Main Menu

সিলেটে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ চলছে, রাস্তায় গাড়ি চলাচল কম

বৈশাখী নিউজ ডেস্ক: কোটা ব্যবস্থা নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আজ বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সারা দেশে আহুত ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির দিনে সিলেটে সকাল থেকে রাস্তায় যানবাহন কম চলাচল করতে দেখা গেছে। বেশির ভাগ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।

সকাল সোয়া এগারোটার দিকে শাবি শিক্ষার্থীরা সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করে কোটাবিরোধী বিভিন্ন স্লোগানের পাশাপাশি পুলিশের বিরুেদ্ধে নানা স্লোগান দিচ্ছে।

এর আগে, সকাল নয়টার দিকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে তাদের বের করে দেন পুলিশ সদস্যরা। এরপর সকাল এগারোটার দিকে ফের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে তাদের সাথে পুলিশের হালকা ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে।

এরপর সকাল সোয়া এগারোটার দিকে শিক্ষার্থীরা সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কে অবস্থান নেয়।

অবস্থানকালে এক প্লাটুন বিজিবি আসলে তাদের গাড়ির সামনে শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে শুরু। পরে বিজিবি কিছুটা দূরে গিয়ে অবস্থান নেয়।

এই আন্দোলনের শাবি শাখার সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব বলেন, পুলিশ সকাল থেকে হলে হলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। তবে সব ভয় ও চাপ উপেক্ষা করে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

এদিকে, কমপ্লিট শাটডাউনের কারণে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সিলেটে যান চলাচল একেবারেই কম।

তবে পুলিশ বলছে- সিলেটে যান ও মানুষ চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে এবং এছাড়া মানুষের জান-মালের নিরাপত্তার জন্য সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ।

অপরদিকে, পরিবহন সংগঠন জানিয়েছে- অনেক চালক ভয়ে বাস বা অন্যান্য গাড়ি নিয়ে সড়কে বের হননি। তবে দূর পাল্লার ও আঞ্চলিক সড়কের কিছু বাস চলাচল করছে।

এদিকে, শিক্ষার্থী আন্দোলনের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির দিনের (১৮ জুলাই) সকালে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রয়েছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষ টিম ক্রাইসিস রেসপন্স টিম (সিআরটি)।

বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন রাস্তা ও মোড়ে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। এসময় শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিচ্ছে তারা।

দুই সপ্তাহ ধরে সিলেটসহ সারা দেশে চলছে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থী আন্দোলন। প্রথমে আন্দোলন অহিংস থাকলেও রবিবার (১৪ জুলাই) রাত থেকে হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে উঠে সিলেট।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) ৬ শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। বুধবার (১৭) জুলাই দিনভর সিলেট ছিল উত্তাল। এছাড়া ঢাকাসহ প্রতিটি বিভাগীয় শহরেও পুলিশের সঙ্গে সাধারণ ছাত্রদের সংঘর্ষ হয়। এ অবস্থায় আজ বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

বুধবার রাত পৌনে ৮টায় শিক্ষার্থী আন্দোলনের ঢাকার সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ তার ফেসবুক পোস্টে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচি অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে হাসপাতাল ও জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব বন্ধ থাকবে। এছাড়া রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া কোনো যানবাহন চলবে না।

বিবৃতিতে বলা হয়, “শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ, বিজিবি, র‍্যাব, সোয়াটের ন্যাক্কারজনক হামলা, খুনের প্রতিবাদ, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত ও এক দফা দাবিতে বৃহস্পতিবার সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করছি।”

দেশের সব প্রতিষ্ঠানকে কর্মসূচি সফল করতে আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, “শুধুমাত্র হাসপাতাল ও জরুরি সেবা ব্যতীত কোনো প্রতিষ্ঠানের দরজা খুলবে না, অ্যাম্বুলেন্স ব্যতীত সড়কে কোনো গাড়ি চলবে না। সারা দেশের প্রতিটি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসা শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানাচ্ছি বৃহস্পতিবারের কর্মসূচি সফল করুন।”

এ বিষয়ে সিলেটের আন্দোলনের শাবিপ্রবির সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব বুধবার রাতে সিলেটভিউ-কে বলেন- বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় অবস্থান নিবো। জরুরি সেবা ছাড়া আর সব বন্ধ থাকবে। আশা করছি- সিলেটের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষও আমাদের সঙ্গে থাকবেন। এটা অধিকার আদায়ের আন্দোলন, সবাই অংশগ্রহণ করা প্রয়োজন।

তিনি জানান- কর্মসূচি বাস্তবায়নে শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা শুরুতে মেয়েদের হল গুলো পুরোপুরি নিরাপদ করতে সকাল ১০টায় ক্যাম্পাসের গোল চত্বরে একত্রিত হয়ে মেয়েদের হল ঘুরে এসে রেজিস্ট্রার বিল্ডিং এবং কন্ট্রোলার ভবনে তালা মেরে বেলা ১১টায় ভার্সিটি গেইটে অবস্থান নিবে এবং দিনভর মাঠে থাকবে।

কিন্তু এসব কর্মসূচি শুরু করার আগেই সকাল ৮টা থেকে শাবি ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ।

আসাদুল্লাহ আল গালিব বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টা দিকে বলেন- পুলিশের ভয়ে কিছু সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী হল ছেড়েছে। তবে বেশিরভাগই হলে রয়ে গেছেন। পুলিশ চাপ দিচ্ছে হল ছাড়তে। কিন্তু যাই ঘটে যাক আমরা হল ছাড়বো না। আর যারা বের হয়েছে তারাও পুরোপুরি চলে যায়নি, আশপাশেই আছে। কর্মসূচি শুরু হলে তারা এসে আমাদের সঙ্গে যোগদান করবে।

এর আগে সারা দেশে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে মঙ্গলবার রাতে দেশের সব পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত মেডিকেল, টেক্সটাইল, ইঞ্জিনিয়ারিংসহ সব কলেজ বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এছাড়া বুধবার দুপুরে- বিকাল ৩টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় শাবি প্রশাসন। কিন্তু এসব নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করে আন্দোরনকারী শিক্ষার্থীরা হলে থেকে যায় এবং বুধবার দিনভর নানা কর্মসূচি পালন করে।

সিলেট জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ময়নুল ইসলাম সিলেটভিউ-কে বলেন- আমরা চালকদের চালকদের গাড়ি না চালাতে কোনো নির্দেশনা দেইনি। তবে ভয়ে অনেক চালক গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হননি। তাই সিলেটে গণপরিবহন চলাচল কিছুটা কম। তবে দূরপাল্লার ও আঞ্চলিক সড়কে কিছু যানবাহন চলাচল করছে।

সড়কে পুুলিশের নিরাপত্তাব্যবস্থা কম দেখতে পাচ্ছেন বলে জানান ময়নুল ইসলাম।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন- সব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঠেকাতে শাবিসহ সিলেটের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে রাখা হয়েছে। এছাড়া মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও মোড়ে রয়েছে পুলিশ। সাধারণ মানুষের জান-মালের নিরাপত্তায় পুলিশ তৎপর রয়েছে।

Share





Related News

Comments are Closed