিময়ের জন্য ইসলামী শরীয়ত ক্রয়-বিক্রয়কে জায়েয ঘোষণা করেছে। কুরআন ও হাদীসে ব্যবসা-বাণিজ্যকে ধন-সম্পদ বিনিময় বা আয়-উপার্জনের মাধ্যম বলা হয়েছে। হালাল উপায়ে আয়-উপার্জন করতে হলে, তার সঠিক পন্থা হলো পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে ব্যবসা-বাণিজ্য করা। বাতিল পন্থায় আয়-উপার্জন করা হারাম। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরস্পরের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। তবে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে ব্যবসা-বাণিজ্য করা যেতে পারে।’ “আল-কুরআন, সূরা আন্ নিসা, আয়াত ২৯।”

নবী করিম স. ও সাহাবায়ে কেরামসহ ইসলামের বড় বড় ওলামায়ে কেরামগণ ব্যবসা করেছেন। আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত। নবীস. বলেছেন, ‘বিশ্বস্ত ও সত্যবাদী ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন নবীগণ, সিদ্দিকগণ ও শহীদগণের সঙ্গী হবেন।’ “হিদায়া বুযু পর্ব।” সুতরাং ইসলামী অর্থনীতিতে ব্যবসা-বাণিজ্যের গুরুত্ব অত্যধিক।

ক্রয়-বিক্রয়ের প্রকারঃ বিনিময়ের দিক থেকে ‘বায়’ চার প্রকার :
(১) বায়’ুল ‘আয়ন বিল ‘আয়ন; যেমন এক ব্যক্তি কাপড় দিল, অন্যজন এর পরিবর্তে শস্য দিল। এটি বায়-এর সেই প্রক্রিয়া যাকে প্রচলিত ভাষায় বার্টার সিস্টেম বা পণ্যের বিনিময় বলে।
(২) ব্যয়উদ দায়ন বিদ দায়ন; অর্থাৎ অর্থের পরিবর্তে অর্থ প্রদান করা। যেমন এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে এক টাকার নোট দিল, অপর ব্যক্তি তাকে এক টাকার খুচরা পয়সা দিল।
(৩) বায়উদ দায়ন বিল আয়ন: একে বায় সালামও বলে। এ প্রক্রিয়ায় বিক্রেতা ক্রেতার নিকট থেকে পণ্যের দাম অগ্রিম গ্রহণ করে।
(৪) বায়উল আয়ন বিদ দায়ন: একে বায় মুতলাক (সাধারণ ক্রয়-বিক্রয়) বলে। অর্থাৎ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যে কেনা-বেচা হয় তাকে সাধারণ ক্রয় বিক্রয় বলে। যেমন বিক্রেতা এক মণ ধান দিল এবং ক্রেতা তাকে ৩০০ টাকা দিল।

দামের দিক থেকে বায় চার প্রকার :
(১) মুরাবাহা : বিক্রেতা মালের ক্রয় মূল্যের সাথে লাভ যোগ করে বিক্রি করে। (২) তাওলিয়া : ক্রেতা যে দামে ক্রয় করেছে, কোন প্রকার লাভ ছাড়া সে দামেই বিক্রি করে।
(৩) ওয়াদিয়া: ক্রেতা যে দামে ক্রয় করেছে, তার চেয়ে কম দামে বিক্রি করে। (৪) মুসাওমা : ক্রেতা যে দামে ক্রয় করেছে, তা বিবেচনা না করে যে কোন মূল্যে বিক্রি করে।

হুকুমের বিবেচনায় বায় চার প্রকার : (১) সহিহ্ ও নাফেয (সঠিক ও কার্যকর ক্রয়-বিক্রয়), এর প্রক্রিয়া এই যে, উভয় পক্ষের নিকট মাল থাকতে হবে। ক্রেতাও বিক্রেতা জ্ঞান সম্পন্ন হবে, পাগল বা অপ্রাপ্ত বয়স্ক হবে না। চাই ক্রেতা-বিক্রেতা মূল ব্যক্তি হোক বা তাদের উকিল তথা প্রতিনিধি হোক।
(২) বায় ফাসেদ : ক্রয়-বিক্রয় কোন শর্তের অনুপস্থিতিতে ত্রুটিযুক্ত, ক্তিু শর্ত পূরণ করলে তা সঠিক হবে।
(৩) বায় বাতিল : যে বিক্রয় মূলগত ও গুণগতভাবেই বাতিল এবং কোনভাবেই সংশোধনযোগ্য নয়।
(৪) বায় মওকুফ : কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তির মাল তার অনুমতি ব্যতীত বিক্রি করে। এ রূপ বায়ের আইনগত অবস্থা হলো-যতক্ষণ মূল মালিকের সম্মতি না পাওয়া যায় ততক্ষণ পর্যন্ত তা সঠিক ও কার্যকরি হবে না। “হিদায়্যা বুযু পর্ব”।

ক্রয়-বিক্রয়ের ভিত্তি ঃ ফকিহ্গণ ক্রয়-বিক্রয়ের দু’টি মৌলিক ভিত্তির কথা বলেছেন। এক, উভয় পক্ষের ইজাব ও কবুল অর্থাৎ প্রস্তাব ও সম্মতি দান। দুই, মালিকানা হস্তান্তর। অর্থাৎ ক্রেতার জন্য মালের ওপর এবং বিক্রেতার জ্য দামের ওপর মালিকানা সাব্যস্ত হওয়া।

ক্রয়-বিক্রয়ের শর্ত ও হুকুম ঃ বায় সংঘটিত হওয়ার জন্য চার ধরনের শর্ত রয়েছে : (১) কিছু শর্ত ক্রেতা ও বিক্রেতাগণের সাথে সংশ্লিষ্ট
(২) কিছু শর্ত মূল বেচা-কেনায় আবশ্যক।
(৩) কিছু ক্রয়-বিক্রয়ের স্থানের সাথে সংযুক্ত।
(৪) কিছু শর্তক্রয়-বিক্রয়কৃত মালের সাথে সংশ্লিষ্ট।

