Main Menu

ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন আজ

বৈশাখী নিউজ ডেস্ক: আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি, ভ্যালেন্টাইনস ডে বা ভালোবাসা দিবস। আজ আবার পহেলা ফাল্গুনও। ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিনটির সঙ্গে ভালোবাসা মিলেমিশে একাকার।

নানাবিধ আয়োজনে বরণ করে নেয়া হয় ঋতুরাজ বসন্তকে। পয়লা ফাল্গুনে নাগরিক তারুণ্য বসনে-ভূষণে বসন্তের রঙে সেজে সমস্বরে গেয়ে ওঠে, ‘আহা আজি এই বসন্তে কত ফুল ফুটে, কত পাখি গায়।’

ফুলে রাঙা বাসন্তী মোহ আজ যুগলদের মনের উচ্ছ্বাসকে বাড়িয়ে দেবে কয়েকগুণ। শুধু তরুণ-তরুণী নয়, নানা বয়সের মানুষই ভালোবাসার এই দিনে একসঙ্গে সময় কাটাবেন। দিনটি পশ্চিমা সংস্কৃতির অনুষঙ্গ হলেও ভ্যালেন্টাইনস ডে বা ভালোবাসা দিবসে এখন বাঙালি জীবনের সঙ্গেও মিশে গেছে।

অনেকেই বলে থাকেন, ফেব্রুয়ারির এ সময়ে পাখিরা তাদের জুটি খুঁজে বাসা বাঁধে। নিরাভরণ বৃক্ষে কচি কিশলয় জেগে ওঠে। তীব্র সৌরভ ছড়িয়ে ফুল সৌন্দর্যবিভায়। পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হয়। এ দিনে চকোলেট, পারফিউম, গ্রিটিংস কার্ড, ই-মেইল, মুঠোফোনের এসএমএস-এমএমএসে প্রেমবার্তা, হীরার আংটি, প্রিয় পোশাক, জড়াজড়ি করা খেলনা মার্জার অথবা বই ইত্যাদি শৌখিন উপঢৌকন প্রিয়জনকে উপহার দেয়া হয়।

নীল খামে হালকা লিপস্টিকের দাগ, একটা গোলাপ ফুল, চকোলেট, ক্যান্ডি, ছোট্ট চিরকুট আর তাতে দু`ছত্র গদ্য অথবা পদ্য হয়ে উঠতে পারে উপহারের অনুষঙ্গ।

ইতিহাসবিদদের মতে, দুটি প্রাচীন রোমান প্রথা থেকে এ উৎসবের সূত্রপাত। এক খ্রিস্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ফাদার সেন্ট ভ্যালেনটাইনের নামানুসারে দিনটির নাম ‘ভ্যালেনটাইনস ডে’ করা হয়। ২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি খ্রিস্টানবিরোধী রোমান সম্রাট গথিকাস আহত সেনাদের চিকিৎসার অপরাধে সেন্ট ভ্যালেনটাইনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। মৃত্যুর আগে ফাদার ভ্যালেনটাইন তার আদরের একমাত্র মেয়েকে একটি ছোট্ট চিঠি লেখেন, যেখানে তিনি নাম সই করেছিলেন ‘ফ্রম ইওর ভ্যালেনটাইন’। সেন্ট ভ্যালেনটাইনের মেয়ে এবং তার প্রেমিক মিলে পরের বছর থেকে বাবার মৃত্যুর দিনটিকে ভ্যালেনটাইনস ডে হিসেবে পালন করা শুরু করেন। যুদ্ধে আহত মানুষকে সেবার অপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সেন্ট ভ্যালেনটাইনকে ভালোবেসে দিনটি বিশেষভাবে পালন করার রীতি ক্রমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

ভ্যালেনটাইনস ডে সার্বজনীন হয়ে ওঠে আরও পরে প্রায় ৪০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে। দিনটি বিশেষভাবে গুরুত্ব পাওয়ার পেছনে রয়েছে আরও একটি কারণ। সেন্ট ভ্যালেনটাইনের মৃত্যুর আগে প্রতি বছর রোমানরা ১৪ ফেব্রুয়ারি পালন করত ‘জুনো’ উৎসব। রোমান পুরানের বিয়ে ও সন্তানের দেবী জুনোর নামানুসারে এর নামকরণ। এ দিন অবিবাহিত তরুণরা কাগজে নাম লিখে লটারির মাধ্যমে তার নাচের সঙ্গীকে বেছে নিত। ৪০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে রোমানরা যখন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীতে পরিণত হয় তখন ‘জুনো’ উৎসব আর সেন্ট ভ্যালেনটাইনের আত্মত্যাগের দিনটিকে একই সূত্রে গেঁথে ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘ভ্যালেনটাইনস ডে’ হিসেবে উদযাপন শুরু হয়। কালক্রমে এটি সমগ্র ইউরোপ এবং ইউরোপ থেকে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

