সিলেটে সিএনজি ফিলিং স্টেশনে আগুন, সিসিকের ৫ শ্রমিক দগ্ধ

বৈশাখী নিউজ ডেস্ক: সিলেট নগরীর পাঠানটুলা এলাকার একটি সিএনজি রি-ফুয়েলিং স্টেশনে অগ্নিকান্ডে ৫ জন দগ্ধ হয়েছেন। রবিবার (২১ জানুয়ারী) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নর্থ-ইস্ট সিএনজি রি-ফুয়েলিং স্টেশনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দগ্ধদের মধ্যে ৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
এদিকে, এ ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ফায়ার সার্ভিস স্টেশন সূত্র জানায়, পাঠানটুলা এলাকার নর্থ-ইস্ট সিএনজি রি-ফুয়েলিং স্টেশনের পাশে ড্রেন সংস্কারের কাজ করছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) শ্রমিকরা। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে এক শ্রমিক ফুয়েলিং স্টেশনের গাড়িতে গ্যাস দেওয়ার একটি মেশিনের কাছেই গ্র্যান্ডার মেশিন দিয়ে রড কাটছিলেন। এসময় গ্রান্ডার মেশিন থেকে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ গিয়ে স্টেশনটিতে দাঁড়িয়ে থাকা একটি তেলবাহী ট্রাকের নিচে পড়লে সেখানে আগুন লেগে যায়।
বেশ কয়েকদিন থেকে নগরীর ব্যস্ততম এ সড়কে কাজ চলাকালে কোনো ধরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থাই নিশ্চিত করেনি সিসিক কর্তৃপক্ষ। নিয়মানুযায়ী এ ধরণের ঝুঁকিপূর্ণ কাজের ক্ষেত্রে আলাদা করে নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণ করার কথা থাকলেও তা মানা হয়নি। এছাড়া এসব কাজের ক্ষেত্রে আগে থেকে ফায়ার সার্ভিসকে অবগত করারও বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে তাও মানা হয়নি।
এ কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প ব্যবস্থাপক আব্দুল মোমিন মামুন বলেন, ‘আমরা কাজ শুরুর আগে থেকেই সিএনজি পাম্প কর্তৃপক্ষকে পাম্প বন্ধ রাখার অনুরোধ করেছিলাম, কিন্তু তারা কোনো সাড়া দেননি। এছাড়া সিসিক প্রকৌশল বিভাগ স্থানীয় কাউন্সিলরকে সাথে নিয়েও পাম্প কর্তৃপক্ষকে বোঝানো হয়। এ অবস্থায় তাদের সম্মতি না পেয়ে আমরা ৫/৬ মাস কাজ বন্ধও রেখেছিলাম। এরপর তারা আমাদেরকে জানিয়েছেন আমরা যেদিন কাজ করবো তাদেরকে বললে তারা ব্যবস্থা নেবেন।
মামুন বলেন, আজ যখন আমরা কাজ শুরু করি তখনও পাম্প কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। সারাদিন কোনো সমস্যা হয়নি। বিকেলে তারা একটি জ্বালানী তেলবাহী গাড়ি আনলোড করতে গেলেই এ দুর্ঘটনা ঘটে।
তিনি বলেন, তারা এভাবে জ্বালানী তেল আনলোড করবেন সেটা বললেও আমরা কাজ বন্ধ রাখতাম, কিন্তু তারা তা করেনি।
এদিকে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ইউনিট ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই ফুয়েলিং স্টেশনটিতে থাকা অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের মাধ্যমে আগুন নিভিয়ে ফেলেন কর্মচারীরা। এসময় সিসিকের পাঁচ শ্রমিক দগ্ধ হন এবং ফুয়েলিং স্টেশনের এক কর্মচারী জ্ঞান হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাদের উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।
দগ্ধরা হলেন- সিলেট নগরীর ঘাসিটুলা বেতের বাজার এলাকার মো. জাফর আলীর ছেলে মো. মনতাজ মিয়া (৩৫), একই এলাকার মো. মঙ্গল মিয়ার ছেলে লিটন মিয়া (২৫), মতি মিয়ার ছেলে আলম মিয়া (২৩), মিছির আলীর ছেলে মতি মিয়া (৬০) ও রজনী চন্দ দাসের ছেলে সুভাষ দাস (৫৫)।
সিলেট ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কন্ট্রোল রুমে দায়িত্বরত ফায়ার ফাইটার সুহেল আহমদ বলেন- খবর পাওয়ামাত্র আমাদের একটি ইউনিট সেখানে যায়। তবে আমাদের কর্মীরা যাওয়ার আগেই আগুন নিভিয়ে ফেলা হয়।
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটের প্রধান ডা. এম এ মান্নান জানান, অগ্নিদগ্ধ ৫ জনের মধ্যে ২ জনের শরীরের ৩৫ ভাগ পুড়ে গেছে। বাকি দুইজনের ৩০ ভাগ আর একজনের ২৮ ভাগ দগ্ধ হয়েছে।
ডা. এম এ মান্নান বলেন, আমাদের হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে মোট ৫ জন রোগী এসেছেন, যাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর। তাদের মুখমন্ডলসহ শরীরের প্রায় ৩৫ ভাগ পুড়ে গেছে। মুখমণ্ডল ও কন্ঠনালী পোড়া ভালো লক্ষণ না। এক্ষেত্রে পোড়ার পরিমাণ কম হলেও তাদেরকে গুরুতর হিসেবেই ধরে নিতে হবে।
তিনি বলেন, এখনো চিকিৎসা চলছে, তবে প্রয়োজন পড়লে তাদের আইসিইউ-তে স্থানান্তর করা হতে পারে। অবস্থা খারাপ হলে প্রয়োজনে তাদেরকে ঢাকাতেও স্থানান্তর করা হতে পারে।
এ বিষয়ে নর্থ-ইস্ট সিএনজি রি-ফুয়েলিং স্টেশন কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও সিসিক প্রধান নির্বাহী ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী। এসময় মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আমরা সার্বক্ষণিক এখানে আছি, দগ্ধদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সবকিছু করা হবে।
এসময় অগ্নিকান্ডের ঘটনায় সিসিক’র প্রধান নির্বাহীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। কমিটির অন্যরা হলেন- সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পেট্রোলিয়াম এন্ড মাইনিং বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরহাদ মোহাম্মদ হাওলাদার এবং জালাবাদ গ্যাস টি এন্ড ডি সিস্টেম লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (অপারোশন) প্রকৌশলী সারওয়ার জাহান মাহমুদ।
এসময় কিছুদিন আগে মিরাবাজারে সিএনজি পাম্পে অগ্নিকান্ডের প্রসঙ্গ টেনে মেয়র বলেন, আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চাই।
Related News

শাবিপ্রবি ছাত্রদলের নতুন সভাপতি রাহাত, সম্পাদক নাঈম
শাবি সংবাদদাতা: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ৭৬ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিরRead More

সিলেটে শহীদ ওয়াসিম ব্রিগেড’র মানববন্ধন কর্মসূচি পালন
বৈশাখী নিউজ ডেস্ক: জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে বীর চট্টলার কৃতী সন্তান ও চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়কRead More
Comments are Closed