Main Menu

ডেঙ্গু জ্বরে হোমিও চিকিৎসা

ডা. মো. শাহিনুর রহমান: ডেঙ্গু সাধারণ ভাষায় ‘হাড় ভাঙ্গা জ্বর’ নামে পরিচিত। সংক্রমিত মশার কামড় দ্বারা এই রোগটি ছড়িয়ে পড়ে। এটি ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলে ব্যাপকভাবে প্রসারিত। আনুপাতিক ভাবে কম হলেও কিছু ক্ষেত্রে এই রোগটি জীবন বিপন্ন করা ডেঙ্গু হেমারেজিক ফিভার (ডি এইচ এফ ) অর্থাৎ রক্তক্ষরিত ডেঙ্গু জ্বরে পরিণত হয়। সাধারণত বর্ষার শেষে মশার মাধ্যমে এই জ্বর বিস্তার লাভ করে।

এটি একটি সংক্রামক ট্রপিক্যাল ডিজিজ, যা ডেঙ্গু ভাইরাসের কারণে হয়। এই রোগটি সর্বপ্রথম স্কটল্যান্ডের ডান্ডিতে মহামারী আকারে দেখা দেয়। তাই এ জ্বরকে ডান্ডি জ্বর বলেও ডাকা হয়। এ জ্বরকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়- সাধারণ ডেঙ্গু জ্বর ও হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর।

ডেঙ্গু জীবাণুবাহী মশা কামড়ানোর পাঁচ-সাত দিনের মধ্যে সাধারণত রোগের উপসর্গ দেখা যায়। কিছু কিছু ডেঙ্গু রোগী কোনো উপসর্গ ছাড়া সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে।

ডেঙ্গু জ্বরে যে উপসর্গগুলো দেখা যায় তার মধ্যে জ্বর, মাথাব্যথা, পেশী ও গিঁটে ব্যথা ও ত্বকে র‌্যাশ যা হামজ্বরের সমতুল্য। স্বল্পক্ষেত্রে অসুখটি প্রাণঘাতী ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে পরিণত হয়, যার ফলে রক্তপাত, রক্ত অণুচক্রিকার কম মাত্রা ও পরবর্তীতে ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোমে পরিণত হয়।

বেশিরভাগ ডেঙ্গু জ্বরই সাত দিনের মধ্যে সেরে যায় এবং অধিকাংশই ভয়াবহ নয়। প্রয়োজন যথেষ্ট পরিমাণ পানি পান, বিশ্রাম ও প্রচুর পরিমাণ তরল খাবার গ্রহণ করা। শরীরে হাড়ভাঙা বেদনা নিয়ে এ জ্বর হয়। এ কারণে এ জ্বরের নাম হয়েছে ডেঙ্গু জ্বর।

যেসব লক্ষণ প্রকাশ পায়

সহসা সামান্য শীত ও চোখমুখে লালিমাসহ প্রবল জ্বর হয়। জ্বর ১০২ থেকে ১০৫ ডিগ্রি পর্যন্ত হতে পারে। সর্বশরীরে বিশেষত চক্ষুগোলকের উপরিভাগে, চক্ষুগোলক, কোমর ব্যথা করে। রোগী নিদারুণ যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়ে। জিহ্বা শুষ্ক, ময়লাবৃত, বিবমিষা বমি ভাব কোষ্ঠবদ্ধতা উপস্থিত হয়। চোখ রক্তবর্ণ ধারণ করে। মুখে ফোলা ভাব দেখা দেয়।

এভাবে দু’তিন দিন চলে পরে চতুর্থ দিনে পুনরায় জ্বর বেড়ে যায়। সঙ্গে হামের মতো দেখা যায়। ২-৩ দিন পরে মিলিয়ে যায়। কিন্তু জ্বর শেষে অত্যন্ত দুর্বলতা, ক্ষুধামন্দা, মানসিক অবসাদ দেখা দেয়। ডেঙ্গু জ্বরে উত্তাপের তুলনায় নাড়ির গতি কম থাকে। রক্তে শ্বেত কণিকার অভাব দেখা দেয় ও এসিনোফিলের পরিমাণ বেড়ে যায়। অনেক সময় এই অসুখের সঙ্গে ইনফ্লুয়েঞ্জা ও বাতজ্বরের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে সমস্যা হয়।

এ জ্বর দু’ভাগে ভাগ করা যায়-সাধারণ ডেঙ্গু জ্বর ও হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর।

হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর

ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যায়, ত্বক ছুঁলে আঁঠালো ও শীতল অনুভূত হয়। সার্বক্ষণিক ভীষণ পেটব্যথা থাকে। প্রথম দিকে মাড়ি, নাক, মুখ বা ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ হতে পারে। ত্বকের নিচে কালো বর্ণের চাকা চাকা দাগ হতে পারে। শিশুরা অনবরত কাঁদতে থাকে। খুব পিপাসা পায়। শ্বাসকষ্ট হতে পারে, মাঝে মধ্যে বমিও হয়। বমিতে রক্ত নাও থাকতে পারে। কালো বর্ণের পায়খানা হতে পারে। ডেঙ্গু জ্বরের জটিল অবস্থাকে বলে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। এ অবস্থায় হৃৎকম্পন বেড়ে যায়। ব্লাডপ্রেসার কমে যায়। হাত-পাসহ সারা শরীর বরফের মতো শীতল হয়ে যায়। একপর্যায়ে রোগী মূর্ছা যেতে পারে। রোগীর খুব অস্থিরতাবোধ, একই সঙ্গে ঘুম ঘুম ভাব দেখা যায়।

করণীয়

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে উচ্চ তাপমাত্রা রোধ করতে শরীর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুছে দিতে হবে। শরীর বেশি ঠাণ্ডা মনে হলে খাবার স্যালাইন দিতে হবে। হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। তাকে পূর্ণ বিশ্রামে রেখে বেশি করে পানি খেতে দিতে হবে।

হোমিও চিকিৎসা

লক্ষণ ভেদে Belladona, Bryonia, Rhus-Toxicodendron, Eupatorium Perfoliatum, Tarentula Cubensis, Ledum Palustre এ ওষুধ গুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। ডেঙ্গু জ্বরের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে হলে অভিজ্ঞ হোমিওচিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

বি:দ্র: চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করবেন না।

লেখক: ডা. মো. শাহিনুর রহমান, বিএ অনার্স এম এ, ডি এইচ এম এস-ঢাকা; শেখ বদরুদ্দীন হোমিও চেম্বার, ৪২/২ ঢালকানগর লেন, গেণ্ডারিয়া ঢাকা-১২০৪। মোবাইল-০১৭১১-১৩৮১৩৫, ইমেইল-shahinurr10@gmail.com

Share





Related News

Comments are Closed