বাংলাদেশে ‘ভালোবাসা দিবস’ উদযাপন যিনি চালু করেন তিনি হচ্ছেন সাংবাদিক শফিক রেহমান। ১৯৯৩ সালে তার সম্পাদিত যায়যায়দিন পত্রিকায় প্রথম এই দিনটিকে উপলক্ষ করে বিশেষ ‘ভালোবাসা সংখ্যা’ বের করেছিলেন তিনি। দিনে দিনে সে ভালোবাসা দিবস বাংলাদেশে রূপ নিয়েছে রীতিমত উৎসবে।

এ প্রসঙ্গে ২০২০ সালে বিবিসি বাংলাকে সাংবাদিক শফিক রেহমান বলেন, ১৯৯৩ সালে আমি ঢাকায় যায়যায় দিন পত্রিকাটি প্রকাশ করি। সে বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন্স ডে সামনে রেখে আমরা একটি বিশেষ সংখ্যা বের করার পরিকল্পনা করি এবং পাঠকদের কাছে লেখা আহ্বান করি। আমি তখন বলেছিলাম, একটি দিনে প্রতিটি মানুষের অন্তত সবার কাছে ভালোবাসাটা প্রকাশ করা উচিত। ভালোবাসা দিবস শুধু স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে নয়, সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া উচিত। অর্থাৎ বাবা-মার সঙ্গে ছেলে মেয়ের, দাদা-দাদির সঙ্গে নাতি-নাতনির, এমনকি বাড়িওয়ালার সঙ্গে ভাড়াটিয়ার। পুলিশের সঙ্গে পাবলিকের, যদি সম্ভব হয়। আমি মনে করেছি এতে দেশে সহিংসতা কমে আসবে।

তিনি আরো বলেন, আমি তখন পাঠকদের কাছে তাদের অভিজ্ঞতা চেয়ে পাঠালাম এবং আমি বিপুল সাড়া পাই। বলতেই হবে, বাঙালি আসলেই প্রেমিক। নইলে এত লেখা আমরা কেমন করে পেতাম।

ভ্যালেন্টাইন্স ডে কেন বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবস নামে চালু করলেন সে প্রশ্নের উত্তরও দেন শফিক রেহমান। তিনি বলেন, আমি বহুবছর লন্ডনে থাকার সুবাদে জানতাম, সেখানে কীভাবে ভ্যালেন্টাইন্স ডে উদযাপিত হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এ নামের পরিবর্তে ভালোবাসা দিবস দিয়েছিলাম ইচ্ছে করে। ভ্যালেন্টাইন্স ডে বললে অনেকে বলবে এটা খ্রিস্টানদের ব্যাপার। ধর্মকে জড়িয়ে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হতো তাহলে। যে সপ্তাহে আমাদের ভালোবাসা সংখ্যা বের হয়, ওই একই সপ্তাহে বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন তাদের প্রথম ভালোবাসা সংখ্যা প্রকাশ করে। সেজন্য অনেকে বলেন, আমি টাইম ম্যাগাজিনের চেয়ে একটু এগিয়ে ছিলাম। আমি কিন্তু কখনই ভাবিনি এ ভালোবাসা দিবস এত বড় রূপ নেবে।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে অন্য যেসব উৎসব হয়, সেগুলো হয় ধর্মীয় নয়তো রাজনৈতিক। অথবা নববর্ষের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু ভালোবাসা দিবস ছিল সেদিক থেকে আলাদা। এখন অনেকেই ১৪ ফেব্রুয়ারিতে বিয়েও করছে। এই দিনটি বাংলাদেশে অনেক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। যশোরে এক দিনেই বিক্রি হয় ১২ কোটি টাকার ফুল। আমার ধারণা এটি আরও বড় হবে। এটাকে আমি পারিবারিক রূপ দেবার চেষ্টা করেছি।

প্রতি বছর বসন্ত বরণে সিলেট নগরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলেও এবার করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে বড় কোনো আয়োজন হচ্ছে না বলে জানালেন সিলেট সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রজতকান্তি গুপ্ত। ক্যাম্পাসগুলো বন্ধ থাকায় এবার ঘরোয়া আয়োজনে বসন্তকে বরণ করে নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

আর পরিবেশবাদী সংগঠন ‘ভূমিসন্তান বাংলাদেশ’-এর সমন্বয়ক আশরাফুল কবীরের মতে, প্রকৃতি বন্দনার উৎসবের পাশপাশি প্রকৃতির সুরক্ষায়ও আমাদের মনোযোগী হতে হবে। নতুবা পলাশ-শিমুল-কোকিল আর বসন্ত কেবল বইয়েই থাকবে। বাস্তবে এসবের দেখা মিলবে না।

Share





Related News

Comments are Closed