সাইক্লিং নিয়ে যা বললেন ডাক্তার ওরাকাতুল জান্নাত
বৈশাখী নিউজ ডেস্ক: সিলেটের মেয়ে, একজন ডেন্টাল সার্জন, অর্থোডোনটিস্ট হওয়ার জন্য পড়াশোনা করছেন ফিলিপাইনে। একজন ডেন্টাল সার্জন হয়েও নিজেকে সেখানে সীমাবদ্ধ রাখেননি ডা: ওরাকাতুল। প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন কিক-বক্সিং ও কারাতের। ফিটনেস সচেতনতা, স্পোর্টস, ট্রাভেলিংসহ সমাজসেবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন তিনি। ফিলিপাইনে থাকা অবস্থায় প্রশিক্ষণ নিয়ে হয়ে উঠেন একজন সনদ প্রাপ্ত ফিটনেস ইনস্ট্রাক্টর। দীর্ঘদিন করেছেন শিক্ষকতাও। ২০০৮ সালে একজন ডেন্টাল সার্জন হিসেবে পাশ করেন তারপর ২০১০-২০১১ সালে পিজিটি করেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে। বর্তমানে এমএস করছেন ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলাতে।
ডা: জান্নাতের সাইকেল চালানোর গল্প অধিকাংশ বাঙালী মেয়েদের মতই। পরিবারের বড়দের চোখ ফাঁকি দিয়ে ছোট ভাইর সাথে সাইকেল শিখতে বের হয়ে যাওয়া।
তিনি, ১৯৯৬ সালে প্রথম সাইকেল চালানো শুরু করেন। সেই থেকে বন্ধুত্ব শুরু হয় সাইকেলের সাথে কিন্তু ঐ সময়টাতে সাইকেল চালানো বাসার ভেতর আর সকালবেলায় মহল্লার গলিতে সীমাবদ্ধ ছিলো কিন্তু ২০১৩ সাল থেকে সিলেটে পুরোদমে শুরু করেন সাইক্লিং।
শুধু সাইক্লিং নয় ভ্রমন করতেও ভালোবাসেন ডা: ওরাকাতুল জান্নাত। ইউরোপ-আমেরিকাসহ প্রায় ৩৫টিরও বেশী দেশ ভ্রমন করেছেন তিনি। ভ্রমন ভালোবাসেন- ভালোবাসেন দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে আর তাই ডা: ওরাকাতুল জান্নাত নামে ফেসবুকে পেউজ এবং ইউটিউব চ্যানেল তৈরী করেছেন যেখানে তিনি তার ভ্রমনের গল্প শেয়ার করেন।
সাইক্লিং নিয়ে কথা হয় ডা: ওরাকাতুল জান্নাতের সাথে তিনি বলেন- আমি যখন সিদ্ধান্ত নেই সাইক্লিং শুরু করবো তখন আমার জন্য মোটেও সহজ বিষয় ছিলো না। ২০১৩ সালে একজন মেয়ে হিসেবে পরিবারের মানুষকে বলে বাইরে গিয়ে সাইকেল চালানো খুব কঠিন ছিলো। তারা আমার সাইক্লিং কখনোই পছন্দ করতেন না। মা-বাবা আসলে আমার নিরাপত্তার বিষয়ে খুব চিন্তিত থাকতেন আর অনেক মানুষের নেতিবাচক কথাও তাদেরকে শুনতে হতো।
ঐ সময় সমমনা কিছু মানুষের প্রচেস্টায় শুরু হয় সিলেট সাইক্লিং কমিউিনিটি। উদ্দেশ্য ছিলো নিজেদের পরিবেশকে দুষনমুক্ত করার প্রচেস্টা আর সেই সাথে নিজেদেরকে সাইক্লিং এর মাধ্যমে ফিট রাখা। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ভোরবেলায় সবাই একত্রে সিলেট শহরের আশপাশের অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গায় আমরা আবিষ্কার করেছি। এখন সপ্তাহের প্রায় প্রতিদিনই মর্নিং রাইড আর বিকেল বেলা ইভিনিং রাইড থাকে। সিলেট নগরের সুবিদ বাজার মোড়ে একত্রিত হয়ে সিলেট নগরীর এবং তার আশপাশের এলাকার সাইক্লিস্টরা বিভিন্ন জায়গায় রাইড দেন।
প্রশ্ন: সাইকেলই কেন বেছে নিলেন?
