Main Menu

পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে যা বললেন কাউন্সিলর লায়েক

বৈশাখী নিউজ ডেস্ক: অপরাধ ও কুকর্মের প্রতিবাদ করায় নিজের বিরুদ্ধে একটি মহলের চালানো অপপ্রচারের জবাব দিতে ও নিজের ‘নির্যাতিত’ অবস্থান তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ লায়েক।

সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে রোববার (১৩ জুন) দুপুর ২টায় লিখিত বক্তব্যে লায়েক বলেন, কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই আমি দল-মত নির্বিশেষে ওয়ার্ডবাসীর সুখে-দু:খে পাশে আছি। ওয়ার্ডের উন্নয়ন করতে গিয়ে অনেকের ব্যক্তিস্বার্থে আঘাত পড়েছে। এ জন্যই একটি সংঘবব্ধ কুচক্রি মহল আমার পেছনে উঠেপড়ে লেগেছে। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ওয়ার্ডের মুন্সিপাড়া এলাকার ওয়ার্ড বিএনপির সেক্রেটারি সুহেল বাসিতের ভাই সোয়েব বাসিত, এমএ লাহিন, ইরশাদ আলী, মো. শফিক মিয়া, মোহাম্মদ আলী মাহমদ, আরিফ আহমদ, জাকারিয়া মাসুদ খোকন, মনির হোসেন জীবন, ইসমাইল হোসেন আনন্দ, জয়নাল আবেদিন রাহেল, শরিফ আহমদ, মুন্না খান ও সাগর।

তারা সবাই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। অপরদিকে, আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে লালিত ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রধান ধারক-বাহক রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। প্রতিপক্ষের চক্ষুশূল হওয়ার এটিও একটি অন্যতম কারণ।

সংবাদ সম্মেলনে লায়েক আরও বলেন, পবিত্র রমজান মাসে (২৩ এপ্রিল সন্ধ্যারাতে) তারাবির নামাজের সময় আমার বাসা ও কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালায় তারা। হামলায় আমার বাসা ও কার্যালয়ের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বিষয়টি সিসিটিভি ক্যামেরায় রেকর্ড হয়েছে এবং পুলিশ সে ফুটেজ খতিয়ে দেখে হামলার সত্যতা পেয়েছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়- হামলাকারীরা চিহ্নিত হলেও মামলা দায়েরের এক মাস পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। পরে আসামিরা আদালত থেকে জামিন নেন। বর্তমানে তারা প্রকাশ্যে ঘুরছেন এবং আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে বেড়াচ্ছেন।

এদিকে, হামলার বিষয়টি ধামাচাপা দিতে এবং তদন্তকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে সোয়েব বাসিতের নেতৃত্বে হামলাকারী পক্ষ গত ৮ জুন একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যা অভিযোগ তুলে বলা হয়, ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য আমি নিজেই লোক দিয়ে গত ২৩ এপ্রিল আমার বাসা ও কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুর চালাই। কথাটি ডাহা মিথ্যা। আমি আমার পরিবারের ক্ষতি হবে এমন ঘটনা কেন ঘটাতে যাবো?

সোয়েব বাসিত সংবাদ সম্মেলনে আরও মিথ্যাচার করে বলেন- মুন্সিপাড়া এলাকার ইয়ং ব্রাদার্স ক্লাব, মুন্সিপাড়া জামে মসজিদ ও পঞ্চায়েত কমিটিতে ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছি। কিন্তু বর্তমানে ইয়ং ব্রাদার্স ক্লাবের কোনো দায়িত্বশীল আমি নই। সেই ক্লাবের কমিটি ২০২০ সালে ভেঙে দেয়ার পর থেকে ক্লাবের কোনো বিষয়েই আমি জড়িত নই। আর জনপ্রতিনিধি হিসেবে মুন্সিপাড়া জামে মসজিদ ও পঞ্চায়েত কমিটির আমি একজন সদস্য হলেও কার্যকরি পরিষদের কেউ নই।

তার বাসায় হামলার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে লায়েক বলেন, মিথ্যা অভিযোগ করে তারা বলছেন- ২৩ এপ্রিল এম এ লাহিন মসজিদে জুম্মার নামাজের পর মসজিদ কমিটি গঠনের দাবি জানালে আমি ক্ষুব্ধ হই এবং যারা কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছে তাঁদের দেখে নেয়ার হুমকি দেই। কথাটি সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা। প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে লাহিনের পক্ষ ও তার প্রতিপক্ষের মাঝে সেদিন কমিটি গঠন নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিলে একটি পক্ষ আমার কাছে সালিশের জন্য আসেন। তখন আমি রাতে বিষয়টি দেখে দেয়ার কথা বলি। কিন্তু সালিশ বসার আগেই বাসিত ও লাহিনরা আমার বাসা-কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুর চালায়।

