Main Menu

শিক্ষার্থীরা তৈরি করলো ‘উইমেন সেফটি ডিভাইস’

প্রযুক্তি ডেস্ক: ইলেকট্রিক সকেট, ক্যাপাসিটর, পরিত্যাক্ত বোতল ইত্যাদি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে একটি ডিভাইস (যন্ত্র)। যার নাম দেওয়া হয়েছে উইমেন সেফটি ডিভাইস (নারীর সুরক্ষা যন্ত্র)।

এই যন্ত্রটি তৈরি করেছে কয়েকজন শিক্ষার্থী। মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় ৪২তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ এবং বিজ্ঞান মেলায় ডিভাইসটি প্রদর্শন করে শিক্ষার্থীরা। এই যন্ত্র ঘরের বাইরে নারীর সুরক্ষায় সহায়তা করবে বলে জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

তারা জানায়, মাত্র ৩ থেকে ৪ সেকেন্ডই এই ডিভাইস পূর্ণ চার্জ হয়। চার্জ দিয়ে এটা সাথে নিয়ে নারীরা বাইরে বের হতে পারবেন। কোথাও আক্রান্ত হলে যন্ত্রটির ক্যাপ খুলে অপরাধীর শরীরে স্পর্শ করালে সে কিছু সময়ের জন্য সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়বে। এই সময়ের মধ্যে নারী নিজেকে নিরাপদ করতে পারবেন।

শিক্ষার্থীদের তৈরি এমন আরও চমক লাগানো নানা উদ্ভাবনী যন্ত্র ও ভাবনার প্রকল্প দেখা যায় মেলায়। ‘কোভিড-১৯ এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় বড়লেখা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলা প্রশাসন মঙ্গলবার দিনব্যাপী মেলার আয়োজন করে।

উইমেন সেফটি ডিভাইসটি তৈরি করেছে উপজেলার ইটাউরী হাজী ইউনুস মিয়া মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী তাহমিদ জামান নাবিল, সৈয়দ জাহিদুল ইসলাম, মো. মাহফুজুল হাসান, আব্দুল্লাহ আল মাহিন ও রেদওয়ান আহমদ। এটি ছাড়াও তারা বিভিন্ন ধরণের যন্ত্র ও তাদের ভাবনার প্রকল্প প্রদর্শন করে। ডিভাইসসহ বিভিন্ন প্রকল্প প্রদর্শন করে মেলায় জুনিয়র গ্রুপে প্রথম হয়েছে ইটাউরী হাজী ইউনুস মিয়া মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়।

তাদের একজন মো. মাহফুজুল হাসান বলেন, ‘বর্তমানে নারীরা ধর্ষিত হচ্ছেন। ইভটিজিং এর শিকার হচ্ছেন। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে এটা আমরা তৈরি করেছি। যাতে নারীরা নিজেদের সহিংসতা থেকে রক্ষা করতে পারেন। এটি সাথে থাকলে নারীরা নিরাপদবোধ করবেন। ধর্ষক বা ইভটিজিংকারী যখন নারীর কাছে যাবে তখন তার হাতে যন্ত্রটি লাগালে সে কিছু সময়ের জন্য ব্যালেন্স (ভারসাম্য) হারিয়ে ফেলবে। তখন আক্রান্ত নারী ঘটনাস্থল থেকে নিরাপদে সরে যেতে পারবে। বর্তমানে আমরা একটি ডেমো দেখিয়েছি। এটা বিজ্ঞানী বা ইঞ্জিনিয়ারের হাতে পড়লে তারা এটা উন্নত করতে পারবেন। ফলে এটা ভালো সার্ভিস দেবে।’

মাহফুজুল আরও বলেন, ‘এখানে রিচার্জেবল সিস্টেম করতে পারলে ভালো হবে। আমাদের সময় সল্পতা ও অদক্ষতার কারণে আমরা রিচার্জেবল করতে পারিনি। এটি তৈরি করতে ইলেকট্রিক সকেট, ক্যাপাসিটর, পরিত্যাক্ত বোতল ও বৈদ্যুতিক তার লাগবে।’

