Main Menu

উপসর্গহীন রোগীর ক্ষতির শঙ্কা কম : গবেষণা

বৈশাখী নিউজ ডেস্ক: করোনা মহামারি এসে অনুন্নত অনেক দেশের তো বটেই, উন্নত দেশগুলোর স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। খোদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) ঘোষণা দিয়েছে স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর। বর্তমান ব্যবস্থায় অনেক দেশে নমুনা পরীক্ষা যেমন কম হচ্ছে, আবার অনেক দেশ ব্যাপক পরীক্ষা চালিয়েও করোনার প্রকৃত অবস্থা জানতে পারছে না। এর অন্যতম কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উপসর্গহীন রোগীরা থাকছে শনাক্তের বাইরে। এতে করোনায় মৃত্যুহার দেখা যাচ্ছে প্রকৃত অবস্থার চেয়ে অনেক বেশি। ফলে আতঙ্কও তৈরি হয়েছে অধিক মাত্রায়। জনস হপকিন্স সেন্টার ফর হেলথ সিকিউরিটির একজন বিশেষজ্ঞ জানাচ্ছেন, যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় বর্তমান মৃত্যুহার ৫.৯ শতাংশ। তবে প্রকৃতসংখ্যক রোগী শনাক্ত করা সম্ভব হলে এই হার ১ শতাংশের বেশি হতো না। উপসর্গহীন করোনা রোগী নিয়ে চারটি গবেষণার ভিত্তিতে সায়েন্স নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

এই প্রতিবেদনে জেএএমএ নেটওয়ার্ক ওপেনে প্রকাশিত গবেষণার ফলের ভিত্তিতে জানানো হচ্ছে, উপসর্গহীন রোগীদের শারীরিক ক্ষতির শঙ্কা অপেক্ষাকৃত কম। এ ধরনের রোগীর মাধ্যমে নভেল করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে আট দিন পর্যন্ত, যেখানে উপসর্গযুক্ত রোগীদের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ানোর ব্যাপ্তি ১৯ দিন পর্যন্ত। গবেষকরা চীনের উহান শহরের ৭৮ জন করোনা রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। এতে দেখা যায়, ৪২ শতাংশের শরীরে কোনো ধরনের উপসর্গ ছিল না। তাদের বেশির ভাগই নারী এবং তাঁদের বয়স ২০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। এ গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি তাদের অনেকের ক্ষেত্রে করোনার উপসর্গ প্রকাশ পাচ্ছে না।

উহানে পরিচালিত গবেষণাটিতে উপসর্গহীন রোগীর হার ৪২ শতাংশ হলেও অনেক ক্ষেত্রে এই হার প্রায় দ্বিগুণ। এ প্রসঙ্গে সায়েন্স জার্নালের প্রতিবেদনটিতে চিকিৎসা সাময়িকী থোরাক্সে প্রকাশিত একটি গবেষণার ফল উল্লেখ করা হয়েছে। ওই গবেষণায় বলা হচ্ছে, ২১৭ জন লোক একটি প্রমোদতরিতে করে অস্ট্রেলিয়া থেকে অ্যান্টার্কটিকা যাচ্ছিল। তাদের নমুনা পরীক্ষা করলে ৫৯ শতাংশের শরীরে করোনার উপস্থিতি ধরা পড়ে, যাদের মধ্যে মাত্র ১৯ শতাংশের শরীরে করোনার লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছিল। বাকি ৮১ শতাংশই ছিল উপসর্গহীন। এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, এই প্রমোদতরির রোগীদের মতো সারা বিশ্বেই বিপুলসংখ্যক মানুষ করোনায় সংক্রমিত হয়েছে। কিন্তু নমুনা পরীক্ষা না হওয়ার কারণে প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা উঠে আসছে না। ফলে প্রকৃত মৃত্যুহারও উঠে আসছে না।

