Main Menu

সুনামগঞ্জে সুরমার পানি বিপদ সীমার ওপরে, লাখো মানুষ পানিবন্দী

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: গত কয়েকদিনের টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে সুনামগঞ্জ জেলার সবকটি নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্যার কারণে ৬টি উপজেলার শতাধিক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা দু’দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার ৭৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ভারি বৃস্টিপাত অব্যাহত থাকায় জেলার তাহিরপুর উপজেলার বালিজুরী, আনোয়ারপুর, লোহাচুড়া, পাচগাঁও, নোয়াহাট, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার,পলাশ ও ফতেপুর ইউনিয়নের ফুলভরি,রায়পুর,বাদরপুর এবং জামালগঞ্জ উপজেলা, শাল্লা ও দোয়ারাবাজার ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ এই ৬টি উপজেলার ২ শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। ফলে জেলার সদর উপজেলা, বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর এই তিন উপজেলায় ইতিমধ্যে এক হাজার ৮ শত ৭৫ হেক্টর রোপা আমন ও সবজি ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে বলে স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়। একই ভাবে জেলার যাদুকাটা নদী চেলা নদীসহ সবকটি ছোট বড় নদ-নদী ও হাওরের পানি কয়েক ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে শুক্রবার বিকাল ৫টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এক জরুরী সভা অনুস্টিত হয়েছে। একই সাথে উপজেলা গুলোতে সভা করার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার দাস শনিবার বিকেলে বলেন, ওপারের অব্যাহত ঢল ও ভারী বৃষ্পিাতের কারনে সুরমা নদীর পানি শনিবার দিনভর বিপদসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটিয়েছে। একই ভাবে জেলার তাহিরপুরের সীমান্তনদী জাঁদুকাঁটা, পাটলাই, রক্তি, মাহারাম, বাগলী ছড়া, ধর্মপাশার মহেষখোলা, বিশ্বম্ভপুরের চলতি নদী, দোয়ারাবাজারের খাঁসিয়ামারা ও ছাতকের সোনালী চেলা নদী সহ জেলার সীমান্তবর্তী সব ক’টি নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়েই শনিবার দিনভর প্রবাহিত হচ্ছে।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোঃ সাবিরুল ইসলাম জানান, গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে হঠাৎ করে গত ২৪ ঘন্টায় অস্বাভিক ভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গত শুক্রবার বিকেলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরী সভায় প্রতিটি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট বন্যার্তদের সাহায্য সহযোগিতার জন্য নগদ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এবং শুকনো খাবার মজুদ রাখা হয়েছে। পাশপাশি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বন্যা মোকাবেলায় আমরা সবাই প্রস্তুত আছি। জেলা প্রশাসকের কায্যালয়ে নিয়ন্ত্রন কক্ষ খোলা হয়েছে। এখান থেকে জেলার বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করা হবে।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ফেরদৌস আলম আখঞ্জি জানান- শনিবার সকাল থেকে বন্যায় আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। বন্যার কারণে উপজেলার দ্বীপ সাদৃশ্য গ্রাম গুলোতে বসবাসকারী মানুষ রয়েছেন উদ্ধেগ আর উৎকন্ঠার মধ্যে। গত কয়েক দিনের টানা বর্ষন ও পাহাড়ি ঢলে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে উপজেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। ফলে বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না সাধারন মানুষ। সরকারী সহায়তা এখন খুবেই প্রয়োজন।
এদিকে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি আলহাজ্ব মতিউর রহমান শনিবার বিকেলে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বিভিন্ন দূর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি সার্বিক বন্যার আশংঙ্কায় জেলা প্রশাসনকে দূর্যোগ মোকাবেলার জন্য সকল প্রকার প্রস্তুতি গ্রহনের আহবান জানান।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. বায়েজিদ খাঁন শনিবার বিকেলে বললেন, জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় বন্যার পানি প্রবেশ করায় তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, ধর্মপাশা , দিরাই , দোয়ারাবাজার ও সদর উপজেলার ২৮৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলা শনি ও রবিবারের দু’দিনের দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
জানা গেছে, বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় গত চার দিন ধরেই জেলার তাহিরপুর, বিশ^ম্ভরপুর, ধর্মপাশা ও দোয়ারাবাজার উপজেলার কমপক্ষ্যে ৫০ হাজার পরিবারের দু’লক্ষাধিক নারী পুরুষ শিশু চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। এসব পরিবারের কারো কারো চুলা জ্বলেনি শুক্রবার থেকে।
জেলার তাহিরপুরের সাবেক ইউপি সদস্য মিলন কুমার তালুকদার শনিবার বিকেলে জানান, শুক্রবার সন্ধার পর সীমান্তনদী জাঁদুকাঁটার প্রবল পানির তোড়ে বাজারের বাঁধ ও পাঁকা সড়ক ভেঙ্গে কমপক্ষ্যে ৫০ দোকানের কয়েক কোটি টাকার মালামাল ভেসে গেছে ঢলের পানিতে। এরপর শনিবার বিকেল থেকে ঢলের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রক্তি নদীর ওপর তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ জেলা শহরের সাথে সংযোগস্থাপকারী আনোয়ারপুর সেতু ঝুঁকিপুর্ণ অবস্থায় রয়েছে । সেতুর দু’পাশের সংযোগ সড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙ্গন দেখা দেয়ায় পাঁকা বøক, সড়ক ও মাটি নদীর পেঠে চলে যাচ্ছে।

Share





Related News

Comments are Closed