Main Menu

প্রাচীন জৈন্তারাজ্যের পত্ন তত্ত্বের স্থপনা সমুহে নান্দনিকতার ছোঁয়া

মো. রেজওয়ান করিম সাব্বির, জৈন্তাপুর প্রতিনিধি: সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার ২০০ বছরের পুরনো জৈন্তা রাজ্যের স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ সমুহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন স্থানে। মোঘল সম্রাজ্যের আমলে বৃহত্তর জৈন্তার জনপদ ছিল মোঘল শাসনামলের বাহিরে। সেই সময়টায় জৈন্তাপুর ছিলো স্বাধীন জৈন্তা রাজ্য যার স্মৃতি গুলো এখনও পরিচয় বহন করে বর্তমান প্রজন্মের কাছে।

জৈন্তা রাজ্যের শাসনামলের সমাপ্তির পরও এখনও কিছু স্মৃতি চিহ্ন রয়ে গেছে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলা সদরের বিভিন্ন পরতে পরতে। কালের বিবর্তনে অনেক স্থাপনা গুলো ধ্বংস কিংবা মানুষের দখলে চলে গেলেও যে কয়টা স্থাপনা বা পুরাকীর্তি রয়েছে তাও দীর্ঘ সময় ধরে জরাজীর্ণ অবস্থাতে পড়ে ছিল।

তার মধ্যে অন্যতম জৈন্তেশ্বরী ইরাদেবী রাজবাড়ীর একটা বিশাল অংশ গত বছর বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর সংরক্ষনের জন্য পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে স্থাপত্যশৈলীকে দৃশ্যমান করা হয়েছে। বর্তমানে ইরাদেবী রাজবাড়ীর বটতলার বিশাল অংশটি দর্শনার্থীদের আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিনত হয়েছে।

প্রাচীন জৈন্তা রাজ্যের কিছু ছোট বড় স্থাপনা বা ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। সঠিক পরিচর্যার অভাবে ঝোঁপঝাড়, জঙ্গল কিংবা ময়লার ভাগাড়ে পরিনত হয়েছিল।
প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ জৈন্তাপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে জমে থাকা বিশাল ময়লার ভাগাড়ে পরিনত ছিল। জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে সালিক রুমাইয়া গত সেপ্টেম্বরে পরিস্কার করে সেখানে তৈরী করা হয় নান্দনিক ফুলের বাগান।

তার এই কার্যক্রমটি সর্বমহলে প্রশংসিত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবহেলায় অযত্নে পড়ে থাকা স্থাপনা গুলোতে সংস্কার কাজের উদ্যোগ গ্রহন করেন।

বর্তমানে জৈন্তাপুর ঐতিহাসিক রাজবাড়ী ফুটবল খেলার মাঠের দক্ষিণ প্রান্তে জৈন্তা রাজ্যের আরেকটি স্থাপনাকে নানন্দিকতায় রূপান্তরের কাজ প্রায় শেষের পথে।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উক্ত স্থাপনায় একটি প্রাচীন আমলের স্থাপত্যশৈলী চুন সুড়কীতে নির্মিত একটি গোলাকার আকৃতির ঘর। কথিত আছে ১১০৭ শতকে এই স্থাপনাটি মন্দির হিসেবে ব্যবহৃত হত। এক দরজা বিশিষ্ট এই ঘরটির ঠিক পাশেই প্রবেশ ফটকের একটি নিদর্শন এখনোও দৃশ্যমান। দীর্ঘদিন যাবত শেওলা, পরগাছা আকড়ে ধরে রেখেছে। রাজার আমলের ঘরটি পরিস্কার করায় সহজে তার ভিতরে প্রবেশ করতে পারছে দর্শনার্থীরা। ঘরটির স্থাপত্যশৈলী নান্দনিকতার ছোঁয়া রয়েছে ভিতরে ও বাহিরের অংশে।

ইউএনও’র উদ্যোগে স্থাপনাটির আশপাশে ঢালাই করে দর্শনার্থীদের চলাচলের সু-ব্যবস্থা সহ ফুলের বাগান তৈরীর উদ্যোগ গ্রহন করা হয়।

অপরদিকে স্থানীয় জনসাধারনের পক্ষ হতে দাবী জানানো হয়, জৈন্তাপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পশ্চিমে ”জৈন্তিয়া রাজ্যের অন্যতম নির্দশন এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রথম সেনাপতির স্থাপিত মসজিদটি সংস্কার করার। ইতোপূর্বে অনেকেই জৈন্তিয়া রাজ্যের নির্দশন গুলো অালোর মুখ নিয়ে আশান্বিত হলেও মসজিদটি সুরক্ষায় নতুন প্রজন্মের কাছে তুলো ধরা হচ্ছে না। এছাড়া রূপচেং মাঝের বিলে অবস্থিত অন্যতম দর্শনীয় স্থান উমাগড় মন্দির, ফেরীঘাট ববরবন্দ গ্রামের জামে মসজিদ সংলগ্ন সাহজির মাজারটি বার বার বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।

সচেতন মহল ও প্রত্ন তাত্ত্বিত প্রেমীরা জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে সালিক রুমাইয়ার কাছে এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা গুলোকে সুরক্ষায় উদ্যোগ গ্রহনের জন্য দাবী জানান।

জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে সালিক রুমাইয়া বলেন, প্রাচীন জৈন্তা রাজ্যের স্থাপনা গুলো যেখানে, যে অবস্থায় রয়েছে সবগুলোকে পর্যায়ক্রমে তার স্থাপত্যশৈলীকে দৃশ্যমান করার উদ্যোগ গ্রহন করা হচ্ছে। তিনি এই সকল স্থাপনা গুলো সংরক্ষণ করে একটা মিনিআ্যচার তৈরী করার পরিকল্পনার কথা বলেন। যাতে করে সারা দেশ হতে আগত পর্যটক ও দর্শনার্থীদের নিকট প্রাচীন জৈন্তা রাজ্যের ইতিহাস সম্পর্কে ভাল ধারনা তুলে ধরা যায়। জৈন্তিয়া রাজ্যের প্রথম মসজিদ, সাহজির মোকাম, উমাগড় মন্দির গুলো দ্রুত পরিদর্শন করা হবে এবং এগুলো সংরক্ষনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এছাড়া সারীঘাট পান্থশালা সহ অন্যান্য স্থাপনা গুলো সংস্কার করা হবে বলে জানান তিনি।

Share





Related News

Comments are Closed