কোটিপতি হতে চীনা অ্যাপে বিনিয়োগ, ‘নিঃস্ব’ হাজারো মানুষ

বৈশাখী নিউজ ডেস্ক: চীনা একটি “enbw” নামের অ্যাপের তথ্য অনুযায়ী তারা দাবী করছে তাদের প্রধান অফিস জার্মানি এবং তারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় এনার্জি কোম্পানি। তাদের এই অ্যাপে বিকাশের মাধ্যমে ৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে প্রতিদিন তারা ১ লাখ ৭২ হাজার ৫০০ টাকা লাভ দেবে। এবং বিনিয়োগের বিপরীতে এই ২৩০ দিনে প্রায় ৪০ কোটি টাকা ফেরত দেবে। এর পাশাপাশি আরও ছোট ছোট বিনিয়োগেরও উপায় আছে। সর্বনিম্ন ৯২০ টাকা বিনিয়োগ করা যায় এতে ৮০ দিনে প্রতিদিন ৪৬ টাকা করে লাভ দেবে। ২০ হাজার ৭০০ টাকা বিনিয়োগ করলে প্রতিদিন ১৯শ টাকা এবং ৬৩ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে প্রতিদিন ৭ হাজার টাকা লাভ দেবে এবং তা দেবে ১৪০ দিন।
রাতারাতি কোটি পথে হওয়ার লোভে মৌলভীবাজারসহ বিভিন্ন জেলার যুবক ও মধ্য বয়সী মানুষরা নিঃস্ব হচ্ছেন। নিজেদের লোভের কারণে এই অবস্থা বুঝতে পেরে লজ্জায়ও কথা বলছেন না তারা। বিষয়টি নিয়ে আইনি পদক্ষেপ না নিয়ে মেনে নিচ্ছেন গোপনে অনেকটা বাধ্য হয়ে। এই অ্যাপে বিনিয়োগের প্রথম সপ্তাহে লাভ আসে এবং লাভ আসা শুরুর পর এই ব্যক্তির মাধ্যমে তারা কাছের মানুষরা বিনিয়োগ করে বা অনেক সময় বিনিয়োগকারী ব্যক্তি আশেপাশের পরিচিত জনকে সহজে কোটিপতি বানানোর লক্ষে নিজেই এপের খোঁজ দেন এভাবেই সার্কেলে চলতে থাকে বিনিয়োগ কিন্তু বিনিয়োগের এক সপ্তাহ পরেই একাউন্ট আর কাজ করেনা তত দিনে অনেকেই বিয়োগ করা হয়ে যায়।
এমন একজন বিনিয়োগকারী মৌলভীবাজারের এক ব্যবসায়ীর সাথে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের তিনি জানান, তার পরিচিত একজনের মাধ্যমে তিনি এই অ্যাপটির খোঁজ পান এবং সেখানে বড় একটি বিনিয়োগ করেন। এপের শর্ত হচ্ছে প্রতিদিন লাভের টাকা আসলেও সেই টাকা বিকাশে বা ব্যাংক একাউন্টে ট্রান্সফার করে তুলা যাবে শুধু সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত এবং সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার ভেতর।
তিনি বলেন বুধবারে রেজিস্ট্রেশন করেন এবং প্রতিদিন তার লাভের টাকা তার একাউন্টে জমা হতে থাকে । প্রথম সপ্তাহে টাকা তুলি এবং আরও বিনিয়োগ করি সেই সাথে আশেপাশে পরিচিতজন এবং গরিব আত্মীয় স্বজনদের উপকারের চিন্তায় তাদেরকেও বিনিয়োগ করাই কিন্তু এরপরের সপ্তাহের সোমবার আসলে সেই টাকা তুলতে গেলে সিস্টেম ব্যস্ত দেখায় এবং সেদিন থেকে আর কোন ভাবেই অ্যাপটি কাজ করছে না। তাদের একটি কাস্টমার কেয়ার নাম্বার আছে (+63 936 105 5463) সেখানে যোগাযোগ করলে তারা জানায় আরও ২০ লাখ টাকা ইনভেস্ট করতে হবে তবেই একাউন্ট আবার চালু হবে। তবে তিনি তা করেননি।
এই তরুণ ব্যবসায়ী জানান তার জানামতে দেশের বিভিন্ন জেলার হাজার হাজার মানুষ এই অ্যাপে ইনভেস্ট করেছে। একই ভাবে সবারই এক সপ্তাহ পরে আর অ্যাপে কাজ করেনা। কিন্তু এই এক সপ্তাহ যখন লাভ আসে সেই সময় একেকজন বিনিয়গকারীর মাধ্যমে একেকটা বড় সার্কেল বিনিয়োগ করে ফেলে। যেহেতু চোখের সামনে তারা দেখে অন্যজন মোটা অংকের লাভ পাচ্ছে। এক সপ্তাহে সাধারণত বিনিয়োগের ২০/৩০% টাকা উঠে আসে এবং এরপরেই এই অ্যাপটি আর কাজ করে না এবং সবার বেলাতে একই ঘটনা।
খোঁজ নিয়ে আরও ৪/৫ জন ভুক্তভোগী পাওয়া যায় যাদের সবার বক্তব্য একই। তারা কেউই শমরের মিয়া যিনি কিছুদিন আগে বেশি কিছু টাকা ব্যবসায় লস খেয়ে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন এরমধ্যে এই অ্যাপের খোঁজ পেয়ে আশার আলো দেখেন। ভাবেন খুব স্বল্প সময়ে এখান থেকে আয় করে দেনা পরিশোধ করতে পারবেন, তাই দার দেনা করে এখানে বিনিয়োগ করেন। প্রথম সপ্তাহে তিনি লাভ পান এবং তা তুলেন এবং পরের সপ্তাহে আরও বেশী লাভের আশায় দুইগুণ বিনিয়োগ করেন এরপরে ৩ দিন যেতেই তার একাউন্টটি আর কাজ করছেনা আরও বিনিয়োগের জন্য বলা হচ্ছে।
