তার ছাড়াই চার্জ হবে গাড়িতে
বৈশাখী নিউজ ডেস্ক: দেশে প্রথমবারের মতো তারবিহীন চার্জিং বৈদ্যুতিক যান (কার) উদ্ভাবন করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সাস্ট) একদল তরুণ গবেষক।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সাস্ট) শিক্ষার্থীদের পাওয়ার ইলেকট্রনিকস গ্রুপ একটি অসাধারণ প্রজেক্ট সম্পন্ন করে দেশে প্রথমবারের মতো তৈরি করেছে ওয়্যারলেস লাইট ডিউটি বৈদ্যুতিক যান।
উদ্ভাবনকারী দলের পরিদর্শক এবং পরামর্শক সহযোগী অধ্যাপক ড. ইফতে খাইরুল আমিন বলেন, যানটিতে উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি-সংবলিত ইনভার্টার টেকনোলজি, ব্যাটারি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, ভোল্টেজ নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা, কিলোহার্টজ রেঞ্জ রেজোন্যান্ট কাপলিং, সিরিজ কমপেনসেটিং নেটওয়ার্ক, ভুল সংযোগ প্রতিরোধী টেকনিক, প্রটেকশনের ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তির বিশেষত্ব রয়েছে। ৪০ শতাংশের বেশি কার্যদক্ষতা রয়েছে এ যানটিতে। যানটি উদ্ভাবনের পর শিক্ষার্থীরা চালিয়ে পরীক্ষা করে দেখেন। এটি তারা সফলভাবে চালাতে সক্ষম হন।
ড. ইফতে খাইরুল আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে এখনও ওয়্যারলেস বৈদ্যুতিক যানের ব্যবহার শুরু হয়নি। তবে উন্নত বিশ্বে এর ব্যবহার আছে। অদূর ভবিষ্যতে এ যানের ব্যবহার বাংলাদেশে শুরু হতে পারে। তখন আমাদের উদ্ভাবন দেশের ভিতরে আরও প্রসারতা বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ উদ্ভাবন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যেমন একটি বড় অর্জন, তেমন বাংলাদেশের অগ্রগতিতে বড় একটি মাইলফলকও বটে।’
উদ্ভাবিত প্রজেক্ট দলের সদস্যরা হলেন ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট সম্পন্ন করা শিক্ষার্থী মো. নাহিদ ইসলাম, মো. কবির হাসান ও আজম জামান এবং চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রেজওয়ান জাকারিয়া, মো. রিফাত হোসেন, আবির মাহমুদ, মো. সাজ্জাদ হোসাইন, মো. ইরফান উদ্দিন আহমেদ মেহেদী ও মো. তাওসিফুল আলম।
এ প্রজেক্টের পরিদর্শক ও পরামর্শক ছিলেন বিভাগটির সহকারী অধ্যাপক নাফিস ইমতিয়াজ রহমান।
উদ্ভাবনী সম্পর্কে গবেষকরা জানান, এ বৈদ্যুতিক যানটিতে রয়েছে উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সিসংবলিত ইনভার্টার টেকনোলজি, ব্যাটারি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, ভোল্টেজ নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা, কিলোহার্টজ রেঞ্জ রেজোন্যান্ট কাপলিং, সিরিজ কমপেনসেটিং নেটওয়ার্ক, ভুল সংযোগ প্রতিরোধী টেকনিক, প্রটেকশনের ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তি। যানটি তৈরির পর পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ৪০ শতাংশের বেশি কার্যদক্ষতা রয়েছে বৈদ্যুতিক এর। এ ছাড়া যানটি সফলভাবে চালাতে সক্ষম হয়েছেন তারা।
উদ্ভাবনটি নিয়ে গবেষক দলের সদস্য এম. রিফাত হোসেন বলেন, ‘আমরা যে বিদ্যুচ্চালিত বাহনটি উদ্ভাবন করেছি বর্তমানে দেশে প্রচলিত যানবাহন থেকে এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এর সঙ্গে অন্যান্য গাড়ির পার্থক্য হলো এটি বিদ্যুৎচালিত। সাধারণত ব্যাটারির ধারণকৃত চার্জ ব্যবহার করে এ যান কাজ করে। আমরা নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে যাচ্ছি, এতে সাধারণ জ্বালানিচালিত বাহনের পরিবর্তে ইলেকট্রিক ভেহিকলের (ইভি) জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এ প্রজেক্টটিতে আমরা ইভির চার্জিং পদ্ধতি নিয়ে কাজ করেছি। প্রযুক্তিটিকে দেশে নতুন যাত্রার পথচলা হিসেবে বিবেচনা করা যায়। আমরা অনেকটা পথ পেরিয়ে, কর্মক্ষম করে গড়ে তুললে এটি ভবিষ্যতে ইভি চার্জের পদ্ধতি বদলে দিতে সক্ষম হবে।’