ক্রয়-বিক্রয় সম্পাদনকারী পক্ষদ্বয়ের জন্য শর্ত ২টি:
(১) আকেলমন্দ তথা বুদ্ধিজ্ঞান সম্পন্ন হওয়া। পাগল এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি সম্পাদনের অযোগ্য।
(২) ক্রেতা-বিক্রেতার স্বতন্ত্র ব্যক্তি হওয়া কারণ একই ব্যক্তি ক্রেতা ও বিক্রেতা হতে পারে না। নিজের সাথে কেউ ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি সম্পাদন করতে পারে না।
মূল ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট শর্ত এই যে, ইজাবের সাথে কবুলের সামঞ্জস্য থাকতে হবে। অর্থাৎ বিক্রেতা যেই মূল্য প্রস্তাব করেছে, ক্রেতার সেই মূল্যে গ্রহণ করার সম্মতি থাকতে হবে। যেমন বিক্রেতা একটি কাপড়ের মূল্য একশত টাকা প্রস্তাব করল, এখানে ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন হওয়ার জন্য ক্রেতাকে এক শত টাকায় তা ক্রয়ের সম্মতি ব্যক্ত করতে হবে। ক্রেতা এর ব্যতিক্রম করলে ক্রয়-বিক্রয় সংঘটিত হবে না। ইজাব-কবুলের ক্রিয়াটি অতীতকাল বাচক হতে হবে। একজন অতীতকাল এবং অন্যজন ভবিষ্যতকাল প্রকাশক শব্দ ব্যবহার করলে ক্রয়-বিক্রয় সম্পাদিত হবে না। ক্রয়-বিক্রয় স্থানের শর্ত এই যে, ইজাব-কবুল একই মজলিসে সংঘটিত হতে হবে।

মালের দিক থেকে শর্ত ছয়টি :
(১) বিক্রিতব্য পণ্যটি বিদ্যমান থাকা অর্থাৎ অনুপস্থিত বেদখল মালের ক্রয়-বিক্রয় সম্পাদিত হবে না।
(২) মাল হওয়া। অর্থাৎ শরীয়তের দৃষ্টিতে পণ্যটি মাল হতে হবে। ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম দ্রব্য মাল হিসাবে গণ্য হয় না যেমন শূকর, মদ।
(৩) মালটি অর্থের দ্বারা পরিমাপযোগ্য হওয়া। যার কোন আর্থিক মূল্য নাই, তার ক্রয়-বিক্রয় সম্পাদিত হবে না।
(৪) বিক্রিতব্য মালের ওপর মালিকানা বদ্যমান থাকা।
(৫) মালটি মালিকানাযোগ্য হওয়া। যেমন চন্দ্র, সূর্য্য ইত্যাদি মালিকানা অযোগ্য।
(৬) বিক্রিতব্য মালটি হস্তান্তরযোগ্য হতে হবে।

এছাড়াও কিছু সাধারণ শর্তাবলী রয়েছে, যেমন: (১) ক্রয়-বিক্রয় নির্দিষ্ট সময় সীমার জন্য হওয়া (২) মাল সুনির্দিষ্ট হওয়া (৩) মূল্য নির্দিষ্ট হওয়া (৪) ক্রয়-বিক্রয়ে একটা উপকারিতা থাকা চাই। কাজেই যে ক্রয়-বিক্রয়ে কোন উপকারিতা নাই, তা না করা ভাল। (৫) ফাসেদকারী (ত্রুটিযুক্ত) শর্ত হতে মুক্ত হওয়া (৬) বাকিতে বিক্রয়ের ক্ষেত্রে বিক্রিতব্য মাল ও মূল্য হস্তান্তরের জন্য সময় ও স্থান নির্ধারিত হওয়া। (৭) ক্রয়-বিক্রয় সুদমুক্ত হওয়া (৮) বায়ে সারফ অর্থাৎ সোনা, রূপা ও মুদ্রা বিনিময় হলে পক্ষদ্বয় পরস্পর পৃথক হওয়ার পূর্বেই বিনিময়কৃত মাল পরস্পর হস্তগত হওয়া (৯) বায় সালামের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সকল শর্ত বিদ্যমান থাকা। “ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত মাস্লা-মাসায়েল, সম্পাদনা পরিষদ, ইফারা প্রকাশন, মে-২০০৫।”

ক্রয়-বিক্রয় সম্পাদনে শব্দঃ ফকীহগণ বলেন, তামলিক (মালিক বানানো) ও তামালুক (মালিক হওয়া)-এর অর্থ জ্ঞাপক যে কোন শ্দ দ্বারা ক্রয়-বিক্রয় সংঘটিত হয়ে যায়। চাই তা অতীতকাল জ্ঞাপক ক্রিয়াপদ হোক বা বর্তমানকাল জ্ঞাপক। চাই তা বাংলা ভাষায় বলা হোক বা অন্য কোন ভাষায় বলা হোক, তবে ভাষা উভয়ের বোধগম্য হতে হবে। অতীতকাল জ্ঞাপক ক্রিয়া হলে এ ক্ষেত্রে বর্তমান-এর নিয়ত করা আবশ্যক নয়। বরং নিয়ত ছাড়াই ক্রয়-বিক্রয় সংঘটিত হয়ে যাবে। ক্রেতা বা বিক্রেতার কোন একজন বলল, আমি বিক্রি করলাম তারপর অপরজন বলল, আমি ক্রয় করলাম, এতে ক্রয়-বিক্রয় সম্পাদিত হয়ে যাবে।

সুদ ও ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যে পার্থক্যঃ কুরআন-হাদীসের জ্ঞান না থাকার কারণে কেউ কেউ জাহেলী যুগের পৌত্তলিকদের মতই উক্তি করে থাকে যে, ক্রয়-বিক্রয় লব্ধ মুনাফা তো সুদেরই অনুরূপ। বিশেষ করে বিশ্বব্যাপী ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থার সাফল্য ও অগ্রযাত্রায় প্রায়ই উল্লেখিত মন্তব্য করা হয়। বিশ্ব অর্থনীতি ও ব্যাংক ব্যবস্থা সুদনির্ভর বা সুদীপ্রভাব বলয়ে বেড়ে উঠেছে। তাছাড়া দীর্ঘকাল ইসলামী অনুশাসনের অনুপস্থিতির কারণে ইসলামী আর্থিক লেনদেনও চালু নেই। ফলে এ ক্ষেত্রে মানুষের ধারণা ও জ্ঞান এতই সীমিত যে, তাদের কাছে ইসলামী অর্থনীতি, ইসলামী ব্যাংকিং যেন একটি কাল্পনিক বিষয়। প্রচলিত অর্থনীতি ও ব্যাংকিং কার্যক্রম দ্বারা তাদের চিন্তা ও চেতনা আচ্ছন্ন হয়ে আছে। ইসলামী অর্থনীতির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে সুবিচার ও সুষম বণ্টন নিশ্চিত করে সামাজিক কল্যাণ সাধন করা। এ লক্ষে ইসলাম ক্রয়-বিক্রয়কে করেছে হালাল আর সুদকে করেছে হারাম। আল্লাহ বলেন, ‘যারা সুদ বায়, তাদের অবস্থা হয় ঠিক সেই লোকটির মতো, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল করে দিয়েছে। তাদের এই অবস্থায় উপনীত হবার কারণ হচ্ছে এই যে, তারা বলে: ব্যবসা তো সুদেরই মতো। অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম। কাজেই যে ব্যক্তির কাছে তার রবের পক্ষ থেকে এই উপদেশ পৌঁছে যায় এবং সে বিরত হয়, সে ক্ষেত্রে যা কিছু সে খেয়ে ফেলেছে তাতো খেয়ে ফেলেছেই এবং এ ব্যাপারটি আল্লাহর কাছে সোপর্দ হয়ে গেছে। আর এই নির্দেশের পরও যে ব্যক্তি এই কাজ করে, সে জাহান্নামের অধিবাসী। “আল-কুরআন, সূরা বাকারা, আয়াত-২৭৫।”

