না ফেরার দেশে খ্যাতিমান সুরকার আলম খান

বিনোদন ডেস্ক: বাংলা গানের কিংবদন্তি সুরকার ও সংগীত পরিচালক আলম খান আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শুক্রবার (৮ জুলাই) বেলা ১১টা ৩২ মিনিটে মারা যান তিনি। খবরটি নিশ্চিত করেছেন তার ছেলে সংগীত পরিচালক আরমান খান।
তিনি জানান, ‘আব্বা চলে গেলেন না ফেরার দেশে। আজ বেলা ১১টা ৩২ মিনিটে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে বাবার মৃত্যু হয়েছে। বার্ধক্যজনিত কারণেই তিনি মারা গেছেন। গত এক-দেড় মাস থেকেই তার শারীরিক অবস্থা ভালো ছিল না। গতকাল তাকে লাইফ সাপোর্টেও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আজ আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।’
আলম খান ‘ওরে নীল দরিয়া’, ‘হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস’, ‘আমি একদিন তোমায় না দেখিলে’, ‘চাঁদের সাথে দেব না’, কী জাদু করিলা’সহ অসংখ্যা কালজয়ী গানের সুরকার।
বাংলা সিনেমার গানে অবিস্মরণীয় নাম আলম খান। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি অসংখ্য কালজয়ী গান সৃষ্টি করেছেন। তিনি একাধারে গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক ছিলেন। আলম খানের জন্ম ১৯৪৪ সালের ২২ অক্টোবর সিরাজগঞ্জের বানিয়াগাতি গ্রামে। ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী স্কুল থেকে মেট্রিক পাস করেন তিনি। এই স্কুলে থাকা অবস্থায়ই গানের প্রতি আগ্রহী হন এবং মায়ের উৎসাহে তিনি গানের চর্চা শুরু করেন। এরপর বাবাও সমর্থন দেন। তার ছোট ভাই ছিলেন বাংলাদেশের কিংবদন্তি পপ শিল্পী আজম খান।
গানের ভুবনে আলম খানের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৬৩ সালে। সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক রবিন ঘোষের সহকারী হিসেবে তিনি ‘তালাশ’ সিনেমার সংগীত পরিচালনা করেন।
সাত বছর সহকারী হিসেবে কাজের পর ১৯৭০ সালে আলম খান একক সংগীত পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তবে সাফল্য পেতে অনেকটা দেরি হয় তার। ১৯৭৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘সারেং বৌ’ সিনেমার জন্য তিনি তৈরি করেন ‘ও রে নীল দরিয়া’ গানটি। দেশজুড়ে এটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। এখনো সমান জনপ্রিয় গানটি।
এরপর আলম খান আরও বহু কালজয়ী গান সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস দম ফুরাইলে ঠুস’, ‘আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো গন্ধ বিলিয়ে যাই’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘কি জাদু করিলা পিরিতি শিখাইলা’, ‘তুমি যেখানে আমি সেখানে’, ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’, ‘ভালোবেসে গেলাম শুধু’, ‘চাঁদের সাথে আমি দেবো না তোমার তুলনা’, ‘আমি একদিন তোমায় না দেখিলে’, ‘তেল গেলে ফুরাইয়া’, ‘আমি তোমার বধূ তুমি আমার স্বামী’, ‘জীবনের গল্প বাকি আছে অল্প’, ‘মনে বড় আশা ছিল’, ‘সাথীরে যেও না কখনো দূরে’, ‘বেলি ফুলের মালা পরে’, ‘কাল তো ছিলাম ভাল’, ‘চুমকি চলেছে একা পথে’, ‘ভালবাসিয়া গেলাম ফাঁসিয়া’, ‘তুমি কি এখন আমারই কথা ভাবছো’, ‘আকাশেতে লক্ষ তারা চাঁদ কিন্তু একটাইরে’ ইত্যাদি।
আলম খান তার ক্যারিয়ারে ছয় বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচবার পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক হিসেবে এবং একবার শ্রেষ্ঠ সুরকার হিসেবে।
এদিন (শুক্রবার) বিকেল ৪টা ৩০মিনিটে একটি বেসরকারি চ্যানেল প্রাঙ্গনে আলম খানের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বাদ আসর এফডিসিতে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। সেখান থেকে সিলেটের মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে পাহাড়ের চূড়ায় নির্মিত মসজিদুল আউলিয়া হজরত খাজা শাহ মোজাম্মেল হক (রহ.) এর প্রাঙ্গণে নেওয়া হবে তার মরদেহ। সেখানে জান্নাতুল ফেরদৌস কমপ্লেক্সে স্ত্রীর কবরের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন আলম খান।
খাজা মোজাম্মেল হক (রহ.) ফাউন্ডেশনের সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আলম খানের ছেলে আরমান খান। তিনি জানান, ‘মায়ের কবরের পাশেই বাবার দাফন সম্পন্ন হবে।’
Related News

নায়ক সালমান শাহ’র জন্মদিন আজ
বিনোদন ডেস্ক: বাংলা চলচ্চিত্রে নিজের সময়ের চেয়েও এগিয়ে থাকা একজন অভিনেতা ছিলেন; তিনি হলেন সালমানRead More

নায়ক সালমান শাহ’র ২৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
বিনোদন ডেস্ক: মৃত্যুর পরও বাংলা চলচ্চিত্রে যে এত দীর্ঘ সময় জনপ্রিয়, দর্শকের আগ্রহ-আলোচনাজুড়ে থাকা যায়,Read More
Comments are Closed