Main Menu

নিউজিল্যান্ডে জরুরি অবস্থা জারি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে নিউজিল্যান্ডে জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেছে দেশটির সরকার। আজ বুধবার মধ্যরাত থেকে পুরোপুরি ‘লকডাউন’ শুরু হচ্ছে নিউজিল্যান্ডে। প্রতিরোধ ব্যবস্থা আরও জোরালো করার পদক্ষেপ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ড আর্ডার্ন দেশজুড়ে এক মাসের জন্য এই জাতীয় জরুরি অবস্থার ঘোষণা দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডান পার্লামেন্টকে বলেন, ‘আজ মধ্যরাত থেকে ভাইরাসকে তার গতিপথে সামনে আগানো বন্ধ করতে আমরা চার সপ্তাহের জন্য আইসোলেশনে চলে যাবো। পরিস্থিতি ভালো হওয়ার আগে কেউ কোনো ভুল করবেন না, তাহলে কিন্তু পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগামী সপ্তাহ এবং তারও পরে আক্রান্তের ঘটনা বাড়বে। তারপরই আমরা বুঝতে পারবো যে আমরা প্রকৃতপক্ষে কতটা সফল হলাম। কমিউনিটির মধ্যে দ্রুত কোভিড-১৯ ছড়াতে পারে এমন প্রমাণ পাওয়ার পরই আমরা লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নেই

নিউজিল্যান্ডে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্তের ঘটনা বেড়ে এখন ২০৫। এদিকে দেশটির সরকার সবার জন্য সেল্ফ আইসোলেশন বাধ্যতামূলক করেছে। স্থানীয় সময় আজ বুধবার মধ্যরাত থেকে এক মাসের জন্য বন্ধ হবে অপ্রয়োজনীয় সেবা, স্কুল এবং সব ধরনের অফিস-আদালত।

দেশটিতে বুধবার নতুন করে রেকর্ড সর্বোচ্চ ৫০ জন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আপনি কি করতে পারবেন এবং কি করতে পারবেন না এ নিয়ে যদি আপনাদের কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে সাধারণ একটা নীতি প্রয়োগ করুন; ভাবুন আপনি কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত।’

লকডাউন চলাকালীন সকল অপ্রয়োজনীয় সেবা, পানশাল, রেস্তোরাঁ, ক্যাফে, ব্যায়ামাগার, সুইমিং পুল, জাদুঘর, লাইব্রেরি, খেলার মাঠসহ যেসব স্থানে জনসমাগম ঘটে তা বন্ধ থাকবে। এছাড়া সুপার মার্কেট, চিকিৎসক/হাসপাতাল, ঔষুধের দোকান, সার্ভিস স্টেশনসহ প্রয়োজনীয় ব্যাংকিং সেবা চালু থাকবে।

উল্লেখ্য, চীন থেকে করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) ছড়িয়ে পড়েছে পুরো বিশ্বে। সেখানে ভাইরাসটি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসলেও অন্যান্য দেশে বাড়ছে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। এতে প্রতিদিনই প্রাণ হারাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ।

এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শুধু গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বজুড়ে প্রাণ হারিয়েছেন ২ হাজার ২৯৬ জন। এর মধ্যে ইতালিতেই ৭৪৩ জন। এ নিয়ে করোনা ভাইরাসে বিশ্বে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৮ হাজার ৯০৭ জনে। এর মধ্যে চীনে মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ২৮১। চীনের বাইরে মারা গেছে ১৫ হাজার ৬২৬ জন।

বিশ্বজুড়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৩ হাজার ৩৮৪ জনসহ আক্রান্তের সংখ্যা ৪ লাখ ২২ হাজার ৬২৯ জন। এর মধ্যে ১ লাখ ৮ হাজার ৮৭৯ জন সুস্থ হয়েছে বাড়ি ফিরেছেন। চীনে আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজার ২১৮ জন। চীনের বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ৪০ হাজার ২৪২ জন।

এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে বর্তমানে ২ লাখ ৯৪ হাজার ৮৫৫ জন আক্রান্ত রয়েছেন। তাদের মধ্যে ২ লাখ ৮১ হাজার ৭৬০ জনের অবস্থা সাধারণ। বাকি ১৩ হাজার ৯৫ জনের অবস্থা গুরুতর, যাদের অধিকাংশই আইসিউতে রয়েছেন।

গত বছরের ডিসেম্বরে চীনে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হয়। এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা চার লাখ ছাড়িয়েছে। প্রথম এক লাখ রোগী শনাক্ত হতে সময় লেগেছে ৬৭ দিন। পরবর্তী এক লাখ শনাক্ত হয় ১১ দিনে। চার দিনে তৃতীয় এক লাখ রোগী শনাক্ত হয়। আর ৪র্থ লাখ হতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩ দিন।

এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান ড. টেড্রস আধানম গেব্রেইয়সুস অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, সরকারগুলো এই বৈশ্বিক মহামারি ঠেকাতে যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তিনি সরকারগুলোকে নিজ নিজ দেশের করোনাভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা আরও বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় এখন লকডাউন যথেষ্ট নয়।

করোনা ভাইরাস পৃথিবীজুড়ে অদ্ভুত এক আঁধারের ছায়া নিয়ে এসেছে। চারিদিক নিরব, নিস্তব্ধ। কেউ কারও সাথে মিশছে না বা চাইছে না। যেন সবাই সবাইকে এড়িয়ে যেতে পারলেই বাঁচে। ‘বিশ্ব গ্রাম’ ধারণায় মানুষ অনেক বছর ধরেই একাকি জীবনের অভ্যস্ত হয়ে উঠছিল। কিন্তু এতটা একাকি হয়তো তারা কখনোই হয়নি। যে চাইলেও তারা একে অন্যের সাথে দেখা করতে পারবে না। সবাই যেন এক যুদ্ধ কেন্দ্রীক জরুরি অবস্থায় রয়েছে।

এক করোনা ভাইরাস পুরো বিশ্বকেই যেন স্তব্ধ করে দিয়েছে। অধিকাংশ দেশেই রাস্তা-ঘাট, অফিস-আদালত, শপিংমল-মার্কেট, রেস্তোরাঁ-বার ফাঁকা। যেন সব ভূতুড়ে নগরী, যুদ্ধকালীন জরুরি অবস্থা চলছে। সবার মধ্যে ভয়, আতঙ্ক আর আশঙ্কা।

উহান, চীনের শিল্পোন্নত এই শহর থেকেই প্রথম করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে ভাইরাসটি প্রায় নিয়ন্ত্রণে চলে আসলেও চীনের বাইরে ব্যাপক হারে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা।

চীনে উদ্ভূত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১৯৭টি দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।

এ রোগের কোনো উপসর্গ যেমন জ্বর, গলা ব্যথা, শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসকষ্টের সঙ্গে কাশি দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জনবহুল স্থানে চলাফেরার সময় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। বাড়িঘর পরিষ্কার রাখতে হবে। বাইরে থেকে ঘরে ফিরে এবং খাবার আগে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে। খাবার ভালোভাবে সিদ্ধ করে খেতে হবে।

Share





Related News

Comments are Closed