এক শ্রেণীর লোক বলে, তারাও ১৫%,আমরাও ১৫% তফাৎ কোথায়? প্রকৃতপক্ষে শতকরা হারের সাথে জায়েয-নাজায়েযের মানদন্ড সম্পর্কিত নয়, মানদন্ডের সম্পর্ক হলো প্রক্রিয়া ও পদ্ধতির সাথে। রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার অনুপস্থিতির কারণে ইসলামী ব্যাংকগুলো বাই-মুরাবাহা, বাই-মুয়াজ্জাল এবং বাই-সালাম পদ্ধতিতে ব্যবসা পরিচালনা করতে অধিক স্বাচ্ছন্দবোধ করছে। অর্থাৎ ইসলামী ব্যাংক কেনা-বেচা পদ্ধতিতে বিনিয়োগ পরিচালনা করে থাকে।যা প্রচলিত সুদী ব্যাংকের প্লেজ ও হাইপোথিকেশনের মতো মনে হয়। উল্লেখ্য প্লেজ ও হাইপোথিকেশন দুটি জায়েজ পদ্ধতি। ফলে প্রচলিত ও ইসলামী ব্যাংকের মধ্যে পার্থক্য সহজে বুঝা যায় না।

সুদ : সুদ হারাম। কারণ এটি একটি শোষণের হাতিয়ার। সুদ মানুষকে বিভিন্নভাবে খারাপ কাজে ঠেলে দেয়। কার্পণ্য, হৃদয়হীনতা, স্বার্থপরতা ও নিষ্ঠুরতার অসৎ গুণাবলী সৃষ্টি করে। তাই কুরআন ও হাদীসে এটিকে ধ্বংসাত্মক উপাদান বলে অভিহিত করা হয়েছে।

সুদের সংজ্ঞাঃ সুদের আরবী শব্দ রিবা যার অর্থ বৃদ্ধি পাওয়া। পারিভার্ষিক অর্থে ‘নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ঋণ দেওয়ার পর তার উপর একটি নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে অতিরিক্ত কিছু অর্থ আদায় করলে এ অতিরিক্ত অর্থই সুদ। তদ্রুপ একই প্রজাতির খাদ্যশস্য কম পরিমাণের বিনিময়ে বেশি পরিমাণ নিলে এ বেশিটুকুই সুদ। প্রথমটি রিবা নাসিয়া এবং শেষোক্তটি রিবা ফদল।

রিবা নাসিয়া হলো ঃ ঋণ নগদ অর্থে অথবা দ্রব্য-সামগ্রীর আকারে যেভাবেই হোক তার উপর সময়ের ভিত্তিতে পূর্ব নির্ধারিত হারে অতিরিক্ত কিছু আদায় করা হলে সেই অতিরিক্ত অর্থবা দ্রব্যকে নাসিয়া সুদ বলা হয়।

রিবা ফদল ঃ একই প্রজাতির খাদ্যশস্য নগদ বিনিময়ের ক্ষেত্রে একপক্ষ যদি অতিরিক্ত কিছু দেয় তবে তাকে রিবা ফদল বলা হয়। যেমন দুই কেজি নিম্নমানের খেজুরের সাথে এক কেজি ভালো খেজুরের বিনিময় করা। রসুলুল্লাহস. এ ধরনের লেনদেনকে হারাম গণ্য করতেন।
রিবা সম্পর্কে কুরআন-হাদীসের ফয়সালা নিম্নরূপ:

আল-কুরআন : ‘যে সুদ তোমরা দিয়ে থাকো, যাতে মানুষের সম্পদের সাথে মিশে তা বেড়ে যায়, আল্লাহর কাছে তা বাড়ে না। আর যে যাকাত তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে দিয়ে থাকো তা প্রদানকাী আসলে নিজের সম্পদ বৃদ্ধি করে। “আল-কুরআন, সূরা রুম আয়াত-৩৯১।” ‘তাদের সুদ গ্রহণ করার জন্য যা গ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছিল এবং অন্যায়ভাবে লোকদের ধন-সম্পদ গ্রাস করার জন্য। “আল-কুরআন, সূরা আন্ নিসা, আয়াত-১৬১।” হে ঈমানদারগণ! এ চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খাওয়া বন্ধ করো। এবং আল্লাহকে ভয় করো, আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হবে। “আল-কুরআন, সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১৩০।”

যারা নিজেদের ধন সম্পদ দিনরাত গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তাদের প্রতিদান রয়েছে তাদের রবের কাছে এবং তাদের কোন ভয় ও দুঃখ নেই। কিন্তু যারা সুদ খায়, তাদের অবস্থা হয় ঠিক সেই লোকটির মতো, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল করে দিয়েছে। তাদের এই অবস্থায় উপনীত হবার কারণ হচ্ছে এই যে, তারা বলে: ব্যবসা তো সুদেরই মতো। অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম। কাজেই যে ব্যক্তির কাছে তার রবের পক্ষ থেকে এই উপদেশ পৌঁছে যায় এবং সে বিরত হয়, সে কেষত্রে যা কিছু সে খেয়ে ফেলেছে তাতো খেয়ে ফেলেছেই এবং এ ব্যাপরটি আল্লাহর কাছে সোপর্দ হয়ে গেছে। আর এই নির্দেশের পরও যে ব্যক্তি এই কাজ করে, সে জাহান্নামের অধিবাসী। সেখানে থাকবে চিরকাল। আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বর্ধিত ও বিকশিত করেন। আল্লাহ অকৃতজ্ঞ দুস্কৃতকারীকে পছন্দ করেন না। “আল-কুরআন, সূরা বাকারা, আয়াত-২৭৫-২৭৬।” ‘ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং লোকদের কাছে তোমাদের যে সুদ বাকি রয়ে গেছে তা ছেড়ে দাও, যদি যথার্থই তোমরা ঈমানদার হয়ে থাকে। কিন্তু যদি তোমরা এমনটি না করো তাহলে জেনে রাখো, এটি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা। কিন্তু যদি তোমরা তওবা করো, তাহলে তোমরা নিজের মূলধনের অধিকারী হবে। তোমরা জুলুম করবে না এবং তোমাদের প্রতি জুলুম করা হবে না। “আল-কুরআন, সূরা বাকারা, আয়াত-২৭৮ ও ২৭৯।”

