তিনি এলেন, বদলে গেল পৃথিবী
মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান: রাসূলের মাক্কী জীবন; নবী জীবনকে আমরা প্রধান দু’টি ভাগে ভাগ করে নেব- মাক্কী জীবন ও মাদানী জীবন। মক্কায় তাঁর জন্ম, বৃদ্ধি ও নবুঅত লাভ এবং মদীনায় তাঁর হিজরত, ইসলামের বাস্তবায়ন ও ওফাত লাভ। অতঃপর প্রথমেই তাঁর বংশ ইবরাহীম (আঃ)-এর দুই পুত্র ছিলেন ইসমাঈল ও ইসহাক্ব। ইসমাঈলের মা ছিলেন বিবি হাজেরা এবং ইসহাকের মা ছিলেন বিবি সারা। দুই ছেলেই ‘নবী’ হয়েছিলেন। ছোট ছেলে ইসহাক্বের পুত্র ইয়াক‚ব ও ‘নবী’ ছিলেন এবং তার অপর নাম ছিল ‘ইস্রাঈল’ অর্থ ‘আল্লাহর দাস’। তাঁর বারোটি পুত্রের বংশধরগণের মধ্যে যুগ যুগ ধরে হাযার হাযার নবীর জন্ম হয়। ইউসুফ, মূসা, হারূণ, দাঊদ, সুলায়মান ও ঈসা (আলাইহিমুস সালাম) ছিলেন এই বংশের সেরা নবী ও রাসূল। বলা চলে যে, আদম (আলাইহিস সালাম) হ’তে ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) পর্যন্ত হযরত নূহ ও ইদরীস (আঃ) সহ ৮/৯ জন নবী ছাড়া এক লক্ষ চবিবশ হাযার পয়গম্বরের প্রায় সকলেই ছিলেন ইবরাহীম (আঃ)-এর কনিষ্ঠ পুত্র ইসহাক (আঃ)-এর বংশধর অর্থাৎ বনু ইস্রাঈল। যাদের সর্বশেষ নবী ছিলেন হযরত ঈসা (আঃ)। অন্যদিকে হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর জ্যেষ্ঠ পুত্র ইসমাঈল (আঃ)-এর বংশে একজন মাত্র নবীর জন্ম হয় এবং তিনিই হ’লেন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)। ফলে আদম (আঃ) যেমন ছিলেন মানবজাতির আদি পিতা, নূহ (আঃ) ছিলেন মানব জাতির দ্বিতীয় পিতা, তেমনি ইবরাহীম (আঃ) ছিলেন তাঁর পরবর্তী সকল নবী ও তাঁদের অনুসারী উম্মতে মুসলিমাহর পিতা (হজ্জ ২২/৭৮)। ইবরাহীম (আঃ) আল্লাহর হুকুমে তাঁর দ্বিতীয়া স্ত্রী হাজেরা ও তার পুত্র ইসমাঈলকে মক্কায় রেখে আসেন ও মাঝে-মধ্যে গিয়ে তাদের দেখাশুনা করতেন। তাঁরা সেখানেই আমৃত্যু বসবাস করেন। অন্যদিকে তাঁর প্রথমা স্ত্রী সারা ও তার পুত্র ইসহাক্ব ও অন্যদের নিয়ে তিনি কেন‘আনে (ফিলিস্তীনে) বসবাস করতেন এবং এখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এভাবে ইবরাহীম (আঃ)-এর দুই পুত্রের মাধ্যমে মক্কা ও ফিলিস্তীন দুই এলাকায় তাওহীদের প্রচার ও প্রসার ঘটে।
কুরআনে বর্ণিত পঁচিশ জন নবীর মধ্যে আদম, নূহ, ইদরীস ও মুহাম্মাদ (ছাঃ) বাদে বাকী ২১ জন নবী ছিলেন বনু ইস্রাঈল এবং একমাত্র মুহাম্মাদ হ’লেন বনু ইসমাঈল। বলা চলে যে, এই বৈমাত্রেয় পার্থক্য উম্মতে মুহাম্মাদীর বিরুদ্ধে ইহুদী-নাছারাদের বিদ্বেষের অন্যতম কারণ ছিল। সেজন্যে তারা চিনতে পেরেও শেষনবীকে মানেনি (বাক্বারাহ ২/১৪৬; আন‘আম ৬/২০)।
