Main Menu

করোনাভাইরাস : অামাদের সামনে একটি সুযোগ

স্বপন তালুকদার: সব জাতির জীবনেই কিছু কিছু সঙ্কটকাল অাসে। স্বাধীনতাযুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, ভয়াল বন্যা, ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস এবং অারও অনেক ছোট বড় বিপর্যয়। এই সঙ্কটকালে কারো হতাশ বা দিশেহারা হওয়ার সুযোগ নেই। সঙ্কটকালে বিহ্বলতা বা অসংযম নিজের যোগ্যতা ও অস্তিত্বের অপমান স্বরূপ। এমন অনেক ক্রান্তিকালের মোকাবেলা করে মানব জাতির টিকে থাকার ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। এমন অনেক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করার ইতিহাস রয়েছে অামাদের বাঙালি জাতিরও। এখন সারাবিশ্বের সামনে উপস্থিত সেই সময়-করোনাকাল। অাক্ষরিক অর্থেই এমন ক্রান্তিকাল অামরা অাগে দেখিনি। মানব সভ্যতা গত ১০০ বছরেও হয়তো দেখেনি। তাই এই করোনাকাল উত্তোরণে মানে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকার ইতিমধ্যে দেশের সকল সরকারি বেসরকারি, ব্যবসা প্রতিষ্টানসহ প্রায় সব প্রতিষ্টান বন্ধ ঘোষনা করে দিয়েছে (জরুরি প্রতিষ্টানগুলো ছাড়া) মানে লক ডাউন। সবাইকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ঘরে বসে সহযোগিতা করতে বলেছেন। এতে অামরা সকলে স্বাভাবিক কাজকর্মহীন হয়ে পড়েছি। অার কাজ কর্মহীন হয়ে ঘরে বসে থাকা অাসলেই খুব বিরক্তিকর। অার সাথে অাছে দুশ্চিন্তা করোনােভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে কখন কিভাবে জানি অাক্রান্ত হয়ে পড়ি তার অাশঙ্কা। অনেকের সাথে এই বিষয় ফোনে অালাপ হয়েছে। সবার দুশ্চিন্তা এবং ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে অাশঙ্কার সাথে বিরক্তিকর সময় কাটানোর অভিযোগ।সবার চিন্তা এবং অভিযোগ প্রায় একই। যা অামার নিজের অনুভবেও একই। অার এ নিয়ে ভাবতে গিয়ে গতকাল বন্ধু শামীম অাহমদের পোস্টে কমেন্ট করতে অাইডিয়াটি মাথায় এলো। জানিনা অামার অাইডিয়াটি অাপনাদের কতটা কাজে অাসবে।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে অামাদের এই ঘরে থাকাটাকে অামরা অনেকগুলো ভালো কিছু করার সুযোগ হিসেবে দেখতে পারি। করোনাভাইরাস প্রাণঘাতী এক ভাইরাস। যা ছড়ায় মানুষের মাধ্যমে মানে একজন থেকে অারেক জনে। সরাসরি স্পর্শ বা কোনো বস্তু অাক্রান্ত ব্যক্তির স্পর্শ করার মাধ্যমে ছড়ায়। ভাইরাসটির কোনো হাত-পা নেই তবু ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। মানুষ থেকে অন্য এক মানুষে। অার এই জন্যই সারাদেশ লক ডাউন। কিন্তু ঘরে বসে অাশঙ্কা অার দুশ্চিন্তা নিয়ে সময় কাটানো খুবই কঠিন। অাছে অনেক সাবধানতা ও সতর্কতা অবলম্বণ করে চলা প্রতিদিন যতদিন না ভাইরাসের সংক্রমন রোধ না হয়। এভাবে উৎকন্ঠা অার অাশঙ্কা নিয়ে সময় পাড় করা শরীর স্বাস্থ্য সুস্থ রাখা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সহায়ক নয়।