রসুলুল্লাহ স. এর হাদীস ঃ হযরত আবু হোরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ স. বলেছেন, সুদের গুণাহর সত্তরটি স্তর রয়েছ। এর সর্বনিম্ন স্তর হলো নিজের মায়ের সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হবার সমতুল্য। “ইবনে মাজাহ।” আবু সাইদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত। একবার বিলাল রা. ভাল জাতের খেজুর নিয়ে রসুলুল্লাহ স.-এর খেদমতে হাজির হলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এসব কোথা থেকে আনলে? বিলাল রা. জবাব দিলেন, আমাদের নিকট নিকৃষ্টমানের খেজুর ছিল, তার দুই সা পরিমাণ দিয়ে উৎকৃষ্ট এক সা খেজুর নিয়ে এসেছি। রসুলুল্লাহ স. বললেন, উহ্! এ তো নির্ভেজাল সুদ! এমন কাজ কখনো করো না। তোমরা ভাল খেজুর কিনতে চাইলে আগে তোমার খেজুর বিক্রি করো, পরে তার মূল্য দিয়ে ভালো খেজুর ক্রয় করো। ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয়ঃ ব্যবসা বা ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে উপার্জিত অতিরিক্ত অংশকে মুনাফা বলা হয়। এ ধরনের মুনাফাকে ইসলামে হালাল ঘোষণা করা হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পরস্পরের মধ্যে মুনাফার বিনিময় হয়। এখানে একজন অন্যজনের প্রয়োজন সরবরাহ করার জন্য সময়, মেধা ও শ্রম বিনিয়োগ করে থাকে এবং তার বিনিময় দান করে। ব্যবসার ক্ষেত্রে অর্থ দ্রব্যে এবং দ্রব্য অর্থে রূপান্তরিত হয়। এ রূপান্তরের বিভিন্ন পর্যয়ে বহু লোকের কর্ম সংস্থান সৃষ্টি হয়, অর্থের প্রবাহ চালু হয় এবং মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়ে যায়। ফলে দেশে নতুন নতুন শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠে, ব্যবসার নতুন নতুন দিগন্ত খুলে যায় এবং উন্নয়নে গতি সঞ্চারিত হয়।

সংক্ষেপে সুদ ও লাভের পার্থক্য নিম্নে পেশ করা হলোঃ মুনাফার সম্পর্ক ক্রয়-বিক্রয় বা ব্যবসার সাথে, সুদের সম্পর্ক নগদ ঋণও সময়ের সাথে পুঁজি বিনিয়োগের ফলেযে অতিরিক্ত আয় হয়সেটি মুনাফা। নির্ধারিত সময়ের ব্যবধানে পরিশোধের শর্তে ঋণ দেয়ার পর পূর্ব নির্ধারিত হারে প্রদত্ত অতিরিক্ত অর্থই সুদ।

মুনাফা বিক্রেতার পুঁজি, শ্রম ও সময় বিনিয়োগের ফল, কিন্তু সুদের ক্ষেত্রে ঋণদাতার কোন শ্রম বিনিয়োগ করতে হয় না।

মুনাফা অনির্ধারিত ও অনিশ্চিত, কিন্তু সুদ নির্ধারিত ও নিশ্চিত। ব্যবসায়ী জানেনা তার ব্যবসায় আদৌ লাভ কি ক্ষতি হবে। লোকসান সার্বক্ষণিক তাকে তাড়া করে ফেরে। কিন্তু সুদী মহাজন ঋণ গ্রহীতা মরল কি বাঁচল তাতে তার কিছু যায় আসে না। আসল সহ সুদ তার ঘরে ফিরে আসবেই। বিক্রেতা ক্রেতার নিকট থেকে যতই মুনাফা আদায় করুক না কেন সেটা একবারই আদায় করতে পারবে, কিন্তু সুদ একই মূলধনের উপর বারবার নির্ধারণ এবং আদায় করা যায় (যাকে আমরা চক্রবৃদ্ধি সুদ বলে থাকি)।

মুনাফায় লোকসানের ঝুঁকি বহন করতে হয়, কিন্তু সুদে কোন ঝুঁকি নাই। সুদ ও আধুনিক ব্যাংকিং, সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদী র.। সুতরাং প্রতিটি মুসলমানকে সুদ ও মুনাফার পার্থক্য সম্পর্কে জানতে হবে। ইসলাম সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করে কথা বলা বা আমল করাকেই পছন্দ করে। কারণ অনুমান ভিত্তিক কথাটি যদি সরাসরি আল্লাহর কথার বিপরীত হয় তবে দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ই বরবাদ হয়ে যাবে। অর্থনীতির জটিল তথ্যগত জ্ঞান অর্জনের জন্য গভীরে প্রবেশ করতে না পারলেও ঈমান রক্ষার তাগিদে অন্তত ক্রয়-বিক্রয়, মুনাফা ও সুদের পার্থক্যটুকু আত্মস্থ করা একান্ত প্রয়োজন।

