Main Menu

ছাতকে রাস্তা বন্ধ করায় ৩২ পরিবার অবরুদ্ধ

ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি: ছাতক উপজেলায় সরকারি চলাচলের রাস্তা বন্ধ করায় ৩২টি পরিবার অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। সাবেক ইউপির চেয়ারম্যান শামছুদ্দীন কাচা মিয়ার বিরুদ্ধে সরকারি খাস রাস্তাটি বন্ধের অভিযোগের ঘটনায় উপজেলাজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামবাসীসহ প্রতিবেশিদের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটির উপর দেয়াল নির্মানের ঘটনায় দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগকে কেন্দ্র করে থানা পুলিশের তদন্তের পরও দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা বিরাজ করছে।

ছাতক উপজেলার ছৈলাআফজলাবাদ ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামে সাবেক চেয়ারম্যান শামছুদ্দীন কাচা মিয়া ও কৃষক আতিকুর রহমানের লোকজনদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। সরকারি রাস্তাটি বন্ধ করায় পরিবারগুলো এক মাস ২০দিন ধরে চলাচলে বিড়ম্বনায় পড়েছে।

গত মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, গত ৪ অক্টোবর উপজেলার ছৈলাআফজলাবাদ ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামের মৃত আব্দুল করিম পুত্র আতিকুর রহমান বাদী হয়ে ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান শামছুদ্দীন কাচা মিয়াসহ ৪জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন উপজেলা নিবার্হী কর্মকতার কাছে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর সহকারি কমিশনার (ভুমি) বরাবরে উপজেলার ছৈলাআফজলাবাদ ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামের মৃত আব্দুল করিম পুত্র আতিকুর রহমান, আছদ্দর আলীর পুত্র শুকুর আলী, মৃত আজব আলীর পুত্র জমসর আলী, মৃত আব্দুল্লাহ পুত্র আমিনুল ইসলাম ও মৃত সফর আলীর পুত্র আব্দুর রহমানসহ ৪জন বাদী হয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি গোপাটের উপর নির্মানকৃত দেয়ালের কাজ বন্ধ করেছে পুলিশ। তবে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চলে যাবার পর সাবেক চেয়ারম্যান কাচা মিয়া আবারো প্রভাব বিস্তার করে চলাচলের জন্য একটি মাটির ও পাকা সড়কের রাস্তায় পাকা দেয়াল নির্মাণ করে রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়েছেন। সরকারি গোপাটের উপর প্রভাবশালীরা প্রশাসন কে ম্যানেজ ও বৃদ্ধাআঙ্গুলী দেখিয়ে রাতারাতি ভাবে পাকা দেয়াল নির্মান করে বেড়া দেয়া হয়। এতে পুরো রাস্তাটি বন্ধ করায় ৩২টি পরিবাব অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে।

ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পুরো রাস্তাটির দৈর্ঘ্য ছিল ৬শ’ ফুট ও প্রস্থ ১৮ ফুট। দেশ স্বাধীনতার পর থেকে ওই সব পরিবার রাস্তাটি দিয়ে চলাচল করে আসছে। হঠাৎ গত ১৩ সেপ্টেম্বর সাবেক চেয়ারম্যান কাচা মিয়ার নেতৃত্বে সরকারি খাস ভুমি উপর রাস্তাটিতে একটি পাকা দেয়াল নির্মাণ করেন। এসব পরিবারগুলো বাধা দিতে গেলে তিনি পাকা রাস্তার ৩শ’ফুটের মধ্যে ইট বালু সিমেন্ট দিয়ে পাকা বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেয়। কৃষক ও শ্রমজীবি এসব পরিবারের কোনো রাস্তা না থাকায় ৩২টি পরিবারের সদস্যরা চরম বেকায়দায় পড়েছে।

