Main Menu

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বেড়েছে সেমিস্টার ও ক্রেডিট ফি

বৈশাখী নিউজ ডেস্ক: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সেমিস্টার ও ক্রেডিট ফি বাড়ানো হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি সেমিস্টারে ভর্তি ফিতে ১৩টি খাত রয়েছে। শিক্ষার্থীদের ফি গুনতে হচ্ছে ৩ হাজার ৩৪৫ টাকা। এক বছর আগে এই ফি ছিল ২ হাজার ৪৩০ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে শুধু এক খাতেই ৭০০ টাকা ফি বাড়িয়েছে কর্তৃপক্ষ। গত বছর থেকে সেমিস্টার ফি গুনতে হচ্ছে ৩ হাজার ৩৪৫ টাকা। শুধু সেমিস্টার ফি নয়; ক্রেডিট ফি বেড়েছে বলেও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শাবিপ্রবিতে এক বছরের দুই সেমিস্টার মিলে চার বছরে আটটি সেমিস্টারে উত্তীর্ণ হয়ে স্নাতক (সম্মান) শেষ হয় শিক্ষার্থীদের। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের পর থেকে শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ও ক্রেডিট ফি উল্লেখযোগ্যহারে বাড়ানো হয়েছে। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী পর্যন্ত সেমিস্টার ফি ছিল ২ হাজার ৪৩০ টাকা। তবে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষেসহ পরের ব্যাচগুলোয় ভর্তি ফি বাড়িয়ে ৩ হাজার ৩৪৫ টাকা করা হয়েছে। মোট ১৩টি খাতে এ সেমিস্টার ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ইউনিয়ন ফি ১০০ টাকা, পাঠ্যবহির্ভূত কার্যক্রম ফি ১৫০, চিকিৎসা ফি ১২০ টাকা, ছাত্রছাত্রী কল্যাণ ফি ৩০০ টাকা ও উৎসব ফি ১০০ টাকা করে আগের মতোই রাখা হয়েছে।

তবে ওই শিক্ষাবর্ষ থেকে ৫ টাকা বেড়ে বেতন হয়েছে ৪৫০ টাকা; রোভার স্কাউট ও বিএনএনসিসি খাতে ৫ টাকা করে বেড়ে ২৫ টাকা; শিক্ষাপঞ্জিতে ১০ টাকা বাড়িয়ে ১০০ টাকা ও কম্পিউটার ফিতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ ৭০০ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা করা হয়েছে। তবে কিছু খাতে আগের তুলনায় ফি কমানো হয়েছে। এর মধ্যে গ্রন্থাগার ফি ৫ টাকা কমে ১৭৫ টাকা ও পরিবহন ফি ৩৫ টাকা কমে ৫৫০ টাকা করা হয়েছে।

নতুন করে জীবন বিমা নামে একটি খাত যোগ করাতে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে সেমিস্টার ফি সব মিলিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৪৫ টাকা।

জানা গেছে, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত প্রত্যেক সেমিস্টারে তত্ত্বীয় একটি কোর্সের প্রতি ক্রেডিটের মূল্য ছিল ১০৫ টাকা। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে ৩৫ টাকা বাড়িয়ে তা ১৪০ টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া আগে কোর্সের ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য প্রতি ক্রেডিটের মূল্য ছিল ১৬০ টাকা। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে তা ৪০ টাকা বাড়িয়ে ২০০ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।