মূল্য নির্ধারণ বা দামনীতি ঃ সাধারণ অবস্থায় সরকার কর্তৃক দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করে দেয়া ঠিক নয়। কারণ এতে উৎপাদনকারীর উৎপাদনে আগ্রহ ও উদ্দীপনা কমে যায়। রসুলুল্লাহ স. বলেছেন: ‘তোমরা মূল্য বেঁধে দিও না। কেননা আল্লাহ তাআলাই মূল্য নিয়ন্ত্রণ করেন, হ্রাস-বৃদ্ধি করেন এবং রিযিক প্রদান করেন। “সুনানে আবু দাউদ ও জামে তিরমিযি”। হযরত আনাস রা. বলেন, নবী করীম স. এর যামানায় একবার দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেলে লোকেরা বললো হে আল্লাহর রসুল! আপনি দ্রব্যমূল্য ধার্য করে দিন। নবী করীম স. বললেন, আল্লাহ তাআলাই মূল্য নিয়ন্ত্রণ করেন, হ্রাস-বৃদ্ধি করেন এবং রিযক প্রদান করেন।আমি আশাবাদী যে, আমি আল্লাহর সাথ এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করবো যে, রক্তপাত ও আত্মসাৎ করে জুলুম করেছি বলে তোমাদের কেউ আমার বিরুদ্ধে কোন কিছুর দাবি উত্থাপন করতে সক্ষম হবে না। “মিশকাত, জামে তিরমিযি, সুনানে আবু দাউদ”।

মূল্য বিক্রেতার অধিকার। তাই বলে খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ীগণ যেনতেনভাবে মূল্য নির্ধারণ করতে পারেন না। যদি এমনটি কেউ করেন তবে উল্লেখিত হাদীসের আলোকে আত্মসাৎকারী হিসেবে সাব্যস্ত হবেন। এ ধরনের অসাধু, স্বেচ্ছাচারী উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ীগণ যদি সীমালংঘন পূর্বক অস্বাভাবিকভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেয় এবং মূল্য নির্ধারণ ছাড়া ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণ করা সম্ভব না হয় তাহলে সরকার বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করে দিতে পারে। “ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত মাস্লা-মাসায়েল, সম্পাদনা পরিষদ, ইফারা প্রকাশনা, মে-২০০৫”। মূল্য নির্ধারণের পর কেউ যদি সীমালংঘন করে অধিক মূল্যে বিক্রয় করে তাহলে এ বিক্রয় যথার্থ হবে, তবে আইন লংঘনের দায়ে সে দোষী সাব্যস্ত হবে। আল-কুরআনের অর্থনীতি, ১ম খÐ, পৃষ্ঠা ৫৮৯, ইফারা গবেষণা: ও ইফারা প্রকাশনা, এপ্রিল-১৯৯০। ব্যবসার লক্ষই হলো মুনাফা লাভ। ইসলাম তা অর্জন নিষিদ্ধ করে না, ব্যবসায়ীকে মুনাফা থেকে বঞ্চিত করে না। কেননা মুনাফা পাওয়ার অধিকার না থাকলে কেউ-ই ব্যবসা করতো না। ফলে জনণের জীবন-জীবিকা অসম্ভব হয়ে পড়তো। তবে রবিহুল ফাহশ অর্থাৎ অত্যধিক, সীমাহীন মুনাফা (ঊীবপংংরাব ধহফ বীঃড়ৎনরঃধহঃ ঢ়ৎড়ভরঃ) গ্রহণ ইসলামে নিষিদ্ধ। কেননা, তা এক ধরনের শোষণ, অন্যদের ওপর জুলুম। শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ মুনাফা হচ্ছে ক্রয় মূল্যের এক ষষ্ঠাংশের সীমার মধ্যে যা থাকবে। আর এ মতও দেয়া হয়েছে যে, মুনাফা ক্রয় মূল্যের এক-তৃতীয়াংশের সীমার মধ্যে থাকা উচিত। কোন ফিকহবিদ রায় দিয়েছেন, ব্যবসায় অভিজ্ঞ ও বুদ্ধিমান লোকদের বিবেচনায় যা স্বাভাবিক, তা-ই বৈধ মুনাফা। পণ্যমূল্য জানে না এমন ক্রয়কারীর নিকট থেকে বেশি মূল্য আদায় করা ইসলামে নিষিদ্ধ। আইনের দৃষ্টিতে তা ধোকা, প্রতারণা। এ কাজযে করে ফিকহবিদগণ তার নাম দিয়েছেন ‘আল-মুস্তারসিল’। এ সংক্রান্ত হাদীস হচ্ছে : যে মুসলিমই অপর মুসলিমের নিকট থেকে মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা নিল সে তাকে প্রতারিত করলো, সে বড়ই অপরাধী। “হিদায়া বুযু পর্ব ও আলমগীরী ৩য় খД। অপর হাদীসে বলা হয়েছে, ব্যবসায়ী যদি সীমাতিরিক্তমূল্য গ্রহণ করে এ সুযোগে যে, ক্রেতা পণ্যের প্রকৃত মূল্য জানেনা, তাহলেএই অতিরিক্ত পরিমাণের মূল্য সুদ পর্যয়ে গণ্য হবে। “আল-কুরআনের অর্থনীতি, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৫৮৯, ইফারা গবেষণা: ও ইফারা প্রকাশনা, এপ্রিল-১৯৯০”। আবু হোরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। নবীস. বলেছেন, ‘মানুষের সম্মুখে এমন এক সময় আসবে যখন কোন ব্যক্তি অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্রে তা হালাল বা হারাম পন্থায় অর্জিত হচ্ছে কি না তা মোটেই চিন্তা করবে না। “আল-কুরআনের অর্থনীতি, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৫৮৯, ইফাবা গবেষণাঃ ও ইফাবা প্রকাশনা, এপ্রিল-১৯৯০। তারা এটি তাফসীর মারাগী, তৃতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা ৬৪ থেকে উদ্ধৃতি করেছেন”। এ আয়াতে ‘অন্যায়ভাবে’ বলতে এমন সব পদ্ধতির কথা বুঝানো হয়েছে যা সত্যও ন্যায়নীতি বিরোধী এবং নৈতিক দিক দিয়েও সম্পূর্ণ অবৈধ। আমরা আমাদের সমাজের ব্যবসা-বাণিজ্যে যে সকল প্রতারণা লক্ষ করি তা অন্যায় এবং আল্লাহর রসুল তা নিষিদ্ধ করেছেন।

এতক্ষণ পণ্যের মূল্য নির্ধারণ বা দামনীতির যে আলোচনা করা হলো তার আলোকে নিম্নে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সামান্য কিছু উদাহরণ পেশ করা হলো :
(ক) বিভিন্ন কল-কারখানাও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে শ্রমের সঠিক মূল্য দেয়া হয় না। আর্থিক অসচ্ছলতা, কর্মসংস্থানের অভাবও শ্রমের সহজলভ্যতার সুযোগ নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকরা নিত্যন্তই অল্প মজুরীতে শ্রমিক-কর্মচারী নিয়োগ দেয়। শ্রমিক-কর্মচারীর স্বল্প বেতন দেয়ার ভিত্তিতে অর্জিত আয় এবং প্রতিষ্ঠানের মুনাফায় নিজেরা বিত্ত-বৈভবের পাহাড় গড়ছে। কিনতু শ্রমিক-কর্মচারীরা চিরদিন অবহেলিত মানুষের কাভারেই রয়ে যাচ্ছে। এটি ইসলামী শ্রমনীতিতে কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বরং নিরেট পুঁজিবাদী ও সমাজবাদী নীতির ফল।

