Main Menu

রেলওয়ের আখাউড়া-সিলেট ডুয়েলগেজ সিঙ্গেল লাইনের পরিবর্তে ডাবল লাইন প্রতিষ্ঠা সময়ের দাবী

আবু তালেব মুরাদ : সিলেট টু আখাউড়া কেনো আমরা ডুয়েলগেজ সিঙ্গেল লাইন চাইনা, আমরা চাই ডাবল লাইন।এর কারন হল ডুয়েলগেজ সিঙ্গেল লাইন যা দিয়ে বড় বগির ও ছোট বগির ট্রেন চলতে পারে তাতে রেল ক্রসিং এর সময় ঠিকই অপেক্ষার প্রহর গুনতে হবে,তা সিলেট তথা এ অঞ্চলের রেল যাত্রীদের কোন উপকারেই আসবে না।কিন্তু ডাবল লাইনের সবচেয়ে বড় উপকারিতা হল ক্রসিং এর জন্য সময় ক্ষেপন করতে হবে না,অনায়াসে সিলেট থেকে ৪ থেকে সাড়ে ৪ ঘন্টার মধ্যে ঢাকা পৌছান যাবে।

ঢাকা থেকে আখাউড়া এমনকি আখাউড়া থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত আজ থেকে শত বছর আগ থেকে রেলওয়ের ডাবল লাইন রয়েছে, কিন্তু এই লাইনে ডুয়েলগেজ সিঙ্গেল লাইন নাই।যেহেতু প্রয়োজন বেশী ডাবল লাইনের। যার কারনে তাদের চলাচলে সময় লাগে কম, ক্রসিং এ কোন ট্রেন থামতে হয় না। আবার আখাউড়া থেকে সিলেট প্রায় ২৩৯ কিলোমিটার শুধু এক‌টি মাত্র লাইন থাকার কারনে যাতায়াতে সময় লাগে বেশী। গত প্রায় ৩ বছর আগে গুরুত্বপূর্ণ ডাবল লাইনের কথা বিবেচনা না করে এটিকে ডুয়েলগেজ সিঙ্গেল লাইন করার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। তখন বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছিলেন, ক্ষুদ লেখক নিজেও অনেক লেখালেখি করেছিলেন এমনকি বৃহত্তর সিলেটের সকল মন্ত্রীর কাছে স্মারক লিপি সহ আবেদন জানিয়েছিলেন যে ডুয়েলগেজ সিঙ্গেল লাইন নয়, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ডাবল লাইন করার জন্য। কিন্তু তা না করে ডুয়েলগেজ সিঙ্গেল লাইন করার সিদ্ধান্ত নেয় রেলওয়ে। আর এতে দেখানো হয় অস্বাভাবিক ব্যয়। রেলওয়ের ইতিহাসে বেশি ব্যয়ে কোন রেললাইন নির্মাণের ঘটনায় এত বাজেট ধরা হয়নি।

ডাবল লাইন না করে বিদ্যমান সিঙ্গেল লাইনকে মেরামত করে ডুয়েল করতেই এত বেশি ব্যয় প্রস্তাবে আপত্তি তুলেছিল পরিকল্পনা কমিশন।

তৎকালীন অর্থমন্ত্রী প্রয়াত আবুল মাল আবদুল মুহিত আখাউড়া-সিলেট রেল রুট কে ডাবল লাইন করার জন্য চিঠি দিয়েছেন। যে চিঠি উপেক্ষা করে সিঙ্গেল লাইন রাখা হয়েছে।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানান, সিলেটে এখন যে ট্রাফিক তাতে ডাবল লাইন দরকার নেই। দ্বিতীয়ত চীন এবং বাংলাদেশের যখন জিটুজি স্বাক্ষর হয়েছিল তখন এভাবে রিনোভেশন প্রজেক্ট হিসেবে ধরা হয়েছিলো।কাজের পরিমাণ এবং ইউনিট প্রাইস ধরেই বেশি ব্যয় এসেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

কিন্তু রেল চলাচলের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, কোন অংশেই ট্রাফিক কম নয়। ট্রাফিক বাড়ানো যাচ্ছে না রেলপথ সিঙ্গেল লাইন থাকার কারণে। ঢাকা-সিলেট ননস্টপ ট্রেনও চালু হচ্ছে না ডাবল লাইন না থাকায়। ক্রসিং করতে গিয়ে ট্রেনগুলো দীর্ঘ সময় কোন কোন স্টেশনে বসে থাকতে হচ্ছে।

রেলওয়ের হিসেবে, ৬টি আন্তঃনগর, ১টি মেইল, ২টি লোকালসহ কয়েকটি মালগাড়ি বর্তমানে চলছে এ রুটে। এরপরও ট্রাফিক কম কিসের ভিত্তিতে বলা হয় –তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

একদিকে বেশি ব্যয় অন্যদিকে সুদূরপ্রসারী চিন্তা না করে করে সিঙ্গেল লাইন মেরামত করে ডুয়েল গেজ করার পদক্ষেপ রেলওয়ের অপরিনামদর্শী ও টাকা লুটপাটের একটি চক্রান্ত হবে বলে মনে করেন অভিজ্ঞ মহল।

