Main Menu

রমজানের দানে অগণিত সওয়াব

এহসান বিন মুজাহির: পবিত্র রমজান মাসের প্রতিটি মুহূর্ত মুমিনদের জন্য অগণিত সওয়াব অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে।রমজান মাসে মহান আল্লাহ তাআলা প্রতিটি নফল কাজের সওয়াব সত্তর গুণ বাড়িয়ে দেন। রমজানকে দানের মাস হিসেবে গ্রহণ করা রাসুলের (সা.) নির্দেশনা। প্রিয় নবি (সা.) উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন রমজান মাসে দান ও বদান্যতার হাত সম্প্রসারিত করতে। হাদিসেও রমজান মাসকে হামদর্দি বা ‘সহানুভূতির মাস’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

পবিত্র রমজানে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে রোজাদারের অন্তরে দানশীলতা ও বদান্যতার গুণাবলি সৃষ্টি হয়। রমজানের অন্যতম আমল হলো দান-সদকা। তাই রোজাদার ব্যক্তিকে ইবাদতে মগ্ন থেকে সহানুভূতি, সদয় আচরণ, দানশীলতা ও বদান্যতা প্রদর্শনের মাধ্যমে ইহকালীন কল্যাণ ও পারলৌকিক মুক্তির পথ প্রশস্ত করার জন্য বিশেষভাবে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

দানশীলতা ও বদান্যতা একটি মহৎ গুণ। ইসলাম যেমন দানশীলতাকে উৎসাহিত করেছে, তেমনি পরনির্ভরশীল হওয়াকে নিরুৎসাহিত করেছে। রমজানে রোজাদারগণ রোজার পালনের মাধ্যমে দানশীল ও আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উদ্বুদ্ধ হয়।

পবিত্র কোরআন কারিমে মহান আল্লাহ তায়ালা সূরা বাকারার ২৬১ নম্বর আয়াতে বলেন-যারা স্বীয় ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাদের উপমা হলো-যেমন একটি শস্য বীজ, তা হতে উৎপন্ন হলো সাতটি শীষ, প্রত্যেক শীষে (উৎপন্ন হলো) শত শস্য এবং আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছে করেন বর্ধিত করে দেন, বস্তুত আল্লাহ হচ্ছেন বিপুল দাতা, মহাজ্ঞানী।’

আল্লাহ আরো বলেন-‘তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান করো তবে তা কতই না উত্তম, আর যদি গোপনে করো এবং অভাবীকে দাও, তা তোমাদের জন্য আরও উত্তম, এতে তিনি তোমাদের কিছু দূর করে দিবেন। আর তোমরা যে আমল করো আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্মক অবহিত।’ (সূরা বাকারা : ২৭১)

পবিত্র কোরআনের সূরা সূরা বাকারার ২৭৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ এরশাদ করেন-যারা নিজেদের ধন-সম্পদ রাতে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে তাদের প্রতিদান তাদের রবের নিকট রয়েছে। আর তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। (সূরা বাকারা : ২৭৪)।

হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন- ‘ওপরের হাত নিচের হাত থেকে উত্তম, আর যারা তোমার অধীন আছে, তাদের থেকেই দান করা শুরু করো। আর উত্তম দান হচ্ছে তা, যা প্রাচুর্য থেকে প্রদান করা হয়। আর যে ব্যক্তি রোজা থেকে পবিত্রতা চায়, আল্লাহ তাকে পবিত্র রাখেন। (তিরমিজি : ১৯৫২)

হজরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) মানুষের মধ্যে সর্বাধিক দানশীল ছিলেন। রমজানে তিনি আরো বেশি দানশীল হতেন, যখন হজরত জিবরাইল (আ.) এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হতো। রমজানে হজরত জিব্রাইল (আ.) রাসুল (সা.) এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। জিবরাইলের (আ.) সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে রাসুল (সা.) মুক্ত বায়ুর চেয়েও বেশি কল্যাণময় দানশীল হতেন। (বোখারি : ৩২২০)।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে- রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দানকারী আল্লাহর নিকটতম, বেহশতের নিকটতম এবং মানুষের নিকটতম হয়ে থাকে। আর দূরে থাকে জাহান্নাম থেকে। অপরদিকে কৃপণ ব্যক্তি দূরে অবস্থান করে আল্লাহ থেকে, বেহেশত থেকে এবং মানুষের কাছ থেকে। আর কাছাকাছি থাকে জাহান্নামের। অবশ্যই একজন জ্ঞানহীন দাতা একজন কৃপণ এবাদতকারীর তুলনায় আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। (বোখারি : ১৮১৩)

হজরত আনাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহকে (সা.) জিজ্ঞাসা করা হলো সবচেয়ে উত্তম সদকাহ কী? তিনি বললেন, রমজান মাসের সদকা। হজরত ইবেন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) পবিত্র রমজান মাসে বিপুল পরিমাণে দন করতেন। (তিরমিজি : ২৩৫১।

হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘নবী করিম (সা.)-এর চেয়ে বেশি দানশীল আমি আর কাউকে দেখিনি’। (মুসলিম : ১৮৪২)

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সমগ্র মানবকুলের মধ্যে সর্বাধিক উদার ও দানশীল ছিলেন। রমজান মাসে যখন হজরত জিবরাইল (আ.) নিয়মিত আসতে শুরু করতেন, তখন হজরত রাসূলুল্লাহর (সা.) দানশীলতা বহুগুণ বেড়ে যেতো। (বোখারি : ১৯৩৬ )।

আর যে ব্যক্তি অন্যের কাছ থেকে অমুখাপেক্ষী হতে চায়, আল্লাহ তাকে অমুখাপেক্ষী করেন’। (বোখারি : ২৬৩১)।

দানশীলতা সম্পর্কে হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত আছে, ‘আল্লাহ পাক বলেছেন, হে আদম সন্তান, তুমি দান করতে থাক, আমিও তোমাকে দান করবো’। (বোখারি : ১৬৩১)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, কেয়ামতের দিন সদকা মুমিনের জন্য ছায়া হিসেবে কাজ করবে। (আহমদ : ১৩৫১)। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, এক টুকরো খেজুর সদকা করে হলেও তোমাদের এবং জাহান্নামের মাঝে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করো। (তিরমিজি : ১৬২৫)।

রমজানুল মোবারক মুমিনের আমলের বসন্তকাল। এ মাসে বান্দা যত আমল করবে তার পরকালীন ভাণ্ডার ততই সমৃদ্ধ হবে। রমজানের অন্যতম আমল হলো দান-সদকা। গরিব-দুঃখী মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া।

পবিত্র রমজানের রোজা ফরজ করার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো গরিব-দুঃখী মানুষের কষ্ট অনুভব করা। যারা প্রাচুর্যের মাঝে জীবনযাপন করেন তারা সারাবছর ক্ষুধা ও পিপাসার যন্ত্রণা না বুঝলেও রমজানে কিছুটা বোঝেন। এই বোঝা তখনই সার্থক হবে যখন তারা গরিব, অসহায়দের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন। এ জন্য প্রত্যেক রোজাদারের উচিত নিজের সাধ্য অনুযাযী অনাথ, আর্ত, সহায়-সম্বলহীন ও দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য দানের হাত বাড়িয়ে দেওয়া।

মহান আল্লাহ তাআলা রমজানসহ সারাবছরই আমাদেরকে বেশি বেশি দান-সদকাহ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : সাংবাদিক, কলাম লেখক ও প্রধান শিক্ষক, শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুল, মৌলভীবাজার।

Share





Comments are Closed