সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

বৈশাখী নিউজ ডেস্ক: সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় সাবেক উপাচার্য, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
সিলেট মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক রোকনুজ্জামান বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে এ আদেশ দেন।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়টি রাতে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন আদালতের সেরেস্তাদার কৃপাসিন্ধু দাস।
আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, প্রার্থীদের বয়স ও যোগ্যতার ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়মের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন পদে নিয়োগ ও পদোন্নতি দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় ৫৮ জনের বিরুদ্ধে গত রোববার (২০ এপ্রিল) আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক।
দুদকের দায়ের করা মামলার ভিত্তিতে আদালতে জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, যোগ্যতা ও বয়স না থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ দেওয়া, প্রয়োজনীয় অনুমোদন না নিয়ে পদ সৃজন ও নিয়োগ এবং একই পদে একাধিকবার অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ নবায়নসহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে লোক নিয়োগ করা হয়েছে।
মামলার নথি বলছে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্তে ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য মোর্শেদ আহমেদ চৌধুরী এবং ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. নঈমুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির প্রমাণ মেলে। তদন্ত শেষে দুদক ২০২৪ সালের ১ এপ্রিল সিলেটের সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে এই দুইজনসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে।
অভিযুক্তদের তালিকায় আরও আছেন—ফাহিমা খানম চৌধুরী, অঞ্জন দেবনাথ, মাইদুল ইসলাম চৌধুরী, মো. গোলাম সরোয়ার, মো. বিলাল আহমদ চৌধুরী, শমসের রাসেল, গাজী মো. ফারাজ, আবদুল মুনিম, রিংকু দাস, আতিক শাহরিয়ার ধ্রুব, খালেদা চৌধুরী, আশরাফুল ইসলাম, জান্নাতুল ফেরদৌসী, চৌধুরী রোম্মান আহমদ, সাজু ইবনে হান্নান খান, বেলাল উদ্দিন, লোকমান আহমেদ, চৌধুরী জুলফিকার খালেদ, মো. মোশারফ হোসেন, হালিমা বেগম, সুরঞ্জিত চন্দ্র তালুকদার।
এ ছাড়া মামলায় মো. তৌফিক মিয়া, মো. রহমত আলী, এনি সরকার, দেবশ্রী রানী দাস, বিপুল কান্তি দাস, মো. আবদুল আজিজ, মো. মুহিতুর রহমান, আলী ফজল মো. কাওছার, নাহিমা আক্তার, মো. আবদুল মজিদ, হুমায়ুন কবির জুয়েল, নাজমুস শামস তুষার, তানভীর আহমদ, ইয়ামিন হোসেন, রাধা রানী রায় শর্মী, তারেক মো. রেদোয়ান, অনিন্দিতা বিশ্বাস, রাজীব বৈদ্য, মো. আবদুস সবুর, মবরুর মিয়া, তামান্না ফিরোজী, দিব্য জ্যোতি, আলেয়া নেছা, মো. মুমিনুর রহমান, রবিউল আলম, মো. কয়েছ আহমদ, লুৎফা বেগম, রুহুল আমিন, জাহিদ হোসেন, রোমানা সুলতানা, আনিছুর রহমান, রাফি ইব্রাহিম, মো. আবদুস সাত্তার, মোছা. সুলতানা বেগম ও মো. রাশেদুল ইসলামকেও আসামি করা হয়েছে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, উপাচার্য ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করে সিন্ডিকেট ও ইউজিসির অনুমোদন ছাড়া বিধিবহির্ভূতভাবে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেন। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ২২০ জনকে সম্পূর্ণ অস্থায়ীভাবে (অ্যাডহক) ছয় মাসের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে মেয়াদ অনূর্ধ্ব ছয় মাস পর্যন্ত বাড়ানো হয়। নির্ধারিত সময় পূর্ণ হওয়ার পর চাকরি নিয়মিত না করে আবার অ্যাডহকে দুই থেকে পাঁচবার পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১৮ এর ১২-এর ১০ উপধারা অনুযায়ী উপাচার্য কোনো শূন্য পদে অ্যাডহক নিয়োগের ক্ষেত্রে অস্থায়ীভাবে অনধিক ছয় মাসের জন্য নিয়োগ দিতে পারবেন এবং প্রয়োজনে মেয়াদ অনূর্ধ্ব ছয় মাস পর্যন্ত বাড়াতে পারবেন। পরবর্তী সময়ে হয় চাকরি নিয়মিত করতে হবে অথবা অব্যাহতি দিতে হবে। কোনোভাবেই আবার অ্যাডহকে নিয়োগ বা মেয়াদ বাড়াতে পারবেন না। তবে তৎকালীন উপাচার্য আইন লঙ্ঘন করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অ্যাডহক নিয়োগ দেন ও অবৈধভাবে মেয়াদ বাড়ান। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার তাঁকে ওই কাজে সহযোগিতা করেন।
