Main Menu

ইচ্ছামতো নেগেটিভ-পজেটিভ রিপোর্ট দিতেন সাবরিনা

বৈশাখী নিউজ ডেস্ক: করোনা ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা না করেই রিপোর্ট দেওয়া জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান ও জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ডা. সাবরিনা আরিফকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার সাবরিনাকে রিমান্ডে আনার জন্য আবেদন করবে পুলিশ। দিনের বেলা বাড়িতে বাড়িতে কিট কালেকশন করে পাঁচ হাজার টাকা এবং বিদেশি হলে একশ ডলার নিতেন। নমুনা সংগ্রহ করার পরে সেগুলো তিনি রাস্তায় ফেলে রেখে যেতেন। পরে নিজেদের ইচ্ছামতো নেগেটিভ অথবা পজেটিভ ফলাফল দিতেন।

রবিবার (১২ জুলাই) সাবরিনাকে তেজগাঁও বিভাগীয় উপ-পুলিশ (ডিসি) কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। পরবর্তীতে সংবাদ সম্মেলন করে রিমান্ডের বিষয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হারুন-অর-রশিদ।

তিনি বলেন, তদন্তে জেকেজির প্রতারণার সঙ্গে ডা. সাবরিনা আরিফের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তাই তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। একই মামলায় সাবরিনার স্বামী আরিফুল হক চৌধুরীকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার বলেন, হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। নেগেটিভকে পজিটিভ করেছেন আবার পজিটিভকে নেগেটিভ করেছেন। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন।

ডিসি বলেন, আমরা বারবার জিজ্ঞেস করেছি জেকেজির সঙ্গে তার সম্পর্ক কি? বারবারই তিনি যে জেকেজির চেয়ারম্যান সে বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। তিনি একজন সরকারি চিকিৎসক হয়ে তিতুমীর কলেজে করোনা টেস্ট ক্যাম্পে বা তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে জেকেজি সম্পর্কে অনেক কথায় বলেছেন।

একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে তিনি এগুলো বলতে পারেন না। আর বললেও কোনোভাবেই তিনি দায় এড়াতে পারেন না। আমরা মনে করি তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরো অনেক কিছু পাওয়া যাবে। তাই সোমবার তার রিমান্ড চাওয়া হবে।

একজন সরকারি হাসপাতালের কর্মকর্তা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ডিসি হারুন বলেন, সে কখনোই চেয়ারম্যান থাকতে পারেন না। আবার মুখপাত্রও হতে পারেন না। তিনি তিতুমীর কলেজে মুখপাত্র হয়ে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তা তিনি দিতে পারেন না।

এদিকে, করোনাভাইরাস পরীক্ষা নিয়ে জেকেজি হেলথ কেয়ারের প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের চিকিৎসক ডা. সাবরিনা শারমিন হুসাইনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

রোববার বিকালে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের এক অফিস আদেশে বলা হয়, সরকারি চাকরিতে থাকা অবস্থায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জেকেজির চেয়্যারম্যান হয়ে সরকারি কর্মচারী বিধিমালা ভঙ্গ করেছেন ডা. সাবরিনা। সে কারণে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউ্ট ও হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করে আসা ডা. সাবরিনা জেকেজি হেলথকেয়ারের প্রধান নির্বাহী আরিফুল হক চৌধুরীর স্ত্রী। সে কারণে সাবরিনা আরিফ চৌধুরী নামেই তিনি পরিচিত।

হাসপাতালের নাম ফলকে তার নাম ‘ডা. সাবরীনা আরিফ’ লেখা হয়েছে, যদিও সরকারি নথিতে তার নাম সাবরিনা শারমিন হুসাইন।

করোনাভাইরাস পরীক্ষা নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগে সাবরিনার স্বামী আরিফুল গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। সাবরিনা জেকেজির চেয়ারম্যান ছিলেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর এলেও বিষয়টি এখন তিনি অস্বীকার করছেন।

জেকেজির বিরুদ্ধে অভিযোগ, সরকারের কাছ থেকে বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহের অনুমতি নিয়ে বুকিং বিডি ও হেলথকেয়ার নামে দুটি সাইটের মাধ্যমে টাকা নিচ্ছিল এবং নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই ভুয়া সনদ দিত।

এ বিষয়ে রাজধানীর কল্যাণপুরের একটি বাড়ির কেয়ারটেকারের অভিযোগের সত্যতা পেয়ে গত ২২ জুন জেকেজি হেলথ কেয়ারের সাবেক গ্রাফিক ডিজাইনার হুমায়ুন কবীর হিরু ও তার স্ত্রী তানজীন পাটোয়ারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে প্রতিষ্ঠানটির সিইও আরিফুলকেও গ্রেপ্তার করা হয়। জেকেজি হেলথ কেয়ারের নমুনা সংগ্রহের যে অনুমোদন ছিল, তাও ২৪ জুন বাতিল করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

এ ঘটনায় সাবরিনার সংশ্লিষ্টতা নিয়ে গত কয়েক দিনে নানা আলোচনার পর রোববার দুপুরে তাকে হাসপাতাল থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের কার্যালয়ে ডেকে নেয় পুলিশ। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদের পর বিকালে তাকে গ্রেপ্তার করার কথা জানান তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার হারুন অর রশিদ।

এর ঘণ্টাখানেক পর ডা. সাবরিনা শারমিন হুসাইনকে বরখাস্তের অফিস আদেশ জারি করে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ।

এ বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান স্বাক্ষরিত ওই আদেশে বলা হয়, “ডা. সাবরিনা শারমিন হুসাইন সরকারি চাকরিতে কর্মরত থাকা অবস্থায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জেকেজির চেয়্যারম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। করোনা টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া এবং অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। এ কারণে তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

“সরকারি কর্মকর্তা হয়ে সরকারের অনুমতি ছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত থাকা এবং অর্থ আত্মসাত সরকারি কর্মচারী বিধিমালা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সেহেতু ডা. সাবরিনা শারমিন হুসাইনকে সরকারি কর্মচারী বিধিমালা-২০১৮ এর বিধি ১২ (১) অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্ত করা হলো “

Share





Related News

Comments are Closed