দলের আরেক সদস্য মো. কবীর হাসান বলেন, ‘এ যানটিতে রয়েছে উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সিসংবলিত ইনভার্টার টেকনোলজি; যা ২০ কিলোহার্টজ আউটপুট দিতে পারে। এতে রয়েছে ব্যাটারি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, ভোল্টেজ নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা। ট্রান্সমিটার ও রিসিভারের ইনপুট এবং আউটপুট ম্যাচিং করার জন্য রয়েছে রেজোন্যান্ট কাপলিং সিস্টেম।’
তিনি জানান, তারবিহীন চার্জিংয়ের ক্ষেত্রে ট্রান্সমিটার ও রিসিভার নামে দুটি কয়েল রয়েছে। এর মধ্যে ট্রান্সমিটার কয়েলটি চার্জিং স্টেশনে এবং রিসিভার কয়েলটি গাড়িতে থাকবে। যাত্রী গাড়িতে থাকা অবস্থায় এটি চার্জিং করা যাবে। চার্জিংয়ের সময় বিদ্যুৎ ২ অ্যাম্পিয়ার হলে ১০ ঘণ্টা লাগবে ফুল চার্জ হতে। আর যদি ৫ অ্যাম্পিয়ার বিদ্যুৎ থাকলে ৪ ঘণ্টা লাগবে। বিদ্যুতের পরিমাণ যত বাড়ানো যাবে চার্জিংয়ের সময় তত কম লাগবে বলে জানান তরুণ এ গবেষক।
প্রসঙ্গত, গত বছরের জুনে গবেষকরা এ যান উদ্ভাবনে কাজ শুরু করেন। মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাকেন্দ্রের ‘ডিজাইন অ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টেশন অব এ লাইট ডিউটি ইলেকট্রিক ভেহিকল ইনকরপোরেটেড উইথ ওয়্যারলেস চার্জিং সিস্টেম’ নামে একটি প্রজেক্টের আওতায় এক বছর কাজ করেন শিক্ষার্থীরা। প্রজেক্টটিতে অর্থায়ন করেছে সাস্ট রিসার্চ সেন্টার। এটি পুরোপুরি চালু হলে দেশের জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চৌম্বক ক্ষেত্রে চার্জ:
তারবিহীন চার্জিং পদ্ধতিতে দুটি বস্তুর মধ্যে শক্তি স্থানান্তর করতে চৌম্বক ক্ষেত্র ব্যবহার করা হয়। চার্জার প্যাডে একটি কয়েল থাকে, যখন এটি চার্জিং পোর্টে প্লাগ ইন করা হয় তখন একটি চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি হয়। বৈদ্যুতিক গাড়িতে একটি রিসিভিং কয়েল থাকে, যা এ চৌম্বক ক্ষেত্রটিকে তুলে নেয়। এটি রিসিভিং কয়েলে একটি কারেন্ট প্ররোচিত করে, যা ব্যাটারিকে চার্জ করে। এ প্রযুক্তিটি শারীরিক সংযোগকারী এবং তারের প্রয়োজনীয়তা দূর করে, যার ফলে আরও সুবিধাজনক ও ব্যবহারবান্ধব চার্জিং সুবিধা পাওয়া যায়।
আছে নানা সুবিধা:
তারবিহীন চার্জিং যান ব্যবহারে তারের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ থেকে বাঁচা যায়। পাশাপাশি বৈদ্যুতিক শক হওয়ার আশঙ্কা কম, বিশেষ করে বৃষ্টির মতো খারাপ আবহাওয়ার ক্ষেত্রে তারযুক্ত যানবাহন চার্জে বৈদ্যুতিক শকের ঝুঁকি থাকে। এ ছাড়া বিভিন্ন কোম্পানির জন্য তারের অ্যাডাপ্টারের বৈষম্যসংক্রান্ত সমস্যাগুলো কমে আসবে এবং ব্যবহারকারী গাড়িটি চার্জ করার জন্য বাইরে এসে যেকোনো পাওয়ার স্টেশনে খুব সহজেই চার্জ দিতে পারবেন। এ যানটি বাজারে কবে আসবে- জানতে চাইলে দলের সদস্য জয় বলেন, ‘যানটির কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির কাজ চলছে। যদি পর্যাপ্ত তহবিল ও সহায়তা পাই, আমরা যত দ্রুত সম্ভব বাজারে আনার চেষ্টা করব। সহযোগিতার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে তারা বলেন, ভবিষ্যতে আমাদের এ উদ্ভাবন নিয়ে আরও কাজ করতে চাই। আমাদের এ যানটি পুরোপুরি বাজারে আনা গেলে তারচালিত চার্জিং গাড়িগুলো রিপ্লেস করা সম্ভব হবে। দ্রুত চার্জিং এবং দীর্ঘ দূরত্ব যেতে সক্ষম যান উপহার দিতে চাই। পাশাপাশি গাড়িটির কার্যকারিতা আরও উন্নত করার পরিকল্পনা করছি। এ যান উদ্ভাবনের ফলে ব্যবহারকারীর পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি।
Related News
দেশে প্রথমবারের মতো চালকবিহীন গাড়ি চালু করছে শাবি শিক্ষার্থীরা
বৈশাখী নিউজ ডেস্ক: আমেরিকান বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ‘টেসলা’র আদলে দেশে প্রথমবারের মতো চালকবিহীন গাড়িRead More
জুলাই বিপ্লবের ডকুমেন্ট সংরক্ষণে এলো বিশেষ অ্যাপ
বৈশাখী নিউজ ডেস্ক: জুলাই এবং আগস্ট মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সংঘটিত বিপ্লবের গুরুত্বপূর্ণ সবRead More
Comments are Closed