Main Menu

জুমার দিনের আমল ও তাৎপর্য

হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী: আল্লাহতায়ালা যেসব দিন বিশেষভাবে বরকতময় ও মর্যাদাবান করেছেন, তার মধ্যে অন্যতম হলো জুমার দিন। এই দিনকে কেন্দ্র করে পৃথিবীতে সংঘটিত হয়েছে অসংখ্য অলৌকিক ও ঐতিহাসিক ঘটনা।

মহামহিম স্রষ্টা আল কোরআনে ‘জুমা’ নামে একটি সূরা নাজিল করে দিবসটিকে করেছেন আরও মহিমান্বিত। পুণ্যময় এই দিনটি মুমিনের জন্য সওয়াব বৃদ্ধি, গুনা মোচন ও দয়াময় স্রষ্টার নৈকট্য লাভের বিশেষ মুহূর্ত। মহিমান্বিত এই দিবস প্রতি সপ্তাহে আমাদের মাঝে ফিরে আসে।

হজরত আবু লুবাবা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, জুমার দিন সব দিনের সরদার। আল্লাহ এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করেছেন। এই দিনে তাঁকে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। এই দিনে আল্লাহ তাঁকে মৃত্যুদান করেছেন এবং কিয়ামত এই দিনেই সংঘটিত হবে। (ইবনে মাজাহ)।

জুমার দিন প্রসঙ্গে প্রিয় নবী (সা.) আরও ইরশাদ করেন, মুমিনের জন্য জুমার দিন হলো সাপ্তাহিক ঈদের দিন। (ইবনে মাজাহ)।

জুমার দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো জুমার নামাজ আদায় ও খুতবা শোনা। আল্লাহতায়ালা আল কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! যখন জুমার দিনে জুমার নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে (মসজিদে) গমন কর এবং কেনাবেচা (দুনিয়াবি যাবতীয় কাজকর্ম) বন্ধ করে দাও। এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর; যদি তোমরা জানতে। (সূরা জুমা : ৯)।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করে, অতঃপর জুমার নামাজের জন্য মসজিদে আসে, খুব মনোযোগসহ খুতবা শোনে এবং খুতবার সময় চুপ থাকে, তার এই জুমা থেকে বিগত জুমা পর্যন্ত এবং অতিরিক্ত আরও তিন দিনের গুনা মাফ করে দেওয়া হয়। (মুসলিম)।

জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি আমল হলো সূরা কাহাফ তিলাওয়াত। হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করবে, সে আট দিন পর্যন্ত সকল প্রকার ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকবে। আর যদি দাজ্জাল বের হয়, তবে সে দাজ্জালের ফিতনা থেকেও নিরাপদ থাকবে। ’ (তাফসির ইবনে কাসির)। অন্য বর্ণনায় আছে, তার এক জুমা থেকে অন্য জুমা পর্যন্ত সব (সগিরা) গুনা মাফ করে দেওয়া হবে।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন আসরের নামাজের পর না উঠে ওই স্থানে বসা অবস্থায় ৮০ বার নিম্নোল্লিখিত দরুদ পাঠ করবে, তার ৮০ বছরের গুনা মাফ হবে এবং ৮০ বছর নফল ইবাদত করার সওয়াব তার আমলনামায় লেখা হবে। দরুদটি হলো : আল্লাহুম্মা সাল্লিআলা মুহাম্মাদিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া আলা আলিহি ওয়া সাল্লিম তাসলিমা।

জুমার দিনের আরও কিছু বিশেষ আমল ও আদব নিচে উপস্থাপন করা হলো;

১. গোসল করা। ২. মিসওয়াক করা। ৩. সুগন্ধি ব্যবহার করা। ৪. যথাসম্ভব উত্তম পোশাক পরিধান করা। ৫. আগে মসজিদে আসা। ৬. সম্ভব হলে হেঁটে মসজিদে আসা। ৭. ইমামের দিকে মুখ করে বসা। ৮. খুতবার সময় ইমামের কাছাকাছি বসা। ৯. মনোযোগসহকারে খুতবা শোনা ও খুতবার প্রদানের সময় চুপ থাকা। ১০. দুই খুতবার মাঝখানে মহান স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করা; এ ক্ষেত্রে হাত ওঠানো জরুরি নয়। ১১. জুমার দিন ও জুমার রাতে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা। ১২. পরে মসজিদে এসে মুসল্লিদের ডিঙিয়ে সামনে না যাওয়া; এরূপকারীদের ব্যাপারে প্রিয় নবী (সা.) কঠোর মনোভাব পোষণ করেছেন।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকল মুসলমানদেরকে জুমার দিনের আমল করার তাওফিক দান করুন,আল্লাহুম্মা আমিন।

লেখক: বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও কলামিস্ট।

Share





Related News

Comments are Closed