দিনাজপুরের মুদি দোকানি রাসেল মিয়া তিনি এই অ্যাপে ২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন গরু বিক্রি করে । তার মত অনেকেই বিনিয়োগ করছেন বলে দাবী করছেন তিনি। বিনিয়োগের প্রথম সপ্তাহ টাকা আসে কিন্তু পরের সপ্তাহ থেকেই অ্যাপে কাজ করে না।
ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চীনা অ্যাপ ব্যবহার করে তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। তবে কে প্রথম এই অ্যাপের প্রচার শুরু করেছেন তার খোঁজ মিলেনি।
নিয়ম অনুযায়ী, অ্যাপে ন্যুনতম ৯২০ টাকা থেকে ৫ লাখ ৭৫ হাজার একটি একাউন্টে বিনিয়োগ করা যায়। একজন চাইলে যত ইচ্ছে একাউন্ট খুলতে পারে। অ্যাপটি ইন্সটল দেয়ার পর যেখানে বিকাশ থেকে টাকা আনতে হয় সেই টাকা দিয়ে পছন্দ মত প্যাকেজ কিনতে হয়। প্যাকেজ কেনার সঙ্গে সঙ্গে তার হিসাব নম্বরে মুনাফা যোগ হয়। প্রতিদিন অ্যাপে একবার ঢুকতে হয় এবং সেখানে “জেনারেট ইনকামে “ চাপ দিলেই সাথে সাথে মুনাফা এসে অ্যাপে জমা হয়। অ্যাপে টাকা জমা হওয়ার পর ২৭ হাজার হলে তা উত্তোলন করা যায় এবং প্রতি সপ্তাহের সোমবার থেকে বুধবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত টাকা উত্তোলন করা যায়।
উত্তোলন করতে হলে একটি বিকাশ নাম্বার এড করে উইন্ডো অপশনে চাপতে হয়। একজন ভুক্তভোগীর আইডি তে দেখা যায় তার একাউন্টে ২৭ হাজার টাকা জমা আছে কিন্তু তিনি সে টাকা তুলতে পারেননি এর আগেই অ্যাপটি আর কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। প্যাকেজ কিনতে গিয়ে যে নাম্বারে টাকা পাঠিয়েছিলেন তেমন একটি নাম্বারের খোঁজ মিলে সে নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই লাইন কেটে দেন তবে তিনি স্বীকার করেন তার নাম্বারে টাকা ঢুকেছে সেটা অনলাইনে বিনিয়োগের। প্রতিদিন আয়ের পাশাপাশি অন্যজনকে রেফারেন্স দিলে ( হিসাব নম্বর খুলে দিলে) তিনি যা বিনিয়োগ করবেন তার ১০ শতাংশ টাকা নিজের হিসাব নম্বরে যোগ হয়।
বিনিয়োগ না করলেও শুধু অ্যাপটি ইন্সটল দিলেই ২০০ টাকা যোগ হয়। কোনো কাজ না করে রাতারাতি ধনী হওয়ার জন্য তাঁরা বেশি টাকা দিয়ে হিসাব নম্বর খুলে বড়লোক হওয়ার প্রতিযোগিতায় নিঃস্ব করে দিচ্ছে লোভী মানুষদের। সচেতন নাগরিকরা বলছেন, মানুষের লোভের সুযোগ নিয়েই এই প্রতারক চক্র টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রতারিত হয়েও কেনো কোন আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছেন না এ বিষয়ে জানতে চাইলে, প্রতারিত হওয়া ব্যক্তিরা বলেন, পূর্বে এমন অনেক ঘটনা আমরা দেখেছি যে অভিযোগ দিয়েও কোন লাভ হয়নি। উল্টো মানুষ জানবে আমরা লোভে পরে ছিলাম তাই কোন আইনি পদক্ষেপ নেইনি।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসান মোহাম্মদ নাসের রিকাবদার জানান, আমরা কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি, তবে মৌখিক ভাবে শুনেছি। অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব তবে আমরা তদন্ত করছি।
Related News

প্যারালাইজড রোগে আক্রান্ত শিক্ষার্থী মাহী কবির বাঁচতে চায়
বৈশাখী নিউজ ডেস্ক: প্যারালাইজড রোগে আক্রান্ত আল-আমীন জামেয়া ইসলামিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্রী মাহীRead More

পুলিশে নিয়োগ : যেভাবে আবেদন করবেন
বৈশাখী নিউজ ডেস্ক: পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও কনস্টেবল পদের জন্য অনলাইনে দরখাস্ত গ্রহণ শুরু করেছেRead More
Comments are Closed