Main Menu

ঢাকা-সিলেট রেলপথের উন্নয়ন কত দূর?

রুহুল ইসলাম মিঠু : দুই যুগের বেশি সময় ধরে সিলেট অঞ্চলবাসী ঢাকা-সিলেট-চট্টগ্রাম রেলপথের সংস্কারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ক্রসিং, ব্রিজ নির্মাণের ন্যায্য দাবী জানিয়ে ছিল সরকারকে। পাশাপাশি সিলেট-ঢাকা, সিলেট-চট্টগ্রাম রেলপথ ডুয়েল গেজ, ডাবল লাইনের আধুনিকায়নের যুগে প্রবেশ করতে সিলেটের আঞ্চলিক সামাজিক সংগঠনগুলো বার বার দাবী জানিয়ে আসছে সরকারকে। সরকারের জনপ্রতিনিধিরা এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। তা বাস্তবায়ন করেননি।

রেলপথের চরম অবহেলার কারণে ঢাকা-সিলেট-চট্টগ্রাম রেলপথে বার বার দুর্ঘটনা ঘটছে। আর চুপ হয়ে থেকেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে কর্তৃপক্ষ মাঝে মাঝে রেলপথের জোড়াতালির কাজ করেছেন। এই জোড়াতালি এখন আর রেল ইঞ্জিন মানছে না। বরং রেল ইঞ্জিন মাননীয় রেলমন্ত্রীর সাথে গোসসা করে ফেলেছে বিধায় এমন দুর্ঘটনা, বার বার ঘটছে। অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত ডজন ডজন দুর্ঘটনা ঘটেছে।

ঢাকা-সিলেট-চট্টগ্রাম রেলপথ যেহেতু ঝুঁকিপূর্ণ, সেহেতু ওই রেলপথ দিয়ে যাত্রী বোঝাই নিয়ে চলাফেরা করাও প্রতিটি রেলযাত্রীদের জন্য নিরাপদ নয়। রেলপথে যতবার দুর্ঘটনা ঘটেছে ততবারই বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিসংখ্যান আমার জানা নেই।

ঢাকা-সিলেট-চট্টগ্রাম রেলপথ দিয়ে হাজার হাজার পর্যটক সিলেট বেড়াতে আসেন। রেলপথে সিলেটের যাত্রীরা নিরাপদ মনে করে সবচেয়ে বেশি চলাচল করেন। সিলেট থেকে যতসব ট্রেন ঢাকা, চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়, এইসব ট্রেনের সিটও খালি থাকে না। ব্যাপক যাত্রী চাহিদার সিলেট-ঢাকা-চট্টগ্রামমুখী রেলওয়ের আধুনিকায়নের পরিবর্তে দুর্বল সেবা দিয়ে, জোড়াতালির সংস্কার দিয়ে একদিকে যাত্রীদের জীবন বিপদমুখী ও দুর্ঘটনামুখী করে অন্যদিকে রেলসেবাকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।

রেলপথে ঘন ঘন দুর্ঘটনা ঘটলে তদন্ত কমিটি করা হয়। কমিটির প্রতিবেদন কি বলে? কি আছে প্রতিবেদনের সুপারিশ মালায়, তাতে দায়ী কারা কারা? এরই তথ্যবস্তু দেশবাসীর কাজে লাগানো যায়নি। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে সরকার কি ব্যবস্থা নিয়েছে তা দেশবাসীর অজানা।

ঢাকা-সিলেট-চট্টগ্রাম রেলপথ একটি লাভজনক ব্যবসা। এই ব্যবসার লভ্যাংশ একদিকে, লস আরেক দিকে। এর মধ্যে সংশ্লিষ্ট ঘুষ দুর্নীতিবাজদের লুটপাট আরেক দিকে। কিন্তু দায়ীদের ব্যবস্থা নেয়া হয়না। রেলওয়েতে সিলেট বিদ্বেষী, দুর্নীতিবাজ রেল কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। তাদের সম্পদের হিসাব কষা হোক। রেল দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের কঠোর শাস্তির আওতায় নেয়া হয়নি বলে তারা বার বার ধরা ছোয়ার বাইরে থেকে যায়।

ঢাকা-সিলেট-চট্টগ্রাম রেলপথ দিয়ে সামরিক-বেসামরিক ভাবে প্রতিনিয়ত কোটি কোটি টাকার পণ্য পরিবহন করে আনা নেয়া হয়ে থাকে। এই রেলপথ এখন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। তাতে দায়িত্বশীলদের কি আসে যায়? যার বা যাদের ক্ষতি, তারই দুর্গতি।

সিলেট-১ আসনের এমপি, মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন মহোদয় বিগত নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে বলেছিলেন সিলেট-আখাউড়া-চট্টগ্রাম-ঢাকা রেলপথ ডুয়েল গেজ ও ডাবল লাইণে পরিবর্তন করার ব্যবস্থা নেবেন। আজও এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কত দূর? সেই হিসাব করছেন সিলেট অঞ্চলবাসী।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর গভীর ইচ্ছা ও আন্তরিকতা রয়েছে সিলেটের উন্নয়নের ক্ষেত্রে। কিন্তু তাকে সরকারের আন্তঃ মন্ত্রণালয় সঠিক ভাবে সহযোগিতা করলে মন্ত্রীর আন্তরিকতা সফল হবে। বাংলার দুঃখী মেহনতি মানুষের শেষ ভরসার স্থল, আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার, বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বিষয়টিতে দৃষ্টি দিয়ে মাননীয় বীর পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে এই বিষয়ে এগিয়ে দিতে পারলে তিনি অনেক দূর এগিয়ে যাবেন। সিলেটবাসী তাতে উপকৃত হবেন।

অতএব, ঢাকা-সিলেট-চট্টগ্রাম রেলপথের সকল ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ অপসারণ করে টেকসই ব্রিজ নির্মাণ, পুরাতন স্লিপার ও লাইন অপসারণ করে নতুন টেকসই লাইন স্থাপন করে রেলপথের লাভজনক ব্যবসাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার বিকল্প নেই।

মাগো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের দিকে খেয়াল রেখে দেশবাসীর সেবা করুন। আপনি সুস্থ থাকুন। মাননীয় বীর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ.কে আব্দুল মোমানের নির্বাচনী প্রতিশ্রিতি এবং সিলেটের উন্নয়নে আপনি নজর দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন। কারণ আপনার রেল মন্ত্রণালয় উক্ত রুটের সংস্কারে হাত দিচ্ছে না কিংবা সাড়া দিচ্ছে না। বরং চুপ করে বসে গেছেন। তাতে দুঃখ পেয়েছে সিলেটবাসী।

আগামী দিনে ঢাকা-সিলেট-চট্টগ্রাম রেলপথ উন্নয়নে আপনাদের পরিকল্পনা কি? সেটুকুও জাতি জানতে চায়।

Share





Comments are Closed