এক্ষণে আমরা ইবরাহীম বংশের শ্রেষ্ঠ সন্তান মানবজাতির গৌরব মুকুট, বিশ্ব মানবতার মুক্তিদূত সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম-এর জন্ম ও বংশ পরিচয় তুলে ধরব ইনশাআল্লাহ।
জন্ম ও মৃত্যু :রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ১ম হস্তীবর্ষের ৯ই রবীউল আউয়াল সোমবার ছুবহে ছাদিকের পর মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ১১ হিজরী সনের ১২ই রবীউল আউয়াল সোমবার সকালে ৯/১০টার দিকে চান্দ্র বর্ষের হিসাবে ৬৩ বছর ৪দিন বয়সে মদীনায় মৃত্যুবরণ করেন। সৌরবর্ষ হিসাবে জন্ম ৫৭১ খৃষ্টাব্দের ২২শে এপ্রিল সোমবার এবং মৃত্যু ৬৩২ খৃষ্টাব্দের ৬ই জুন সোমবার। বয়স ৬১ বছর ১ মাস ১৪ দিন। তাঁর জন্ম হয়েছিল আবরাহা কর্তৃক কা‘বা আক্রমণের ৫০ অথবা ৫৫ দিন পরে। এটা ছিল ইবরাহীম (আঃ) থেকে ২৫৮৫ বছর ৭ মাস ২০ দিন পরের এবং নূহের তূফানের ৩৬৭৫ বছর পরের ঘটনা। রাসূল (ছাঃ) দুনিয়াতে বেঁচে ছিলেন মোট ২২,৩৩০ দিন ৬ ঘণ্টা। তন্মধ্যে তাঁর নবুঅত কাল ছিল ৮১৫৬ দিন। এ হিসাব হ’ল সুলায়মান মানছূরপুরীর। সঠিক হিসাব আল্লাহ জানেন।
তিনি মক্কার কুরায়েশ বংশের শ্রেষ্ঠ শাখা হাশেমী গোত্রে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ছিল আব্দুল্লাহ, মাতার নাম আমেনা, দাদার নাম আব্দুল মুত্ত¡ালিব, দাদীর নাম ফাতেমা। নানার নাম ওয়াহাব, নানীর নাম বাররাহ। নানার বংশসূত্র রাসূলের ঊর্ধ্বতন দাদা কিলাব-এর সাথে এবং নানীর বংশসূত্র কুছাই-এর সাথে যুক্ত হয়েছে। নানা ওয়াহাব বনু যোহরা গোত্রের সরদার ছিলেন। দাদার হাশেমী গোত্র ও নানার যোহরা গোত্র কুরায়েশ বংশের দুই বৃহৎ ও সম্ভ্রান্ত গোত্র হিসাবে প্রসিদ্ধ ছিল।
তাঁর বংশধারাকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। ১ম ভাগে মুহাম্মাদ (ছাঃ) হ’তে ঊর্ধ্বতন পুরুষ আদনান পর্যন্ত ২২টি স্তর। যে ব্যাপারে কারু কোন মতভেদ নেই। এর উপরে ২য় ভাগে আদনান থেকে ইবরাহীম (আঃ) পর্যন্ত ৪১টি স্তর এবং তার উপরে তৃতীয় ভাগে ইবরাহীম (আঃ) হ’তে আদম (আঃ) পর্যন্ত ১৯টি স্তর। যেখানে নাম ও স্তরের ব্যাপারে বিদ্বানগণের মতভেদ রয়েছে। আমরা নি¤েœ আদনান পর্যন্ত বংশধারা উল্লেখ করলাম।-
(১) মুহাম্মাদ বিন (২) আব্দুল্লাহ বিন (৩) আব্দুল মুত্ত¡ালিব বিন (৪) হাশেম বিন (৫) আবদে মানাফ বিন (৬) কুছাই বিন (৭) কিলাব বিন (৮) মুররাহ বিন (৯) কা‘ব বিন (১০) লুওয়াই বিন (১১) গালিব বিন (১২) ফিহর (লকব কুরায়েশ) বিন (১৩) মালেক বিন (১৪) নাযার বিন (১৫) কানানাহ বিন (১৬) খুযায়মা বিন (১৭) মুদরেকাহ বিন (১৮) ইলিয়াস বিন (১৯) মুযার বিন (২০) নাযার বিন (২১) মা‘দ বিন (২২) আদনান। এর মধ্যে পরদাদা হাশেম-এর নামে হাশেমী গোত্র এবং দ্বাদশতম পুরুষ ফিহর যার উপাধি ছিল কুরায়েশ, তার নামানুসারে কুরায়েশ বংশ প্রসিদ্ধি লাভ করে। কুরায়েশ অর্থ সাগরের তিমি মাছ। ইয়ামনের বাদশাহ হাসসান মক্কা আক্রমণ করে কা‘বা উঠিয়ে নিজ দেশে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। ফিহর তাকে যুদ্ধে হারিয়ে তিন বছর বন্দী করে রাখেন। অতঃপর তাকে মুক্তি দেন। হাসসান ইয়ামনে ফেরার পথে রাস্তায় মারা যায়। এই ঘটনার পর থেকে ফিহর ‘আরবের কুরায়েশ’ বলে খ্যাতি লাভ করেন’।