অামাদের দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি দ্বিতীয় স্তরে অতিক্রম করে তৃতীয় স্তরে মানে পাবলিক ট্রান্সমিশন স্তরে অবস্থান করেছে অামাদের প্রপার প্রস্তুতির অভাবে। এখন এসব দোষত্রুটি নিয়ে বসে থাকার সময় নয়। নেই হতাশ হওয়ার সুযোগ। যতটা সম্ভব মৃত্যুর হার কম রেখে অামরা এই ক্রান্তিকাল অতিক্রম করতে পারবো ততই মঙ্গল। সেটাই অামাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। তাই অামি বলব এই সময়টাকে নিজের জন্য, জাতির জন্য অামাদের একটি ভালো কিছু করার সুযোগ হিসেবে দেখা। অার এভাবে বিষয়টি দেখলে কোনো ভয়ভীতি, বিরক্তি কিছুই অামাদের কাবু করতে পারবে না। এই ভালো কিছুটা সাধারণ ভালো কিছুর মতো নয়। অামরা যদি অঙ্গীকার করি অামার মাধ্যমে যেন কোনোভাবেই করোনাভাইরাস সংক্রমণ না হয়। কোনো মৃত্যু অামার মাধ্যমে হোক চাই না। অামি যেন কোনো মৃত্যুর কারণ না হই। তা করে দেখাতে হলে অামাকে ইউনিসেফ এবং বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক কিছু নিয়ম মেনে চলতে বলেছেন সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ। তাই অামাকে পালন করার কথা।তাও ঘরে বসে। এতে কিন্তু অাপনার অামার মাঝে অনেক ভালো কিছু অভ্যাসও গড়ে উঠছে।যা অামরা ইতিমধ্য জেনে গেছি। অার বলুন তো মানুষের মৃত্যুর কারন হওয়ার থেকে মন্দ কাজ অার কি হতে পারে? অামার একটু সচেতনতা, সাবধানতার কারনে যদি অামার প্রাণ বেঁচে যায়? অামার পরিবার, অামার সন্তান, অামার সমাজ, অামাদের দেশের মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার কারন হতে পারি এরচেয়ে উত্তম কাজ অার কি হতে পারে? ভেবে দেখেছেন একবার! এই কি অামাদের জীবনের চাওয়া নয়?

অামরা অনেক সময়ই বলে থাকি জীবনে কারো জন্য কিছু করতে পারলাম না। হোক সেটা অার্থিক বা মানসিক বা শারীরিক সক্ষমতা না থাকার কারনে। ভালো কাজ করতে না পারার অাফসোস কিন্তু অামরা সকলেই মনে মনে প্রতিনিয়ত করে থাকি। অার করোনাভাইরাস সেই সুযোগটা অামাদের করে দিয়েছে। অার এই কাজটি করতে অামার দেশের ডাক্তার, নার্স, সেনা বাহিনী, পুলিশ সদস্য, অনেক কর্মকর্তা, মন্ত্রী, স্বাস্থ্যকর্মীসহ অনেকে করোনা অাক্রান্তদের নিয়ে সরাসরি কাজ করে যাচ্ছেন দিনরাত জীবনের ঝুকি নিয়ে। অামাদের এরূপ কোনো ঝুকি নিতে বলাই হয়নি। নেওয়ার কোনো দরকারও নাই। জাস্ট নিজেকে সেফ রাখা মানে সচেতন থাকা যাতে অামার কোনো কিছু স্পর্শ বা কাউকে স্পর্শের মাধ্যমে যেন অামি বহন না করি করোনাভাইরাস নামক প্রাণঘাতি ভাইরাসটিকে। শুধু এই অঙ্গীকারটি সচেতনতা এবং সতর্কতার সাথে পূরণ করার সামন্যব্রত। অামরা কি পারি না করোনাভাইরাসকে শুধু অাশঙ্কা, উৎকন্ঠা ও মৃত্যুর কারন হিসেবে না দেখে একটি ভালো কিছু করার সুযোগ হিসেবে দেখতে, অাসলে কী তাই নয়? এছাড়াও এমন অনেক কাজ পরে অাছে অাগে করা হয়নি।যেমন বাড়িতে স্ত্রীর ঘরের কাজে একটু সাহায্য সহযোগিতা করা, ভালো একটি বই পড়া, বাড়ির এমন অনেক কাজ যা করব করব করে এতদিন করা হয়নি তেমন কিছু।নিশ্চয় সবারই এমন অনেক কাজ পড়ে রয়েছে সময়ের অভাবে করা হয়নি। সেগুলোও এই অবসরে করে নিতে পারি। অামাদের যা মেনে চলতে বলা হয়েছে এতে কিন্তু অনেক ভালো অভ্যাসেরও চর্চা হচ্ছে। অামি কিন্তু এইভাবেই দেখছি বিষয়টিকে। যত দ্রুত অামরা এই করোনাভাইরাস প্রতিরোধ গড়তে পারবো অামার দেশ বাঁচবে, বাঁচার সম্ভাবনা বাড়বে বিশ্বের। অামার পরিবার, অামার সন্তান, অামার অাত্মীয় স্বজন, অামার দেশ, বিশ্বের সকলে নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখে নিরাপদ থাকুন, সুস্থ থাকুন এ প্রার্থনা। শেষ করছি কবি গুরুর একটি গানের চার লাইন দিয়ে।

“সঙ্কোচের বিহ্বলতা নিজেরে অপমান
সঙ্কটের কল্পনাতে হোয়ো না ম্রিয়মাণ
মুক্ত করো ভয়,আপনা-মাঝে শক্তি ধরো
নিজেরে করো জয়
মুক্ত করো ভয়, দূরূহ কাজে নিজেরে দিও কঠিন পরিচয়।”

ভালো থাকুক অামার দেশ, অামার পৃথিবী।

Share





Related News

Comments are Closed