ঘুরে এলাম সেন্ট মার্টিনের সিনবাদ
মোঃ জাহেদী ক্যারল: ঘুরে এলাম সিনবাদ এক্সপেরিয়েন্স রিসোর্ট অ্যান্ড বিয়ন্ড। সেন্টমার্টিনে দেশের সর্ব দক্ষিণের সর্বশেষ রিসোর্ট এর নাম সিনবাদ। তিন দিন দুই রাতের অসাধারণ অনুভূতি নিয়ে ফিরে যাচ্ছি স্বপ্নের দ্বীপ সেন্ট মার্টিন ছেড়ে। কর্ণফুলী এক্সপ্রেসে কক্সবাজার শহরের বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে যাবে আমাদের বিশাল জাহাজটি। ছয় ঘন্টার যাত্রা, তাই জাহাজে বসে বসে আমার সিনবাদের অনুভূতি ব্যক্ত করছি।
বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন-বান্ধব সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দক্ষিণের সর্বশেষ দুটি রিসোর্ট এর মধ্যে একটি ব্যতিক্রমী রিসোর্ট হলো সিনবাদ এক্সপেরিয়েন্স রিসোর্ট অ্যান্ড বিয়ন্ড। এটি এইচআর গ্রুপের একটি পর্যটন শিল্প, বিউটি কুইন সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, কক্সবাজার, বাংলাদেশের এক বিশেষ যাত্রা। এটি ভ্রমণকারীদের জন্য নিখুঁত গন্তব্য যারা নিরিবিলি শান্তিময় অবকাশ জীবন, আনন্দ ফুর্তি এবং একটি ভিন্ন ধরনের শিথিলতা চায়। ফ্যামিলি, কাপল, ফ্রেন্ডস হোক অথবা গ্রুপ সকলের জন্য আছে দারুন সব কক্ষবিশেষ ভিলা। সিনবাদের প্রতিটি ভিলা এবং কর্টেজ সেন্ট মার্টিনের প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্যের সাথে আপস না করে ম্যানগ্রোভ গাছের মধ্যে খোলা জায়গায় কাঠ এবং বাঁশ দিয়ে শৈল্পিকভাবে তৈরি করা হয়েছে। সিনবাদ পর্যটকদের জন্য আরামদায়ক আধুনিক কক্ষ এবং রেস্টুরেন্ট পরিষেবা প্রদান করে। এখানে পরিবার পরিজন নিয়ে শান্তিতে অবকাশ জীবন কাটানোর জন্য চমৎকার একটি পরিবেশ গড়ে উঠেছে। ছাত্রদের জন্য বিশেষ অফার দেয়া হয়। সিনবাদের আশেপাশের খাবারের ভাল কোন ব্যবস্থা না থাকায় রিসোর্টের ভিতরেই খাবার খেতে হয়। সালমন রেস্টুরেন্ট নামে তাদের নিজস্ব মালিকানায় একটি রেস্টুরেন্ট আছে, আগে থেকে ম্যানু দেখে খাবারের অর্ডার দিতে হয়। খুবই মজাদার ও সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করা হয়।
অতিথিদের কমফর্টের জন্য আমাদের উপস্থিতিতেই সবগুলো ভিলায় আজ থেকে গরম পানির ব্যবস্থা করা হয়, যা এর আগে ছিল না। সিনবাদ রিসোর্টের স্টাফরা খুব আন্তরিক সেবাদানের জন্য।
সত্যিই অপূর্ব সুন্দর ও মানগত একটি রিসোর্ট, এরকম বিশাল জায়গা জুড়ে এবং খোলামেলা শৈল্পিকভাবে তৈরি আর কোন রিসোর্ট সেন্ট মার্টিনে আমার মন জুড়ায়নি। দক্ষিণ পাশে একটি সিক্রেট বিচ আছে, যেখান থেকে খুব সহজে সূর্যাস্ত দেখা যায়। এই সূর্যাস্ত দেখার জন্য অন্যান্য এলাকা থেকে প্রচুর ভ্রমণকারীদের ভীড় জমে সন্ধ্যাবেলায়। সিনবাদের পাশেই দেশের অন্যতম দ্বীপ ছেঁড়া দ্বীপ অবস্থিত। সেন্টমার্টিন ছেঁড়া দ্বীপ বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের ভূখন্ড। প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে ছেঁড়া দ্বীপ অবস্থিত। স্থানীয় মানুষের কাছে দ্বীপটি ‘ছেঁড়াদিয়া’ বা ‘সিরাদিয়া’ নামে পরিচিত। ছেঁড়া দ্বীপ সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পাথর, প্রবাল এবং নারিকেল গাছে পরিপূর্ণ। জোয়ারের সময় ছেঁড়া দ্বীপের এক-তৃতীয়াংশ সাগরের পানির নিচে তলিয়ে যায়। সাগরের নীল ঢেউ যখন পাথরের গায়ে আঁচড়ে পরে তখন এক মোহনীয় দৃশ্যের অবতারণা হয়। সুনীল সাগর, আকাশ আর সূর্যাস্তের মিতালী দেখতে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক ছেঁড়া দ্বীপে বেড়াতে আসে। এছাড়া ছেঁড়া দ্বীপে চাঁদের আলোয় যাদুকরী মুগ্ধতার সৃষ্টি হয়। তাই অনেকে পূর্নিমার রাতে ক্যাম্পিং করতে আসেন এই অপূর্ব ছেঁড়া দ্বীপে।