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বীয় বংশ সম্পর্কে বলেন,
‘আল্লাহ ইবরাহীমের সন্তানগণের মধ্য থেকে ইসমাঈলকে বেছে নিয়েছেন। অতঃপর ইসমাঈলের সন্তানগণের মধ্য থেকে বনু কানানাহকে বেছে নিয়েছেন। অতঃপর বনু কানানাহ থেকে কুরায়েশ বংশকে বেছে নিয়েছেন। অতঃপর কুরায়েশ থেকে বনু হাশেমকে এবং বনু হাশেম থেকে আমাকে বেছে নিয়েছেন শুধু তাই নয়, তিনি বলতেন, আমি আমার পিতা ইবরাহীমের দো‘আ ও ঈসার সুসংবাদ (এর ফসল)’। কেননা ইবরাহীম ও ইসমাঈল বায়তুল্লাহ নির্মাণের সময় দো‘আ করেছিলেন, যা কুরআনে বর্ণিত হয়েছে নিন্মোক্ত ভাষায়-
‘হে আমাদের পালনকর্তা! আপনি তাদের মধ্য হ’তে একজনকে তাদের মধ্যে রাসূল হিসাবে প্রেরণ করুন, যিনি তাদের নিকটে আপনার আয়াত সমূহ পাঠ করে শুনাবেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত (সুন্নাহ) শিক্ষা দিবেন ও তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন’ (বাক্বারাহ ২/১২৯)।
পিতা-পুত্রের এই মিলিত দো‘আ দুই হাযারের অধিক বছর পরে শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর আগমনের মাধ্যমে বাস্তবে রূপ লাভ করে।
একইভাবে ঈসা (আঃ) স্বীয় কওমকে উদ্দেশ্য করে শেষনবী আগমনের সুসংবাদ দিয়ে বলেছিলেন, যেমন আল্লাহ বলেন, ‘স্মরণ কর, যখন মরিয়ম-তনয় ঈসা বলেছিল, হে বনু ইস্রাঈলগণ! আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর প্রেরিত রাসূল, আমার পূর্ববর্তী তওরাতের আমি সত্যয়নকারী এবং আমি এমন একজন রাসূলের সুসংবাদদাতা, যিনি আমার পরে আগমন করবেন, তার নাম আহমাদৃ’ (ছফ ৬১/৬)।
পিতা আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুত্ত¡ালিব ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে পিতার হুকুমে ইয়াছরিব (মদীনা) গেলে সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং মাত্র ২৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন ও সেখানে নাবেগা জা‘দীর গোত্রে সমাধিস্থ হন। এভাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জন্মের পূর্বে তাঁর পিতার মৃত্যু হয়ে যায়।
