Main Menu

হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

বৈশাখী নিউজ ডেস্ক: জাতীয় সংসদের প্রাক্তন স্পিকার, বরেণ্য কূটনীতিক, বৃহত্তর সিলেটের কৃতিসন্তান হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ শনিবার। ২০০১ সালের ১০ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে কূটনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। মুক্তিযোদ্ধা কূটনৈতিক হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধের সময় নয়াদিল্লীস্থ বাংলাদেশ মিশনের প্রধান হিসেবে ১৯৭১ সালের ৫ ডিসেম্বর ভারতের সংসদ অধিবেশনে ভাষণ দেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশের স্বীকৃতি আদায়ে ৪০টিরও অধিক দেশের সাথে কূটনৈতিক তৎপরতা চালান। স্বাধীনতা পরবর্তীতে তিনি একাধারে রাষ্ট্রদূত, পররাষ্ট্রসচিব, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য এবং সব শেষে মহান জাতীয় সংসদের স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন।

সিলেটের কৃতিসন্তান বরেণ্য এ রাজনীতিবিদ ও কূটনীতিকের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। বেলা ২টায় মরহুমের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, কবর জিয়ারত, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ও ফাতেহা পাঠ এবং বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হবে। পরে দুস্থ ও অসহায় মানুষের মধ্যে খাদ্য বিতরণ করা হবে। বেলা সাড়ে ৩টায় হোটেল স্টার প্যাসিফিক এর বলরুম থেকে ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী স্মৃতি পরিষদের সভাপতি ও সাবেক মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মো. খলিলুর রহমান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, সিলেট চেম্বারের সভাপতি এটিএম মোয়েব, স্পিকার হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী স্মৃতি পরিষদের সহসভাপতি নোমান রশীদ চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন স্মৃতি পরিষদের আজীবন সদস্য ও সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন। অনুষ্ঠানে সবার উপস্থিতি কামনা করেছেন স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী স্মৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. এহছান এলাহী।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মরহুম হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর জন্ম ১৯২৮ সালের ১১ নভেম্বর সিলেট শহরের দরগা গেইটস্থ রশিদ মঞ্জিলে। পিতা আব্দুর রশিদ চৌধুরী ছিলেন অবিভক্ত ভারতের কেন্দ্রীয় বিধান সভার সদস্য এবং মাতা সিরাজুন নেছা চৌধুরী ছিলেন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য। হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার হাই মাদ্রাসা সেকশনে প্রাথমিক শিক্ষা ও আসামে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে ১৯৪৭ সালে ভারতের আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি ইংলিশ বারে অধ্যয়ন করেন এবং লন্ডনের ইনার টেম্পলের একজন সদস্য হন। লন্ডনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠান থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রি তিনি অর্জন করেন। এছাড়া ম্যাসাচুসেটসের ফ্লেচার স্কুল অব ল অ্যান্ড ডিপ্লোম্যাসি থেকে স্নাতক ডিগ্রিও অর্জন করেছিলেন তিনি।

১৯৫৩ সালে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী তৎকালীন পাকিস্তানের বৈদেশিক সম্পর্ক বিভাগে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭২ সালে তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৭৬ সালের পর সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া এবং ভ্যাটিকানেও একই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা বা আইএইএ এবং জাতিসংঘের শিল্পাঞ্চল উন্নয়ন সংস্থা বা ইউনিডো’র প্রথম স্থায়ী প্রতিনিধি তিনি ছিলেন । ১৯৮৫ সালের ৩ জুলাই তিনি জাতিসংঘের ৪১তম সাধারণ পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হন।

১৯৭৫ সালে স্বাধীনতা বিরোধীরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী তার জার্মানীর বাসায় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, জামাতা ড. ওয়াজেদ ও দুই নাতি-নাতনিকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। তার অনুরোধে জার্মান সরকার তার বাসার সামনে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিলেন। হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী সিলেট-১ আসন (সদর- কোম্পানীগঞ্জ) থেকে ১৯৮৬ সালে ৩য় সংসদ, ১৯৮৮ সালে ৪র্থ সংসদ এবং ১৯৯৬ সালে ৭ম সংসদ নির্বাচনে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ১৪ জুলাই তিনি সর্বসম্মতিক্রমে জাতীয় সংসদের স্পিকার নির্বাচিত হন এবং আমৃত্যু তিনি এ পদে বহাল ছিলেন।

২০০১ সালের ১০ জুলাই তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। মৃত্যুর পর সিলেট অন্ত:প্রাণ এই বরেণ্য রাজনীতিবিদ, কূটনীতিককে সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজার সংলগ্ন কবরস্থানে দাফন করা হয়।

Share





Related News

Comments are Closed