দেখুন দুইচাকার এই সাইকেল খুব সহজেই পাওয়া যায় যা আপনাকে দুরদুরান্তে নিয়ে যেতে পারে বিনা খরচে। আর সাইকেল চালানো নিজের স্বাস্থ্যের জন্যে এবং পরিবেশের জন্য খুবই উপকারি।সাইক্লিং এ মন এবং শরীর দুটোই বেশ ভালো থাকে আর নতুন জায়গা ভ্রমন করা যায় যেখানে গাড়ী যেতে পারবে না সেখানেও সাইকেল যায়।
প্রশ্ন: গ্রুপের সদস্য কতো?
সিলেট সাইক্লিং কমিউনিটির ফেসবুক গ্রুপে আমাদের সদস্য এখন ৩৫ হাজারেরও বেশী। সব বয়সের মানুষ আছেন আমাদের এই কমিউনিটিতে- তরুন,যুবক, মধ্যবয়সক এমনকি সিনিয়র সিটিজেন অনেকেই আমাদের সাথে নিয়মিত সাইক্লিং করেন। আমরা যারা সাইক্লিং করি সবাই একটা পরিবারের মতো হয়ে গেছি।সবচেয়ে ভালো বিষয় হলো প্রথম অবস্থায় আমাদের নারী সাইক্লিস্টের সংখ্যা খুব নগন্য ছিলো যা এখন অনেকখানি বদলেছে। আমাদের কমিউনিটিতে এখন সাইক্লিস্ট কাপল আছেন, মা তার ছেলে মেয়ে নিয়ে আসেন আবার অনেক বাবা তার সন্তানদের নিয়ে রাইডে আসেন।
প্রশ্ন: সাইক্লিং ছাড়া আর কি কাজ করছে এই কমিউনিটি?
আমারা শুধু সাইক্লিং এ নিজেদেরকে সীমাব্বদ্ধ রাখিনি, আমারা নিজেদেরক্ সমাজ সেবার কাজেও নিয়োজিত রাখি। নিয়মিত রক্তদান, বন্যায় অথবা শীতে আক্রান্ত মানুষদের পাশে দাড়ানোসহ যেকোন প্রাকৃতিক দূর্যোগে মানুষের পাশে যাওয়ার চেস্টা আমরা করি। এই করোনাকালীন সময়েও আমরা মানুষের বাড়ীতে খাবার পৌছে দেয়ার চেস্টা করেছি।
প্রশ্ন: সাইক্লিংকে এগিয়ে নিতে কি কি করেছেন?
উত্তর: আমরা সবসময় চেয়েছি সাইক্লিংকে এগিয়ে নিতে, মানুষের আগ্রহ বাড়াতে।যার জন্য আমরা রেগুলার রাইডের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি ইভেন্ট করেছি। যেমন,২০১৫ সালে সিলেট সাইক্লিং কমিউনিটি এমটিবি রেস, ২০১৭ সালে দূরন্ত সাইকেল রেস, ২০১৯ সালে জেকে এমটিবি চেলেঞ্জ, একই বছর এসসিসি রেসার হান্ট, ২০২০ সালে এসসিসি আইটিটি চেলেঞ্জ এবং ২০২১ সালে সুপারক্রিট এমটিবি চেলেঞ্জ আমরা আয়োজন করেছি।
আসলে সাইক্লিং আমার জীবনের সাথে মিশে গেছে। অনেক ভালো লাগে যখন দেখি মেয়েদের সংখ্যা বাড়ছে সাইক্লিংএ ।আগে অনেকে রাস্তায় নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতেন এবং বাজে মন্তব্য করতেন যা এখন অনেকটা কমে গেছে। এখন বেশীর ভাগ মানুষই ইতিবাচক কথা বলেন, উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দেন । তাই সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। উত্তোরত্তর এগিয়ে যাক সিলেটের সাইক্লিং, দুষনমুক্ত হয়ে উঠুক আমাদের প্রিয় শহর। সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করছি ।
Related News
কার্যকর স্থানীয় সরকারের জন্য জনগণ, প্রশাসন ও সাংসদদের মধ্যে অর্থবহ সম্পর্ক আবশ্যক: ড. তারিকুল ইসলাম
জাবি প্রতিনিধি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম।বর্তমানে কেমব্রিজRead More
সাইক্লিং নিয়ে যা বললেন ডাক্তার ওরাকাতুল জান্নাত
বৈশাখী নিউজ ডেস্ক: সিলেটের মেয়ে, একজন ডেন্টাল সার্জন, অর্থোডোনটিস্ট হওয়ার জন্য পড়াশোনা করছেন ফিলিপাইনে। একজনRead More
Comments are Closed