Main Menu

ধর্ষণ-খুনের পর অন্তর্বাস চুরিই ছিল যার নেশা!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: তার হাতে ধর্ষিতা হয়েছেন এমন অনেকেই পুলিশের দ্বারস্থ হননি। লোকলজ্জার ভয়ে লুকিয়ে থেকেছেন। তার পরেও পুলিশের দাবি, অন্তত ২০ জন মহিলাকে ধর্ষণ করেছে সে। তাদের মধ্যে খুন করেছে ১৮ জনকে। দোষী প্রমাণিত হয়েছে ৯টি ঘটনায়। এখনও ফাঁসি কার্যকর হয়নি কুখ্যাত সিরিয়াল রেপিস্ট উমেশ রেড্ডির।

উমেশের জন্ম ১৯৬৯ সালে। ভারতের কর্নাটকের চিত্রদুর্গ জেলায়। সিআরপিএফ-এর জওয়ান হিসেবে তার কর্মক্ষেত্র ছিল জম্মু কাশ্মীরে। সেখানে এক কমান্ড্যান্টের বাড়িতে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করা সময় কমান্ড্যান্টের মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টা করে।

তার আগে ক্রমশ ঘটনাবহুল হয়েছে তার অপরাধের গ্রাফ। ১৯৯৭ সালে একটি কারাগার থেকে অন্য কারাগারে স্থানান্তরের পথে সে পালিয়ে যায়। ফেরারি অবস্থাতেও থামেনি উমেশ। দেশের চার শহরে সে ধর্ষণ করে পাঁচ জন বিভিন্ন বয়সি মেয়েকে।

বেঙ্গালুরুর কাছে একটি ছোট শহর পেন্যা। সেখানকার পুলিশ ১৯৯৭ সালে তাকে গ্রেফতার করে সম্পূর্ণ অন্য কারণে। সে ওই এলাকায় বিভিন্ন বাড়ির সামনে শুকোতে দেওয়া মহিলাদের অন্তর্বাস চুরি করত। ধরা পড়ার পর সে পুলিশের কাছে পরিচয় গোপন করে নিজের নাম বলে ‘রমেশ’। তার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় বস্তাভর্তি মহিলাদের অন্তর্বাস।

এ বারও তার ঠাঁই হয় কারাগারে। কিন্তু এ বারও পালায় সে। এক থানা থেকে অন্য থানায় জেরার জন্য নিয়ে যাওয়ার সময়। এক দিকে তার নামে জারি হয় লুক আউট নোটিস। অন্য দিকে সে পেন্যা শহরে একের পর এক ধর্ষণ করে যায়।

১৯৯৮ সালে সেখানে এক ৩৭ বছর বয়সি মহিলাকে ধর্ষণ করে খুন করে সে। তার পর তার নিথর দেহকেও একাধিক বার ধর্ষণ করে। মৃতার শিশুপুত্র সে সময় স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে আসে। তাকে রমেশ ওরফে উমেশ বলেছিল, মায়ের উপর দুষ্ট আত্মা ভর করেছে। তাই তাকে সে তাড়াচ্ছে। এই বলে ডাক্তার ডাকার নাম করে ঘটনাস্থল ছেড়ে পালায় উমেশ।

এর কয়েক দিন পরে আবার এক মহিলাকে ধর্ষণ করতে গিয়ে ধরা পড়ে সে। ক্ষিপ্ত জনতা তাকে তুলে দেয় পুলিশের হাতে। তবে এ বারও পুলিশের হাত থেকে পালায় সে। তবে বেশি দিন এ যাত্রা পুলিশের হাতের বাইরে থাকতে পারল না। ধরা পড়ে গেল।

১৯৯৯ থেকে ২০০২, তিন বছর কারাবন্দি থাকার পরে আবার পালানোর সুযোগ পেয়ে গেল সে। এ বার বেল্লারি থেকে বেঙ্গালুরু যাওয়ার পথে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার নাম করে ফাঁকা মাঠে গিয়ে পালায় সে। তার পরের দু’মাসে সে তিন জনকে ধর্ষণ করে। চুরি করে তিনটি মোবাইল ফোন এবং দু’টি ক্রেডিট কার্ড। পুণের এক হোটেলে কিছু দিন ওয়েটারের কাজ করে। তার পর সেখান থেকেও টাকা চুরি করে পালায়।

দেশের বিভিন্ন শহরে ঘুরে ঘুরে দিন কাটাত সে। সব জায়গাতেই জুটিয়ে নিত ছোটখাটো কোনও কাজ। সেইসঙ্গে চলতেই থাকত তার অপরাধের রেকর্ড। এক জায়গায় বেশি দিন থাকত না সে। ২০০২ সালে সে চলে আসে টুমকুর থেকে বেঙ্গালুরু। সেখানে এক অটোচালক তাকে চিনে ফেলেন। তার আগে সংবাদপত্রে সে উমেশের ছবি দেখেছিল।

ওই অটোচালকের তৎপরতা এবং উপস্থিত বুদ্ধির জেরে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে উমেশ। অটোচালককে পুরস্কৃত করা হয়। গ্রেফতারের পরে উমেশের ডেরা থেকে পাওয়া যায় মেয়েদের পোশাক এবং অন্তর্বাস।

দীর্ঘ বিচারে উমেশ দোষী সাব্যস্ত হয় ৯টি ঘটনায়। ১১টি ঘটনায় সে মুক্তি পায় প্রমাণের অভাবে। মামলা গড়ায় কর্নাটক হাইকোর্ট অবধি। সেখানেও তার মৃত্যুদণ্ড বজায় থাকে। ২০১৩ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় উমেশের প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ করে দেন।

এর পর আবার একটি নতুন পিটিশন দাখিল করে উমেশ। সুপ্রিম কোর্টে সে মামলা চলছে। নির্ভয়া-কাণ্ডে চার ধর্ষকের ফাঁসির পরে বিভিন্ন মহলে উমেশের মৃত্যুদণ্ড দ্রুত কার্যকর করার দাবি উঠেছে।

Share





Related News

Comments are Closed