Main Menu

অন্ধত্ব…

মো. নুরুল হক: বাহ্যিকভাবে খোলাচোখে সৃষ্টিজগতের কোনও-কিছু দেখতে না পারাকেই সোজা কথায় ‘অন্ধত্ব ‘বলা হয়ে থাকে। আর, এ অন্ধত্বে যাকে পেয়ে বসেছে, তাকেই আমরা ‘অন্ধ’ বলে থাকি।

এ সৃষ্টিজগতকে দেখার জন্যে মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে দু’টি চোখ দিয়েছেন। এবং তা দেহের এমন জায়গায় বসিয়ে দিয়ে ঘাড়ের সাথে কী এক স্প্রিং ফিট করে দিয়েছেন- যা দ্বারা আমরা ডানে-বায়ে, সামনে সবকিছুই সহজে দেখতে পারি!

সৃষ্টিকর্তা তাঁর নিজ ক্ষমতা বা ইচ্ছা বলে কাউকে- কাউকে জন্মান্ধ করেই সৃষ্টি করেন। আবার, কারোও-কারোও অসুস্হতার কারণে, দূর্ঘটনায় পতিত হয়ে, কিংবা- স্বাভাবিকভাবেই বয়োঃবৃদ্ধতার কারণে অন্য যে-কোনও অনাকাঙ্খিত কারণেও মানুষ অন্ধত্বের শিকার হতে পারে।

ডাঃ লুৎফুর রহমান বলেছেন- ‘চোখ থাকলেই দেখা হয়না, দেখার জন্যে মন চাই, অন্তর্চক্ষু চাই’। সুগভীর মর্মার্থ আছে এ কথাটায়। অন্ধদের মধ্যে যারা পবিত্র কোরআন শরিফ মুখস্ত করেছেন, করছেন- মহান আল্লাহ তা ‘আলা তাদের অন্তর্চক্ষু খুলে দিয়ে কোরআন পাঠ তাদের জন্যে সহজ করে দিয়েছেন, যা আর দশজন মানুষের জন্যে শুধু কঠিনই নয়- অ-সম্ভবও বটে।

এই অন্ধত্বটা সবার জন্য অভিশাপ মনে হলেও কেউ-কেউ সেটাকে মোটেই অভিশাপ হিসেবে মনেই করেনা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কাচারিপুকুর পাড়ে গানের আসর জমিয়ে যে অন্ধ পরিবারটি জীবন-জীবিকার পথ বেছে নিয়েছে- তাদেরতো অন্তর্চক্ষু খোলা-ই! তা না হলে কি এমন অ-সাধরণ নিপুণ পারঙ্গমতায় যন্ত্রানুসঙ্গ সহ গান পরিবেশন করে বিনোদন দিয়ে দর্শক-শ্রোতার মন জয় করে জীবন-জীবিকার পথের সন্ধান করে নিতে পারতো!

মূলতঃ, দেখার জন্যে, দেখে শেখার জন্যেই চোখের সৃষ্টি। চোখ থাকলেও যারা চোখের দর্পণে নিজেকে, সমাজকে দেখেনা, শেখেনা- তাদের চোখ থাকলেই বা না থাকলেই কী! চোখ থাকলেও তারা অন্ধ, তাদের কপাল মন্দ।

সংবাদপত্র, সাংবাদিক একটি সমাজ বা রাষ্ট্রের চোখ- যে চোখে সমাজ/ রাষ্ট্রের ভালো-মন্দ বা যে-কোনও অসঙ্গতি দেখে থাকে, দেখতে হয়। এঁরা যখনই নিজেদের চোখ বন্ধ করে নিজেরা স্বেচ্ছায়, অনিচ্ছাস্বত্বেও, কিংবা- বাধ্য হয়ে নিজেদেরকে অন্ধত্বে পর্যবসিত করে, তখন সেই সমাজ বা রাষ্ট্রকে বন্ধাত্বে, খুরারোগে পেয়ে বসে। সেই সমাজ/ রাষ্ট্র চলৎশক্তিহীন হয়ে পড়ে, সঠিক পথের দিশা হারিয়ে ফেলে, খুড়িয়ে-খুড়িয়ে হাটে। যে সমাজে তথাকথিত প্রখ্যাত-বিখ্যাত ‘বাহারি’ রং এর সাংবাদিকরা, যাদের সমালোচনা বা অসঙ্গতি তুলে ধরার পরিবর্তে তাদের কাছে নিজেদের বিবেকের-চোখ বিক্রি বা বন্ধক দিয়ে দলান্ধ বা ব্যক্তিবিশেষের প্রতি অন্ধ হয়ে চোখ অন্ধ করে মুখ বন্ধ করে রাখে, পয়সার কেনা গোলাম হয়ে যায়- সেই সমাজ/ রাষ্ট্র কখনোও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ বা রাষ্ট্র হিসেবে প্রতষ্ঠা পেতে পারেনা, প্রতিষ্ঠার চেষ্টাও করেনা। ক্ষমতারোহন, ক্ষমতায় বহাল বা চেটে-পুটে ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণই তখন সেই সমাজে মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়। একইভাবে -যে সমাজের চোখ অন্ধ করে রাখা সহ মুখও বন্ধ করে রাখার পথ বেছে নেয়া হয়- হয়তোবা দেখা যাবে কোনও একদিন সেই সমাজ নিজেই অন্ধ হয়ে গেছে! সেই অন্ধ চোখেই তখন তার কাছে নিজের সকল অসঙ্গতি, অপকর্মকেই মনে হবে পরিচ্ছন্ন, এক্কেবারে ‘ধুয়া তুলসি পাতা’। বাকী সব ‘অপদার্থ’!

কে না চায় যে-কোনও অন্ধত্বের পথের সমস্ত বাঁধা দূর হয়ে যাক, অন্ধকারের সকল পর্দায় ভেসে উঠুক সত্যনিষ্ঠতার উজ্জ্বল-আলোকবর্তিকা।

লেখক: অবসরপ্রাপ্ত সহকারি পোস্ট মাস্টার জেনারেল, সিলেট প্রধান ডাকঘর।

Share





Related News

Comments are Closed