Main Menu

‘মামলা দিয়ে হয়রানী করছেন কাউন্সিলর লায়েক’

বৈশাখী নিউজ ডেস্ক: মসজিদ ও পঞ্চায়েত কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধের জেরে নিজের লোকজন দিয়েই নিজের বাসা ও অফিসে হামলা-ভাঙচুর করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ লায়েক (একেএ লায়েক)। এরপর এ ঘটনায় মামলা দিয়ে স্থানীয় লোকজনদের আসামি করে হয়রানী করছেন তিনি। এতে অতীষ্ট হয়ে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এর আগেও তিনি নিজের স্বার্থ উদ্ধারে এভাবে নাটক সাজিয়ে এমন পরিকল্পিত ঘটনা ঘটিয়েছেন।

মঙ্গলবার (৮ জুন) বেলা দুইটায় সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে কাউন্সিলর লায়েকের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তুলেন সিলেট নগরের মুন্সিপাড়া এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা। এলাকাবাসীর পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক সোয়েব বাসিত।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ২৩ এপ্রিল কাউন্সিলর লায়েকের অফিসের সাইনবোর্ড ও বাসার গেইট ভাংচুরের ঘটনা ছিলো একটি সাজানো নাটক। সেটি নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য পরিকল্পিতভাবে ঘটিয়েছেন কাউন্সিলর নিজেই। এ ঘটনার সাথে রাজনৈতিক ও সিটি কপোরেশনের উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্ত করার কোনো মিল নেই।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, মুন্সিপাড়া এলাকায় ইয়ং ব্রাদার্স ক্লাব, মুন্সিপাড়া জামে মসজিদ ও পঞ্চায়েত কমিটি নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে বিরোধ চলে আসছে। কারন লায়েক কাউন্সিলর হওয়ার পর তিনি এলাকায় এসব সংগঠন, সংস্থা ও মসজিদ কমিটিকে ক্ষমতার দাপটে তাঁর অনুগত লোকজন দিয়ে কুক্ষিগত করে রেখে টাকা-পয়সা লোপাট করেছেন। যে কারনে এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন থেকে এ নিয়ে প্রতিবাদি ছিলেন। ২৩ এপ্রিল শুক্রবার আইনজীবী এম এ লাহিন মসজিদে জুম্মার নামাজের পর মসজিদ কমিটি গঠনের দাবি জানালে লায়েক ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। এসময় যারা কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছে তিনি তাঁদের দেখে নেয়ার হুমকি দেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ওইদিন ইফতারের পরপরই লায়েক তাঁর বাসায় ৪০/৫০ জন সন্ত্রাসী জড়ো করেন। রাত পৌনে ৯ টার দিকে সন্ত্রাসীরা অস্ত্র-সস্ত্রে সঞ্জিত হয়ে এলাকার প্রতিবাদী যুবক ও তাঁদের পরিবারের লোকজন এবং তাদের বাসা বাড়িতে হামলার চেষ্টা চালায়। এসময় আকস্মিকভাবে লায়েকের বাসার লাইট নিভিয়ে দিয়ে পূর্ব থেকে তার বাসায় অবস্থানরত ১০/১৫ জন যুবক শ্লোগান দিয়ে তার অফিসের সাইনবোর্ড ও বাসার গেইট ভাংচুর করে দ্রæত এলাকা ত্যাগ করে। এ ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে কাউন্সিলর সাংবাদিক সোয়েব বাসিতকে প্রধান আসামী করে ১৬ জনের নামোল্লেখসহ ১৫/২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলায় এলাকার নিরীহ লোকজনদের আসামী করে হয়রানি করা হচ্ছে।

স্থানীয়রা বলেন, ঘটনার পর লায়েক তার স্ত্রী ও তার মা এবং তার কয়েক জন নিকট আত্মীয় গণমাধ্যমে একেকবার একেক ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। কখনও বলেছেন ঘটনার সময় লায়েক নামাজে ছিলেন, কখনও বলেছেন অযু করারত অবস্থায় ছিলেন আবার কখনও বলেছেন ঘুমে ছিলেন। একজন মানুষ একই সময়ে ৩টি জায়গায় থাকতে পারেন না। আমাদের ধারণা লায়েক ওই সময়েই পুরো নাটক সাজাচ্ছিলেন এবং তার দায়েরকৃত মামলায় নিরীহ লোকজনদের কিভাবে আসামী করে হয়রানি করা হবে সেই পরিকল্পনা করছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে সোয়েব বাসিত জানান, করোনা মহামারির সময় লায়েক ত্রাণ গ্রহীতাদের ভূয়া তালিকা দিয়ে ১২৫ বস্তা চাল জোর করে সিটি কপোরেশন থেকে নিয়ে আসেন। তাৎক্ষনিক বিষয়টি জানাজানি হলে সর্বমহলে তোলপাড় সৃস্টি হয়। পরবর্তীতে ঐ ১২৫ বস্তা চাউল সিটি কপোরেশন ও আইন শৃংঙ্খলা বাহিনীর সহযোগীতায় তার অফিস ও বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্নের দায়ে লায়েককে সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগ গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে দল থেকে বহিস্কার করেন। এছাড়াও এলাকায় তাঁর বিরুদ্ধে অনেক অপকর্ম রয়েছে। লায়েক ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলার ঘটনায় ব্যবসায়ী স্থানীয় বাসিন্দা ইরশাদ আলীর মা শাহনাজ বেগম বাদি হয়ে লায়েককে প্রধান আসামী ও আমিন আলীসহ আরো ৬ জনের নাম উল্লেখ করে মোট ৭ জনকে আসামী করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়। বর্তমানে মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে।

স্থানীয়রা বলেন, হামলা-ভাঙচুরের ঘটনার পর থেকে লায়েক সুকৌশলে এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় সিসি ক্যামেরা বসিয়ে আমাদের ছবি ধারণ করে সেই ছবিকে ব্যবহার করে নানাভাবে হয়রানির অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। শুধু তাই নয় এসব ছবি দিয়ে সে বিভিন্ন নিরিহ ব্যক্তিদের মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দিবে বলে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। এর আগেও তাঁর বিরুদ্ধে এসব অপকর্মের অভিযোগ ছিল।

স্থানীয়রা বলেন, কাউন্সিলর লায়েক তার সকল অপকর্ম ঢাকার জন্য অনেক নাটক সৃষ্টি করেছেন। তাঁর সকল চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র ও দুর্বীসন্ধী থেকে সচেতনমহলকে দুরে থাকার আহবান জানান তাঁরা। সেইসাথে তার দায়েরকৃত মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমুলক মামলার হয়রানি থেকে আমাদের বাঁচাতে স্থানীয় প্রশাসন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ও সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা চান তাঁরা।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কাউন্সিলর লায়েকের হয়রাণি বন্ধ ও তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযানসহ নানা আন্দোলন কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, মুন্সিপাড়া জামে মসজিদ ও পঞ্চায়েত কমিটির সদস্য মো: শফিক মিয়া, স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী মাহমদ, শিক্ষানবিশ আইনজীবি এমএ লাহিন, ব্যবসায়ী ইরশাদ আলী এডভোকেট আরিফ আহমদ, স্থানীয় বাসিন্দা জাকারিয়া মাসুদ খোকন, মনির হোসেন জীবন, ইসমাইল হোসেন আনন্দ, জয়নাল আবেদীন রাহেল, শরিফ আহমদ, মুন্না খান ও সাগর প্রমুখ।

 

Share





Related News

Comments are Closed