Main Menu

যেভাবে গ্রেফতার হলেন এসআই আকবর

বৈশাখী নিউজ ২৪ ডটকম: সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে নিহত রায়হান আহমদ হত্যার মূল অভিযুক্ত এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে (সাময়ীক বরখাস্তকৃত) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার (৯ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্থানীয় জনতার সহায়তায় জেলা পুলিশের একটি দল কানাইঘাটের ডনা সীমান্ত এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত (বিকেল ৩টা) আবরকে সিলেট জেলা পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে আসার জন্য পুলিশের একটি দল তাকে নিয়ে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লুৎফর রহমান।

তিনি জানান, আকবরকে সিলেটে নিয়ে আসার পর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে প্রেস ব্রিফিং করা হবে।

এদিকে, পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সিলেটের পুলিশ সুপার খালেকুজ্জামান বিকেল ৩টায় জানান, আকবরকে জেলা পুলিশ রাতে পিবিআই-এর কাছে হস্তান্তর করতে পারে।

সিলে নগরীর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্মম নির্যাতনে আখালিয়া এলাকার যুবক রায়হান আহমদের মৃত্যুর একমাসের মাথায় সোমবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ ইউনিয়নের ডনা সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মূল অভিযুক্ত (সাময়ীক বরখাস্তকৃত) বন্দর ফাঁড়ির সাবেক ইনচার্জ আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে।

প্রথমে তিনি জনতার হাতে আটক হন। পরে পুলিশ দ্রুত গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। ফেসবুকে আপলোডকৃত এক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, স্থানীয় খাসিয়া সম্প্রদায়ের মানুষের হাতে প্রথমে পাকড়াও হন আকবর। এসময় নিজেকে বাঁচাতে কেঁদে ফেলেন আকবর এবং তাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য অনুনয় করতে থাকেন। এসময় জনতা তাকে রশি দিয়ে বাঁধেন এবং পরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।

গত ১১ অক্টোবর রাতে রায়হান আহমদকে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরদিন সকালেই রায়হান মারা যান। এ ঘটনায় তার স্ত্রী বাদি হয়ে মামলা করলে এসএমপির একটি অনুসন্ধান কমিটি তদন্ত করে সত্যতা পায়। ১২ অক্টোবর ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেনসহ চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। ১৩ অক্টোবর আকবর পুলিশি হেফাজত থেকে পালিয়ে যায়।
গা-ঢাকা দেয়ার ২৬ দিন পর আজ গ্রেফতার হলেন আকবর।

এরআগে অবশ্য গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানিয়েছিলো আকবর ভারতের মেঘালয় রাজ্যে পালিয়ে গেছেন।

গত ১০ অক্টোবর শনিবার মধ্যরাতে রায়হানকে নগরীর কাষ্টঘর থেকে ধরে আনে বন্দরবাজার ফাঁড়ি পুলিশ। পরদিন ১১ অক্টোবর ভোরে ওসমানী হাসপাতালে তিনি মারা যান। রায়হানের পরিবারের অভিযোগ, ফাঁড়িতে ধরে এনে রাতভর নির্যাতনের ফলে রায়হান মারা যান। ১১ অক্টোবর রাতেই রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার বাদী হয়ে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা করেন।

এদিকে, সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মো. আজবাহার আলী শেখের তত্ত্বাবধানে মহানগর পুলিশের তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি তদন্ত করে ফাঁড়িতে পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর বিষয়ে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়। এ ঘটনায় ১২ অক্টোবর ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে ফাঁড়ি থেকে প্রত্যাহার করা হয়। এর পর থেকে প্রধান অভিযুক্ত এসআই আকবর বর্তমানে পলাতক ছিলেন। তাকে পালানোতে সহায়তা ও তথ্য গোপনের অভিযোগে ২১ অক্টোবর ফাঁড়ির আরেক এসআই হাসানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

তখন গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দুইদিন পরই আকবর সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ভারতের মেঘালয়ে পালিয়ে যান।

এদিকে গত ১৩ অক্টোবর মামলাটি পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়। এর আগে পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য রায়হানের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলনের আবেদন করেছিলেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল বাতেন। পরে গত ১৫ অক্টোবর পিবিআই সিলেটের আখালিয়া নবাবি মসজিদ কবরস্থান থেকে রায়হানের মরদেহ উত্তোলন কাজ শেষ করে। ময়না তদন্তের রিপোর্টে জানা যায় ভোঁতা অস্ত্রের আঘাতেই রায়হানের মৃত্যু হয়।

পিবিআই এঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এদের মধ্যে কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস ও হারুন উর রশিদকে দুই দফায় আটদিন ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আশেক এলাহীকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। তবে তারা কেউ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হননি। এছাড়া রায়হানের বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের অভিযোগকারী সাইদুর শেখ নামের এক ব্যক্তিকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়।

 

Share





Related News

Comments are Closed