গত ১১ ডিসেম্বর প্রতি সেমিস্টার ও ক্রেডিট ফি বাড়ানোর প্রতিবাদে মানববন্ধন ও উপাচার্যকে স্মারকলিপি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে সবধরণের ফি যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসার দাবি জানান তারা। তবে ফি কমানো নিয়ে একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে গত ৭ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সৈয়দ ছলিম মোহাম্মদ আবদুল কাদির স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থী সূত্রে জানা গেছে, সেমিস্টার ভর্তিতে তিন ধরনের ফি পরিশোধ করেও কোনো সেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের ইউনিয়ন ফি (ছাত্রসংসদ ফি) ১০০ টাকা দিতে হচ্ছে। অথচ গত ২৭ বছর ধরে শাবিপ্রবিতে ছাত্রসংসদ কার্যকর নেই। খাতা-কলমে রোভার স্কাউট ফি থাকলেও এ রকম কোনো ব্যবস্থার অস্তিত্ব নেই। পাশাপাশি জীবন বিমার কার্যক্রম ও সেবা সম্পর্কেও অবগত নন অধিকাংশ শিক্ষার্থী। জীবন বিমা গ্রহণের প্রক্রিয়াও বেশ জটিল ও সময়সাপেক্ষ। বর্তমানে সাত থেকে আটজন শিক্ষার্থী আবেদন করেও চিকিৎসা ভাতা দিতে গড়িমসির অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে কম্পিউটার ফি হঠাৎ করেই তিন গুণ বাড়ানো হয়েছে।

রেজিস্ট্রার দপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, জটিলতার কারণে জীবন বীমার ভাতার জন্য আবেদন করেও অনেক শিক্ষার্থীর অনুদান পেতে দেরি হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেকজন কর্মকর্তা একটি গণমাধ্যমকে বলেন, বর্তমানে স্নাতক শ্রেণিতে ২০১৯-২০ থেকে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত ছয়টি ব্যাচের প্রায় ১০ হাজার ৭২৫ শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিভাগের বিভিন্ন সেমিস্টারে অধ্যয়ন করছেন। হিসাব করলে দেখা যায়, সব শিক্ষার্থী একটি সেমিস্টারের ইউনিয়ন ফি ১০০ টাকা বাবদ প্রতি সেমিস্টারে দিলে সর্বমোট ১০ লাখ ৭২ হাজার টাকা হয়। অথচ এসব খাতের দৃশ্যমান কোনো সেবা শিক্ষার্থীরা পাচ্ছেন না বলে তাঁদের অভিযোগ। প্রশাসনের দাবি, এসব ফির অর্থ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কল্যাণমূলক কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে কী কী খাতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে এর কোনো সুস্পষ্ট ব্যখ্যা কর্তৃপক্ষ থেকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসমন্বয়ক ফয়সাল হোসেন বলেন, ‘যেসব খাত অকার্যকর কিংবা কার্যক্রম নেই, সেসব খাতে ফি নেওয়া বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় এসব খাত পূর্ণরূপে চালু করতে হবে। ফি নিয়ে শিক্ষার্থীদের বাড়তি টাকার বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে কেন? আমরা প্রশাসনকে বলব, দ্রুতই সেমিস্টারের কম্পিউটার খাতের ফিসহ যাবতীয় খাতের ফি যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসা উচিত। তা না হলে আমরা দাবি আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রস্তুত আছি।’

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মমিনুর রশিদ বলেন, ‘জুনিয়রদের ফি জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের সমানই থাকার কথা। কিন্তু দুই ব্যাচের সেমিস্টার ফির মধ্যে ৭০০ টাকার ব্যবধান চরম বৈষম্য। আশা করি, কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে ছাত্রদের অনুকূলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।’

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য মো. সাজেদুল করিম বলেন, ‘সেমিস্টার ফির বিষয়ে বিভাগীয় প্রধান ও ডিনদের নিয়ে মতবিনিময় করেছে কর্তৃপক্ষ। মতবিনিময়ে সেমিস্টার ফি পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে বিভিন্ন আলোচনা হয়েছে। এসব আউটপুট আগামী একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠকের পর জানা যাবে।’

তবে সেমিস্টার ভর্তিতে অকার্যকর শাকসুর ফি, রোভার স্কাউট ফি ও অন্যান্য ফির বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি, এসব ফির অর্থ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হয়ে থাকে।

 

Share





Related News

Comments are Closed