Main Menu

সালিসে এনে কিশোরীকে বিয়ে করলেন ইউপি চেয়ারম্যান!

বৈশাখী নিউজ ডেস্ক: প্রেম করে ঘরছাড়া এক কিশোরীকে (১৪) সালিসে ডেকে এনে এক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নিজেই তাকে বিয়ে করেছেন। ওই চেয়ারম্যান বিবাহিত। এটি তার দ্বিতীয় বিয়ে। প্রথম স্ত্রীর ঘরে দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। এর মধ্যে এক ছেলে স্থানীয় সাবেক এক এমপির শ্যালিকাকে বিয়ে করেছেন এবং মেয়ে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবেন।

এদিকে চেয়ারম্যান বৃদ্ধ বয়সে অন্যের কিশোরী স্ত্রীকে বিয়ের ঘটনা ব্যাপক আলোচিত হয়েছে। ভাইরাল হয়েছে যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।

গত শুক্রবার (২৫ জুন) পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কনকদিয়া ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটেছে।

সালিসে এমন ঘটনা ঘটার পর যুবক প্রেমিক আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। শুক্রবার রাত থেকে ওই যুবক বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার গত ২১ জুন অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এর আগেও তিনি চেয়ারম্যান ছিলেন।

জানা গেছে, ওই কিশোরীর সঙ্গে একই ইউনিয়নের এক যুবকের প্রেমের সম্পর্ক হয়। কিন্তু তিন মাস আগে কিশোরীকে উপজেলার অন্য ইউনিয়নের এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয় বলে তার পরিবার দাবি করে। তারা দাবি করে যে শরিয়ত অনুযায়ী বিয়ে হয়েছে, কিন্তু বিয়ের কাবিন হয়নি বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, বিয়ের পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে মেয়েটি তার কথিত স্বামীকে তালাক দিয়ে প্রেমিক যুবকের সঙ্গে ‘সংসার’ শুরু করে।

মেয়েটির বাবার দাবি, প্রেম সংক্রান্ত বিষয়ে বিরোধের কারণে মেয়ের বিয়ে ভেঙে গেছে।

কিশোরীর প্রেমিকের বড় ভাই দাবি করেন, তালাক হওয়ার পর ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে হয়েছে। কনের বয়স কম হওয়ায় বিয়ের কাবিন হয়নি। কয়েক দিন আগে মেয়েটি তার বাবার বাড়ি যায়। তখন মেয়েটির বাবা বিয়ে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান। এ নিয়ে টানাপড়েন শুরু হয়। এক পর্যায়ে ঘটনাটি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারকে জানানো হয়। গত শুক্রবার দুই পক্ষকে চেয়ারম্যান তাঁর আয়লা বাজারের বাসায় যেতে বলেন। সেখানে আলোচনার এক পর্যায়ে চেয়ারম্যান নিজেই মেয়েটিকে বিয়ে করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এরপর সালিস বৈঠক পণ্ড হয়ে যায়।

কিশোরীর প্রেমিক জানান, সালিস বৈঠকে ডেকে নিয়ে পছন্দ হয়ে যাওয়ায় চেয়ারম্যান তাঁর কথিত স্ত্রীকে জোর করে বিয়ে করেন। ওই যুবক বলেন, ‘আমার স্ত্রীকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন। ওকে ছাড়া আমি বাঁচব না।’

গতকাল শনিবার (২৬ জুন) বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা পি কে সাহা জানান, ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করা যুবক বর্তমানে সুস্থ।

চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ কয়েক ব্যক্তি জানান, শুক্রবার জুমার পর তাঁর বাসায় পাঁচ লাখ টাকা কাবিনে মেয়েটিকে বিয়ে করেন চেয়ারম্যান। এ সময় বাসায় তাঁর স্ত্রী ও সন্তানরা ছিলেন না। স্থানীয় আবু সাদেক নামের এক ব্যক্তি বিয়ে পড়ান। বিয়ে রেজিস্ট্রি করেন আইউব নামের স্থানীয় কাজি। বিয়ের কাবিনে কনের জন্ম তারিখ উল্লেখ করা হয় ১১ এপ্রিল ২০০৩। অর্থাৎ তার বয়স ১৮ বছর দুই মাস ১৫ দিন। মেয়েটি কনকদিয়া বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা করত। স্কুলে দেওয়া জন্ম সনদে তার জন্ম তারিখ ১১ এপ্রিল ২০০৭। সে অনুযায়ী তার বয়স ১৪ বছর দুই মাস ১৫ দিন।

অবশ্য মেয়েটির বাবা কাবিনে উল্লেখ করা বয়সই তাঁর মেয়ের সঠিক বয়স বলে দাবি করেছেন।

শাহিন হাওলাদারের প্রথম স্ত্রী ও সন্তানরা পটুয়াখালী শহরে বসবাস করেন।

দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলেন, মেয়েটিকে দেখে তাঁর পছন্দ হয়েছে। তাই তিনি বিয়ে করেছেন। তা ছাড়া তাঁর প্রথম স্ত্রী থাকলেও আবার বিয়ের প্রয়োজন ছিল।

ইউপি চেয়ারম্যান কিশোরীকে বিয়ে করেছেন—এমন খবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানার পর তিনি মেয়েটির জন্ম সনদ এবং যে স্কুলে লেখাপড়া করত ওই স্কুলের কাগজপত্র পর্যালোচনা শুরু করেছেন।

ইউএনও মো. জাকির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, চেয়ারম্যানের দ্বিতীয় স্ত্রীর কাগজপত্র পর্যালোচনা করা হচ্ছে। সে কিশোরী হলে অবশ্যই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

 

Share





Related News

Comments are Closed