সিনবাদের পরিচালক জনাব হাবিবুর রহমান সাহেবের সাথে কাকতালীয়ভাবে আমার সাক্ষাৎ হওয়ায় অনেক আকর্ষণীয় অনুসন্ধান আমার জানা হলো, সেই সুযোগে উনার একটি ইন্টারভিউ নেয়ার ব্যবস্থা করি যা পরবর্তীতে খইঃা ২৪ এ প্রচার করা হবে। আমার বিশ্বাস এই ইন্টারভিউ মাধ্যমে দেশ বিদেশের পর্যটকদের অনেক উপকারে আসবে। পর্যটন শিল্পে বাংলাদেশ সরকার খুবই আন্তরিক। সেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক বড় আকারে অর্থ ইনভেস্ট করছেন এবং বিশাল পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। বিশেষ করে সেন্ট মার্টিনকে নিয়ে অনেক বড় আকারে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, যা খুব শিগগিরই বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। সেন্ট মার্টিনের সাথে দেশের অন্যান্য এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই খারাপ। পর্যটকদের যাতায়াতের মারাত্মক কষ্ট হয়।
এছাড়া একমাত্র ঘাট, সেখানে টেকনাফ, কক্সবাজার সবজায়গা থেকে একসাথে কয়েকটি জাহাজ এসে থামে। সেখানে কয়েকটি জাহাজ দিঙিয়ে মানুষের উঠানামায় ভোগান্তির সীমা থাকে না। এবারের দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা একান্ত জরুরি। বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের বিশাল সম্ভাবনা আছে, একসময় মালদ্বীপের মাহফুজি আইল্যান্ডের মতো লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠবে।
বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণ অংশে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলা থেকে ৯ কিমি দক্ষিণে গড়ে উঠা একটি ছোট দ্বীপ। মায়ানমারের উত্তর-পশ্চিম উপক‚ল থেকে ৮ কিমি পশ্চিমে নাফ নদীর মুখে দ্বীপটি অবস্থিত বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন পর্যটকদের জন্য এক স্বর্গরাজ্য এবং বাংলাদেশ জন্য এক খন্ড মালদ্বীপ। অনেকটা মালদ্বীপের মাহফুজি আইল্যান্ডে মতই, যদিও আরো অনেক ইমপ্রুভ করার প্রয়োজন আছে। কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত সেন্ট মার্টিন তার অবিরাম নীল আকাশ, স্বচ্ছ নীল জল এবং দৃষ্টিনন্দন নারকেল গাছের সারি সাজিয়ে অপেক্ষায় পর্যটকদের জন্য।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন-বান্ধব এই দ্বীপ প্রতি নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে সেন্টমার্টিন যেতে প্রথমে পৌঁছাতে হবে সর্বদক্ষিণের উপজেলা টেকনাফে। এরপর টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার জন্য রয়েছে প্রতিদিন সকালবেলা ছেড়ে যাওয়া জাহাজ।
প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনকে বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন স্থান বলা যায়। মাত্র ৮ বর্গকিলোমিটারের এই দ্বীপের আরেক নাম ‘নারিকেল জিঞ্জিরা।’ এখানে বছরে তিন লাখেরও বেশি মানুষ ভ্রমণ করে।
তাই আপনার ভ্রমণ সহজ করতে আমরা সেন্টমার্টিন দ্বীপের দর্শনীয় স্থান, ভ্রমণের উপযুক্ত সময়, সহজে যাবার উপায় এবং সেন্ট মার্টিনের হোটেল ও রিসোর্ট ভাড়া বিস্তারিত জানাবো। এগুলা জানার পর শেয়ারট্রিপের মাধ্যমে আপনি নিজেই জ্যোৎস্নালয় বিচ রিসোর্ট-এর মত মনোরম থাকার জায়গা খুঁজে পাবেন।
Related News
পর্যটকদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ শহরের তালিকায় ঢাকা ৬ষ্ঠ
বৈশাখী নিউজ ডেস্ক: পর্যটকদের জন্য বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ শহরের তালিকায় ৬ষ্ঠ স্থানে রয়েছে ঢাকা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালীRead More
৭দিন বন্ধ থাকার পর খুলে দেয়া হলো সিলেটের সব পর্যটন কেন্দ্র
বৈশাখী নিনউজ ডেস্ক: সাতদিন পর খুলে দেয়া হলো সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলো। শুক্রবার (৭ জুন) থেকেRead More
Comments are Closed