Main Menu

সিকৃবির গবেষণা: শীত গেলেও শিম যাবেনা

সিকৃবি সংবাদদাতা: শীতের সবজি হিসেবে সমাদৃত শিম। সমগ্র শীত জুড়ে শিম পাওয়া যায়। কিন্তু এবার শীত গেলেও শীম সারা বছর ধরেই পাবে বাংলাদেশের মানুষ। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষকের উদ্ভাবিত শিম শীত ছাড়াও সারা বছর ধরে পাওয়া যবে। আমীষ সমৃদ্ধ এই সবজির ফুল ও ফল ধারণ খাটো দিবসের (শর্ট ডে) উপর নির্ভরশীল।
ফসলটি আলো সংবেদনশীল (ফটো-সেনসেটিভ) হওয়ায় এর প্রাপ্যতা প্রধানত শীতকালেই সীমাবদ্ধ ছিলো।

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত¡ বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ শহীদুল ইসলাম উদ্ভাবিত সিকৃবি শিম-১ ও সিকৃবি শিম-২ নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিলো।

উদ্যানতত্ত¡ বিভাগের উদ্যোগে গ্রীষ্মকালীন বা ফটো-ইনসেনসিটিভ শিমের জাত উদ্ভাবনের লক্ষ্যে ২০০৫ সাল থেকে শুরু হওয়া গবেষণা কার্যক্রমের ফলাফলের ভিত্তিতে ২০১৫ সালে কৃষি মন্ত্রণালয় সিকৃবি শিম-১ ও সিকৃবি শিম-২ নামে দুটি জাত কৃষক পর্যায়ে উৎপাদনের জন্য নিবন্ধন করা হয়। এ জাতের উদ্ভাবক প্রফেসর ড. মোঃ শহীদুল ইসলামের দীর্ঘদিনের গবেষণায় দেখা গেছে, এ জাতীয় শিমের বীজ এপ্রিল মাসে বা শীতের শেষে বপন করলে জুন-জুলাই মাসে বা ৮০-৮৫ দিন পর ফল আহরণ করা যায়।

বাংলাদেশে শিমের বেশ কয়েকটি জাত গ্রীষ্মকালে চাষ হয়ে থাকে। জনপ্রিয় জাতগুলো হলো সিকৃবি শিম-১ (সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিম-১), সিকৃবি শিম-২, বারি শিম-৭, ইপসা শিম-২ ইত্যাদি।

শিম একটি শীতকালীন সবজি তাই গ্রীষ্মকালীন বা ফটো-সেনসিটিভ (আলো অসংবেদনশীল) শিমের জাত উদ্ভাবনের লক্ষ্যে ২০০৫ সালে গবেষণা কার্যক্রম শুরু করা হয়। এ জাত উদ্ভাবনে সংকরায়নের পর সেগ্রিগেটিং বংশধর থেকে একক গাছ নির্বাচন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এ পদ্ধতিতে প্রথম বেশ কিছু জাতের মধ্যে সংকরায়নের মাধ্যমে ভ্যারিয়াবিলিটি (বৈচিত্রতা) তৈরী করে ভ্যারিয়েশন থেকে ৬ বছর একক গাছ যাচাই-বাছাই এর মাধ্যমে ৬-৭টি অগ্রবর্তী লাইন নির্বাচন করা হয় যা গ্রীষ্ম বা বর্ষাকালে ফুল ও ফল ধারনে সক্ষম।

অতঃপর ২০১১ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে বারি শিম-৭ নামে একটি জাত উৎপাদনের জন্য মুক্তায়ন করা হয়। পরবর্তীতে অধিকতর গবেষণা কর্ম সম্পাদন শেষে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৫ সালে সিকৃবি শিম-১ ও সিকৃবি শিম-২ নামে দুটি জাত কৃষক পর্যায়ে উৎপাদনের জন্য নিবন্ধিত হয়। জাত দুটি মার্চ ও এপ্রিল মাসে বা শীতের পর পর বপন করলে ৮০-৮৫ দিন পর অর্থাৎ জুন-জুলাই মাস থেকেই কচি ফল আহরণ শুরু হয়। কম বৃষ্টিবহুল অঞ্চল ও উপক‚লবর্তী অঞ্চলে জাতগুলোর ভালো ফলাফল পাওয়ার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। গ্রীষ্মকালীন জাতগুলো বছরের যে সময়ই বপন করা হোক না কেন বীজ বপনের ৪৮-৫০ দিনের মধ্যেই ফুল ফোটে এবং বীজ বপনের ৮০-৮৫ দিনের মধ্যে শিম উত্তোলণ শুরু হয়। ৫-৭ দিন পর পর কচি শিম মাঠ থেকে তোলা যায়।

বেলে দোঁয়াশ বা দোঁয়াশ মাটি গ্রীষ্মকালীন শিম চাষের জন্য বেশি উপযোগী। ফসলটি দাঁড়ানো পানি সহ্য করতে পারেনা। এটেল মাটিতে চাষ করলে পানি নিষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থা থাকতে হবে। মূল জমী ৪-৫ বার চাষ দিয়ে তৈরী করতে হয়। শিম লিগুমিনেসি (ডাল) পরিবারের সবজি বলে এটি বাতাস থেকে মাটিতে নাইট্রোজেন সংযোজন করতে পারে বলে নাইট্রোজেন জাতীয় সার কম লাগে। গোবর, ইউরিয়া, টিএসপি, এমপি, জিপশাম, বরিক এসিড সারগুলো মাটির উর্বরতাভেদে জমিতে প্রয়োগ করতে হয়। সিলেট অঞ্চলের মাটি অ¤ø প্রকৃতির হওয়ার কারণে প্রতি শতক জমীর জন্য ৪ কেজি ডলোচুন বীজ বপন ও চারা রোপনের ২০-২৫ দিন আগে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে সেচ প্রয়োগ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।

গ্রীষ্মকালে শিম চাষ করলে প্রতি শতকে ৪৫-৫৫ কেজি (১২-১৪টন/হেক্টর) কচি শিম ফলন পাওয়া যায়। শীতকালের শীমের তুলনায় ফলন কম হলেও উচ্চমূল্য নির্ধারণ করে কৃষকরা সহজেই লাভবান হতে পারেন। সিকৃবির জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তরের উপ পরিচালক খলিলুর রহমান ফয়সাল বলেন, সিলেট অঞ্চলের কৃষকরা গ্রীষ্মকালীন শিম চাষ করলে উদ্যানতত্ত¡ বিভাগ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। প্রয়োজনে ০১৭২৪৭৫৮৮৮৫ ও ০১৭৬৬৮৫৮০০০ নম্বর দুটিতে ফোনকল করে কৃষকরা পরামর্শ পেতে পারেন ও বীজ সংগ্রহ করতে পারবেন। গ্রীষ্মকালে সবজি উৎপাদন তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় সিলেট অঞ্চলে শিমের বাণিজ্যিক চাষাবাদ করা যেতে পারে। ইতোমধ্যে এ প্রযুক্তি সিলেট সহ আশেপাশের জেলা উপজেলাগুলোতে সম্প্রসারণের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কৃষকেরা ভালো ফলন ও বাজারমূল্য বিবেচনায় বিপুল উৎসাহ নিয়ে চাষাবাদে এগিয়ে আসছেন।

 

Share





Related News

Comments are Closed