Main Menu

রোজার বিনিময় নিজ হাতে আল্লাহ দেবেন

এহসান বিন মুজাহির: মাহে রমজানের রোজা গুরুত্বপূর্ণ একটি ফরজ ইবাদত। আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের উপর রমজান মাসে রোজা পালন ফরজ করে দিয়েছেন।রোজাদারদের জন্য রয়েছে অফুরন্ত সওয়াব।রোজার বিনিময় স্বয়ং আল্লাহ নিজে দেবেন বলে ঘোষণা করেছেন। হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, মানুষের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্য, কিন্তু রোজা এর ব্যতিক্রম, আসসাওমু লী ওয়া আনা আজযী। রোজা শুধু আমার জন্য, আমিই এর প্রতিদান দেব। (মুসলিম : ২৭৬০)।

বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, ‘তোমাদের কাছে রমজান উপস্থিত হয়েছে। রমজান এক বরকতময় মাস। আল্লাহ তোমাদের উপর এ মাসে সিয়াম পালন করা ফরজ করেছেন। এ মাসে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। এ মাসে অবাধ্য শয়তানদের শেকলবদ্ধ করা হয়। এ মাসে আল্লাহ এমন একটি রাত রেখেছেন যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের কল্যাণ হতে বঞ্চিত হল সে ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষেই বঞ্চিত’। (নাসায়ি : ২১০৬)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, মানব সন্তানের প্রতিটি নেক আমলের প্রতিদান ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, কিন্তু রোজার বিষয়টি ভিন্ন। কেননা, রোজা শুধু আমার জন্য, আমিই তার প্রতিদান দেব। (মুসলিম : ১৫৫১)। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘রোজা এবং কুরআন (কেয়ামতের দিন) আল্লাহর কাছে বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে পরওয়ারদিগার! আমি তাকে (রমজানের) দিনে পানাহার ও প্রবৃত্তি থেকে বাধা দিয়েছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। কুরআন বলবে, আমি তাকে রাতের বেলায় নিদ্রা হতে বাধা দিয়েছি। সুতরাং আমার সুপারিশ তার ব্যাপারে কবুল করুন। অতএব, উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে’। (মুসনাদে আহমদ : ৬৬২৬)।

হজরত রাসুলে কারীম (সা.) এরশাদ করেন, রমজান মাসে সিয়াম পালন পূর্ববর্তী রমজান থেকে কৃত গুনাহসমূহকে মিটিয়ে দেয়; যদি কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা হয়’। (মুসলিম : ২৩৩)। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদর রজনীতে নামাজ আদায় করবে তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে’। (বোখারি : ১৯১০)। রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘রমজান মাসে সিয়াম পালন বছরের দশমাস সিয়াম পালন তুল্য’। (মুসলিম : ১১৬৪)।

হজরত সাহল বিন সা’দ (রা) থেকে বর্ণিত, রাসুল(সা:) এরশাদ করেন, জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে। যার নাম রাইয়ান। কেয়ামতের দিন রোজাদারগণই শুধু সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। তাদের ছাড়া অন্য কেউ সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। সেদিন ঘোষণা করা হবে, রোজাদাররা কোথায়? তখন তারা দাঁড়িয়ে যাবে এবং সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। যখন তাদের প্রবেশ শেষ হবে, তখন দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। ফলে তারা ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। (বোখারি : ১৭৯৭)।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বলেছিলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাকে অতি উত্তম কোনো নেক আমলের নির্দেশ দিন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তুমি রোজা রাখো। কারণ এর সমমর্যাদার আর কোনো আমল নেই। (নাসায়ি : ২৫৩৪)। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘রোজা হলো জাহান্নাম থেকে আজাব রক্ষার ঢাল স্বরুপ। সুতরাং কোন রোজাদার যেন অশ্লীল কথা না বলে, মন্দ ও গর্হিত কর্মকান্ডে লিপ্ত না হয়, ঝগড়া বিবাদ এড়িয়ে চলে। কেউ যদি তাকে গালমন্দ করে তাহলে সে যেন একথা বলে দেয় যে আমি রোজাদার। (বুখারি : ২৭৩১)।

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, যারা হিদায়াতকে বর্জন করার ক্ষেত্রে আল্লাহর শক্তিকে ভয় করেন এবং তার নির্দেশকে সত্য প্রতিপন্ন করার কারণে রহমতের আশা ছাড়েন না তারাই মুত্তাকী। মাসব্যাপি রোজা পালন করে যদি তাকওয়া অর্জন করা না যায় তাহলে এ রোজা অর্থহীন উপবাস ও নিছক আত্মপ্রবঞ্চনায় পর্যবসিত হয়। (মুসলিম : ২১৩৪)।

এপ্রসঙ্গে হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন-যে ব্যক্তি বাজে কথা ও কাজ ত্যাগ করলো না, তার পানাহার ত্যাগ নিছক উপবাস ছাড়া আর কিছু নয়’। (বোখারি : ১৮০৪)। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এসম্পর্কে আরও এরশাদ করেন-শুধু পানাহার বর্জনের নাম রোজা নয়। রাজা হলো অনর্থক ও অশ্লীল কথা-কাজ বর্জন করার নাম। কেউ তোমাকে গালি দিলে বা তোর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলে তুমি তার সঙ্গে তেমনটি না করে কেবল এটুকুই বলো আমি রোজাদার’। (মুসলিম : ২৪১৬)।

শুধু না খেয়ে থাকাই সিয়াম সাধনার মূল উদ্দেশ্য নয়। বরং যাবতীয় পাপাচার থেকে নিজের নফস ও প্রবৃত্তির উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে মুখ ও জিহ্বাকে সংযত রাখতে হবে। সংযমের পরিচয়ের দিতে হবে সবক্ষেত্রে। পানাহার থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি সব ধরনের অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা রোজাদের অপরিহার্য কর্তব্য। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রোজার যথাযথ হক আদায় করার তাওফিক দান করুন।

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট ও প্রিন্সিপাল, শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুল।

Share





Comments are Closed