বাস্তবে উপসর্গহীন রোগীর সংখ্যা কেমন—এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সায়েন্স নিউজের প্রতিবেদনটিতে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থার (সিডিসি) একটি প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়েছে। সিডিসির ‘মরবিডিটি অ্যান্ড মরটালিটি উইকলি রিপোর্টে’ একটি নার্সিং হোমের ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। সেখানকার দুজনের শরীরে করোনা উপসর্গ দেখা দিলে তাঁদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে দুজনের শরীরেই করোনাভাইরাস মেলে। এ পরিস্থিতিতে নার্সিং হোমের সব রোগী ও স্টাফের করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। ফলাফলে দেখা যায়, সেখানকার ২৭ জনের শরীরে করোনা বাসা বেঁধেছে। তাঁদের মধ্যে ১৮ জনেরই শরীরে কোনো উপসর্গ প্রকাশ পায়নি। অবশ্য পরীক্ষা করার এক থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে আটজনের শরীরে কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। তাঁদের মধ্যে একজনের প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে।

সংখ্যাগত দিক দিয়ে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ নমুনা পরীক্ষা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশটিতে ১৮ লক্ষাধিক মানুষের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। দেশটির ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের করোনা পরিস্থিতি জানতে পরিচালিত একটি গবেষণার ফল তুলে ধরা হয়েছে সায়েন্স নিউজের প্রতিবেদনটিতে। গবেষণাটি পরিচালনা করেছে ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটির রিচার্ড এম ফেয়ারব্যাংকস স্কুল অব পাবলিক হেলথ। গবেষকরা ইন্ডিয়ানার চার হাজার ৬০০ ব্যক্তির করোনা নমুনার পাশাপাশি অ্যান্টিবডি পরীক্ষাও করেন। এই নমুনায়নের ভিত্তিতে গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেন যে অঙ্গরাজ্যটির ৩ শতাংশ বা এক লাখ ৮৮ হাজার বাসিন্দা করোনায় সংক্রমিত হয়েছে, যা সরকারি নথিভুক্তির তুলনায় ১১ গুণ বেশি। অর্থাৎ উপসর্গ প্রকাশ না পাওয়ায় অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি বুঝতেই পারেনি। সুস্থ হয়ে উঠলেও তাদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ায় সংক্রমিত হওয়ার বিষয়টি গবেষণায় ধরা পড়ে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উপসর্গহীন বেশির ভাগ রোগী পরীক্ষার আওতায় না আসায় করোনায় প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা জানা সম্ভব হচ্ছে না। তা ছাড়া উপসর্গহীনদের মাধ্যমে কী পরিমাণ মানুষ আবার সংক্রমিত হচ্ছে, তা-ও জানা যাচ্ছে না। কারণ নতুন রোগীদের ক্ষেত্রেও অনেকের শরীরে উপসর্গ প্রকাশ পাচ্ছে না। ফলে আক্রান্তের সংখ্যা প্রকৃত অবস্থার চেয়ে কম দেখা যাচ্ছে। এতে মৃত্যুহার অনেক বেশি প্রকাশ পাচ্ছে।

জনস হপকিন্স সেন্টার ফর হেলথ সিকিউরিটির এপিডেমিওলজিস্ট কেইটলিন রিভার্স বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে নমুনা পরীক্ষা ও প্রাণহানির তুলনা করে বর্তমানে মৃত্যুহার ৫.৯ শতাংশ দেখা যাচ্ছে। তবে আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা নির্ণয় করা গেলে এই হার ০.৫ থেকে ১ শতাংশের মধ্যে থাকত। অবশ্য মৃত্যুহার ১ শতাংশ হলেও একে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। কারণ এই হার মৌসুমি ইনফ্লুয়েঞ্জার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি।

সর্বশেষ বৈশ্বিক পরিস্থিতি

পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের উপাত্ত বলছে, প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস এখন পর্যন্ত বিশ্বের ২১৩টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার (২ জুন) বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে সরকারিভাবে শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৪ লাখ। এ সময় পর্যন্ত মারা গেছে তিন লাখ ৭৮ হাজারের বেশি মানুষ। আর সুস্থ হয়েছে ২৯ লাখ ৩০ হাজার রোগী। বিশ্বে বর্তমানে সাড়ে ৫৩ হাজার রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন, যা চিকিৎসাধীন ব্যক্তির ২ শতাংশ।

Share





Related News

Comments are Closed