অবরুদ্ধ একটি পরিবারের সদস্য মছরব আলী জানান ৩২টি পরিবারের সদস্যরা কৃষক ও শ্রমজীবি পবিরার। বিভিন্ন হাওরে একমাত্র ৬শ’ফুট রাস্তার মধ্যে ৩শ’ফুট পাকা রাস্তায় জোর পুর্বক দখল করে নেন সে কারণে সবাই এখানে সরকারি খাস ভুমির উপর রাস্তা দিয়ে প্রায় ৫০ বছর ধরে বসবাস করছেন। সবাই শাস্তিপ্রিয় মানুষ। যে ব্যক্তি রাস্তাটি বন্ধ করেছেন, তিনি একজন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি। ৫০ বছর ধরে ওই রাস্তটি দিয়ে এসব পরিবারগুলো চলাচল করছে। হঠাৎ করে সাবেক চেয়ারম্যান কাচা মিয়া তাঁর জমি দাবি করে রাস্তটি দখল করে নেন। রাস্তার মধ্যে পাকা দেয়াল নির্মাণ করে বেড়া দেয়া হয়েছে। এক মাস ২০ দিন ধরে চলাচলে আমরা বেকায়দার মধ্যে রয়েছি। রাস্তাটি ছেড়ে দিতে সাবেক চেয়ারম্যান কাচা মিয়ার পুত্র হুমকি দামকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না।’

অবরুদ্ধ পরিবারের আরেক সদস্য আরশ আলী জানান ‘রাস্তার মধ্য দিয়ে ৩২টি পরিবারের বিদ্যুৎলাইনের খুঁটি পোঁতা রয়েছে। ৫০ বছরের মধ্যে রাস্তার জায়গাটি সাবেক চেয়ারম্যান কাচা মিয়া তাঁর বলে দাবি করেননি। হঠাৎ তিনি রাস্তা বন্ধ করে দেয়ার রহস্য আজোও অজানা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অনেকের কাছে গিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না।

এ নিয়ে এলাকায় কয়েকটি সালিস বৈঠক অনুষ্টিত হয়। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে সরকারি রাস্তা ৮-১০টি মুল্যবান গাছ কর্তন করে নেয়ার অভিযোগ করে গ্রামবাসীর লোকজন।

অবরুদ্ধ পরিবার গুলো হচ্ছেন, এনামুল হক, সাদিকুর রহমান, ইকবাল হোসেন, শহীদ আহমদ, মনর আলী, মুহিবুর রহমান, সুহেল আহমদ, আকিকুর রহমান, মিজানুর রহমান, ফারুক আলী আব্দুল কাহার, আব্দুল সামাদ,আব্দুল মালিক, আরজ আলী, আছদ্দর আলী আফতাব আলী সহ ৩২টি পরিবার অবরুদ্ধ।

সাবেক চেয়ারম্যান শামছুদ্দীন কাচা মিয়ার সঙ্গে একাধিক বার তার মোবাইলে যোগাযোগ করলেও মোবাইল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্বব হয়নি ।

ছাতক থানার এসআই মহসিন জানান গ্রামে বাড়ির সীমানা প্রাচীর নির্মান নিয়ে এক পক্ষের বাঁধা দেয়ার লিখিত অভিযোগের পর ফোর্সসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। পুরো বিষয়টি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত রাস্তাটি বন্ধ না করতে সাবেক চেয়ারম্যান কাচা মিয়াকে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি শোনেননি।

এব্যাপারে সহকারি কমিশনার (ভুমি) তাপস শীল জানান,অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন মাঠে সার্ভেয়ার পাঠিয়ে তাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এ ঘটনার তদন্ত করে দেখা গেছে সরকারি খাস জায়গা আংশিক সাবেক চেয়ারম্যান শামছুদ্দীন কাচা জবর দখল করে পাকা দেয়াল নির্মান করেছে। তবে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার প্রস্তার পাঠানো হয়েছে। অনুমোুত আসলেই এসব অবৈধ স্থাপনা ভেঙ্গে দেয়া হবে।

এব্যাপারে উপজেলার নিবার্হী কর্মকতা মোহাম্মদ গোলাম কবির জানান, অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা স্বীকার করে বলেন সরকারি গোপাট দখল, চলাচলে পাকা রাস্তায় দেয়াল নির্মানের অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তপুবক আইনানুগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Share





Related News

Comments are Closed