তিনদিনে গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার শিকার আরও ৩৫০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় হামাস উৎখাত আর তাদের কবল থেকে জিম্মি উদ্ধারের নামে ইসরায়েলের নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চলছেই। প্রতিদিনই তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা; দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে লাশের মিছিল। নিরাপদ বলে কোনো স্থান বাকি নেই গাজাবাসীর জন্য। একদিকে আকাশ ও স্থল অভিযান, অন্যদিকে ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ; গাজা যেন সাক্ষাৎ নরক হয়ে উঠেছে তার বাসিন্দাদের জন্য।
ইতোমধ্যে ধ্বংসস্তূপে পরিণত ভূখণ্ডটিতে গত তিনদিনে হামলার তীব্রতা ব্যাপকহারে বাড়িয়েছে ইসরায়েল। এ ৭২ ঘণ্টায় অন্তত ৩৫০ জন নিরপরাধ ফিলিস্তিনির প্রাণ কেড়ে নিয়েছে দখলদার বাহিনী।
সোমবার (১৯ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, রোববার (১৮ মে) ভোর থেকে সন্ধ্যার মধ্যেই ১৫১ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি সেনারা। এর আগের দুইদিনে শুধু উত্তর গাজাতেই অন্তত ২০০ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে ইসরায়েলি বর্বর হামলায়।
এ নিয়ে গত প্রায় ১৮ মাসে গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যামূলক অভিযানে ৫৩ হাজার ৩৬০ জনেরও বেশি নিরপরাধ ফিলিস্তিনি তাদের প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
এদিকে তীব্র খাদ্য সংকটে ভুগছে ফিলিস্তিনিরা। একবেলার খাবারও জোটে না বহু পরিবারের। কেউ কেউ তিন দিনেও খায়নি কিছু। ইসরায়েলি অবরোধের কারণে খাদ্য, পানি, ওষুধ সবকিছুরই চরম ঘাটতি দেখা দিয়েছে উপত্যকাজুড়ে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, গত কয়েকদিনে সবচেয়ে বেশি হামলা হয়েছে উত্তরাঞ্চলে। রোববারের হামলায়ও নিহতদের মধ্যে ৬৯ জনই এ অঞ্চলের। লাগাতার এ হামলায় উত্তর গাজার সব হাসপাতাল এখন কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।
আল জাজিরা বলছে, ইসরায়েলি অবরোধ ও টানা হামলার কারণে গাজার অধিকাংশ হাসপাতালই কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে অনেক আগে। সবশেষ হামলায় ভূখণ্ডটির অন্যতম বৃহত্তম ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালও সেবা কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের এক হামলার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ গাজায় ভয়াবহ এক অভিযানে নামে ইসরায়েলি বাহিনী। দীর্ঘ ১৫ মাস সামরিক অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরায়েল। তারপর প্রায় দু’মাস গাজায় কম-বেশি শান্তি বজায় ছিল; কিন্তু গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রশ্নে হামাসের মতানৈক্যকে কেন্দ্র করে মার্চ মাসের তৃতীয় গত সপ্তাহ থেকে ফের গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় নতুন করে শুরু হওয়া ইসরায়েলি বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৩ হাজার ২৫০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও ৯ হাজার ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। ইসরায়েলের বর্বর এই হামলা চলতি বছরের জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে দিয়েছে।
যুদ্ধবিরতি পুনরায় কার্যকর করার চেষ্টা করে যাচ্ছে মিশর এবং কাতার। এর অংশ হিসেবে কাতারের দোহায় যুদ্ধবিরতির আলোচনায় বসেছে ইসরাইল ও হামাস। তবে, সেখানে হামাস নেতা ওসামা হামদান জানান, আলোচনায় এমন কিছু প্রস্তাব এসেছে যা তাদের জন্য অগ্রহণযোগ্য। অস্ত্র পরিত্যাগ এবং গাজা থেকে নির্বাসন এমন শর্তে রাজি নয় তারা।
এর আগে, নেতানিয়াহু প্রশাসন বলছে, যুদ্ধ বন্ধ করতে হলে হামাসকে অস্ত্র ছাড়তে হবে এবং গাজা থেকে চলে যেতে হবে। এটিই হবে চূড়ান্ত লক্ষ্য।
সবশেষ রোববার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি চুক্তির প্রস্তাবের পাশাপাশি গাজায় যুদ্ধের সমাপ্তির বিষয়ও আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বিবৃতি অনুযায়ী, গাজায় স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধে নেতানিয়াহু কয়েকটি শর্ত দিয়েছেন। শর্তগুলো হলো- এক. হামাসকে সব জিম্মি মুক্তি দিতে হবে, দুই. তাদের সব সদস্যকে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করতে হবে এবং গাজা ছেড়ে চলে যেতে হবে।
Related News

আরও ৩৬ দেশের ওপর আমেরিকার ভিসা নিষেধাজ্ঞা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আরও ৩৬ দেশের নাগরিকদের জন্য আমেরিকার দরজা বন্ধ করে দিল ট্রাম্প প্রশাসন। এমনটাইRead More

ইসরায়েলে নতুন করে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইসরায়েলে নতুন করে ইরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করেছে বলে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমেরRead More
Comments are Closed