তাছাড়া বাজার মূল্যের চেয়ে অত্যন্ত নগণ্য বেতনও মজুরীটুকুও সঠিক সময়ে পরিশোধ করা হয় না বরং মাসের পর মাস বাকি পড়ে থাকে।এ ধরনের কোন ব্যবস্থাই ইসলাম সমর্থিত নয়। কারণ শ্রমিকের দেহের ঘাম শুকানোর এগই মজুরী পরিশোধের তাগিদ দিয়েছেন মানবতার বন্ধু মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ স.। ইসলামের দামনীতি অনুযায়ী শ্রমিক-কর্মচারীর শ্রমের সঠিক বাজার মূল্য থেকে কম দেয়া অংশটুকু প্রতিষ্ঠানের মালিকদের আয়-উপার্জনকে অবৈধই করে এবং অবশ্যই তিনি সূরা আন নিসার ২৯ নং আয়াতে উল্লেখিত ‘অন্যায়ভাবে’ ও রুসুলুল্লাহ স. এর হাদীসের ‘আত্মসাৎ’ এর অপরাধের আওতাভুক্ত হবেন। কারণ কুরআন-হাদীসে বর্ণিত সুষবণ্টন নিশ্চিত করণের লক্ষে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের শ্রমের সঠিক মূল্য নির্ধারণ ও পরিশোধ করা হয়নি। তাছাড়া এ ধরনের মালিকরা আল্লাহ তাআলার নিম্নলিখিত আয়াতে বর্ণিত ধ্বংসপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হবেন, ‘লোকদের থেকে নেবার সময় পুরোমাত্রায় নেয় এবং তাদেরকে ওজন করে বা মেপে দেবার সময় কম দেয়। সত্যিই শ্রমিক-কর্মচারীদের কাছ থেকে কাজ আদায় করে নেয়ার সময় এরা পুরোমাত্রার চেয়েও বেশি আদায় করে থাকে। কিন্তু সুযোগ-সুবিধার বেলায় তাদের হাত গলদেশে ঝুলিয়ে রাখে। তাছাড়া কোন কোন প্রতিষ্ঠানে ১৬/১৮ ঘন্টাও বাধ্যতামূলক কাজ করানো হয় যা সমাজবাদীদের বাধ্যতামূলক শ্রমশিবিরের ইতিহাসকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এগুলোতে ওভর টাইমের মূল্য খুবই কম। এদের কঠিন হৃদয়ের কাছে রসুলুল্লাহ স. এর আরেকটি বাণী পেশ করছি। তিনি বলেছেন,‘তোমাদের সেবকরা তোমাদের ভাই। তাদেরকে আল্লাহ তাআলা তোমাদের অধীনস্ত করেছেন। সুতরাং আল্লাহ যার ভাইকে তার অধীন করে দিয়েছেন সে তার ভাইকে যেন তাই খাওয়ায় যা সে নিজেখায়, তাকে তাি পরিধান করায় যা সে নিজে পরিধান করে। আর তার সাধ্যের বাইরে কোনো কাজ যেনো তার ওপর না চাপায়। একান্ত যদি চাপানো হয়, তবে সে তা সম্পাদনের তাকে সাহায্য করে। “সহীহ্ বুখারী”। এ হাদীসের আলোকে প্রতিষ্ঠানের অর্জিত আয়ের একটা অংশ শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রাপ্য। এ প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।

(খ) বিভিন্ন ইসলামী কো-অপারেটিভ সমিতি স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জেলা বা থানা পর্যায়ের সমবায় অফিস থেকে অনুমতি নিয়ে অনেকটা ব্যাংকিং পদ্ধতিতে কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। বিনা জামানতে ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দৈনিক কিস্তি পরিশোধের শর্তেক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিনিয়োগ প্রদান করে থাকে। বিনিয়োগের প্রত্যক্ষ লাভের হার শতকরা ২০% থেকে ২৮%। বিনিয়োগের টাকা দৈনিক কিস্তিতে আদায় করা হলেও লাভের হারে ক্রমহ্রাসমান পদ্ধতির অনুসরণ করা হয় না। ফলে দৈনিক কিস্তি আদায়ের কারণে এর শতকরা হারের রিমাণ দাঁড়ায় ৪০% থেকে ৫৬%। তাছাড়া দৈনিক আদায়কৃত টাকার সাথে সাথে আবার অন্যত্র বিনিয়োগ করা হয়। ঘর্ণায়মান এ পুঁজির লাভের হার হিসাব করলে এর শতকরা হার ক্ষেত্রবিশেষ দ্বিগুণ বা তার চেয়েও বেশি হবে। এরা ব্যাংক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ/বিনিয়োগের দীর্ঘসূত্রিতা এবং নিজেদের ঋণ/বিনিয়োগের সহজলভ্যতা, সহজ কিস্তিতে পরিশোধযোগ্যতা ও অশিক্ষিত বা আধাশিক্ষিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গরীব ব্যবসায়ীদের সরলতার সুযোগ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে। দুর্বলতার জন্য এ সকল ব্যবসায়ী কোনদিন খোঁজ নিয়ে দেখে না বা এ সকল প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের জানায় নাযে, কতটুকু লাভ তাদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে। যে কোন দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ক্রয়-বিক্রয় করা বা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রতারণার শামিল। এ সম্পর্কিত হাদীস হচ্ছে: যে মুসলিমই অপর মুসলিমের নিকট থেকে মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা নিলসে তাকে প্রতারিত করলো, সে বড়ই অপরাধী। সহীহ্ বুখারী ও মুসলিম। অপর হাদীসে বলা হয়েছে, ব্যবসায়ী যদি সীমাতিরিক্ত মূল্য গ্রহণ করে এ সুযোগে যে, ক্রেতা পণ্যের প্রকৃত মূল্য জানে না, তাহলে এ অতিরিক্ত মূল্য সুদের পর্যায়ে গণ্য হবে। “আল-কুরআনের অর্থনীতি, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৫৮৯, ইফারা গবেষণাঃ ও ইফারা প্রকাশনা, এপ্রিল-১৯৯০”।

