একজন চিকিৎসক ডাঃ এম আহমদের জীবনের গল্প

নিজাম ইউ জায়গীরদার : আমার আজকের গল্পটা এমন একজনকে নিয়ে যিনি ছিলেন একাধারে একজন সুচিকিৎসক, অকুতোভয় দেশপ্রেমিক ও সাহসী সামাজিক যোদ্ধা। নিকট আত্মীয় হওয়ায় খুব পাশে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল আমার, তিনি হলেন মরহুম ডাঃ এম আহমদ। আজ বহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) তাঁর ৩০তম মৃত্যুবার্ষিকী।
আমার প্রিয় ব্যক্তিত্বের একজন ছিলেন ডাঃ এম আহমদ। নির্ভিক, স্পষ্টভাষী, জ্ঞানী, স্মার্ট, উপস্থিত বুদ্ধিমত্তা – আরো অনেক বিশেষনে বিশেষায়িত করলেও প্রকৃত মূল্যায়ন থেকে যাকে কম করা হবে, শ্রদ্ধেয় ডাঃ এম আহমদ হচ্ছেন তেমনই একজন ব্যক্তিত্ব। ২ ছেলে ও ৫ মেয়ের জনক ছিলেন ডাঃ এম আহমদ, বড় ছেলে প্রবাসের প্রখ্যাত ব্যবসায়ী ফজলে আহমদ ইউসুফ সিফা। বতর্মানে তিনি আমেরিকায় আছেন। দ্বিতীয় ছেলে ডাঃ আরিফ আহমেদ মোমতাজ রিফা ব্যাংকক হসপিটালের সিলেট জোনের কনসালটেন্ট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
ডাঃ এম আহমদের স্ত্রী সিলেট লায়ন্স ক্লাবের সাবেক সভাপতি মহীয়সী নারী ফজিলেতুন্নসার মতো দাপুটে মানুষও আমি কম দেখেছি। অথচ তাঁর চাল-চলন, বেশ-ভূষা ছিল একেবারেই সাধারণ। তাঁর ছিল একটি দরদি মন। শুধু নিজের বিশাল পরিবার নয়, আরো অনেক দরিদ্র পরিবারের অভিভাবক ছিলেন তিনি। কারো কারো সংসারে চাল-ডালের জোগানও দিতেন তিনি। আমি এটা ভালো করে জানি এ কারণে যে, নিজ চোখে দেখেছি, বাকিটা আমার দাদি, বাবা ও মা’র কাছে শুনেছি। স্বজনদের অভিভাবক হিসেবে এই দুই মহান ব্যক্তিত্ব আমাদের মাঝে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন আজীবন।
আমার মনে আছে, যেখানে যেভাবে সুযোগ পেতেন সেখানেই মানুষ বা সমাজের জন্য কিছু করতে আপ্রাণ চেষ্টা এবং ইচ্ছা শক্তির প্রয়োগ করতেন ডাঃ এম আহমদ। চিকিৎসা দিয়ে অন্যের জীবনে আলো জালাতে চিকিৎসা মত মহৎ কাজে বিলিয়ে দিতেন নিজেকে। আহবান করতেন অন্যের বিপদে পাশে দাঁড়াতে। কখনো কারো ডাকে সাড়া না পেলে একাই দৌড়ে বেরিয়ে লড়ে যেতেন ডাঃ এম আহমদ। থেমে না থেকে পিছপাও হননি তিনি।
‘সুস্থ মন সুখী জীবন’ শ্লোগান নিয়ে রক্তদানের পাশাপাশি ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, সিজনাল ভাইরাস সম্বন্ধ্যেও পায়ে হেঁটে, মহল্লায়, সিলেটের সবখানে ছুটে চলে সাধারন মানুষকে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করতেন ডাঃ এম আহমদ। এমনকি নিরাপদ সমাজ প্রতিষ্ঠা আন্দোলনের বিভিন্ন ক্যাম্পেইন এ দায়িত্ব পালন করেন ডাঃ এম আহমদ।
বিভিন্ন সভা সেমিনারে ডাঃ এম আহমদের বক্তব্য শুনার সুভাগ্য হয়েছিল আমার, সেমিনারগুলোতে প্রায়ই তিনি বলতেন, আমাদের সুস্থ ও সুখী থাকার জন্য মানসিক স্বাস্থ্যের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। সে জন্য বেশি বেশি সচেতনতামূলক প্রচারণার আয়োজন করতে হবে। তিনি সব সময় বলতেন, ‘আমরা অনেক দিক থেকে এগিয়ে গেলেও পিছিয়ে আছি মানসিক স্বাস্থ্যের যতœ নেওয়ার বিষয়ে। যদি মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতার বিষয়ে সবাইকে জানাতে পারি, তাহলে সে দিকটাও এগিয়ে যাবে।
কিছু মানুষের কাছে একজন আদর্শ, কিছু মানুষের গভীর শ্রদ্ধা এবং কিছু মানুষের আস্থার প্রতীক। আত্মীয় পরিজনদের কাছে অনেক শ্রদ্ধার ছিলেন ডাঃ এম আহমদ।
এমন মানুষের জন্য রইলো অনেক অনেক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা, আজীবন বেঁচে থাকুন মানুষের ভালোবাসায়।
লেখক : সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ।
Related News

পবিত্র রমজান মাসের ফজিলত ও ইবাদত
হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী: পবিত্র রমজান মাসের আগমনে মুসলিমগণ আনন্দ প্রকাশ করে থাকেন। আনন্দ প্রকাশRead More

ঢাকা-সিলেট রেলপথের উন্নয়ন কত দূর?
রুহুল ইসলাম মিঠু : দুই যুগের বেশি সময় ধরে সিলেট অঞ্চলবাসী ঢাকা-সিলেট-চট্টগ্রাম রেলপথের সংস্কারের জন্যRead More
Comments are Closed