Main Menu

বর্ষীয়ান সুরকার-গায়ক বাপ্পি লাহিড়ি আর নেই

বিনোদন ডেস্ক: না ফেরার দেশে চলে গেলেন বর্ষীয়ান সুরকার-গায়ক বাপ্পি লাহিড়ি। মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রয়ারী) রাত সাড়ে ১২টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কিংবদন্তি এ গায়ক ও সুরকার। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর।

মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে সঙ্গীত জগতের তিন নক্ষত্রপতন হলো। গত ৬ ফেব্রুয়ারি মারা যান সুর সম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর। লতা মঙ্গেশকর মারা যাওয়ার ৯ দিন পর মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) মারা যান ভারতের প্রবাদপ্রতিম সংগীতশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। সন্ধ্যাকে হারানোর পরই এল বাপ্পি লাহিড়ির মৃত্যুর দুঃসংবাদ।

সংবাদসংস্থা পিটিআই সূত্রে জানা গেছে, গত বছর এপ্রিলে করোনা আক্রান্ত হয়ে মুম্বাইয়ের জুহুর ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এ শিল্পী। তারপর থেকেই শয্যাশায়ী হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়া একাধিক রোগে ভুগছিলেন বর্ষীয়ান এ শিল্পী। শারীরিক অসুস্থতা বেড়ে গেলে আবারো তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বাপ্পি লাহিড়ি। তার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ কী, এখন পর্যন্ত হাসপাতাল সে বিষয়ে কিছু জানায়নি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭০ থেকে ৮০-এর দশকে হিন্দি ছায়াছবির জগতে অন্যতম জনপ্রিয় নাম বাপ্পি লাহিড়ি। ‘ডিস্কো ডান্সার’, ‘চলতে চলতে’, ‘শরাবি’-তে সুর দিয়েছেন। গেয়েছেন একাধিক গান। ২০২০ সালে তার শেষ গান বাগি- ৩ এর জন্য। কিশোর কুমার ছিলেন বাপ্পির সম্পর্কে মামা। বাবা অপরেশ লাহিড়ি ও মা বাঁশরী লাহিড়ি— দুজনেই সঙ্গীত জগতের মানুষ। ফলে একমাত্র সন্তান বাপ্পি ছেলেবেলা থেকেই গানের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন।

১৯৫২ সালের ২৭ নভেম্বর জলপাইগুড়িতে জন্মগ্রহণ করেন বাপ্পি। তার পর দীর্ঘদিন বাংলা ও হিন্দি ছবির গান গেয়েছেন। সুর দিয়েছেন। শরীরে প্রচুর সোনার গয়না পরতে ভালোবাসতেন। ছিল গায়কির নিজস্ব কায়দা, যা তাকে হিন্দি ছবির জগতে অনন্য় পরিচিতি দিয়েছিল। পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার এবং সম্মান।

বাপ্পি লাহিড়ি রাজনীতিতেও নেমেছিলেন। বিজেপি-তে যোগ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুর কেন্দ্র থেকে ভোটেও লড়েছিলেন। কিন্তু রাজনীতিতে কখনওই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেননি বাপ্পি।

বাপ্পি লাহিড়ি পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে সমৃদ্ধ এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম আলোকেশ বাপ্পি লাহিড়ি। বাবা অপরেশ লাহিড়ি ছিলেন একজন বাংলা সঙ্গীতের জনপ্রিয় গায়ক। মা বাঁশরী লাহিড়িও ছিলেন একজন সঙ্গীতজ্ঞ ও গায়িকা যিনি শাস্ত্রীয় ঘরাণার সঙ্গীত এবং শ্যামা সঙ্গীতে বিশেষ পারঙ্গমতা দেখিয়েছিলেন। তাদের পরিবারেরই একমাত্র সন্তান বাপ্পি লাহিড়ি।

৩ বছর বয়সেই তবলা বাজাতে শুরু করেন বাপ্পি। তার মায়ের আত্মীয় হিসেবে ছিলেন – বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী কিশোর কুমার এবং এস মুখার্জী। বাবা-মায়ের সান্নিধ্যে থেকেই তিনি সঙ্গীতকলায় হাতে খড়ি ও প্রশিক্ষণ নেন। এরপর তিনি ১৯ বছর বয়সে দাদু (১৯৭২) নামক বাংলা চলচ্চিত্রে প্রথম কাজ করেন।

