Main Menu

আবারো অপারেশন থিয়েটারে যেতে হবে খাদিজাকে

বৈশাখী নিউজ ডেস্ক: আবারো অপারেশন টেবিলে যেতে হবে সিলেটের আলোচিত কলেজছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসকে। বাম হাতের তিনটি আঙ্গুলে এখনো শক্তি আসেনি। হাঁটতে গেলে পা কাঁপে। কিছু সময় হাঁটার পর পা দুটির শক্তি হারিয়ে ফেলে। চাপাতির আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত মাথাও স্বাভাবিক হয়নি। একা থাকলেই আনমনে বসে থাকে। বিড় বিড় করে কথা বলতে থাকে। সিআরপির ডাক্তার বলেছে বাম হাতের দুই আঙ্গুলে অপারেশন করতে হবে। অপারেশনের পর খাদিজার হাত স্বাভাবিক হতে পারে। খাদিজার পিতা সৌদি প্রবাসী মাসুক মিয়ার আগ্রহ মেয়েকে পড়ালেখা করাবেন। খাদিজা নিজেও পড়ালেখা করতে আগ্রহী। কিন্তু বদলে গেছে খাদিজার জীবনের গতিধারা। ছাত্রলীগ নেতা বদরুলের চাপাতির আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হওয়া খাদিজা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে কী না- এ নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
সিলেট সরকারি কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিস। প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে গত বছরের ৩রা অক্টোবর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলম সিলেট এমসি কলেজের ক্যাম্পাসে খাদিজার উপর বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছিল। আলোচিত এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ধিক্কার শুরু হয়। প্রতিবাদে সরব হয়ে উঠে সিলেট। তবে হামলার পর পালাতে পারেনি বদরুল। স্থানীয় কয়েক যুবক এমসি কলেজের ক্যাম্পাসে বদরুলকে আটক করে পুলিশে দেয়। আর এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর বদরুলকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট প্রদান করে সিলেটের শাহপরান থানা পুলিশ। পরবর্তীতে চলতি বছরের ৮ই মার্চ বিশ্ব নারী দিবসের দিন আদালত আলোচিত এ ঘটনার জন্য বদরুলকে যাবজ্জীবন সাজা প্রদান করেছে। এখন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে কারান্তরীণ বদরুল।
ওদিকে প্রায় সাড়ে ৫ মাসের চিকিৎসা শেষে সিলেট শহরতলীর আউশা গ্রামের নিজ বাড়িতে ফিরেছে খাদিজা আক্তার নার্গিস। বাড়িতে খাদিজা আগের মতো স্বাভাবিক নয়। পরিবারের লোকজন জানান ছটফটে মেয়ে ছিল খাদিজা। ভাই-বোনসহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে সে সব সময় হাসিখুশি থাকত। চাচাতো বোন নাদিয়াকে নিয়ে খেলায় মেতে থাকত সবসময়। খাদিজা একাই মাতিয়ে রাখত তাদের বাড়ি। কিন্তু সেই খাদিজা এখন বদলে গেছে। বদরুলের চাপাতির আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হওয়ার পর মাসখানেক সে আইসিইউতে ছিল। এরপর ধীরে ধীরে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়। পরবর্তীতে ঢাকার সাভারে সিআরপিতে থেরাপি দিয়ে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে এসেছে। বাড়িতে থাকলেও তাকে প্রতিনিয়ত ডাক্তারের পরামর্শ মতো ওষুধ সেবন করতে হচ্ছে। ডাক্তারের বেঁধে দেয়া রুটিন মতো চলতে হচ্ছে। খাদিজা বাড়ির বাইরে বের হতে পারছে না। এখনো হাঁটতে পারে না স্বাভাবিকভাবে। প্রতিদিন বিকেলে বাড়ির উঠানে তাকে হাঁটানো হয়। বাম পায়ে ভালো করে জোর পাচ্ছে না। হাঁটতে গেলে বাম পা কাঁপে। বাম হাতেও কাঁপুনি দেখা দেয়। তার দেহের বাম দিক চাপাতির আঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষত-বিক্ষত হয়। মাথার বামপাশের আঘাতও গুরুতর ছিল। এ কারণে শরীরের বাম পাশটা এখনো সাপোর্ট দিচ্ছে না খাদিজাকে। এক নাগারে ৩ থেকে ৪ মিনিট পর্যন্ত হাঁটতে পারে খাদিজা। এরপর সে শক্তি হারিয়ে ফেলে। এ কারণে যখন খাদিজা উঠানে হাঁটতে বের হয় তখন পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে থাকেন। খাদিজার চাচা আব্দুল কুদ্দুস বলেন খাদিজার পিতার ইচ্ছে সে পড়ালেখা করবে। কিন্তু পিতার ইচ্ছা কতটুকু পূরণ হবে সেটি সময়ই বলে দেবে। আপাতত ডাক্তার তাকে দুই বছর চিকিৎসার মধ্যে রাখার কথা বলেছেন।
এদিকে ঘটনার পর খাদিজার পিতা মাসুক মিয়া সৌদি আরব থেকে দেশে ছুটে এসেছিলেন। মামলার রায়ের সময় তিনি সৌদি আরবে চলে যান। বড় ভাই শাহীন আহমদ চীনে মেডিকেল সায়েন্সে পড়ালেখা করছে। সেও চলে গেছে চীনে। ডাক্তারের পরামর্শ মতো খাদিজাকে মোবাইল ফোনে কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না। মাঝে মধ্যে হোয়াটসআপ কিংবা ইমোতে বিদেশে থাকা পিতা ও ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে খাদিজা। তথ্য সূত্র: দৈনিক মানবজমিন।

Share





Related News

Comments are Closed