‘চার ইমাম কিস্তিতে ক্রয়-বিক্রয়ের বেলায় নগদ মূল্যের চেয়ে কিছুটা বেশি গ্রহণ জায়েয বলেছেন। তবে এটিরও একটি সীমা থাকা প্রয়োজন। আর এ ব্যাপারে চার ইমামের শর্ত হলো, ক্রয়-বিক্রয়ের মজলিসেই ক্রেতা ও বিক্রেতাকে চূড়ান্ত ফয়সালা করে নিতে হবে যে, ক্রয়-বিক্রয় নগদ মূল্যে করা হচ্ছে না কি বাকিতে। যাতে মূল্যের বিষয়টি অজ্ঞাত থেকে না যায়। “আল-কুরআনের অর্থনীতি, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৫৮৯, ইফাবা গবেষণাঃ ও ইফাবা প্রকাশনা, এপ্রিল-১৯৯০। তারা এটি তাফসীর মারাগী, তৃতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা ৬৪ থেকে উদ্ধৃতি করেছেন”। ইসলামী ব্যাংকিং এর সাফল্যের কারণে ইদানিং কো-অপারেটিভ সমিতিগুলোকেও ইসলামী নাম দিয়ে লাইসেন্স নিতে দেখা যায় এবং তারাও ইসলামী শরীয়ার আলোকে ক্রয়-বিক্রয় করে থাকে। সাধারণ কো-অপারেটিভগুলো যেহেতু সুদনির্ভর তাই মানুষকে শোষণ করার জন্য তারা যে কোন কৌশলই অবলম্বন করতে পারে। কিন্তু ইসলামী কো-অপারেটিভগুলোর ইসলামের মূল্যনীতি মেনে চলা অত্যন্ত জরুরী।

(গ) শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একটি নতুন সংযোজন। বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এটির পরিপূর্ণ উন্মেষ ঘটেছে বিগত দুটি সরকারর আমল থেকে। আগেও শেয়ার বেচাকেনা হতো কিন্তু সাধারণের মধ্যে এর এতটা ব্যাপকতা ছিল না। বর্তমানে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে এর প্রসার ঘটেছে যে এদের অনেকেই শেয়ার কি জিনিস, এর স্বরূপই বা কি, ইসলামে এর অনুমোদন রয়েছে কিনা, এর কিছুই জানে না। কোম্পানীর শেয়ারকে আরবীতে সাহ্ম বা হাসাস বলা হয়। অর্ধ অংশ। কেউ যদি শেয়ার ক্রয় করে তবে শেয়ার সার্টিফিকেট এ কথার প্রমাণ যে, উক্ত ব্যক্তি এই কোম্পানীর বিশেষ একটি অংশের মালিক। কয়েকজনে মিলে অংশীদারী ব্যবসা করা হয়। কিনতু বড় ধরনের ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য কয়েকজনের পুঁজি যথেষ্ট নয় বিধায় কোম্পানী গঠন করে বাজারে শেয়ার ছাড়া হয় অর্থাৎ কোম্পানীর অংশীদার হওয়ার জন্য আহবান জানানো হয়। যারা আহবানে সাড়া দিয়ে শেয়ার ক্রয় করে তারা কোম্পানীর অংশীদার হিসাবে গণ্য হয়। এ অংশীদারগণ তাদের নিজেদের প্রয়োজনে শেয়ার অন্যত্র বিক্রি করতে চায় বিধায় ষ্টক মার্কেট গড়ে উঠেছে। তাছাড়া জয়েন্ট ষ্টক কোম্পানী নামে শরীকানা ব্যবসার পদ্ধতিও চালু আছে।

কোম্পানীর শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করা জায়েয। তবে শর্ত থাকে যে, হালাল কাজের উদ্দেশ্যে গঠিত কোম্পানী হতে হবে। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হারামের সাথে সংশ্লিষ্টতা থাকলে, তার শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করা এবং তা থেকে প্রাপ্ত ডিভিডেন্ট বা লভ্যাংশ জায়েয হবে না। যেমন মদ তৈরির কারখানা, সুদভিত্তিক ব্যাংক ও সুদভিত্তিক বীমা কোম্পানী ইত্যাদির শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় এবং তা থেকে প্রাপ্ত লাভ বা ডিভিডেন্ট জায়েয হবে না। “ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত মাস্লা-মাসায়েল, সম্পাদনা পরিষদ, ইফারা প্রকাশন, মে-২০০৫”। কোন ব্যক্তি যদি ষ্টক মার্কেট থেকে শেয়ার ক্রয় করে তবে এ ক্ষেত্রে তাকে ৪টি শর্তের দিকে নজর রাখতে হবে।
(১) কোম্পানীর যাবতীয় কারবার হালাল হতে হবে। কোম্পানী কোনরূপ হারাম কাজের সাথে জড়িত হতে পারবে না।
(২) কোম্পানীর গোটা অর্থ সম্পদ (খরয়ঁরফ অংংবঃং) নগদ হতে পারবে না বরং তার কিছু স্থায়ী সম্পদ থাকা আবশ্যক। কোম্পানীর যদি কোন স্থায়ী সম্পদ না থাকে তবে শেয়ারসমূহ তার অভিহিত মূল্যের চেয়ে কম বা বেশি মূল্যে বিক্রি করা জায়েয হবে না।
(৩) কোম্পানী যদি নিজেদের ফান্ড বাড়ানোর জন্য ব্যাংক থেকে সুদ ভিত্তিক ঋণ গ্রহণ করে অথবা নিজেদের অতিরিক্ত অর্থ সুদী ব্যাংকে জমা রাখে তবে এমতাবস্থায় কোম্পানীর শেয়ার খরিদ করা জায়েয হবে না।
(৪) মনে রাখতে হবে, কোম্পানীর মূল ব্যবসা যদি হালাল হয় এবং পরবর্তীতে এর মধ্যে যদি কোন সুদী পয়সা এসে যায় তবে লভ্যাংশ বন্টনের সময় যতটুকু সুদ ঢুকেছে তা পৃথক করে লভ্যাংশ ঘোষণা করতে হবে। এবং সুদের অংশ বিত্তহীন গরীবদের মাঝে বণ্টন করে দিতে হবে। “ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত মাস্লা-মাসায়েল, পৃষ্ঠা-৫৭, সম্পাদনা পরিষদ, ইফারা প্রকাশনা, মে-২০০৫”।

