খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিস শনাক্ত, আছেন ‘হাইরিস্কে’
বৈশাখী নিউজ ডেস্ক: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিস শনাক্ত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানিতে এ রোগের চিকিৎসা সম্ভব বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তিনি এখন ‘হাইরিস্কে’ আছেন বলেও জানান তারা।
রোববার (২৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি নেত্রীর বাসভবন ফিরোজায় সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা। এসময় বিএনপি নেত্রীর চিকিৎসা বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়।
ব্রিফিংয়ে তারা বলেন, ’ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) শারীরিক অবস্থা নিয়ে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। কিন্তু আমরা যারা প্রধান চিকিৎসক আছি, এ বিষয়টি সম্পর্কে ভালো জানি।’
চিকিৎসকরা জানান, জটিল পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে খালেদা জিয়াকে। তার এ পর্যন্ত ৩ বার মারাত্মক ব্লিডিং হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রিব্লিডিং হয়নি। আবার যদি রিব্লিডিং হয়, তবে তা নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা এখানে নেই। সেক্ষেত্রে তার ব্লিডিং হলে মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেড়ে যাবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসক টিমের প্রধান ডা. এফ এম সিদ্দিকী, ডা. শামসুল আরেফিন, ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন, প্রফেসর ডা. একিউ এম মহসিন, প্রফেসর ডা. নূর উদ্দিন, ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. আল মামুন।
সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসক টিমের প্রধান ডা. এফ এম সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা আশঙ্কা করছি ম্যাডামের যদি পুনরায় রক্তক্ষরণ হয়, তাহলে সেটা নিয়ন্ত্রণ করার মতো সাপোর্টিং টেকনোলজি আমাদের এখানে নেই। সে ক্ষেত্রে উনার আবার রক্তক্ষরণ হলে মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেড়ে যাবে।’
ডা. শামসুল আরেফিন বলেন, ‘আমাদের শরীরে দুটি সার্কুলেশন সিস্টেম আছে। একটা হলো পোর্টাল সার্কুলেশন সিস্টেম, আরেকটা সিস্টেমিক সার্কুলেশন সিস্টেম। লিভারে দুটা সিস্টেমই কার্যকর। লিভারে টোটাল যে ব্লাড যায় তার তিন ভাগের এক ভাগ যায় সিস্টেমিক সার্কুলেশন থেকে আর দুই ভাগ যায় পোর্টাল সার্কুলেশন থেকে। এখানে যেটা হয় তার পোর্টাল প্রেসার বেড়ে গেছে। কারণ তার লিভারের ভেতরের নরমাল চ্যানেলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যে কারণে পোর্টাল প্রেসার বেড়ে যায়, আর যেসব ব্যান খাদ্যনালীতে থাকে, সেগুলো ফুলে ওঠে ফেটে যায়। সেজন্য সিভিআর ব্লিডিং হয়। এই সিচুয়েশনে আমরা যেটা করেছি সেটা ইন্টারন্যাশনাল প্রাকটিস। এটার পরে আবার ব্লিডিং হলে আরও কিছু জিনিস আছে যেগুলো আমরা করি, স্পেশাল কিছু কেমিক্যাল এজেন্ট আছে সেগুলো ইনজেক্ট করি অনেক সময়। আনফরচুনেটলি সেটা আমাদের দ্বারা সম্ভব হয়নি এবং এখন আমাদের দেশে সেই ওষুধগুলো পাওয়া যায় না।’
এ চিকিৎসক আরও বলেন, ‘তৃতীয়ত যেটা আছে সেটা হলো টিপস। লিভারের ভেতরে টোটাল প্রেসার কমানোর জন্য সিস্টেমিক সার্কুলেশন এবং পোর্টাল সার্কুলেশনের মধ্যে একটা কমিউনিকেশন করে দেওয়া। এটা একটা হাইলি টেকনিক্যাল কাজ। এটা সচরাচর হয় না। আমাদের দেশে আমি দেখিনি কোনো টিপস করা রোগী এসেছে। রোগীদের দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয়বার ব্লিডিং হলে সার্ভাইভ করা কঠিন হয়ে যায়। সেজন্য এ সেন্টারগুলো মেইনলি আমেরিকা ও ইউরোপে হয়। বিশেষত ইউকে জার্মানি এবং ইউএসএ। ওইসব দেশে এগুলোর জন্য অ্যাডভানস সেন্টার আছে। তবে সেসব দেশেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে নেই। দুই-চারটা সেন্টার আছে। বিশ্বের সব রোগীরা সেসব সেন্টারে যায়।’
এর আগে শনিবার (২৭ নভেম্বর) এক বিবৃতিতে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে নিয়ে সুচিকিৎসার দাবি জানান ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) ২ হাজার ৬৮৪ চিকিৎসক।
বিবৃতিতে তারা বলেন, পছন্দমতো চিকিৎসা নেওয়ার অধিকার থেকে খালেদা জিয়া ক্রমাগতভাবে বঞ্চিত। বিএনপি নেত্রী কারাগারে যাওয়ার পর থেকেই চিকিৎসাবঞ্চিত হওয়ার ফলশ্রুতিতে আজ এ ভয়াবহ শারীরিক জটিলতার মধ্যে পড়েছে।
তারা আরও বলেন, চিকিৎসা ব্যবস্থায় বাংলাদেশ ক্রমবর্ধমানভাবে এগিয়ে গেলেও এখনও বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা বিদ্যমান। যার ফলশ্রুতিতে এদেশের চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও খালেদা জিয়া আশানুরূপ আরোগ্য লাভের পরিবর্তে ধীরে ধীরে অন্তিম পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। এমতাবস্থায় চিকিৎসক হিসেবে আমাদের আকুল আহ্বান, জরুরি ভিত্তিতে তার মুক্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিদেশে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা হোক। অন্যথায় চিকিৎসার অভাবে খালেদা জিয়ার কিছু হলে তার দায়-দায়িত্ব সরকারের বর্তমান নীতিনির্ধারকদের বহন করতে হবে।
শারীরিক নানা জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে গত ১৩ নভেম্বর থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন বেগম খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্র কিংবা যুক্তরাজ্যে নিতে চায় পরিবার। কিন্তু আইনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে সরকার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারেন এমন আশঙ্কা থেকেই বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। আইনের ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে রোববার (২৮ নভেম্বর) স্বেচ্ছাসেবক দল আয়োজিত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চেয়ারপারসনকে মুক্তি দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ সমাবেশে এ অভিযোগ করেন ফখরুল।
আগামী ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন, মৌন মিছিলসহ বেশ কিছু কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন।
Related News

জরুরি সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার বিষয়ে যা বললেন ফখরুল
বৈশাখী নিউজ ডেস্ক: সরকার খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করে মৃত্যুর দিকে ঠেলেRead More

খালেদা জিয়াকে নিয়ে মিথ্যাচার করেছেন প্রধানমন্ত্রী: মির্জা ফখরুল
বৈশাখী নিউজ ডেস্ক: রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিথ্যাচার করেছেন বলে মন্তব্যRead More
Comments are Closed