ডায়াবেটিসের নতুন কারণ আবিষ্কার

বৈশাখী নিউজ ডেস্ক: ডায়াবেটিসের নতুন একটি কারণ আবিস্কার করেছে বাংলাদেশের একদল বিজ্ঞানী। বুধবার (২৩ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আবিষ্কারের এই তথ্য তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গবেষণার মাধ্যমে ডায়াবেটিসের নতুন যে কারণ আবিষ্কার করা হয়েছে, সেটি হলো আইএপি (ইন্টেস্টিনাইল অ্যালকেলাইন ফসফেটাস) কমে যাওয়া। আর আইএপি কমে যাওয়া ডায়াবেটিসের অন্যতম প্রধান কারণ।
আবিষ্কারের এ বিষয় ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় বড় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।
মূল গবেষক মধু এস মালো সাংবাদিকদের বলেন, গত ৫ বছরে ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সী ৫৭৪ জন মানুষের ওপর গবেষণা করে ডায়াবেটিসের এই নতুন কারণ সম্পর্কে জানা গেছে।
গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলে বলা হয়, ডায়াবেটিসের প্রত্যক্ষ কারণ হল টক্সিন-নিয়ন্ত্রিত নিম্নগ্রেডের সিস্টেমিক প্রদাহ যার ফলে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন ইনসুলিনের উৎপাদন ও কার্যক্ষমতা কমে যায় এবং রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে ডায়াবেটিস হয়। মানবদেহের অন্ত্রে থাকা মৃত ব্যাকটেরিয়ার কোষ-প্রাচীরের অংশ টক্সিন (এন্ডোটক্সিন) হিসেবে কাজ করে। এই টক্সিন সাধারণত মলের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। তবে, উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার, ফুকটোজ বা অ্যালকোহল টক্সিনকে রক্তে ঢুকতে সহায়তা করে। এর ফলে নিম্নগ্রেডের সিস্টেমিক প্রদাহের সৃষ্টি হয় এবং যার ফলে ডায়াবেটিস হতে পারে। মানবদেহের অন্ত্রে থাকা ইন্টেস্টিনাইল আলকালাইন ফসফাটেস নামক এনজাইম এই টক্সিনকে ধ্বংস করে দেয়। ফলে এই এনজাইমের ঘাটতি হলে অন্ত্রে অতিরিক্ত টক্সিন জমা হয় এবং এই টক্সিন রক্তে ঢুকে সিস্টেমিক প্রদাহ সৃষ্টি করে। ফলে একদিকে যেমন ডায়াবেটিস হতে পারে তেমনি ইসকেমিক হার্ট ডিজিজও হতে পারে। ইসকেমিক হার্ট ডিজিজেরও অন্যতম প্রধান কারণ সিস্টেমিক প্রদাহ।
গবেষণায় দেখা যায়, যাদের শরীরে এই এনজাইম বেশি থাকে তাদের তুলনায় যাদের কম থাকে তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ১৩ দশমিক ৮ গুণ বেশি। অল্পবয়সীদের যাদের অন্ত্রে এ এনজাইমটি দ্রুত কমতে থাকে তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ৭ দশমিক ৩ গুণ বেশি। যাদের অন্ত্রে এই এনজাইমটি কম ছিলো এবং পরে তা বেড়ে গেছে তাদের ডায়াবেটিস হয়নি। এনজাইমটি যাদের অন্ত্রে কম ছিলো তাদের ফাস্টিং সুগার বৃদ্ধির মাত্রা প্রায় দ্বিগুণ। এনজাইমের মাত্রা বেশি হলে স্থুল ব্যক্তিদের ডায়াবেটিস হয় না।
ডায়াবেটিস রোধে যাদের দেহে এই এনজাইমের পরিমাণ কম তাদেরকে এই এনজাইম খাওয়ানো সম্ভব হলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব জানিয়ে গবেষকরা বলেন, বর্তমানে গবেষকরা এ এনজাইমটি তৈরির চেষ্টা করছেন।
গবেষণার ফলাফল ইতোমধ্যে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে ছাপা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি ডা. এ কে আজাদ খান বলেন, যাদের আইএপি কমে যায়, তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এটি একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার।
এই আবিষ্কার থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরাও বড় কাজ করতে সক্ষম; সংবাদ সম্মেলনে আশা প্রকাশ করেন তারা।
গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বারডেম, ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক।
সারা বিশ্বে বর্তমানে ৪৬ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এর মধ্যে বাংলাদেশে আক্রান্ত ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা ৮৬ লাখেরও বেশি।
Related News

কিডনিতে পাথর: কারণ, উপসর্গ ও সতর্কতা
স্বাস্থ্য ডেস্ক : আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হল কিডনি। শরীরের সার্বিক সুস্থতা বজায় রাখতেRead More

ওসমানী হাসপাতালে শুরু হচ্ছে ‘কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট ডিভাইস’ স্থাপন
বৈশাখী নিউজ ডেস্ক: সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথমবারের মতো আগামী ২৪মে ‘কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট ডিভাইসRead More
Comments are Closed