তারা বলেন এটা একটা বাজে সিদ্ধান্ত যে বিদ্যমান একটি লাইনকে ডুয়েল গেজ করা। যেখানে রেলওয়ের পশ্চিামাঞ্চলসহ সারাদেশে এখন ডাবল লাইন করা হচ্ছে।
এদিকে ব্যয়ের হিসেবে আখাউড়া-সিলেট রেলপথ ডুয়েলগেজে যে ব্যয় দেখানো হয়েছে তা অতীতের যেকোন সময় রেলপথ নির্মাণ ব্যয় থেকে বেশি।

সিলেটের মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থেকে শাহবাজপুর পরিত্যাক্ত রেলপথটি ডুয়েলগেজে রূপান্তরের কাজ চলছে। এতে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় হচ্ছে ১০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। একই ধরনের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে আখাউড়া-সিলেট বিদ্যমান রেলপথ ডুয়েলগেজে রূপান্তরে। অথচ এ প্রকল্পে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ সাড়ে পাঁচগুণের বেশি ব্যয় হচ্ছে আখাউড়া-সিলেট রেলপথ ডুয়েলগেজে রূপান্তর প্রকল্পে।

যদিও আখাউড়া-লাকসাম ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় হচ্ছে ১৯ কোটি টাকা। প্রকল্প প্রস্তাবে বেশি ব্যয় এবং ডাবল লাইন না করে ডুয়েল গেজ করায় আপত্তি দিয়ে ফেরত পাঠিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

যদ্দুর জানা গেছে অচিরেই কাজ শুরু হতে যাচ্ছে নাকি ডুয়েল গেজ সিঙ্গেল লাইনের। তার কারনে নির্মাণকাজের জন্য পুরো পথে একটি অস্থায়ী রেলপথ তৈরি করা হবে, নির্মাণ কাজ শেষ হলে তা তুলে ফেলা হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি অর্থের অপচয় ছাড়া কিছুই নয়।

আর খোদ রেলের প্রকৌশলীরাই বলছেন, এ সময়ে সিঙ্গেল লাইন নির্মাণ অদূরদর্শিতার চূড়ান্ত উদাহরণ। বর্তমান মিটার গেজ লাইন অক্ষুণ্ন রেখে পাশ দিয়ে ডুয়েল গেজ রেলপথ তৈরি করা হলে ব্যয় অনেক কম হতো, সিলেট সহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের যাত্রীদের স্বপ্নও পূরণ হতো এবং যাতায়াতে সময় কমে যেত।

আখাউড়া-সিলেট সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজে রূপান্তর প্রকল্পটি গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে অনুমোদন দেয়া হয়। বাস্তবায়নে ১৬ হাজার ১০৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। কিলোমিটার প্রতি ৬৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয় হবে।

প্রকল্পটির জন্য চীন ১০ হাজার ৬৫৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ঋণ দেবে। বাস্তবায়ন করবে চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিমূল্য ১৪ হাজার ৪৯০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।

প্রকল্পটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও। জুলাইয়ে এক চিঠিতে চলমান রেললাইন মিটার গেজ হতে ডুয়েল গেজে রূপান্তরের যৌক্তিকতা জানতে চাওয়া হয়।

নির্মাণ কর্তৃপক্ষের কাছে কয়েকটি প্রশ্ন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- ১) বর্তমান মিটার গেজের পাশাপাশি আরেকটি ডুয়েল গেজ লাইন স্থাপনে সমস্যা কোথায়। ২)জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ-জমালপুর ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন প্রকল্পের চেয়ে এ প্রকল্পের খরচ দ্বিগুণ হওয়ার কারণ কী। ৩) বিদ্যমান মিটার গেজ লাইনটি কবে স্থাপন হয়েছে ও লাইফটাইম কত। ৪)ডুয়েল গেজ সিঙ্গেল লাইন করতে কত সময় লাগবে এবং ব্রডগেজ ডাবল লাইন করতে কত সময়ের প্রয়োজন। ৫) চীন, ভারত ও বাংলাদেশে প্রতি কিলোমিটার রেললাইন স্থাপনে গড়ে খরচ কত। ৬) কুলাউড়া-শাহবাজপুর লাইনের প্রতি কিলোমিটারে খরচ কত। ৭) একই এলাকায় লাইন তৈরি করা হলেও আখাউড়া-সিলেট লাইন নির্মাণে খরচ এত বেশি কেন। ৮) সিলেট এলাকা পাহাড়ি হওয়ায় সেখানে মাটির কাজে খরচ কম হওয়ার কথা, কিন্তু বাস্তবে সেটি অনেক বেশি হচ্ছে কেন?

রেলপথ মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসব প্রশ্নের ‘উত্তর’ দিয়েছে। তবে এখনও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সিদ্ধান্ত আসেনি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

সব কথার শেষ কথা অবহেলিত সিলেট বাসীকে হয় বর্তমান মিটার লাইনের সাথে আরেকটি ডুয়েলগেজ সিঙ্গেল লাইন স্থাপন করা হোক নতুবা মিটার গেজ ডাবল লাইন বসানো হোক তাতে সিলেট এর সাথে অন্যান্য জেলার সময়ের দুরত্ব অনেকটা কমে যাবে।

Share





Related News

Comments are Closed