২৪ বছরের দেনমোহর মামলা শেষ হলো স্ত্রীর ক্ষমায়
বৈশাখী নিউজ ডেস্ক: নরসিংদীর সেলিম মিয়া গোপনে বিয়ে করেছিলেন সুনামগঞ্জের এক তরুণীকে ২৪ বছর আগে। সংসারে জন্ম নেয় এক কন্যাসন্তানও। কিছুদিন পরই সেলিম ফিরে যান নিজ এলাকায়। তারপর থেকে নেই কোনো যোগাযোগ, নেই খোঁজখবর, নেই খরচের টাকাও।
সম্প্রতি সুনামগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এই বাস্তব ঘটনার উল্লেখ করে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন সুনামগঞ্জ সদর আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ মোহাম্মদ জুনাইদ।
তিনি লিখেছেন, ২০০১ সালে স্ত্রী দেনমোহর ও নিজের এবং মেয়ের ভরণপোষণের দাবিতে সুনামগঞ্জ সদর পারিবারিক আদালতে মামলা করেন। আদালত তখন বাদীর পক্ষে রায় দেন। কিন্তু রায় কার্যকর হতে কেটে যায় প্রায় এক চতুর্থাংশ শতাব্দী।
২০০১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত একের পর এক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়, পুলিশে তাগাদা পাঠানো হয়, কিন্তু আসামি অধরাই থাকেন। এমনকি অনেক পরোয়ানাই সিডিএমএস সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। বাদী প্রায় প্রতিটি তারিখে হাজির থেকেছেন, তবু প্রাপ্য টাকার কোনো দেখা মেলেনি।
অবশেষে ২০১৯ সালের অক্টোবরে হঠাৎ আদালতে হাজির হন সেলিম মিয়া। তিনি ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন এবং বাকি টাকা ১১ কিস্তিতে পরিশোধের অঙ্গীকার করেন। কিন্তু প্রথম কিস্তির পরই আবার নীরবতা।
২০২৫ সালের জুনে নতুন বিচারক দায়িত্ব নিয়ে পুরোনো ফাইলগুলো পর্যালোচনা করতে গিয়ে এই মামলাটি খুঁজে পান। দেনমোহর ও ভরণপোষণের মোট অঙ্ক ছিল মাত্র ৫২ হাজার টাকা।
পুলিশের শৈথিল্যের বিষয়টি জানিয়ে সংশ্লিষ্ট ডিআইজি ও পুলিশ সুপারকে অবহিত করা হয়। এরপর পুলিশ সক্রিয় হয়। তিন জেলায় অভিযান চালিয়ে অবশেষে গ্রেপ্তার হন সেলিম মিয়া। আদালত তাকে কারাগারে পাঠান।
দুই সপ্তাহ পর, গেল ২ নভেম্বর দুপুরে আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ চলছিল। হঠাৎ এক বৃদ্ধা নারী উপস্থিত হয়ে শান্ত স্বরে বললেন, ‘স্যার, সব টাকা বুঝে নিয়েছি, মামলা প্রত্যাহার করতে চাই।’
বিচারক মুচকি হেসে বললেন, ‘আমি এত কষ্টে তাকে জেলে পাঠালাম, আপনি আবার মাফ করে দিলেন?’
নারীর চোখে জল, তবু কণ্ঠে দৃঢ়তা ‘আমার জীবন তো শেষ… যত অন্যায়ই করুক, সে আমার স্বামী।’
এরপর আদালত মামলাটি নিষ্পত্তি ঘোষণা করেন। ২৪ বছরের পুরোনো দেনমোহর মামলার এভাবেই হয় অবসান।
এঘটনার বিষয়টি সত্যতা নিশ্চিত করে বিচারক মোহাম্মদ জুনাইদ সিলেট ভয়েসকে বলেন, এটির রায় আমি দেইনি তবে আপোষে মিমাংসা করে দিয়েছি। এই মামলা শুধু একটি আইনি ফাইল নয়, এটি আমাদের সমাজ ও বিচারব্যবস্থার আয়না।’
তিনি আরও জানান, সম্প্রতি লিগ্যাল এইড অধ্যাদেশ ২০২৫ কার্যকর হওয়ায় সুনামগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় দেনমোহর ও ভরণপোষণ মামলা এখন কয়েক মাসের মধ্যেই নিষ্পত্তি হচ্ছে। পুরোনো মামলার জট কাটাতে এটি আশার আলো হয়ে উঠেছে।
Related News
সুনামগঞ্জে তরুণীকে ধর্ষণের পর খুন, যুবকের মৃত্যুদন্ড
Manual1 Ad Code বৈশাখী নিউজ ডেস্ক: সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে পান্ডারগাঁও গ্রামে প্রেমিকাকে ধর্ষণ ও হত্যার দায়েRead More
‘পরকীয়ার’ জেরে কনস্টেবলকে হত্যা, পুলিশ দম্পতির ফাঁসির রায়
Manual4 Ad Code বৈশাখী নিউজ ডেস্ক: সহকর্মী পুলিশ কনস্টেবলকে ‘পরকীয়ার’ জেরে হত্যার দায়ে এক পুলিশRead More



Comments are Closed