সুনামগঞ্জে বোরো ধানের বাম্পার ফলন, ৮৫ ভাগ ফসল কাটা সম্পন্ন

আল-হেলাল, সুনামগঞ্জ থেকে: সুনামগঞ্জে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার কৃষকের গোলায় ৩ হাজার ৮শ কোটি টাকার ধান উঠতে যাচ্ছে। জেলার ১২টি উপজেলায় ১৫৪টি হাওরেই চলতি বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।
গত ৭ এপ্রিল ধান কাটা শুরু হয়। ৩০ এপ্রিল প্রায় কাটা-মাড়াই শেষ দিকে। তবে ৭ মে শতভাগ ধান কাটা মাড়াই শেষ হবে। চলতি মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলনে সুনামগঞ্জের গেল বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে এবার ঘুরে দাঁড়িয়ে উঠার কথা ভাবছেন কৃষকেরা।
সরকারি ভাবে প্রতি মন ধান ১২ শত ৩০ টাকা দরে কেনা শুরু হয়েছে জেনে কৃষকরা অত্যন্ত আনন্দিত।
অপর দিকে জেলার ১২টি উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে প্রতি মন ধান ৮ শত পঞ্চাশ টাকা থেকে ৯ শত পঞ্চাশ টাকা দরে স্থানীয়ভাবে বিক্রয় হচ্ছে। প্রতি বছরই সার-বীজ, সেচ, ডিজেল ও কৃষি পণ্য মুল্যের বৃদ্ধির সাথে ধান উৎপাদন খরচও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও ধানের উৎপাদন খরচের তুলনায় বাজারে দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা। কৃষকের ১ কেদার জমির উৎপাদন খরচ হাওর বিশেষ ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা হচ্ছে আর কৃষক এই জমি থেকে উৎপাদিত ধান পাচ্ছেন যার বাজার মূল্য ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার।
জেলা কৃষক লীগের সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল কাদির শান্তি মিয়া বলেন, ধান সহ সকল কৃষি পণ্যের মুল্য নিশ্চিত করতে এবং দ্রব্য মূল্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ধানের দাম আরো বৃদ্ধির দাবি জানান। তিনি বলেন, সিলেট-সুনামগঞ্জ সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট শামীমা আক্তার খানমের নেতৃত্বে আমরা জামালগঞ্জে সরজমিনে গিয়ে কৃষক ভাইদের ক্ষেতের ধান কেটে দিয়ে এসেছি। তারা সকলেই চাচ্ছেন ধানের দাম যেন আরো বাড়ানো হয়।
সুনামগঞ্জ কৃষি বিভাগ থেকে জানা যায়, এবার ২ লাখ ২২ হাজার ৭৯৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। আবাদকৃত জমিতে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ লক্ষ ৫৩ হাজার মে. টন। যা চালের পরিমাণে দাঁড়ায় ৯ লাখ ২ হাজার মে. টন। আর টাকার অংকে প্রায় ৩ হাজার ৮শ কোটি টাকা।
জামালগঞ্জ উপজেলার বেহেলী ইউনিয়নের মশালঘাট গ্রামের বাসিন্দা মাসুক মিয়া বলেন হাওরে এবার তিনি ১৬ কেদার জমিতে বোরো ধান চাষ করেছিলেন। হারভেস্টার মেশিনে ধান কাটা শুরু করেছেন। প্রতি কেদারে ২০ মন করে ধান পাওয়ার আশা করছেন। আকাশ ভাল হলে ১/৩ দিনের মধ্যে সব ধান কেটে শেষ করবেন।
এবার হাওরের ফসল ভালো হয়েছে উল্লেখ করে দেখার হাওর পাড়ের কৃষক কমল মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি বলেন ১৫ কেদার জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি। তার মধ্যে ১০ কেদার জমির ধান কাটা হয়েছে, ২/১ দিনের মধ্যে বাকী ৫ কেদার ধান কাটা শেষ হবে। এবার ভালো ফলন হয়েছে। ধানের দাম ভালো পেলে, আশা করি ঋণ শোধ করে ঘুরে দাঁড়াতে পারবো।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার করচার হাওর পাড়ে ডালিয়া বেগম বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে ৫ কেদার ফসল ফলাইছি। কাটা-মাড়াই শেষ করেছি তবে ধান শুকানোর কাজ শেষ হয়নি, ২/১ দিনের মধ্যে শেষ হবে। আমার স্বামী নেই। আমার সন্তান নিয়ে ধান কাটছি। ফসল তুলতে কষ্ট হলেও আনন্দের সীমা নেই। বাজারে ধানের দাম ভালো থাকলে আমার মেয়ের বিয়ে ও ছেলের পড়াশুনার আর সমস্যা হবে না।’
জেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি সেলিম আহমদ ও যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক খন্দকার মঞ্জুর আহমদ বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা শ্রমিকলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সার্বক্ষনিকভাবে হাওরে কৃষক ভাইদের পাশে আছি। এবং ফসল গড়ে উঠার পূর্ব পর্যন্ত মাঠেই থাকবো।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সালমা পারভীন ও কৃষি অধিদপ্তরের সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা কর্মকর্তা রাকিবুল ইসলাম জানান, এ বছর সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন হাওরে প্রায় ১২ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে বোরো ফসল চাষ করা হয়েছে, যা আমাদের লক্ষ্যমাএার চেয়ে ৪৫ হেক্টর বেশি। খামার যান্ত্রিকিকরন প্রকল্পের আওতায় কৃষি বান্ধব সরকার ভতুকীতে কম্বাইন্ড হারভেস্টার সরবরাহ করার মাধ্যমে ধান কর্তন দ্রুত সম্ভব হচ্ছে। এই পর্যন্ত সদর উপজেলায় ৮৭% ধান কর্তন সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বাকী ধান কর্তন করে শুকিয়ে ঘরে তুলতে পারবে। এবার বোরো ফসলের বাম্পার ফলন হয়েছে।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, হাওরের ৮৩ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। এছাড়াও নন হাওরে ২৫ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। গড়ে ৮৫ ভাগ বোরো ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, এ বছর ১ হাজার হারভেস্টার মেশিনের পাশাপাশি ২ লাখ ৬৫ হাজার শ্রমিক হাওরে ধান কাটছে। ফলন ভালো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, ‘সুনামগঞ্জে প্রায় তিন লাখ কৃষি শ্রমিক রয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা থেকেও কয়েক হাজার শ্রমিক এসেছে। হাওরের বোরো ধান দ্রুত কর্তনের জন্য ৭০ শতাংশ সরকারি ভর্তুকিতে কৃষকদের চলতি বছর ১০৫টি নতুন হারভেস্টার ও ৩৩টি রিপার দেওয়া হয়েছে, যা দিয়ে হাওরে দ্রুত ধান কাটা ও মাড়াই করা সম্ভব হচ্ছে। এতে কৃষকদের সময় ও খরচ দুটোই সাশ্রয় হচ্ছে। এবং দ্রুত হাওরের ধান কাটা সম্পন্ন হচ্ছে।’
Related News
পঞ্চগড়ে বাণিজ্যিক ভাবে মাল্টা চাষ
সফিকুল আলম দোলন, পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধি: পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় বাণিজ্যিক ভাবে মাল্টা চাষ শুরু হয়েছে।Read More

পঞ্চগড়ে স্বস্তির বৃষ্টি, কৃষকের মুখে হাসি
মো. সফিকুল আলম দোলন, পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধি: পঞ্চগড়ে দীর্ঘদিন খড়ার পর স্বস্তির বৃষ্টিতে আমন ধানেরRead More
Comments are Closed