(ঘ) কোন কোন প্রপার্টিজ ও এর্পামেন্টের ব্যবসা যার মধ্যে প্রতারণা, প্রতারণাপূর্ণ দালালী, মিথ্যা শপথ, লোভনীয় কৃত্রিমতা অবলম্বন ও দোষত্রুটি গোপন করার মত নিষিদ্ধ কাজ রয়েছে। কোন কোন কোম্পানী পত্রিকায় প্রকাশিত লক্ষ লক্ষ টাকার বাহারী বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ক্রেতা সাধারণকে তাদের প্রতারণার জালে আটকিয়ে বছরের পর বছর ঘুরাতে থাকে। বুকিং দেয়ার পর বিজ্ঞাপনে প্রতিশ্রুতি বিভিন্ন লোভনীয় সুযোগ-সুবিধার কোন একটিও দেখা মেলে না। হাতে গোনা কিছু প্রপার্টিজ ও কোম্পানী সততার পরিচয় দিলেও, একটি বিষয় প্রায় সকলের মধ্যেই সাধারণভাবে দেখা যায়। সেটি হলো: ডাউন পেমেন্ট বা বুকিং মানি, মাটি ভরাট, রাস্তা-ঘাট, গ্যাস-বিদ্যুৎ ইত্যাদির নাম করে গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রীম টাকা আদায় করা হয়। শত শত ব্যক্তির কাছ থেকে নেয়া এ টাকায় অন্য একটি পজেক্টে বিনিয়োগ করে, এভাবে সেখান থেকেও উল্লেখিত অজুহাতে টাকা আদায় করা হয়। বছরের পর বছর চলে যায়, জনগণের টাকায় আরো ৪/৫টি প্রজেক্ট হাতে নেয়া হয়, কিন্তু কোন প্রজেক্টের কাজ শেষ হয় না। বিভিন্ন প্রজেক্ট থেকে নেয়া টাকায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ২/১ বছরে আঙ্গুল ফুলে বিরাট গ্রæপ অব ইন্ডাষ্ট্রিজের মালিক বনে যান। অথচ তিন কাঠার প্লটের মালিকটি ঘুমের অঘোরে পত্রিকার বিজ্ঞাপনে দেয়া প্রশস্ত রাস্তার দুপাশে সারি সারি বাড়ির মাঝে নিজের বাড়িটি খুঁজে ফেরে। এভাবে স্বপ্নে স্ব্েন কেটে যায় গ্রাহকদের দুঃস্বপ্নের প্রহরগুলো।

(ঙ) শুফাআ একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন। ইসলামের এ গুরুত্বপূর্ণ আইনটি আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় কার্যকর না থাকায় আজকাল জমি ক্রয়-বিক্রয়ে অনেক জুলুম-নির্যাতন পরিলক্ষিত হয়। এ জন্য সামাজিক ফেতনা-ফাসাদ থেকে শুরু করে অনেক মূল্যবান প্রাণহানিও ঘটতে দেখা যায়। জমির মালিক এবং প্রতিবেশী উভয়ের পক্ষ থেকেই এ প্রবণতা লক্ষ করা যায়। এক দিকে জমির মালিক প্রতিবেশীকে বিপদে ফেলার নিমিত্তে তাকে না জানিয়ে অন্যত্র জমি বিক্রি করে দেয়। ফলে নতুন প্রতিবেশী পুরাতন প্রতিবেশীর বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।আর তখনই সৃষ্টি হয় বাক-বিতন্ডা থেকে শুরু করে পেশী শক্তির প্রদর্শন। পর্যায়ক্রমে এটি সমাজকেও আক্রান্ত করে। ব্যক্তি সীমানা পেরিয়ে সমাজের বিবেকবান এবং বিবেকহীন লোকগুলোকে উভয় পক্ষেই এনে দাড়করায়। সামাজিক বিশৃংখলা তখন অনিবার্য হয়েঠে। আবার এমনটিও লক্ষ করা যায় যে, কোন কোন প্রতিবেশী জমির কম মূল্য হাকিয়ে অন্য প্রতিবেশীর জমি বিক্রিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। বাইরের কোন খরিদ্দার এলে তাকে হুমকী ধমকী দিয়ে তাড়িয়ে দেয়, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হলো প্রতিবেশী যেন স্ব্ল্প মূল্যে তার কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হয়। এবং শেষাবধি বিক্রেতাকে সেটিই করতে হয়। অত্যন্ত কম দামে বিক্রি করে তাকে চলে যেতে হয়। ফল সে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার এমনটিও লক্ষ করা যায় যে কোন ক্রমে প্রতিবেশী অন্যত্র বিক্রি করে দিলেও, নতুন প্রতিবেশীটি পুরাতন প্রতিবেশীর নির্যাতনের শিকার হয়। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয়। শুফাআ আইনের অনুপস্থিতিতেএ সমস্ত চিত্র আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পেতে হলে স্থায়ী প্রকৃতির কোন কিছু বিক্রি করার সময় অবশ্যই সর্বপ্রথম শাফী তথা অংশীদার ও প্রতিবেশীকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে হবে। তাছাড়া দূরবর্তী কোন ক্রেতার জমি ক্রয় করার সময় শুফআর বিষয়টি বিবেচনায় এনে যাচাই করা উচিত। তাতে অনেক অনাকাংখিত বিষয় এড়ানো সম্ভব হবে। হযরত যাবের রা. বলেন, প্রতিটি অবিভক্ত অংশীদারী সম্পত্তিতে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুফআ নির্ধারণ করেছেন। চাই তা ঘর হোক কিংবা বাগান। কারো পক্ষে হালাল নয় যে, তার অংশীদারকে অবগত না করে তা বিক্রি করে। সে ইচ্ছা করলে তা রেখে দেবে, অন্যথায় ছেড়ে দেবে। আর যদি তাকে না জানিয়ে বিক্রি করে তাহলে সে সকলের চেয়ে বেশি হকদার।

(চ) মাপে বা ওজনে কমবেশী করাও আয়াতে উল্লেখিত ‘অন্যায়ভাবে’ এর অন্তর্ভুক্ত। ওজনে কমবেশি করা আমাদের সমাজে অনেকটা মহামারীর মতই সংক্রমিত।অথচ কুরআন ও হাদীসে ওজনে কমবেশি করার ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর ভাষায় ধমকি দেয়া হয়েছে।

 

 

 

Share





Related News

Comments are Closed