Main Menu

‘যেই আমার ছেলেকে মেরেছে তার বিচার চাই’

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : “আমার স্বামী এই ধরণের কাজ করবে আমি বুঝতেই পারিনি। আমি মেনে নিতে পারছি না যে আমার স্বামী এই ধরণের কাজ করবে। তার সাথে আমার ছেলে দুই বছর যাবৎ ঘুমাচ্ছে। আমি তো জানি না কে বা কারা আমার ছেলেকে মেরেছে। মানুষ যা বলছে এখন আমাকে তাই বিশ্বাস করতে হবে। তারপরও আমার মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। যে বা যারাই আমার ছেলেকে মেরেছে আমি তাদের বিচার চাই ফাঁসি চাই”।

বুধবার (১৬ অক্টোবর) বিকেলে দিরাইয়ের জকিনগর গ্রামস্থিত বাবার বাড়িতে ১৮ দিন বয়সী নবজাতক শিশুকন্যাকে কোলে নিয়ে এসব কথা বলেন খুন হওয়া তুহিনের অসহায় মা মনিরা বেগম।

তিনি বলেন, আমার তিন ছেলে ও এক মেয়ে। এর মধ্যে তুহিন দ্বিতীয়। ১৮ দিন আগে আমার এক কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। দুই বছর বয়স থেকে তুহিন তার বাবার সঙ্গে ঘুমায়। কোনো দিন তুহিনকে মারধর করেননি তার বাবা। রোববার রাতে খেয়ে সন্তানদের নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি আমরা।

রাত ১০টার দিকে ঘুম থেকে উঠে দেখি বাবার সঙ্গে ঘুমাচ্ছে তুহিন। ওটাই জীবিত তুহিনকে আমার শেষ দেখা। রাত আড়াইটার দিকে ঘরের দরজা খোলা দেখি। এরপর সবাই জেগে দেখি তুহিন নেই। তখন প্রতিবেশীদের ডাকা হয়। সকালে বাড়ির পাশে রাস্তায় একটি কদম গাছের ডালে তুহিনের ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পাই আমরা। এরপর তুহিনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সেই সঙ্গে তার বাবা ও চাচাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

মনিরা বেগম জকিনগর গ্রামের মৃত সুলতান মিয়ার কন্যা। একই ইউনিয়নের কেজাউড়া গ্রামের আব্দুল বাছিরের সাথে তার বিবাহ হয়। নিহত তুহিন মা মনিরা বেগমের প্রথম সন্তান।

গত ১৩ অক্টোবর রোববার দিবাগত রাত ৩টার দিকে উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের কেজাউড়া গ্রামে তুহিন হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। পরদিন সোমবার ভোরে গাছের সঙ্গে ঝুলানো অবস্থায় শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, তুহিনের পিতা আব্দুল বাছির স্থানীয় মধুপুর গ্রামের কৃষক মুজিবুর রহমান ও কেজাউড়া গ্রামের মনির হত্যা মামলার আসামী। পূর্ব বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে তুহিনের বাবা বাছির মিয়া ও তার চাচা জমশেদ আলী, মোছাব্বির আলী, নাছির উদ্দিন ও চাচাতো ভাই শাহরিয়ার হোসেন গলা, কান ও গোপনাঙ্গ কেটে তাকে হত্যা করে। হত্যার পর তুহিনের পেটে দুটি ছুরি ঢুকিয়ে পাশের একটি মসজিদের কাছে কদম গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখে তারা।

প্রথমে পরিবারের লোকজন কিছুই জানে না বলে পুলিশ ও এলাকাবাসীকে জানিয়েছিল। কিন্তু ঐ দিন দুপুরে কোনও প্রকার ক্লু না পেয়ে তুহিনের পরিবারের ৭ জনকে আটক করে দিরাই থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

১৪ অক্টোবর সোমবার রাতে এ ঘটনায় তুহিনের মা মনিরা বেগম অজ্ঞাত ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে দিরাই থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

গ্রেফতাররা হলেন- তুহিনের বাবা আব্দুল বাছির, তুহিনের চাচা আব্দুল মোছাব্বির, জমশেদ আলী, নাছির উদ্দিন এবং তুহিনের চাচাতো ভাই শাহরিয়ার।

মঙ্গলবার বিকেলে তুহিনের বাবা আব্দুল বাছির, চাচা আব্দুর মুছাব্বির এবং জমশেদ আলীকে তিনদিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। একই সময় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তুহিনের আরেক চাচা নাছির উদ্দিন ও চাচাতো ভাই শাহরিয়ার।

জবানবন্দিতে তারা জানিয়েছেন, ঘটনার দিন শিশু তুহিনকে ঘুমন্ত অবস্থায় তার বাবা আব্দুল বাছির ঘর থেকে বের করে বাইরে নিয়ে যান। এরপর ঘুমন্ত তুহিনকে গলা কেটে হত্যা করেন চাচা ও চাচাতো ভাই। পরে তুহিনের পেটে দুটি ছুরি বিদ্ধ করে গাছে ঝুলিয়ে দেন তারা। তুহিনকে হত্যায় বাবার সঙ্গে অংশ নেন চাচা নাছির উদ্দিন ও চাচাতো ভাই শাহরিয়ার।

এদিকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দুই ছুরির মধ্যে আনোয়ার মেম্বারের ঘণিষ্ঠ জন বলে পরিচিত ছালাতুল ও সোলেমানের নাম লিখা। কিন্তু তারা বলছে এ ব্যাপারে তারা কিছুই জানে না।

পুলিশ বলছে, তবে কিভাবে তুহিনকে হত্যা করা হয়েছে ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর জানা যাবে। তুহিনের পেটে কে বা কারা ছুড়ি ঢুকিয়েছে ফিঙ্গার প্রিন্টের প্রতিবেদন পাওয়ার পর সব কিছু নিশ্চিত হওয়া যাবে।

দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম নজরুল ইসলাম বলেন, এই ৫ জনের বাইরে আর কাউকে এখন পুলিশ সন্দেহ করছে না। তবে তদন্তে আর কারো নাম আসলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Share





Related News

Comments are Closed