প্রচলিত প্রথা মোতাবেক সপ্তম দিনে নবজাতকের খাৎনা ও নামকরণ করা হয়। পিতৃহীন নবজাতককে কোলে নিয়ে স্নেহশীল দাদা আব্দুল মুত্ত¡ালিব কা‘বা গৃহে প্রবেশ করেন। তিনি সেখানে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন ও প্রাণভরে দো‘আ করেন। আক্বীক্বার দিন সমস্ত কুরায়েশ বংশের লোককে দাওয়াত করে খাওয়ান। সকলে জিজ্ঞেস করলে তিনি বাচ্চার নাম বলেন, ‘মুহাম্মাদ’। এই অপ্রচলিত নাম শুনে লোকেরা এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি চাই যে, আমার বাচ্চা সারা দুনিয়ায় ‘প্রশংসিত’ হৌক। ওদিকে স্বপ্নের মাধ্যমে ফেরেশতার দেওয়া প্রস্তাব অনুযায়ী মা আমেনা তার নাম রাখেন ‘আহমাদ’। উভয় নামের অর্থ প্রায় একই। অর্থাৎ ‘প্রশংসিত’ এবং ‘সর্বাধিক প্রশংসিত’। উভয় নামই কুরআনে এসেছে। যেমন ‘মুহাম্মাদ’ নাম এসেছে চার জায়গায়। যথাক্রমে- সূরা আলে ইমরান ৩/১৪৪, আহযাব ৩৩/৪০; মুহাম্মাদ ৪৭/২ এবং ফাৎহ ৪৮/২৯। তাছাড়া ‘মুহাম্মাদ’ নামেই একটি সূরা নাযিল হয়েছে সূরা মুহাম্মাদ (৪৭ নং)। অনুরূপভাবে ‘আহমাদ’ নাম এসেছে এক জায়গায় (ছফ ৬১/৬)।
কথিত আছে যে, (১) রাসূল খাৎনা করা অবস্থায় জামা-পাজামা পরে ভূমিষ্ট হয়েছিলেন, যাতে কেউ তার লজ্জাস্থান দেখতে না পায়। (২) এছাড়াও কথিত আছে যে, জান্নাত থেকে আসিয়া ও মারিয়াম নেমে এসে ধাত্রীর কাজ করেন। (৩) আরও কথিত আছে যে, রাসূলের জন্মের সংবাদ শুনে চাচা আবু লাহাব আনন্দে আত্মহারা হয়ে মক্কার অলি-গলিতে এই সুসংবাদ শুনানোর জন্য দৌড়ে যান এবং তাকে প্রথম সংবাদ দানকারিণী দাসী ছুওয়াইবাকে খুশীর নিদর্শন স্বরূপ মুক্ত করে দেন। মীলাদের মজলিসে আরও বলা হয়ে থাকে যে, রাসূল জন্মের সংবাদ দেবার সময় আবু লাহাবের শাহাদাত অঙ্গুলী উঁচু ছিল বিধায় খুশীতে সেটি জাহান্নামের আগুন থেকে নিরাপদ থাকবে। বলা বাহুল্য, এসবই ভিত্তিহীন কল্প কথা মাত্র। (৪) বিশ্বসেরা জীবনীগ্রন্থ হিসাবে পুরস্কারপ্রাপ্ত আর-রাহীকুল মাখতূমেও কিছু অশুদ্ধ বর্ণনা উদ্ধৃত হয়েছে, যা উক্ত গ্রন্থের উচ্চ মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করেছে। যেমন (ক) রাসূল জন্মের সময় তার মা বলছেন যে, আমার গুপ্তাঙ্গ দিয়ে ‘নূর’ অর্থাৎ জ্যোতি বিকশিত হয়েছিল। যা সিরিয়ার প্রাসাদ সমূহকে আলোকিত করেছিল (খ) পারস্যের কিসরা রাজপ্রাসাদের ১৪টি চূড়া ভেঙ্গে পড়েছিল (গ) অগ্নি উপাসক মজূসীদের পূজার আগুন নিভে গিয়েছিল (ঘ) বাহীরাহর পার্শ্ববর্তী গীর্জাসমূহ ধ্বসে পড়েছিল ইত্যাদি (পৃঃ ৫৪)। উল্লেখ্য যে, অনুবাদক তার অগণিত ভুল অনুবাদের মধ্যে ঐ সাথে এটাও যোগ করেছেন যে, (ঙ) ঐ সময় কা‘বা গৃহের ৩৬০টি মূর্তি ভূলুণ্ঠিত হয়ে পড়ে’ (পৃঃ ৭৬), প্রকাশক: তাওহীদ পাবলিকেশন্স, ঢাকা সেপ্টেম্বর ২০০৯)।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন ‘আমার কয়েকটি নাম রয়েছে। আমি মুহাম্মাদ (প্রশংসিত), আমি আহমাদ (সর্বাধিক প্রশংসিত), আমি ‘মাহী’ (বিদূরিতকারী) আমার মাধ্যমে আল্লাহ কুফরীকে বিদূরিত করেছেন। আমি ‘হাশের’ (জমাকারী) কেননা সমস্ত লোক ক্বিয়ামতের দিন আমার কাছে জমা হবে (এবং শাফা‘আতের জন্য অনুরোধ করবে)। আমি ‘আক্বেব’ (সর্বশেষে আগমনকারী) আমার পরে আর কোন নবী নেই’।