এটা ব্যবহার করতে গিয়ে ব্যবহারকারী কোনো ধরণের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি-না প্রশ্নের জবাবে মাহফুজ জানান, এটার মুখে ক্যাপ থাকবে। ক্যাপ খুলে এটা স্পর্শ করাতে হয়। আমরা ২.৫ ভোল্টের একটি ক্যাপাসিটর ব্যবহার করেছি। এটা দিয়ে ৪ থেকে ৫ মিনিট একজন অপরাধীকে সেন্সলেস করে দেওয়া যাবে। এর অতিরিক্ত ৩. ৫ ভোল্টের ক্যাপাসিটর লাগালে মানুষ মারাও যেতে পারে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ‘রেপিস্ট অ্যাকশন ডিভাইস’ তৈরি করেছে পাথারিয়া ছোটলিখা সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আদনান, সুমিত দাস, বেরন ভৌমিক, শ্রেষ্ঠ পাল ও প্রান্ত। নারী শিক্ষা একাডেমিক মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রদর্শন করেছে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে প্রতিরোধ, মডেল ও আধুনিক নগরী। দক্ষিণভাগ এনসিএম উচ্চ বিদ্যালয় প্রদর্শন করেছে পরিবেশ বান্ধব ও নবায়ন যোগ্য শক্তি সম্পন্ন আধুনিক গ্রাম। বড়লেখা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রদর্শন করেছে করোনা প্রাদুর্ভাব রহিত করণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি। হাকালুকি উচ্চ বিদ্যালয় প্রদর্শন করেছে চুম্মক, পানি এবং পেট্টোল এর সাহায্যে বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপাদন। শাহবাজপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ প্রদর্শন করেছে পরিবেশ সুরক্ষায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার। বড়লেখা সরকারি কলেজ প্রদর্শন করেছে স্বয়ংক্রীয়ভাবে মানবদেহে জীবানু নাশক স্প্রে। দাসেরবাজার উচ্চ বিদ্যালয় প্রদর্শন করেছে নবায়ন যোগ্য শক্তি সম্পন্ন আধুনিক গ্রাম। রোকেয়া খাতুন লাইসিয়াম স্কুল প্রদর্শন করেছে আধুনিক ওয়েবসাইট। এছাড়া আরও বিভিন্ন প্রকল্প তৈরি করেছে শিক্ষার্থীরা।

উইমেন সেফটি ডিভাইসের বিষয়ে বড়লেখা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাওলাদার আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘তারা সমাজের অবক্ষয় রোধে করার জন্য কিশোর বয়স থেকে যে চিন্তাভাবনা করেছে এটা প্রশংসার দাবিদার। তাদের মতো উদ্যোগ সর্বমহল থেকে আসলে সমাজের জন্য উপকার হত। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যদি কিশোর বয়স থেকে বুঝে নারীর প্রতি সহিংসতা একটা অপরাধ তাহলে ছোটবেলা থেকে নারী জাতির প্রতি সকলের সম্মান বাড়বে।’

মেলায় প্রকল্প প্রদর্শনের ওপর সিনিয়র গ্রুপে ১ম হয়েছে বড়লেখা সরকারি কলেজ, ২য় হয়েছে নারী শিক্ষা একাডেমি ডিগ্রি কলেজ। জুনিয়র গ্রুপ ১ম হয়েছে ইটাউরী হাজী ইউনুস মিয়া মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়, ২য় হয়েছে নারী শিক্ষা একাডেমি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৩য় হয়েছে দাসেরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়। বিজ্ঞান বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতায় ১ম হয়েছে হাকালুকি উচ্চ বিদ্যালয়ের অনন্যা বিশ্বাস, ২য় হয়েছে দাসেরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের জীবান আহমদ ও ৩য় হয়েছে কাঠালতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাকির হোসেন।

বুধবার বিকেলে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম আল ইমরান। মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাওলাদার আজিজুল ইসলামের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন বড়লেখা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সোয়েব আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন রাহেনা বেগম, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রত্নদ্বীপ বিশ্বাস, কৃষি কর্মকর্তা দেবল সরকার, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. উবায়েদ উল্লাহ খান, উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মো. শাখাওয়াৎ হোসেন, মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি সভাপতি লুৎফর রহমান চুন্নু প্রমুখ।

মেলায় কলেজ ও মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ের ১২টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ১০টি প্রতিষ্ঠান।

Share





Related News

Comments are Closed