ব্যক্তিগত জীবন

বাপ্পি লাহিড়ি বিবাহিত ছিলেন। তিনি দুই সন্তানের জনক। সংসারে তার স্ত্রী- চিত্রাণী, মেয়ে রিমা এবং ছেলে বাপ্পা। তিনি অলঙ্কারের ভক্ত হিসেবে পরিচিতি। সাধারণত, তাকে পোশাকের সাথে স্বর্ণের অলঙ্কার এবং কালো চশমা পরিধান করতে দেখা যায়। সংগীত শিল্পী কিশোর কুমার সম্পর্কে তার মামা।

সঙ্গীত জীবন

বাপ্পি লাহিড়ি ১৯ বছর বয়সে মুম্বাইয়ে স্থানান্তরিত হন। ১৯৭৩ সালে হিন্দি ভাষায় নির্মিত নানহা শিকারী ছবিতে তিনি প্রথম গীত রচনা করেন। এরপর তাহির হুসেনের জখমী (১৯৭৫) চলচ্চিত্রে কাজ করেন। এতে তিনি গীত রচনাসহ গায়কের দ্বৈত ভূমিকায় অংশ নেন। ‘অসম্ভব কিছু নয়’ শিরোনামে মোহাম্মদ রফি এবং কিশোর কুমারের সঙ্গেও দ্বৈত সঙ্গীতে অংশ নেন। তার পরের চলচ্চিত্র হিসেবে চালতে চালতে ছবিটির গানও দর্শক-শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। রবিকান্ত নাগাইচের সুরক্ষা ছবিতে গান গেয়ে সঙ্গীতকার হিসেবে জনপ্রিয়তা পান।

মিঠুন চক্রবর্তীর ডিস্কো নাচের চলচ্চিত্রগুলোতে তিনি সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৮০’র দশকে মিঠুন চক্রবর্তী এবং বাপ্পি লাহিড়ি একসাথে বেশ কিছু ভারতীয় ডিস্কো চলচ্চিত্রে কাজ করেন। এ ছাড়াও তিনি দক্ষিণ ভারত থেকে পরিচালিত অনেক হিন্দি চলচ্চিত্রের গানে অংশ নিয়েছেন। সমগ্র ভারতবর্ষে তিনি নিজেকে ‘ডিস্কো কিং’ নামে পরিচিতি লাভে সমর্থ হন।

বাপ্পি ভারতীয় চলচ্চিত্র জগৎ থেকে ১৯৯০’র দশকে দূরে সরে যান। প্রকাশ মেহরা’র ‘দালাল’ ছবিতে স্বল্প সময়ের জন্য ফিরে আসেন।

সঙ্গীত পরিচালনা

বাপ্পি রচিত সঙ্গীতগুলো বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম, একবার কহো (১৯৮০); সুরক্ষা; ওয়ারদাত; আরমান; চলতে চলতে; কমাণ্ডো; ইলজাম; পিয়ারা দুশমন; ডিস্কো ড্যান্সার; ড্যান্স ড্যান্স; ফিল্ম হি ফিল্ম; সাহেব; টারজান; কসম পয়দা করনে ওয়ালে কি; ওয়ান্টেড: ডেড অর এলাইভ; গুরু; জ্যোতি; নমক হালাল; শরাবী (১৯৮৫: ফিল্মফেয়ার সেরা সঙ্গীত পরিচালকের পুরস্কার); এইতবার; জিন্দাগী এক জুয়া; হিম্মতওয়ালা; জাস্টিস চৌধুরী; নিপ্পু রাব্বা; রোদী ইন্সপেক্টর; সিমহাসনম; গ্যাং লিডার; রৌদী অল্লাদু; ব্রহ্মা; হাম তুমহারে হ্যায় সনম এবং জখমী।

এ ছাড়াও তিনি মালায়ালম চলচ্চিত্র (কেরালা) দ্য গুড বয়েজ ছবির সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন।

Share





Related News

Comments are Closed