ইউজিসির অনুমোদন ছাড়া নিয়োগের পাশাাপাশি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন বাজেট থেকে বেআইনিভাবে বেতন–ভাতা দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে কর্মরত আছেন ২৩৯ জন। এর মধ্যে ইউজিসি অনুমোদিত পদ আছে ১১২টি। এসব অনুমোদিত পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৯৮ জনকে। তাঁদের বেতন–ভাতা ইউজিসি থেকে ব্যাংকের মাধ্যমে দেওয়া হয়। অন্যদিকে অতিরিক্ত ১৪১টি পদে নিয়োগ দেওয়া হলেও ইউজিসির অনুমোদন নেওয়া হয়নি এবং তাঁদের বেতন–ভাতা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুদান থেকে প্রাপ্ত। এসব অতিরিক্ত নিয়োগের ব্যাপারে ইউজিসি কিংবা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেওয়া হয়নি।
২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া নিয়োগে ৪৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বয়স-সংক্রান্ত যোগ্যতা না থাকলেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগপত্রে বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, বাস্তব কাজের অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও ১৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়োগদান, শিক্ষাগত যোগ্যতায় তৃতীয় শ্রেণি থাকা সত্ত্বেও চারজনকে নিয়োগ এবং অ্যাডহকে নিয়োগ দেওয়া সত্ত্বেও তিনজন কর্মকর্তাকে দশম গ্রেড থেকে নবম গ্রেডে এবং সাতজন কর্মকর্তাকে ১৪তম গ্রেড থেকে দশম গ্রেডে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া দুজন কর্মকর্তার সংশ্লিষ্ট পদে চাহিদা মোতাবেক ডিগ্রি না থাকলেও অবৈধভাবে তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ১২(১০) উপধারা অনুযায়ী উপাচার্য ছয় মাসের জন্য অ্যাডহক নিয়োগ দিতে পারেন এবং প্রয়োজনে আরও ছয় মাস পর্যন্ত বাড়াতে পারেন। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, আইন লঙ্ঘন করে বারবার একই ব্যক্তিদের নিয়োগ নবায়ন করা হয়েছে এবং এ কাজে সহায়তা করেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার।
এছাড়া ইউজিসির অনুমোদন না নিয়েই অতিরিক্ত পদ সৃষ্টি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন বাজেট থেকে বেতন-ভাতা দেওয়া হয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৩৯ জন কর্মরত থাকলেও ইউজিসি অনুমোদন দিয়েছে মাত্র ১১২টি পদে। এর মধ্যে ৯৮ জন নিয়োগপ্রাপ্ত। বাকি ১৪১ জনকে ইউজিসি কিংবা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো অনুমোদন ছাড়াই নিয়োগ দিয়ে তাদের বেতন দেওয়া হচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অর্থায়ন থেকে।
২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেওয়া নিয়োগ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৪৬ জনের বয়স সংক্রান্ত যোগ্যতা ছিল না। বাস্তব অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও ১৮ জনকে চাকরি দেওয়া হয়েছে। এমনকি তৃতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ চারজন, প্রয়োজনীয় ডিগ্রি না থাকা দুজনও নিয়োগ পেয়েছেন। এদের মধ্যে কয়েকজনকে নিয়োগের পাশাপাশি অবৈধভাবে পদোন্নতিও দেওয়া হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এ অভিযোগ আমলে নিয়ে ইউজিসি ২০২৩ সালে তদন্ত করে। তদন্তে তৎকালীন উপাচার্য মোর্শেদ আহমেদ চৌধুরী ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. নঈমুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির সত্যতা পাওয়া যায়। পরে দুদকের সিলেটের সমন্বিত জেলা কার্যালয় নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে তৎকালীন উপাচার্য, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারসহ ৫৮ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের ১ এপ্রিল মামলা করে।
Related News

হবিগঞ্জে মামলা থেকে ২২ বছর পর খালাস পেলেন শিবিরের সাবেক সভাপতি
বৈশাখী নিউজ ডেস্ক: দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি রফিকুল হাসান চৌধুরী তুহিন কর্তৃক দায়েরকৃতRead More

১১৮ বারের মতো পেছালো সাগর-রুনি হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন
বৈশাখী নিউজ ডেস্ক: আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদনRead More
Comments are Closed