সুলায়মান মানছূরপুরী বলেন, উক্ত নাম সমূহের মধ্যে মুহাম্মাদ ও আহমাদ হ’ল তাঁর মূল নাম এবং বাকীগুলো হ’ল তাঁর গুণবাচক নাম। সেজন্য তিনি সেগুলির ব্যাখ্যা করেছেন। এই গুণবাচক নামের সংখ্যা মানছূরপুরী গণনা করেছেন ৫৪টি। তিনি ৯২টি করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন।
(ক) রাসূলের মৃত্যুর পরে কন্যা ফাতেমার শোকগাথাতেও ‘আহমাদ’ নাম এসেছে। যেমন-
(১) আমার উপরে এমন বিপদ আপতিত হয়েছে, যদি তা দিনের উপরে পড়ত, তবে তা রাতে পরিণত হয়ে যেত।
(২) যে কেউ আহমাদের কবরের মাটি শুঁকবে, তার উপরে ওয়াজিব হবে যে সে সারাটি জীবনে আর কোন সুগন্ধি শুঁকবে না’।
এমনি ভাবে কট্টরপন্থী খারেজীরা যখন আলী (রাঃ)-কে নতুনভাবে তাদের সামনে ঈমান আনতে ও ইসলামে দাখিল হ’তে বলে, তখন তিনি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘আমার উপরে হে কল্যাণের সাক্ষী সাক্ষী থাক, নিশ্চয়ই আমি নবী আহমাদের দ্বীনের উপরে রয়েছি, আল্লাহর ব্যাপারে যে সন্দেহ পোষণ করে সে জেনে রাখুক যে, আমি হেদায়াত প্রাপ্ত’।
উল্লেখ্য যে, চরমপন্থী খারেজীরা আলী (রাঃ)-কে ‘কাফের’ ফৎওয়া দিয়ে তাঁকে ফজরের জামা‘আতে মসজিদে যাওয়ার সময় মর্মান্তিকভাবে হত্যা করেছিল এবং হত্যাকারী আব্দুর রহমান নির্বিকারভাবে সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে লোকদের উদ্দেশ্যে বলেছিল, ‘আমি খুবই আনন্দিত এজন্য যে, আমি আজ ‘আল্লাহর নিকৃষ্টতম সৃষ্টি’-কে হত্যা করেছি’।
(খ) ওদিকে ‘মুহাম্মাদ’ নামের প্রশংসায় কবি হাসসান বিন ছাবেত আনছারী (রাঃ) গেয়েছেন ‘তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য আল্লাহ নিজের নাম থেকে তার নাম বের করেছেন। তাই আরশের মালিক হ’লেন মাহমূদ এবং ইনি হ’লেন মুহাম্মাদ’।
উল্লেখ্য যে, ক্বিয়ামতের দিন রাসূলের শাফা‘আতের স্থানের নাম হবে ‘মাক্বামে মাহমূদ’।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট, পাঠান পাড়া (খান বাড়ী) কদমতলী, সিলেট।
Related News

সিয়াম সাধনা তাৎপর্য ও শিক্ষা
মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান: মাহে রমজান আমাদের মাঝে এসেছে তাকওয়া আত্মশুদ্ধি, আত্মসংযম এবং মহান আল্লাহরRead More

আজ রহমতের তৃতীয় দিন
হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী: পবিত্র রমজানের রহমতের তৃতীয় দিন আজ। সর্বজ্ঞানী ও প্রজ্ঞাময় মহান আল্লাহতায়ালাRead More
Comments are Closed