সংবাদ সম্মেলন করে সোয়েব বাসিত সাংবাদিকদের বিভ্রান্ত করতে চান এই বলে যে- করোনা মহামারির সময় আমি ত্রাণ গ্রহীতাদের ভুয়া তালিকা দিয়ে ১২৫ বস্তা চাল জোর করে সিটি কপোরেশন থেকে নিয়ে আসি। পরে ওই ১২৫ বস্তা চাল আমার বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে- করোনাকালের শুরুতে দরিদ্রদের মাঝে বিতরণের জন্য আমার ওয়ার্ডে বরাদ্দ দেয়া ১২৫ বস্তা চাল সহজে প্যাকেটজাত করার নিমিত্তে চালের সে বস্তাগুলো আমার কার্যালয়ে নিয়ে আসি। তবে সেগুলো সিটি করপোরেশন চাহিবামাত্র আমি সিসিক কর্তৃপক্ষের কাছে ফিরিয়ে দেই। সেগুলো পুরোপুরি বুঝে নিয়ে আমাকে রিসিভ কপিও দেওয়া হয়। এ বিষয়টি যে দুর্নীতি নয়, সে মর্মে সিসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুত) ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যসচিব মো. রুহুল আলম পরবর্তীতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন।

কাউন্সিলর লায়েক সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন, শাহনাজ বেগম নামে একজন বাদি হয়ে আমার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন সোয়েব বাসিত। মূলত এটি একটি মিথ্যা মামলা। এছাড়াও আমার বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু সেই মিথ্যা মামলা থেকে বিজ্ঞ আদালত আমাকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন। সোয়েব বাসিত আমার বিরুদ্ধে একটি চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন। কিন্তু সে অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা। অভিযোগটি ২০২০ সালে তদন্ত করে স্থানীয় সরকার পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. ফয়জুল কবির এর সত্যতা খুঁজে না পেয়ে আমার পক্ষে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

সোয়েব বাসিতের সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়- আমি আওয়ামী লীগের কেউ নই। কিন্তু আমি সিলেট মহানগর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। আমার বাসায় হামলার পরে মহানগর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং সমবেদনা জানাতে ওই দিন রাতে আমার বাসায় যান।

কাউন্সিলর লায়েক তার বিরুদ্ধে অপপ্রচারকারীদের অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরতে গিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমার বাসা-কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুরের মূল হোতা সোয়েব বাসিত প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে তার বড় ভাই শামীম বাসিতের ভুয়া আইডি কার্ড তৈরি করে ১৫ বছর বয়স বাড়িয়ে দুই বছর থেকে বয়স্কভাতা উত্তোলন করছেন। ভোটার তালিকা অনুযায়ী শামীম বাসিতের জন্মতারিখ ১/১/১৯৬৬ইং। কিন্তু ভুয়া আইডি কার্ডে তার জন্মতারিখ ১/১/১৯৫১ ইংরেজি। সূত্রমতে- নগরীর এক মার্কেটের একটি কম্পিউটারের দোকানে ভাইয়ের নামে ১৫ বছর বাড়িয়ে ভুয়া আইডি কার্ড তৈরি করেছেন সোয়েব বাসিত। এছাড়াও সরকারি আইন অমান্য করে সোয়েব বাসিত বয়স্কভাতায় তার ভাইয়ের নমিনি হয়েছেন।

তাছাড়া সোয়েব বাসিতের একান্ত সহযোগী মো. শফিক মিয়া সরকারি জায়গায় অবৈধভাবে দেয়াল নির্মাণ করেছেন ও ভাঙার নির্দেশ জারির পরও প্রভাব খাটিয়ে সেটি বহাল রেখেছেন এবং তার ছেলে আব্দুস শুকুর ইতিপূর্বে ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে ও বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার চুরির দায়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। নজরুল ইসলাম মারামারি মামলায় একজন চার্জশিটভুক্ত আসামি। মোহাম্মদ আলী মাহমদ একটি হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি। এমএ লাহিন জাতীয়তাবাদী যুবদল সিলেট মহানগরীর ৩ নং ওয়ার্ডের আহবায়ক এবং পুলিশ অ্যাসল্ট ও নারী নির্যাতনসহ অন্তত ৭টি মামলার আসামি। জয়নাল আবেদিন রাহেল ২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের দিন নগরীর কেওয়াপাড়ায় সহিংসতার সময় আগ্নেয়াস্ত্রসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হন। ইরশাদ আলী ছিলেন চাঁদাবাজির মামলার আসামি। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে মুন্সিপাড়া এলাকায় নারী ব্যবসা ও জুয়ার আসর বসানোর অভিযোগ রয়েছে। জাকারিয়া মাসুদ খোকনের বিরুদ্ধে জালিয়াতি করে ভোটার আইডিতে বয়স কমিয়ে বালাগঞ্জ ভ‚মি অফিসে এমএলএসএস’র চাকরি নেয়ার অভিযোগ। মনির হোসেন জীবনের বিরুদ্ধে সিলেট এয়ারপোর্ট থানায় পুলিশ অ্যাসল্ট মামলা। ইসমাইল হোসেন আনন্দের বিরুদ্ধে মারামারির মামলা এবং শরিফ আহমদ, মুন্না খান ও সাগরের বিরুদ্ধে রয়েছে হামলা-ভাঙচুর মামলা রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে কাউন্সিলর লায়েক প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সুনজর কামনা করেন। পাশাপাশি নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি তুলে সুবিচার পাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত এবং অপরাধীদের শাস্তি দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন শামসুদ্দিন আহমদ, আব্দুর রব হাজারী, আব্দুস সালাম, আমিন আলী, মুজিবুর রহমান, রফিক, মো. হিরণ, গিয়াস উদ্দিনসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

 

 

Share





Related News

Comments are Closed