Main Menu

কোরআন মানব জাতির জন্য রহমত ও হেদায়েত

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান: কোরআনুল কারিম আসমানি গ্রন্থ। মানব জাতির মুক্তির উপায় ও পথপ্রদর্শক। এ পবিত্র গ্রন্থেই রয়েছে মানুষের মুক্তির দিশা। এ কোরআন শুধু সঠিক পথের সন্ধান তথা হেদায়েত ও রহমতেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং মানুষের জীবনে শুধু এর তেলাওয়াতেও রয়েছে অনেক ফজিলত ও উপকারিতা। কোরআন তেলাওয়াতে মানুষের জীবনের সেসব উপকারিতাগুলো কী?

কোরআন মানুষকে আলোর পথ দেখায়। এটি মানব জাতির জন্য রহমত ও হেদায়েত। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা একাধিক আয়াতে ঘোষণা করেন-
১.‘আর নিশ্চয়ই এটা মুমিনদের জন্যে হেদায়াত ও রহমত।’ (সুরা নমল : আয়াত ৭৭)

২. ‘অবশ্যই তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে আলো ও সুস্পষ্ট গ্রন্থ (কোরআন)। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাদেরকে শান্তির পথ দেখান; যারা তাঁর সন্তুষ্টির অনুসরণ করে এবং তাঁর অনুমতিতে তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন। আর তাদেরকে সরল পথের দিকে হেদায়াত দেন।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ১৫-১৬)

কোরআনুল কারিমের তেলাওয়াত, অধ্যয়ন ও শিক্ষা থেকেই মানুষ পায় মুক্তির পথ। আর যারা কোরআন থেকে দূরে সরে যায়; তারা পথহারা ও বিপদগ্রস্ত হয়। তাই সঠিক পথে দিশা পেতে নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত ও অধ্যয়নের বিকল্প নেই। নিয়মিত শুধু কোরআন তেলাওয়াতেও রয়েছে বিশেষ কিছু উপকার। তাহলো-

১. সঠিক পথের সন্ধান : মুমিন মুসলমানের জন্য হেদায়েত ও পথ নির্দেশ হচ্ছে কোরআন। ব্যক্তি, পারিবার, সামাজ কিংবা রাষ্ট্রীয় জীবন কীভাবে পরিচালিত হবে তা-ও রয়েছে এ মহাগ্রন্থে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘আমি তোমার জন্য কিতাবটি নাজিল করেছি। এটি এমন যে তা সবকিছুর সুস্পষ্ট বর্ণনা, আর এটি হেদায়াত, রহমত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদ স্বরূপ।’ (সুরা নাহল : আয়াত ৮৯)

২. কোরআন তেলাওয়াতে ঈমান বাড়ে : কোরআনুল কারিম গুরুত্বের সঙ্গে পড়লে, এর অর্থ অনুধাবন করলে মুমিন বান্দার ঈমান বেড়ে যায়। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন- ‘যারা ঈমানদার, তারা এমন যে, যখন আল্লাহর নাম নেওয়া হয়; তখন ভীত হয়ে পড়ে তাদের অন্তর। আর যখন তাদের সামনে কোরআনের আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করা হয়, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা নিজ প্রভুর প্রতি ভরসা রাখে।’ (সুরা আনফাল : আয়াত ২)

৩. অন্তর প্রশান্ত হয় : অশান্ত ও হতাশাগ্রস্ত আত্মার প্রশান্তিতে কোরআন তেলাওয়াতের বিকল্প নেই। অন্তরে হতাশা যত বেশিই হোক না কেন, কোরআন তেলাওয়াত করলে বা শুনলে হৃদয় প্রশান্তিতে ভরে যায়। তাও ওঠে এসেছে কোরআনের বর্ণনায়-
‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা প্রশান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ প্রশান্তি পায়।’ (সুরা রাদ : আয়াত ২৮)

৪. কোরআন তেলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশকারী : কোরআনুল কারিম দুনিয়াতে মানুষের জীবন ব্যবস্থা ও প্রশান্তি লাভের মাধ্যম। কেয়ামতের দিনও কোরআন তার তেলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা কোরআন তেলাওয়াত কর, কারণ কোরআন কেয়ামতের দিন তেলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে।’ (মুসলিম)

৫. জান্নাতে লাভ : কোরআনের বিধান মতো যে চলবে সে ব্যক্তি সফল। বিশেষ করে কোরআন তার তেলাওয়াতকারীর জন্য জান্নাতের যাওয়ার অন্যতম মাধ্যমও বটে। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রোজা ও কোরআন কেয়ামাতের দিন মানুষের জন্য এভাবে সুপারিশ করবে যে, রোজা বলবে- হে আমার রব! আমি দিনের বেলায় তাকে (এ রোজাদারকে) পানাহার ও যৌনতা থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ গ্রহণ কর। অনুরূপভাবে কোরআন বলবে-

‘হে আমার রব! আমাকে তেলাওয়াত তথা অধ্যয়ন করার কারণে রাতের ঘুম থেকে আমি তাকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ গ্রহণ কর। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, এরপর উভয়ের সুপারিশই গ্রহণ করা হবে।’ (মুসনাদে আহমাদ)

কোরআনের আমলই মানুষকে দুনিয়ার শান্তি ও পরকালের মুক্তি দিতে সক্ষম। দুনিয়ার অন্ধকারকে আলোকিত করে দিতে পারে। সঠিক পথের সন্ধানও দিতে পারে এ কোরআন।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত করা। কোরআন অধ্যয়ন করে নিজেদের জীবনে তার বাস্তবায়ন করা জরুরি। আর তাতেই মিলবে দুনিয়ার প্রশান্তি ও আখেরাতের মুক্তি।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়ার প্রশান্তি ও পরকালের মুক্তিতে কোরআন তেলাওয়াত ও অধ্যয়ন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

 

Share





Related News

Comments are Closed