পত্রিকা ও সামাজিক মাধ্যম
মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান: কোন বিশেষ লেখা প্রকাশ করার জন্য বা প্রাসঙ্গিক কিছু কথা তুলে ধরার জন্য এখন পর্যন্ত আমার কাছে পত্র-পত্রিকার মাধ্যমটাই অধিকতর গ্রহণযোগ্য বা সম্মানজনক বলে মনে হয়। সামাজিক অন্যান্য মাধ্যমগুলো যেমন ফেসবুক, ইউটিউবসহ বর্তমানে এমন যে সকল মাধ্যম রয়েছে যেখানে সেন্সরহীনতার অভাবে অতিসহজেই যে কোনো বিষয়ের উপর লেখা, ছবি বা ভিডিও কনটেন্ট শেয়ার করা যায়। যার ফলে উপাদানগুলোর গুণগত মান আদৌ ঠিক আছে কি না অথবা রুচিকর কি না তা যাচাই বাছাইয়ের জন্য তেমন কোনো মনিটরিং বা প্রকাশের পূর্বে তেমন কোনো বাধাবিপত্তি নেই। তাই যে কেউ ইচ্ছে করলেই এই সোস্যাল মাধ্যমগুলোতে শিক্ষণীয়, মানসম্মত অথবা অরুচিকর অনেক কিছুই আপলোড করতে পারেন।
সোস্যাল মিডিয়াতে যে কোনো বিষয় তুলে ধরার অধিকার সবার আছে। কিন্তু কথা হচ্ছে ঐ সকল বিষয় যদি আপনার পরিবার, সমাজ ও দেশের মানুষের সভ্যতা, সংস্কৃতি ও মনস্তাত্ত্বিক কল্যাণ সাধিত না করতে পারে তাহলে আমি বলবো আপনি একজন লেখক বা কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে যে সকল অরুচিকর উপাদান সামাজিক মাধ্যমে তুলে ধরছেন তার দ্বারা হয়তো তরুণ ও আগামী প্রজন্মকে নষ্ট করার জন্য আজীবন একজন নিন্দিত মানুষ হয়ে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ হতে পারেন।
আমরা যেমন ঘৃণাভরে স্মরণ করি এই পৃথিবীতে থেকে চলে যাওয়া যত জালিম ও খারাপ মানুষদেরকে, ঠিক তেমনি নন্দিত ও কিংবদন্তি মহান মানুষদের স্মরণ করি শ্রদ্ধাভরে। এই দুই ধরনের মানুষকেই ইতিহাস মনে রেখেছে কিন্তু উপলব্ধি দুই ধরনের। বেঁচে থাকার জন্য কর্ম করতে হবে এটা যেমন বাস্তব ও সত্য ঠিক তেমনি উপার্জনের নামে আপনি যে সকল অরুচিকর ও ক্ষতিকর উপায় বেছে নিয়ে নিজের জাতীর গৌরব, সম্ভ্রম, সংস্কৃতি, মাতৃভাষার অর্জিত সম্মান ভূলুণ্ঠিত করছেন এবং দিনে দিনে তরুণ প্রজেন্মকে অন্ধকারে ডুবিয়ে দিয়ে একজন প্রজন্ম হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে উঠছেন তা কী একবার ভেবে দেখেছেন? ফেসবুক, ইউটিউব সহ অন্যান্য সোস্যাল মিডিয়াগুলোর মতলব হচ্ছে বিজনেস। আমি ছোটবেলা থেকেই জেনে এসেছি নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বেশি, বাস্তবেও ঠিক তাই ঘটছে। এই ধরনের সোস্যাল মিডিয়াগুলোতে পরিবার, সমাজ ও জাতির জন্য ক্ষতিকর ভিডিও কন্টেন্ট আপলোড করে আপনি ভাইরাল হচ্ছেন, আপনার ভিউয়ার্স বাড়ছে। আপনার এ থেকে ইনকাম হচ্ছে। আপনি মনে মনে এটাও ভাবছেন আপনি একজন সেলেব্রেটি হয়ে উঠছেন। আপনি কি একবারও ভেবে দেখেছেন এই ধরনের রুচিহীন নগ্নতা এক শ্রেণীর মানুষ আপনাকে নিয়ে ট্রল করছে আবার এক শ্রেণীর মানুষ আপনাকে মাঠে নামিয়ে বাহ! বাহ! দিচ্ছে। টাকা উপার্জনের নামে আপনি বারবার নির্লজ্জের একই কাজ করে যাচ্ছেন। এই বিখ্যাত হওয়ার মধ্যে কোনো গৌরব নেই, দেশপ্রেম নেই, মানুষ হিসেবে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠত্ব নেই। আমি শুধু এই ধরনের কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের বলবো আপনারা দেশ ও জাতির সম্ভ্রম রক্ষা করুন।
নিজের দেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিশ্বের দরবারে সম্মানিত স্থানে তুলে ধরার চেষ্টা করুন, শিশুদের জন্য কিছু লিখুন, শিক্ষণীয় ভিডিও আপলোড করুন এবং চেষ্টা ও সাধনার মাধ্যমে ভালো কিছু তৈরি করুন। আমরা যদি টাকা উপার্জনের এই অশুদ্ধ চর্চা বন্ধ না করতে পারি তাহলে সভ্যতার স্বপ্নপূরণ ঠিক অধরাই রয়ে যাবে। দিনদিন দেশ ও বিদেশে জতির মাথানত হবে অপসংস্কৃতি ও অপচর্চার দৌরাত্ম্যে। এভাবে চলতে থাকলে যতটুকু গৌরব আমরা অর্জন করেছি তাও বিলীন হয়ে যাবে অচিরেই। ছোটবেলায় ক্লাসে স্যারের সেই কথাগুলো এখনো কানে বাজে অশিক্ষিত বন্ধুর চেয়ে শিক্ষিত শত্রু অনেক ভালো।
লেখকঃ গবেষক ও কলামিস্ট
Related News
না বলা কথা, নদীর নাম ইছামতি
হাবিব সরোয়ার আজাদ: ইছামতি নদী বা ইচ্ছামতি নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। এটি বাংলাদেশ- ভারতেরRead More
যুক্তরাজ্যে শরতের মনোরম দৃশ্য
শাহ মনসুর আলী নোমান, লন্ডন থেকে: শরৎকাল শুভ্রতা, শুদ্ধতা, স্নিগ্ধতা, ভালোবাসা এবং পবিত্রতার প্রতীক। যুক্তরাজ্যেRead More
Comments are Closed